নাপাক অবস্থায় যে ১০টি কাজ করা যাবে না তার তালিকা
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তা নিয়ে আপনি কি চিন্তিত বা আপনি কি জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আজ এই পোস্টে আমি নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তা বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পবিত্র অবস্থায় না থাকলে মুসলমানদের কিছু কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়াও এমন কিছু কাজ রয়েছে যা ছোট এবং বড় উভয় প্রকারের অপবিত্রতা অবস্থায় করা যায় না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না সে সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না
- নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না
- কোরআন স্পর্শ করা যাবে না
- নামাজ আদায় করা যাবে না
- তাওয়াফ করা যাবে না
- কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে না
- মসজিদে অবস্থান করা যাবে না
- নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না সে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন/উত্তর
- শেষ কথা
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না
এমন লোক রয়েছে যারা পবিত্র থাকতে পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা বজায় রাখতে পছন্দ করেন। এছাড়াও একটি আয়াত রয়েছে যা মানুষের পবিত্রতা এবং অপবিত্রতা সম্পর্কিতঃ নিঃসন্দেহে মুশরিকরা অপবিত্র সুতরাং তারা যেন তাদের শেষ বছরের পর মাসজিদুল হারামের কাছে না আসে। তাহলে এখানে স্পষ্ট যে আমাদের সবাইকে সবসময় পবিত্র থাকতে হবে। এখানে প্রশ্ন হল নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না। তাহলে চলুন নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তা নিচে জেনে নেওয়া যাক।
কোরআন স্পর্শ করা যাবে না
অল্প বা বেশি নাপাক উভয় অবস্থায়ই কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। সেটা যে কোনো কিছুর সাহায্যে হোক বা সরাসরি হোক। এই কথার উপর জোর দেওয়ার জন্য আল্লাহ বলেছেনঃ "শুদ্ধ ব্যতীত কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না"। অনেকে মনে করেন যে শুদ্ধ অর্থ ফেরেশতাদেরকেও বোঝায় তবে প্রকৃত পক্ষে এটি দ্বারা মানুষকেও বোঝায়। নাপাক অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা হারাম।
নামাজ আদায় করা যাবে না
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তার মধ্যে নামাজ ও একটি যেটা আপনি নাপাক অবস্থায় করতে পারবেন না। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আল্লাহ তোমাদের কারো নামাজ কবুল করেন না যারা বাতাস ছারার পর, পায়খানা বা প্রস্রাব করার পর যতক্ষণ না সে অজু করে।" সুতরাং এটা সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট যে নাপাক ব্যক্তির নামাজ বাতিল হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা জেনে নিন
যে ব্যক্তি অযু না করে মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করে কিন্তু একই সাথে জানে যে ইসলামে নাপাক থাকলে অজু না করে নামাজ হবে না তবুও সে পড়ছে তাহলে তার শাস্তি হবে। তবে যে ব্যক্তি অসাবধানতাবশত বা ভুল করে অজু ছাড়া নামাজ পড়েছে তার এই জন্য কোনো পাপ হবে না কিন্তু তার প্রার্থনা বাতিল বলে গণ্য হবে।
তাওয়াফ করা যাবে না
যেহেতু তাওয়াফ করা নামাজের সমতুল্য তাই নাপাক অবস্থায় তাওয়াফ করাও যাবে না। নবীজি বলেন, তাওয়াফকে সালাত হিসেবে গণ্য করা হয় কিন্তু নামাজ আর তাওয়াফ এর মধ্যে পার্থক্য হল এর সময় কথা বলা আল্লাহ বৈধ করেছেন আর নামাজের সময় কথা বলা নিষেধ করেছেন। এছাড়াও তিনি পিরিয়ড হওয়া মহিলাকে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষণ না সে নিজেকে পবিত্র করে।
কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে না
আলী ইবনে আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত, নাপাক অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে না এছাড়াও "নবী সাহাবি দের জন্য কুরআন তেলাওয়াত করতেন যদি তিনি পবিত্র অবস্থায় থাকতেন"। ঋতুস্রাব হওয়া মহিলা এবং প্রসব পরবর্তী রক্তপাতের অবস্থায় থাকা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই একই বিধান প্রযোজ্য।
আরো পড়ুনঃ মহিলাদের হজ্ব পালোনের নিয়মাবলী - নারীদের ইহরামের নিয়ম-বিধান
অতএব খুব বেশি অপবিত্র ব্যক্তির জন্য কুরআনের কিছু শব্দ তেলাওয়াত করা বৈধ কিন্তু কোরআন এ হাত না দিয়ে শুধু মুখে আপনি সব রকম দোয়া ও সূরা পড়তে পারেন বরং আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ছাড়াও সকল ধরনের যিকির করতে পারেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতেন।
মসজিদে অবস্থান করা যাবে না
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তার মধ্যে একটি হল নাপাক অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা যাবে না কিন্তু অপরিষ্কার অবস্থায় একজন ওযু করার জন্য মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া জায়েজ আছে। এখানে যেটি নিষেধ তা হল শুধুমাত্র মসজিদের ভিতরে থাকার জন্য নাপাক অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না। এক কথায় নাপাক অবস্থায় মসজিদের ভিতরে যাওয়া যাবে না এবং থাকাও যাবে না।
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না সে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন/উত্তর
অপবিত্র অবস্থায় দুআ করা যাবে কি?
