OrdinaryITPostAd

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা ১০০০+ শব্দের

প্রতিবছরই ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা প্রতিযোগিতা দেশ ব্যাপী আয়োজিত হয়ে থাকে। সেজন্য অনেকেই ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনাতে কি কি তথ্য কিভাবে লিখবেন সে বিষয়টি অনুসন্ধান করে থাকেন। আপনাদের জন্য আজকের এই পোস্টে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় চমৎকার ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে অনেকের বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকে যেখানে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা কিংবা অনুচ্ছেদ অথবা বক্তৃতা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা থাকাটা জরুরি। ঈদে মিলাদুন্নবী এমন একটি ঐতিহাসিক দিন যেদিনে একাধারে রাসূল (সাঃ) এর জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালিত হয়। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা কিভাবে লিখবেন সেটি বোঝার পাশাপাশি ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জেনে নিতে পারবেন। অতএব, পুরো পোস্টটি এখনি পড়ে ফেলুন।

পোস্ট সূচিপত্র - ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা বিস্তারিত জানুন

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে ধারণা 

ঈদে মিলাদুন্নবী হলো আমাদের শেষ নবী তথা রাহমাতুল্লাহ আলামিন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দুনিয়াতে আগমন উপলক্ষে এক আনন্দ উৎসব। হিজরী ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে বিশ্বব্যাপী ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয়। এটি আমাদের প্রিয় নবীর জন্মদিন। আবার রাসূল (সাঃ) এই ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখেই মৃত্যুবরণ করেন। অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) এর জন্ম ও মৃত্যু একই দিবসে হয়েছিল। তাই ঈদে মিলাদুন্নবীর এই দিনটি ইসলামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিবস।

এই দিনে ইসলামের আরো সব ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়। ১২ই রবিউল আউয়াল দিনটির পবিত্রতা এতই বেশি যে, এই দিনে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছে। কারণ এই দিনে রোজা পালন করলে মহান আল্লাহতা'আলা বান্দার জন্য অসংখ্য বরকত দান করেন। তাই এই দিনে আমরা বেশি বেশি সালাত আদায়ের পাশাপাশি রোজা রাখার চেষ্টা করব। এই পোস্টের পরবর্তী অংশ থেকে আপনারা ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা লেখার গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য এক নজরে জানতে পারবেন। 

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা 

ইসলামের ইতিহাসে ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সেজন্য ঈদে মিলাদুন্নবীতে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। যদিও অনেক আলেম ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান আয়োজন করার ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কারণ ইসলাম কোন বাড়াবাড়ির ধর্ম নয়, তাই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোন বিষয় ঈদে মিলাদুন্নবীর সাথে যুক্ত করা উচিত নয়। ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা লেখার জন্য আপনাকে বিভিন্ন তথ্য জানতে হবে। 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে সাহাবাদের যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন অনুষ্ঠান পালিত হতো না। ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রচলন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর কয়েকশ বছর পরে শুরু হয়। রাসুল (সাঃ) সোমবারে রোজা রাখতেন এবং অপরকে এই দিনে রোজা রাখার জন্য তাগিদ দিতেন। রাসুল (সাঃ) বলেন, "আমি এই দিনে নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছি এবং এই দিনেই আমি দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছি" (সহীহ মুসলিম: হাদিস নং- ১১৬২)। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম দিবসের গুরুত্ব তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন। 
বর্তমানে ঈদে মিলাদুন্নবীতে মিলাদ-কিয়াম আয়োজনের প্রচলন রয়েছে। ৬০৪ হিজরিতে আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দিন কুফুরি ইরাকের মুসিল শহরে সর্বপ্রথম মিলাদের প্রচলন করেন। তারপর সেখান থেকে সেটি বিস্তৃতি লাভ করে আজকের ঈদে মিলাদুন্নবী উৎসবে পরিণত হয়েছে। আজকে যে আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হচ্ছে তা ইসলামের সাথে চরমভাবে সাংঘর্ষিক এবং এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। কেননা কোরআন হাদিসে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বিশেষ কোনো উল্লেখ নেই। 

অনেকে ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল সম্পর্কে জানতে চান। সকলের জন্য ঈদে মিলাদুন্নবীর উত্তম আমল হলো, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশ মোতাবেক সোমবারে নফল রোজা আদায় করা। নবীজির (সাঃ) তাঁর জীবন দশায় কখনো নিজের জন্মদিন পালন করেননি। সাহাবায়ে কেরাম ও ইমামগণও নবীজীর জন্মদিন পালনের ব্যাপারে কিছু বলেননি। তাই আমাদের ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করে নামাজ-রোজা সঠিকভাবে আদায়ের মাধ্যমেই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা উচিত। 

