শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়
কোন সূরা পড়লে টেনশন দূর হয়শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় রয়েছে সে সম্বন্ধে আপনাদের কি কোন ধারণা আছে। যদি না থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। কারণ শবে কদরের বিশেষ কিছু নামাজ এবং বিশেষ কিছু বিধি নিষেধ নিয়ে আলোচনা করব আজকের আর্টিকেলে।
তাহলে চলুন শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়
- শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়
- অসুস্থ অবস্থায় শবে কদরের নামাজ না পেলে করণীয়
- শবে কদরের রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
- শবে কদরের নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল
- শবে কদরের বিশেষ কিছু নামাজ
- শবে কদর কখন থেকে শুরু হয়
- শবে কদরের মোনাজাতের দোয়া
- সূরা কদরের আমল ও ফজিলত
- শবে কদরের নামাজের নিয়ত
- শবে কদরের রাতের তসবীহ
- শবে কদরের রাতের দোয়া
- শবে কদরের আমল সমূহ
- শবে কদর শব্দের অর্থ কি
- শবে কদরের জিকির
- শেষ কথা
শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়
শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় রয়েছে যা সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই অবগত হওয়া খুবই জরুরী। নিচে সে সমস্ত বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
করণীয়
- যখন সূর্যাস্ত যাবে তার পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ মাগরিবের নামাজ পড়ে ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
- যেহেতু শবে কদরের রাতে কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে সেহেতু এই রাত্রে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা।
- সারা বছর সারাক্ষণ আমরা যে জানতে অজানতে গুনাহ করে থাকি সে সমস্ত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
বর্জনীয়
- শবে কদরের মতো একটি ফজিলত পূর্ণ রাতকে অবহেলায় কাটিয়ে না দেওয়া।
- মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ মনে না রাখা।
- এই রাতে দল বেঁধে নামাজে যাওয়ার নামে চিৎকার চেঁচামেচি ও হইহুল্লোড় না করা।
অসুস্থ অবস্থায় শবে কদরের নামাজ না পেলে করণীয়
অসুস্থ অবস্থায় শবে কদরের নামাজ না পেলে করণীয় কি? এ প্রশ্ন আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে। কারণ শবে কদরের মাস একটি বহু ফজিলত ও মহিমা পূর্ণ মাস যা বছরে একবারই আসে। তাই কেউই চায় না যে এই রাতটি তার জন্য ব্যর্থ যাক বা সে ইবাদত না করতে পারুক। তাই কোন মহিলার যদি মাসিক সময় চলে তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা অনেক সময় মনে করি যে আমাদের মাসিক হয়েছে তার মানে আমরা হয়তোবা আর কোন ইবাদত করতে পারব না।
হয়তোবা আমরা এই রাত থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। কিন্তু এ ধারণা মোটেও সঠিক নয়। আপনি মাসিক অবস্থায় শুধুমাত্র দুটি ইবাদত করতে পারবেন না সেটি হল: নামাজ পড়া ও কোরআন তেলাওয়াত করা। এই দুটি ইবাদত ব্যতীত আপনি অন্য যেকোনো ইবাদত করতে পারেন যেমন: জিকির করা, তসবীহ করা, দরুদ শরীফ পাঠ করা ইত্যাদি।
শবে কদরের রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না
শবে কদরের রাতে যাদের দোয়া কবুল হবে না বা শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সম্বন্ধে কি আপনার কোন ধারনা আছে। এ কথা তো আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি যে আমরা আমাদের প্রতিটা মুহূর্তে জানতে অজানতে বহু গুনাহ করে থাকি। কিন্তু মহান আল্লাহ তা’আলা এতটাই দয়ালু যে তিনি আমাদের সমস্ত গুনাহ গুলো বিশেষ কিছু আমলের মাধ্যমে মাফ করে দেন। যেমন শবে বরাতের রাতে আল্লাহর কাছে ইবাদতে লিপ্ত থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তেমনি শবে কদরের রাতেও সমস্ত রাত্রি ইবাদতে লিপ্ত থেকে আল্লাহর কাছে যা চাওয়া চাই আল্লাহ অবশ্যই বান্দাকে তা দিয়ে থাকেন।
