OrdinaryITPostAd

আখেরি চাহার সোম্বা কেন পালন করা হয় এবং এর গুরুত্ব

আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন? আমরা অনেকেই এই বিষয়টি অজানা। যেহেতু বাংলাদেশসহ আরো মুসলিম দেশগুলোতে এই দিনটি গুরুত্বের সাথে পালন করা হয় তাই আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন? সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা উচিত। এই আর্টিকেলে আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন? বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আপনি যদি আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন এ বিষয়ে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। তাহলে চলুন দেরি না করে আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন? বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন

আখেরি চাহার সোম্বা কি?

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে ধর্মীয় উৎসব হল দুইটি। আখেরি চাহার সোম্বা কোন ধর্মীয় উৎসব নয়। এটি মানুষের তৈরি একটি আনন্দময় মুহূর্ত। সাধারণত তাই বর্তমান সময়ের অনেক ইসলাম ধর্মাবলম্বীর মানুষ আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন পালন করা হয় এ বিষয়ে কোন ধারণা রাখেনা। যেহেতু এটি অনেক গুরুত্বের সাথে পালন করা হয় তাই আমাদেরকে আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন? এ বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা দিন করনীয় - আখেরি চাহার সোম্বা আমল

আখেরি চাহার সোম্বা মূলত আরবি এবং ফারসি শব্দের সংমিশনের তৈরি হয়েছে। এই বাক্যের প্রথম অক্ষর আখেরি এর শব্দের অর্থ হলো শেষ। ফারসি শব্দ চাহার শব্দের অর্থ হলো সফর মাস এবং সোম্বা শব্দের অর্থ হলো বুধবার। তাহলে আখেরি চাহার সোম্বা এর সম্পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় সফর মাসের শেষ বুধবার। এই দিনটি মুসলিম উম্মার জন্য অনেক খুশি এবং আনন্দের একটি দিন।

এখন আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আখেরি চাহার সোম্বা কি? আশা করি খুব সহজেই উত্তর দিতে পারবেন যে এই তিনটি শব্দের অর্থ হলো সফর মাসের শেষ বুধবার। কারণ এই দিনে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাঃ অসুস্থ থেকে অনেকটা সুস্থ হয়েছিলেন এবং স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের মধ্যে আচরণ করছিলেন। তাই মুসলিম উম্মাহ এই দিনটি আনন্দের সাথে উদযাপন করে।

আখেরি চাহার সোম্বা কেন পালন করা হয়

আমরা যেহেতু আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন? এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি সেহেতু অবশ্যই আখেরি চাহার সোম্বা কেন পালন করা হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীর মানুষেরা এই দিনটি একটু বেশি গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে।আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন পালন করা হয়? জেনে নিন।

এই দিনটি পালনের মূল কারণ হচ্ছে সফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ তারিখ ছিল ২৮ সফর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাঃ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে সাময়িকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই এই দিনটিকে স্মরণে রাখার জন্য মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ তায়ালার প্রতি ইবাদত করেন এবং উৎসবের সাথে এই দিনটি পালন করে থাকেন।

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এই দিনটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং অনেক আনন্দের সাথে তিনটি পালন করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ গুলোতে বহু যুগ থেকে আখেরি চাহার সোম্বা ইসলাম এবং মুসলিমদের সংস্কৃতির অন্যতম আচার অনুষ্ঠান হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে সারা বিশ্বে এই দিনটি একসাথে পালন করা হয় না। যেহেতু সারা বিশ্বে চাঁদ একসাথে দেখা যায় না।

একসময় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড পরিমাণে অসুস্থ হয়। সাহাবায়ে কেরাম তিনাকে অনেক ওষুধ খাওয়াই তারপরেও তিনি সুস্থ হয় না। তখন সাহাবায়ে একরাম অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তারা সবাই আশা ছেড়ে দেয় যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আর সুস্থ হয়ে উঠবেন না তিনি হয়তোবা আল্লাহ তায়ালা তাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবেন।

ইবনে ইসহাক উল্লেখ করেন, সকল মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ রবিউল আউয়াল মাসের শুরুর দিকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সুষ্ঠু হয়ে যান। সেই দিনটি ছিল সফর মাসের ২৮ তারিখ এবং বুধবার। এরপরে তিনি প্রথমে গোসল করেন এবং তার দুই নাতি হাসান এবং হোসাইন রাঃ এর সাথে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। এই খবর পেয়ে মদিনা বাসি অনেক খুশি হয়।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে থাকে। মদিনা বাসি এতটাই খুশি হয় যে তারা আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার জন্য নামাজ আদায় করে। আবার অনেকেই এই দিনটি অনেক আনন্দের সাথে উদযাপন করে। সাময়িকভাবে সুস্থ থাকার পরে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ১২ রবিউল আউয়াল আল্লাহতালার নিকটে চলে যান।

