ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে ঘুমানো উত্তম
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম বলেছে সাধারণত মুসলিম হিসেবে আমাদের সেই অনুযায়ী ঘুমাতে হবে। আমাদের শরীরের জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঘুমানোর আগে ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম বলেছে সাধারণত সেভাবেই ঘুমাতে হবে। আপনাদের জানার সুবিধার্থে ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম জেনে নেওয়া যাক।
কনটেন্ট সূচিপত্রঃ ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম
- ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ
- ইসলামের দৃষ্টিকোণে যেভাবে ঘুমানো উত্তম
- কোন সময়ে ঘুমালে বরকত কমে যায়
- ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
- উপসংহার
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ঘুম তার ব্যতিক্রম নয়। আপনি কিভাবে ঘুমাবেন সাধারণত ইসলামে এর সঠিক নিয়ম বলা হয়েছে। আমরা জানি যে ঘুম আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত। কারণ সারাদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি রাতে ঘুমের মাধ্যমে শরীর রিচার্জ করি। আল্লাহ তায়ালা বিশ্রাম নেওয়ার জন্যই রাত তৈরি করেছেন।
আরো পড়ুনঃ বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় বলার ১১ টি নিয়ম
আমরা অনেক মুসলিম রয়েছি যারা ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম এ বিষয়গুলো জানিনা। কিন্তু একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত। আমরা যখন এই বিষয়গুলো মেনে চলব তখন ঘুম আমাদের জন্য ইবাদত হিসেবে কাজ করবে।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু নিয়মে ঘুমাতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো উপুড় হয়ে ঘুমানো। এভাবে ঘুমানো অপছন্দনীয়। কিন্তু আমরা অনেকেই উপুড় হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করে থাকি। এটি কিছুক্ষণের জন্য আরামদায়ক মনে হলেও দীর্ঘ সময় এভাবে ঘুমালে আমাদের মেরুদণ্ড হৃদপিণ্ড এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন সমস্যা করতে পারে।
অনেক পন্ডিতগণ বলে থাকেন উপুড় হয়ে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে আবু জার রাঃ বলেন, আমি উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবী সাঃ আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে তার পা দ্বারা খোঁজা মেরে বললেন, হে জুনাইদিব এটা তো জাহান্নামিদের শয়ন। {ইবনে মাজাহঃ ৩৭২৪}
এছাড়া ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাম কাত হয়ে ঘুমাতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ আমরা সকলেই জানি যে বামদিকে আমাদের হৃৎপিণ্ড অবস্থিত। যদি দীর্ঘক্ষণ আমরা বাম কাজ হয়ে ঘুমায় তাহলে আমাদের হৃদপিন্ডের উপরে চাপ পড়ে যার ফলে হৃৎপিণ্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। সাধারণত তাই আমাদের নবী সাঃ সবসময় ডান কাত হয়ে ঘুমাতেন এবং আমাদেরকে ডান কাত হয়ে ঘুমাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে যেভাবে ঘুমানো উত্তম
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম সেগুলোও জেনে নিতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি ঘুমানোর সময় উপুড় হয়ে ঘুমানো উচিত নয়। এভাবে ঘুমালে আমরা শারীরিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। তাই ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে ঘুমানো উত্তম সে বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে।
আমরা অনেকেই চিৎ হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করে থাকি। চিত হয়ে ঘুমানো ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ রয়েছে কিন্তু আপনাকে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। যখন আপনি চিৎ হয়ে ঘুমাবেন তখন আপনার লজ্জাস্থান যেন দেখা না যায়। কারণ এভাবে ঘুমানোর সময় আমাদের লজ্জাস্থানের উপরে কাপড় পড়ে যেতে পারে। তাই এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমানোর ক্ষেত্রে সব থেকে উত্তম এবং উন্নতি পদ্ধতি হলো ডান কাত হয়ে ঘুমানো। রাসূলুল্লাহ সাঃ যখন বিশ্রাম নিতেন তখন ডান দিকে কাত হয়ে বেশি রান নিতেন। বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন তখন তিনি ডান পাশের ওপর নিদ্রা যেতেন। তাই এই সুন্নাতটি পালন করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ডান পাশ হয়ে ঘুমাতে হবে।
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও ডান পাশ হয়ে ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো দিক। কারণ আমরা যে সকল খাবার খায় সাধারণত এই খাবারগুলো পাকস্থলীর খাদ্য শোষণ করে এই খাদ্য শোষণের পথ ডানদিকে অবস্থিত। তাই আমরা যদি ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমায় তাহলে খাবার পরিপাকে সুবিধা হয়। এছাড়া আমাদের হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং হার্টের সমস্যা হয় না।
