আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত এবং সময়সূচি
আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল। আমরা অনেকেই আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানি না। আওয়াবিন নামাজ কাকে বলে কখন পড়তে হয় এই বিষয়গুলো ও আমাদের অনেকের জানা নেই। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
- আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
- আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত
- আওয়াবিন নামাজের সময়সূচী
- আওয়াবিন নামাজের সূরা
- শেষ কথা
আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
আমরা অনেকেই আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানি না। এই সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেছেন, " আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। এক পর্যায়ে সে আমার মাহবুব ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায়।"{ সহীহ বুখারীঃ ২/৯৬৩} নফল ইবাদত গুলোর মধ্যে নফল নামাজ হলো আল্লাহতালার কাছে সবথেকে পছন্দনীয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নতের পাশাপাশি নফল নামাজ রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ রমজানের প্রথম ১০ দিনের আমল - রমজানের প্রথম দশ দিনের দোয়া
নফল নামাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নামাজ হলো আওয়াবিন নামাজ। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পরে নফল নামাজ আদায় করা হয় তাকে আওয়াবিন নামাজ বলে। হাদীস শরীফে এই নামাজকে সালাতুল আওয়াবিন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। মাগরিবের নামাজের পরে আওয়াবীন নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়।
আওয়াবিন নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে মাগরিবের পর থেকে শুরু করে এশারের আগ পর্যন্ত। তাই এইটুকু সময়ের মধ্যে যত রাকাত সম্ভব আওয়াবিন নামাজ পড়া যায়। তবে অবশ্যই ২০ রাকাতের উপর হতে পারবে না। আওয়াবীন নামাজ আপনাকে দুই রাকাত, দুই রাকাত করে পড়তে হবে। প্রথমে নিয়ত করে যে কোন একটি সূরা তারা আওয়াবীন নামাজ পড়তে পারবেন। উভয় রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে নামায পড়বেন।
আওয়াবীন নামাজ পড়ার নিয়তঃ
আমরা জানি যে নিয়ত হচ্ছে অন্তরের বিষয়। আপনি যখন কোন কিছু করবেন তখন আপনি বিষয়টি নিয়ে অন্তরে নিয়ত করবেন মুখে বলে নিয়ত করতে হবে এমন কোন কথা নেই। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা আমাদের মনের খবর জানে সে জন্য অন্তরে বাংলায় নিয়ত করলে হবে।
বলতে হবেঃ "আমি দুই রাকাত আওয়াবিন নামাজ আদায় করছি।"
আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত? সাধারণত সচরাচর আমরা আওয়াবিন নামাজ দুই রাকাত পড়ে থাকি। কিন্তু সঠিকভাবে আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত পড়তে হবে এ বিষয়ে আমরা অনেকেই কোন ধারণা রাখি না। অনেকগুলো হাদিসে নবী করিম সাঃ এই নামাজের ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।
আওয়াবিন নামাজ কমপক্ষে ছয় রাকাত এবং সর্বাপেক্ষা ২০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারবে। ছয় রাকাত পড়ার সুযোগ না হলে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত মিলিয়ে ছয় রাকাত নামাজ পড়া যায়। তিরমিজি শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কখনো ছয় রাকাত আবার কখনো ৪ রাকাত আবার কখনো ১২ রাকাত আবার কখনো ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। { তিরমিজিঃ ৪৩৫} তবে বেশিরভাগ সময় তিনি ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন।
আওয়াবিন নামাজের সময়সূচী
আওয়াবিন নামাজ পড়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই আওয়াবিন নামাজের সময়সূচী সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। কারণ এই নামাজের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যার মধ্যে এই নামাজ আদায় করতে হবে।কিছু ওলামায়ে কেরামের মতে ফরজের পরই আওয়াবিনের সময় শুরু হয়। অতএব, দুই রাকাত সুন্নতসহ সর্বমোট ছয় রাকাত পড়ার দ্বারা আওয়াবিন পড়ার সওয়াব অবশ্যই পেয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ৮ টি ইবাদাত - রোজার ইবাদতের ফজিলত
তবে দুই রাকাত সুন্নত পড়ার পর ছয় রাকাত আওয়াবিন পড়াই উত্তম। মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির রহঃ থেকে বর্ণিত একটি মুরসাল হাদিসে আছে, নবী করিম সাঃ বলেছেন, 'মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজি ব্যক্তি যে নামাজ পড়ে একে সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিনের নামাজ) বলে।' {জামে সগিরঃ ২/৪২৭}
হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রাঃ থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেছেন, "মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে তার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।" {মাজমাউজ জাওয়াইদঃ ৩৩৮০} হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।"
আওয়াবিন নামাজের সূরা
আওয়াবিন নামাজের সূরা কোনটি পড়তে হবে এ বিষয় নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকে। আল বাহরুর রায়েক নামক কিতাবে রয়েছে সালাতুল আওয়াবিন হলো দুই মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে তিন সালামে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ। আবুল বাকা বলেন, সালাতুল আউয়াবিনের নিয়তে ছয় রাকাত নামাজ পড়া হবে। আর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা কাফিরুন এবং তিনবার সূরা এখলাস পড়বে। একথা শায়েখ আবদুল্লাহ বুস্তামি বলেছেন। {আল বাহরুর রায়েক, দারুল মারিফ, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ২৪৯}
রাউদুত তালিবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আসনাল মাতালিবে শাইখুল ইসলাম জাকারিয়া আনসারী বলেন, সালাতুল আউয়াবিন হলো মাগরিব ও এশার মাঝামাঝি সময়ে বিশ রাকাত নামাজ। {আসনাল মাতালিব শরহু বাউদুত তালিব, ১ম খন্ড, পৃ. ২০৬} তবে অধিকাংশ আলেম ও মাশায়েখে তরিকত দুই দুই রাকাত করে ছয় রাকাত সালাতুল আউয়াবিন আদায় করে থাকেন।
কোন নামাজের জন্যই কোন সুরা পাঠকে নির্দিষ্ঠ করেছেন আল্লাহ ও নবী সাঃ এর পক্ষে কোন হাদিস বা দলিল নাই। তাহলে আমরা বলতে পারি যে আওয়াবিন নামাজের সূরা নির্দিষ্ট করা নেই। আপনি যে কোন সূরা মিলিয়ে এই নামাজ আদায় করতে পারবেন।
আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়তঃ শেষ কথা
আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত, আওয়াবিন নামাজের সময়সূচী, আওয়াবিন নামাজের সূরা, আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত? এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় পাঠকগণ আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সঠিকভাবে নফল ইবাদত করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা উচিত।
আরো পড়ুনঃ মসজিদে প্রবেশের দোয়া ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ এবং ইসলামিক পোস্ট আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়। ১৬৮৩০
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url