কিন্তু এমন কিছু কিছু ব্যক্তি আছে যাদের দোয়া কখনো কবুল করেন না। আপনি যদি অন্যের প্রতি হিংসা করেন এবং সব সময় গীবত ও খারাপ কাজে লিপ্ত থাকেন তাহলে আল্লাহ আপনার ইবাদত কখনোই কবুল করবেন না। আল্লাহ গীবতকারীকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। লাইলাতুল কদরের রাতের ইবাদত এতটাই গুরুত্ব পূর্ণ ও মহিমা পূর্ণ যে আপনি যদি পাক সাফ হয়ে এ নামাজ আদায় না করেন অপবিত্র থেকে যান তাহলে কখনোই আপনার ইবাদত কবুল হবে না।
শবে কদরের নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল
শবে কদরের নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল এবং শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় এ বিষয় গুলো নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক সময় দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করে। তবে আমাদের এ বিষয়টি সম্বন্ধে পরিপূর্ণ সুইস্পষ্ট হওয়া উচিত যে শবে কদরের নামাজ নফল। আমাদের বারো চাঁদের যে সমস্ত মাস গুলি ইবাদতের জন্য আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে সমস্ত নামাজ নফল।
শবে কদরের বিশেষ কিছু নামাজ
শবে কদরের বিশেষ কিছু নামাজ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি কদরের রাত্রিতে নিম্নক্ত নিয়মে চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে এবং নামাজের শেষ সিজদায় গিয়ে নিচের দোয়া পাঠ করে তারপর সে মহান আল্লাহর দরবারে যা কিছু প্রার্থনা করে মহান আল্লাহ তা’আলা তা কবুল করবেন।
নামাজ আদায়ের নিয়ম:
দুই দুই রাকাতের নিয়তে এই নামাজ আদায় করতে হয় এবং প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ৩ বার সূরা কদর এবং ৫০ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয়। তারপর সিজদায় গিয়ে নিচের দোয়াটি পড়তে হয়।
দোয়াটি হল:
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।
শবে কদর কখন থেকে শুরু হয়
শবে কদর কখন থেকে শুরু হয় বা শবে কদরের রাত কোনটি এই বিষয়ে এক এক জন মাওলানা একেক ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে এ বিষয়ে কেউই পরিপূর্ণ ধারণা সুস্পষ্ট করতে পারেননি। যেহেতু শবে কদরের রাত রমজান মাসের মধ্যে পড়ে সেহেতু আপনি যদি রমজান মাসের প্রত্যেকটি রাত ইবাদত করেন তাহলে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে যে আপনি শবে কদরের রাত পেয়েছেন। তবে সারা মাস যাবত রাত্রি জাগরণ করা আমাদের অনেকের জন্যই সম্ভব নয়।
সেহেতু আমাদের নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন রমজান মাসের শেষ ১০ দিন বেজোর রাত্রি গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শবে কদরের রাত। এই বেজোড় রাত্রি গুলোতে আপনি পরিপূর্ণ রাত ধরে ইবাদত করতে পারেন অর্থাৎ এশার নামাজ পড়ে তারাবীহ ও বিতর নামাজের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এই রাত্রের সময়কাল।
শবে কদরের মোনাজাতের দোয়া
শবে কদরের মোনাজাতের দোয়া সমূহ নিচে দেওয়া হল:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম তুহিব্বুল আফুওয়া ফা’ফু আন্নি।
এই দোয়াটি হচ্ছে শবে কদরের মোনাজাতের দোয়া। এই দোয়াটি শবে কদরের রাতে আপনি বেশি বেশি বারও পড়তে পারেন এতেও বহু সওয়াব আছে।
সূরা কদরের আমল ও ফজিলত
সূরা কদরের আমল ও ফজিলত এর বিশেষ কিছু গুণাগুণ রয়েছে। নিচে তা আলোচনা করা হলো:
- ভালোবাসার পাত্র বা পাত্রীর কপালের চুল ধরে এই সূরা পাঠ করলে তার মুখ হতে কোন প্রকার অবাঞ্চিত কথা বের হবে না।
- এ সূরা ৪৬ বার পাঠ করে পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি নতুন পোশাকে ছিটিয়ে দিলে যে পর্যন্ত উক্ত পোশাক পরনে থাকবে সে পর্যন্ত তার রুজি রোজগার প্রচুর পরিমাণে বরকত হতে থাকবে।
- কোন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার সময় তার কবরের সামনে মাটি হাতে নিয়ে সাত বার এ সূরা বিসমিল্লাহ সহ পাঠ করলে সে মাটি উক্ত মৃত ব্যক্তির কবরের ওপর রেখে দিলে মৃত ব্যক্তির কবরের আজাব থেকে রেহাই পাবে।
শবে কদরের নামাজের নিয়ত