কোন সময়ে ঘুমালে বরকত কমে যায়
আমরা জানি যে ঘুম আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। সাধারণত আমাদের শরীরকে রিচার্জ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ঘুম। সারাদিন কাজ করার পরে আমরা যখন সারারাত ঘুমাই তখন আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। কিন্তু এমন সময় রয়েছে আপনি যদি সেই সময়টিতে ঘুমান তাহলে আল্লাহ তায়ালার বরকত থেকে বঞ্চিত হবেন।
আরো পড়ুনঃ শবে কদরের ফজিলত - লাইলাতুল কদরের ফজিলত
আমরা জানি যে ফজরের নামাজের মাধ্যমে আমাদের দিন শুরু হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সকালকে এই উম্মতের জন্য বরকতময় করার দোয়া করেছেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ আমার উম্মতের ভোরবেলাতে তাদেরকে বরকত ও প্রাচুর্য দান করুন।{সুনানে তিরমিজিঃ ১২১২} তাই আপনি যদি সকালে কোন কাজ শুরু করেন তাহলে বরকত পাবেন।
কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যায় অনেকেই ফজরের নামাজ আদায় করার পরে ঘুমিয়ে যান। বিশেষ করে শহরে এ বিষয়টি বেশি লক্ষ্য করা যায়। কেউ আবার ফজরের নামাজ আদায় করে না অথচ রাসুলুল্লাহ সাঃ একাধিক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে এশার নামাজের পরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অন্যতম উপকারিতা হলো ফজর নামাজের জন্য খুব সহজেই পূর্ণ শক্তির সাথে জাগ্রত হওয়া যায়। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলে ফজরের নামাজের জন্য উঠলে কোন অলসতা বোধ হয় না, এমনকি তখন আরো আরাম বোধ হয়। অনেক আলেমগণ ফজরের নামাজের পরে ঘুমানো কে মাকরুহ মনে করে থাকেন। সাধারণত তাই ফজরের নামাজের পরে ঘুমাতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের বেশ কিছু কাজ রয়েছে ঘুমানোর আগে। আমরা যদি এই কাজগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে পারি তাহলে খুব সহজেই আল্লাহ তায়ালার ইবাদত পালন করা হবে। এ ছাড়া শয়তান এবং খারাপ জিন থেকে সুরক্ষিত থাকবো। ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম জানা হয়েছে তাহলে চলুন ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- ঘুমানোর আগে ওযু করে ঘুমানো
- আল্লাহ তায়ালার নামে দরজা বন্ধ করা
- ঘুমানোর আগে আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা চাওয়া
- ঘুমানোর সময় অবশ্যই ডান কাত হয়ে ঘুমানো
ঘুমানোর আগে ওযু করে ঘুমানো -- আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখন অবশ্যই অজু করে ঘুমাতে যাবেন। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে অজু করে তারপরে ঘুমাতে যেতেন। এতে করে সারারাত আল্লাহ তায়ালা আপনার হেফাজতে একটি ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন।
আল্লাহ তায়ালার নামে দরজা বন্ধ করা -- সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরেই আল্লাহতালার নামে দরজা বন্ধ করতে হবে। কারণ সন্ধ্যা হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের খারাপ জিন বাইরে চলাফেরা করে। আপনি যেন এ সকল খারাপ জিন থেকে হেফাজতে থাকেন তার জন্য আপনাকে ভালোভাবে আল্লাহতালার নামে দরজা বন্ধ করে নিতে হবে। এতে করে খারাপ জিন ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।
ঘুমানোর আগে আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা চাওয়া -- ঘুমানোর আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হল আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। কারণ আজকে রাত আপনার জন্য এই পৃথিবীতে শেষ রাত হতে পারে। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘুমানোর দোয়া করে ঘুমাতে হবে।
ঘুমানোর সময় অবশ্যই ডান কাত ঘুমানো -- আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ যখন ঘুমাতেন তখন ডান কাত হয়ে ঘুমাতেন। তাই আপনি যখন ঘুমাবেন তখন অবশ্যই সব সময় ডান কাত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। এতে আপনার শারীরিক বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা হবে এবং একটি সুন্নত পালন করা হবে।
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তমঃ উপসংহার
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ, ইসলামের দৃষ্টিকোণে যেভাবে ঘুমানো উত্তম, কোন সময়ে ঘুমালে বরকত কমে যায়, ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ, ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম এ বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আপনারা যদি সঠিকভাবে ঘুমানোর নিয়ম না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন।
আরো পড়ুনঃ নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম - সুন্নত নামাজে সুরা পড়ার নিয়ম
আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে অবশ্যই সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন। আর এই ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। ২০৮৭৬
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url