আখেরি চাহার সোম্বা এর গুরুত্ব

অনেকের কাছে আখেরি চাহার সোম্বা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। তবে অনেক মুসলিম রয়েছে যারা এই দিনটিকে পালন করা বিদআত মনে করে থাকে। এর জন্য প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেন? এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। কারণ বাংলাদেশে এই দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে করে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের মানুষ এই দিনটি কিভাবে পালন করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা এর ইতিহাস - আখেরি চাহার সোম্বা এর দোয়া

বিভিন্ন কিতাবের মধ্যে পাওয়া যায় যে যখন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যুর সময় হয়ে যায় সাধারণত তখন তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে সাহাবায়ে একরাম অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করায় তবে তিনি সুস্থ হয় না। যার ফলে সকলেই অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে যায় এবং আশা ছেড়ে দেয়।

সিরাতে রাসুলুল্লাহ সাঃ গ্রন্থে ইবনে ইসহাক বলেছেন, সফর মাসের শেষ কি রবিউল আউয়াল মাসের শুরুতে শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাঃ এর আল্লাহর সম্মানজনক আল্লাহ তায়ালার নিকটে যাওয়ার অন্তিম যাত্রায় অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন এক রাতে তিনি জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়েছিলেন সেখানে সকল মৃত মানুষদের জন্য তিনি দোয়া করেছিলেন। ঘরে ফেরার পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সাধারণত এই অসুস্থ হয়ে যাওয়াটাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যু যাত্রার প্রথম সূচনা হয়। কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পরে তিনি সফর মাসের শেষ বুধবার সকালবেলায় তিনি হঠাৎ জ্ঞান ফিরে পান। আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ আচরণ করেন এবং নিজেকে সুস্থ অনুভব করেন। এর পরে সকালে তিনি গোসল করেন এবং তার দুই নাতি হযরত হাসান রাঃ এবং হযরত হুসাইন রাঃ এর সঙ্গে দুপুরের খাবার খান।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সুস্থ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারের সকল সদস্য অনেক বেশি আনন্দ হয় এবং সাহাবীরাও অনেক বেশি আনন্দ হয়েছে। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করে নফল নামাজ আদায় করেন তারা। এছাড়া আল্লাহ তার নামে গরীব দুঃখী মানুষদের মাঝে সাধ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত করেন। বিভিন্ন স্বাভাবিক তাদের সাধ্য অনুযায়ী দান করেন।

হযরত আয়েশা রাঃ এর বর্ণনায়, সফর মাসের শেষ বুধবার হযরত মুহাম্মদ সাঃ হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপরে আবার সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাধারণত এই ঘটনাটি আজও মুসলিম উম্মাহ মনে রেখেছে এবং সেই দিনের আনন্দময় মুহূর্তকে মনে করার জন্য এই দিনটি পালন করা হয়।

আখেরি চাহার সোম্বা আমল সমূহ

অনেক মুসলিম রয়েছে যারা আখেরি চাহার সোম্বা এই দিনটিকে আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। কিন্তু অনেকেই আছে যারা এই দিনে ঢোল তবলা এবং গান-বাজনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে গান-বাজনা করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। সে হতো আমরা বলতে পারি যে আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে যারা গান-বাজনা করে এটি সম্পূর্ণ বিদআত।

কোরআন হাদীসে আখেরি চাহার সোম্বা সম্পর্কে কোন ধরনের দিকনির্দেশনা দেওয়া নেই। কিন্তু অনেকেই অনেক রকম ভাবে এই দিনটি পালন করে থাকে। যদি আপনি একজন প্রকৃত মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে এই দিনটিতে অবশ্যই রোজা করুন। তবে বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ আলেমগণ এই দিনটির বিপক্ষে অবস্থান করে।

যেহেতু এই দিনে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ অসুস্থ থেকে সুস্থ হয়েছিলেন এটি অবশ্যই আনন্দের দিন। তবে এই দিনটিতে কোনরকম আচার অনুষ্ঠান পালন করা সম্পূর্ণ বিদআত। একজন মুসলিম কখনোই এ সকল দিন পালন করতে পারেনা। তাই আপনি যদি আমল করতে চান তাহলে অবশ্যই এই দিনে রোজা এবং আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে নামাজ আদায় করতে পারেন।

আখেরি চাহার সোম্বা কি এবং কেনঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে আখেরি চাহার সোম্বা কি? আখেরি চাহার সোম্বা কেন পালন করা হয়? আখেরি চাহার সোম্বা এর গুরুত্ব, আখেরি চাহার সোম্বা আমল সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যেহেতু আমাদের দেশে এ বিষয়টি খুবই জনপ্রিয় তাই অবশ্যই আমাদেরকে জেনে রাখা উচিত।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা কি - আখেরি চাহার সোম্বা মানে কি

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে।২৫৪২৭

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url