শবে কদরের নামাজের নিয়ত সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাতাই সালাতিল লাইলাতুল কাদরী মুতাওয়াজিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
শবে কদরের রাতের তসবীহ
শবে কদরের রাতের তসবীহ সমূহ কি কি বা শবে কদরের রাতে কোন কোন অজিফা পড়া সাওয়াব সে সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যেকেরই অবগত হওয়া উচিত। যদিও আপনি যেকোনো অজিফা পড়তে পারেন তাতে কোন ভুল নেই। তবে এ রাতের বিশেষ কিছু তসবীহ রয়েছে যা পাঠ করলে মহান আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত খুশি হন এবং বহু সওয়াব দান করেন। যেমন:
আরো পড়ুন: ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নত
- আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুল আল্লাহ।
- সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।
- আস্তাগফিরুল্লাহ।
শবে কদরের রাতের দোয়া
শবে কদরের রাতের দোয়া সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ দোয়া রয়েছে যা মহান আল্লাহ তা’আলা বহু জায়গায় সেই দোয়া সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন। এবং সে দোয়ার ফজিলত সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন।
দোয়াটি হল: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম তুহিব্বুল আফুওয়া ফা’ফু আন্নি।
এই দোয়াটি এ রাতের জন্য এতটাই গুরুত্ব পূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ দোয়া যে এই দোয়াটি আপনি মোনাজাতের মধ্যেও পড়তে পারবেন আবার নামাজের মাঝেও পড়তে পারবেন। প্রতি চার রাকাত নামাজের পর ১০০ করে এ দোয়াটি পড়তে পারবেন। এতে বহু সাওয়াব রয়েছে।
শবে কদরের আমল সমূহ
শবে কদরের আমল সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- প্রথমে ওযু করতে হবে। তবে আপনার যদি মনে হয় আপনার শরীর সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র না তাহলে আপনাকে ওযুর পূর্বে গোসল করতে হবে তারপর ওযু করতে হবে।
- তারপর আপনাকে মসজিদে দাখিল হতে হবে। আর মহিলারা বাসায় পাক পবিত্র জায়গায় ইবাদতের জন্য বসবেন।
- তারপর সমস্ত রাত্রি জাগরণ করে নামাজ পড়বেন।
- কোরআন তেলাওয়াত করবেন।
- তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বেন।
- সম্ভব হলে সালাতুল তসবীহর নামাজও পড়তে পারেন।
শবে কদর শব্দের অর্থ কি
শবে কদর শব্দের অর্থ কি? লাইলাতুল কদর বা শবে কদর শব্দের অর্থ হচ্ছে অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবী ভাষায় লাইলাতুল অর্থ হল রাত্রি বা রজনী এবং কদর শব্দের অর্থ হলো সম্মান মর্যাদা মহাসম্মান। এ মাসের নামের অর্থ দেখেই নিশ্চয়ই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট যে এ মাসের ইবাদতের গুরুত্ব কতটা ফলদায়ক বান্দাদের জন্য।
শবে কদরের জিকির
শবে কদরের জিকির সমুহ সম্বন্ধে বিভিন্ন ইসলামিক বই অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে যে, এ রাতে যেসব জিকির করা উত্তম হবে তা হল:
- আস্তাগফিরুল্লাহ জিকির।
- আল্লাহু নামের জিকির।
- আল্লাহর ৯৯ টি নামের জিকির।
- সুবহানাল্লাহ নামের জিকির।
শেষ কথা
উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল শবে কদরের রাতে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ সমূহ সম্বন্ধে। সাথে আরও আলোচনা করেছি শবে কদরের বিশেষ কিছু নামাজ ও এ রাতের ইবাদত ও ইবাদতের ফজিলত ও মাহাত্ম্য সম্বন্ধে। এছাড়াও আরো আলোচনা করেছি এই মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিকির ও অজিফা সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে এবং আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোন কোন বিষয় গুলি ভালো লেগেছে এবং আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন তা কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন। এমনই শিক্ষনীয় ও গুরুত্ব পূর্ণ আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 26181
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url