এর অর্থ হল অজু ছাড়াই ইবাদাত করতে পারবেন কিনা। যদি আপনি খুব বেশি নাপাক না প্রস্রাব বা পায়খানা করেছেন কিন্তু অজু করেন নি তাহলে আপনি দোয়া করতে পারবেন কিন্তু অজু ছাড়া নামাজ হবে না। কিন্তু খুব জরুরী হলে কোরআন ওপর থেকে হাত দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় সরিয়ে রাখা যায় অনেক আলেম বলেছেন।
কিন্তু অজু ছাড়া কোরআন এ হাত না দেওয়ায় ভালো। আর যদি খুব বেশি নাপাক থাকেন যেমন সহবাস করা, মেয়েদের মাসিক হলে কোরআন হাত দিয়ে ছোয়া যাবে না। কিন্তু আপনি মুখে আল্লাহকে মনে করে দোয়া পড়তে পারেন। মানুষের মুখ কখন অপবিত্র থাকে না।
কোন তিনটি দোয়া প্রত্যাখ্যাত হবে না?
তিনজন আছে যাদের দুআ প্রত্যাখ্যান হয় নাঃ রোজাদার যখন ইফতার এর সময় দোয়া করে, ন্যায়পরায়ণ নেতার দোয়া এবং নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া কখন মিস হয়না।
নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়লে কি হবে?
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে অপবিত্র পোশাক পরে নামাজ পড়ে অর্থাৎ সে যদি নাপাক থেকে পবিত্র হতে সক্ষম হয় তবে তাকে অবশ্যই পবিত্র হয়ে তাকে আবার নামাজ পড়তে হবে। নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়লে তা কবুল হবে না।
ইসলামে কি জিনিস আপনাকে অপবিত্র করে?
যে জিনিসগুলি সবসময় অপবিত্র হয় সেগুলিকে নাজাস বলা হয় এবং এর মধ্যে রয়েছে শূকর, রক্ত, কুকুরের লালা এবং ওয়াইন। সম্ভব হলে এই সমস্ত জিনিস এড়িয়ে চলা উচিত এবং যদি পোশাক বা থালা-বাসন এই জিনিসগুলির সংস্পর্শে আসে তবে সেগুলিকে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে যতক্ষণ না কোনও গন্ধ বা অন্যান্য কিছু দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় - নারীদের হজের কিছু মাসআলা
গোসল ছাড়া নামাজ পড়া কি ঠিক?
এটাকে প্রাধান্য দেওয়া এই কথার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যে কেউ যদি গোসল না করে তবে তার নামাজ হবে কিনা। যদি কারো ঘামের কারণে বা তার কাপড় ও শরীর থেকে দুর্গন্ধের কারণে অন্যের ক্ষতি হয় তাহলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায় এবং তা না করে সালাত পড়া যাবে না। আর এটা তো আমরা জানি নাপাক থাকলে সুন্নতি গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হতে হয়।
মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ফোনে কুরআন পড়া কি ঠিক?
পিরিয়ডের সময় মহিলাদের জন্য আল-কুরআন তেলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। তাই এই সময় কোনোভাবে কোরআন পড়া যাবে না।
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না - শেষ কথা
নামাজ পড়ার আগে ওজু করতে হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে গোসল করতে হয়। যাইহোক এমন সময়ে যখন পানি পাওয়া যায় না তখন পরিষ্কার শুষ্ক মাটি দিয়ে অজু করা যেতে পারে যা তায়াম্মুম নামে পরিচিত।যদি শরীরে বা কাপড়ে প্রস্রাব, মল, বীর্য বা অ্যালকোহলের চিহ্ন দেখা যায় তাহলে গোসল অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
অনেক আলেম রা সেই তালিকায় রক্ত ও পুঁজ যোগ করে। কাপড় ধুতে হবে এবং শরীরের আক্রান্ত অংশ বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে অথবা পুরো শরীর গোসল দিতে হবে। নাপাক অবস্থায় আল্লাহর ইবাদাত করা যায়না। উপরের আলোচনা থেকে নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তা জানতে পারবেন। ২২৪৯৮
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url