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন 

রাসূলের যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত না হলেও আমাদের দেশে অনেকেই আবেগের বশীভূত হয়ে নবীজির জন্মদিন সাড়ম্বরে পালন করে থাকেন। আপনারা ইতোমধ্যে পোস্টের পূর্ববর্তী অংশে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা লেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মত ঘটনা এই পৃথিবীতে আর কখনো ঘটবে না। তাই এই দিবসটির গুরুত্ব আমাদের সঠিকভাবে উপলব্ধি করা উচিত। 

প্রতিবছর ঈদে মিলাদুন্নবীতে আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে গজল, কিরাত, আযান ইত্যাদি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা লেখার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঈদে মিলাদুন্নবীর এ সকল আয়োজন সত্যি প্রশংসনীয়। কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাস্তায় বর্ণিল আলোকসজ্জা, নারী পুরুষ একত্রে শোভাযাত্রা, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ইত্যাদি বিষয়গুলো কোনভাবেই ইসলামের সাথে যায় না। তাই এসব অনুষ্ঠান পালন না করাই উত্তম। 
রাসূল (সাঃ) তাঁর বিদায় হজ্বে বলে গিয়েছেন, জীবনের প্রতিটি চলার পথে আমরা যেন তার দেখানো জীবনাদর্শ অনুসরণ করি, তাহলে আমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবো না। তাই রাসূলের যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী সহ যে সকল অনুষ্ঠান পালিত হয়নি তা আমরা বর্জন করব। ইসলামিক পদ্ধতিতে যতটুকু সম্ভব ১২ই রবিউল আউয়ালের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সকলের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। পোস্টের পূববর্তী অংশ হতে আপনারা ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনার বিষয়াবলী আবারও পড়ে নিতে পারেন। 

ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী 

আমাদের দেশের সর্বপ্রথম ১৯৭৪ সালে আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদীয়ার উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জশনে জুলুস আয়োজিত হয়। ঈদে মিলাদুন্নবীর আয়োজন যদি আশেকে রাসুলের অন্তর্ভুক্ত হত তবে অবশ্যই সাহাবায়ে কেরামগণ তা যথার্থভাবে পালন করতেন। কিন্তু কুরআন হাদিসের কোন দলিল দ্বারা তাদের ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের কোন বিষয় প্রমাণিত হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে নামাজ হলো সর্বোত্তম ইবাদত। তাই যেকোনো বিশেষ দিবসে নফল নামাজই হতে পারে সর্বোত্তম আমল। 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "মহান আল্লাহ আমাদের জন্য দুটি দিবসকে উৎসবের দিন হিসেবে ধার্য করেছেন, তা হলো: ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর" (আবু দাউদ - ১১৩৬)। এই হাদীসটি থেকে এটি সুস্পষ্ট হলো যে দুই ঈদ ব্যতীত ইসলামে আর কোন ঈদ নেই। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করাও জায়েজ নয়। সুতরাং,  রাসূলের দেখানো জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা সকলের ঈমানী দায়িত্ব। ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা লেখার জন্য আপনারা যথেষ্ট তথ্য পেয়েছেন বলে আশা করছি। 

আমাদের দেশে অনেক আলেম কুরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবীকে এমন একটি বিষয় হিসেবে আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছেন, যেন এটিকে আমরা উৎসবের অনুষ্ঠান বলে মনে করি। কিন্তু এর পুরোটাই হল বিদআত। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, "স্মরণ করো আল্লাহর নিয়ামতকে যা তোমাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে।" (সূরা বাকারা- ২৩১)। সুতরাং আমরা কেবল কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত উপায়েই সর্বদা ইসলামী আচার অনুষ্ঠান পালন করব। 

শেষ বার্তা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকলে নিশ্চয়ই আপনারা ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সেই সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা লিখবার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে পেরেছেন। আপনারা চাইলে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা লিখার এ সকল তথ্য আপনার বন্ধুদের জানাতে পারেন। ফলশ্রুতিতে তারাও এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হতে পারবে।
সেজন্য এই পোস্টটি তাদের মাঝে শেয়ার করে দিন। ইসলামের যেকোনো আচার অনুষ্ঠান পালন করার পূর্বে অবশ্যই বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে, সে সব অনুষ্ঠান নবী ও রাসুলের যুগে পালিত হয়েছে কিনা। তা না হলে আমরা বিদআতের মুখে পতিত হতে পারি। তাই এ ব্যাপারে প্রত্যেকটি মুসলিমকে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। হক্বাণী আলেমদের পরামর্শ গ্রহণ করে আমল করতে হবে। পরিশেষে, নিত্য নতুন আরও ইসলামিক পোস্ট পেতে সর্বদা আমাদের সাথেই থাকুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url