OrdinaryITPostAd

আজ পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৩ কিনা জেনে নিন

আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা? আখেরি চাহার সোম্বা কবে পালিত হবে এই বিষয়টি অনেকেই অনুসন্ধান করছেন। এই পোস্টেটি থেকে আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা কিনা সেই বিষয়টি জেনে নিতে পারবেন। তাই যারা আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা কিনা জানতে চাচ্ছেন তারা সম্পূর্ণ পোস্টটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।
চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে সফর মাসের শেষে আখেরি চাহার সোম্বা পালন করে থাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। দেখতে দেখতে আমরা সফর মাস অতিবাহিত করছি। ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের আখেরি চাহার সোম্বা কবে পালিত হবে তা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা সেই তথ্যটি জানার পাশাপাশি আখেরি চাহার সোম্বার গুরুত্ব, শিক্ষা ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিশদভাবে জেনে নিতে পারবেন। অতএব, এখনই পোস্টটি পড়া শুরু করুন।

পোস্ট সূচিপত্র - আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা জেনে নিন

আখেরি চাহার সোম্বা কী

আখেরি চাহার সোম্বা হলো মূলত একটি শব্দযুগল, যা আরবী ও ফার্সি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। হিজরী বছরের দ্বিতীয় মাস হলো সফর। এই সফর মাসের শেষ বুধবার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আখেরী হওয়ার সোম্বা পালন করে থাকে। এই দিনে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ রোগ মুক্তি ঘটেছিল। তাই এই দিনটির স্মরণে আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা হয়। আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা হবে, সেই তথ্যটি আপনারা এই পোস্টের পরবর্তী অংশ থেকে জেনে নিতে পারবেন।

আখেরি চাহার সোম্বার প্রেক্ষাপট

একদা ইয়াহুদীগণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দ্বীন কায়েমের চেষ্টাকে ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে যাদু করেছিল। ইয়াহুদিরা নবীজিকে জাদু করার জন্য তাঁর দাঁত ও চুল মোবারক সংগ্রহ করে, তারপর একটি মোমের পুতুল তৈরি করে তাতে ১১ টি সুঁচ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর একটি সুতোয় ১১ টি গিরা দিয়ে সেই পুতুলকে একটি প্রবাহমান কূপের ভেতরে পাথর চাপা দেওয়া হয়। এর প্রভাবে দীর্ঘ ছয় মাস বিশ্বনবী (সাঃ) শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
এমতাবস্থায় মহান আল্লাহর নির্দেশে জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম, নবীজির উপরে সূরা ফালাক ও সূরা নাসের সর্বমোট ১১ টি আয়াত অবতীর্ণ করলেন। নবীজি ওহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহর এই বার্তা জানতে পারলেন। তারপর আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় বান্দা হযরত আলী (রাঃ) কে উক্ত কূপের ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি কূপের ভেতরে প্রবেশ করে সেখানকার সকল পানি বাহিরে বের করে দিলেন এবং পাথরের নিচ থেকে জাদুর যত সামগ্রী ছিল তা তৎক্ষনাৎ বের করলেন।

তখন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ফালাক ও সূরা নাসের সবগুলো আয়াত পাঠ করলেন। প্রত্যেকটি আয়াত পাঠকালে জাদুর সেই এক একটি গিরাগুলো খুলতে থাকলো। তারপর আল্লাহর প্রিয় হাবীব নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করলেন এবং আরোগ্য লাভ করলেন। ওলামায়ে কেরামগণের মতে সেই দিনটি ছিল সফর মাসের সর্বশেষ বুধবার। সে হিসাবে আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা, এই তথ্যটি এবার আপনারা জানতে পারবেন। 

আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা?

চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট থেকে পবিত্র সফর মাস শুরু হয়। সে হিসাব অনুযায়ী ২৭ সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, রোজ বুধবার পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা পালিত হবে। সফর মাসের চাঁদ দেখার সময় বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন আখেরি চাহার সোম্বা কবে নাগাদ পালিত হবে সেই ঘোষণা প্রদান করেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা ইত্যাদি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন আখেরি চাহার সোম্বার দিনক্ষণ ঠিক করেন। 

আখেরি চাহার সোম্বার দিনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সে হিসাবে ১৩ ই সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস আদালত বন্ধ থাকবে। দিনটির তাৎপর্য সকলের নিকট তুলে ধরতে সরকারের এই দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সুতরাং, পোস্টের এই অংশ থেকে আপনারা বিস্তারিতভাবে জেনে ফেললেন আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা কিনা!

আখেরি চাহার সোম্বার দালিলিক ভিত্তি কী

প্রিয় বন্ধুরা পোস্টের আগের অংশ থেকে আপনারা ইতোমধ্যে আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা কিনা সেই তথ্যটি জানতে পেরেছেন। অনেক আলেমগণ আখেরি চাহার সোম্বাকে ভিত্তিহীন দিবস বলে উল্লেখ করেন। কারণ এই দিনে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠান পালন করেননি। তবুও কিছু কিছু কিতাবে আখেরি চাহার সোম্বার বিষয়ে বিভিন্ন উল্লেখ পাওয়া যায়।
  • রাসুল (সাঃ) কে যখন ইহুদী কর্তৃক যাদু-টোনা করা হয়েছিল তাখন তাঁর শারীরিক সুস্থতার জন্য যে সাত কুয়া থেকে সাত মশক পানি আনা হয়েছিল এবং তাঁর আরোগ্য লাভের জন্য তাঁর দেহ মোবারককে ধৌত করা হয়েছিল, তা কি বুধবারের ঘটনা না বৃহস্পতিবারের এ বিষয়ে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। ইবনে কাসির এটিকে বৃহস্পতিবারের ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৪/১৯৩, সিরাতুন নবী, শিবলী নোমানী: ২/১১৩)।
  • বুধবারের পর রাসুল (সাঃ) আর গোসল করেননি প্রচলিত এই তথ্যটি সমীচীন নয়। কেননা এরপর এক রাতে এশার সালাতের পূর্বে নবীজির গোসল করার ঘটনা সহিহ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। (মুসলিম: হাদিস নং- ৪১৮, বুখারি হাদিস নং - ৬৮১)।
  • কিন্তু বর্তমানে যে পদ্ধতিতে আখেরি চাহার সোম্বা পালিত হয়, সে বিষয়টি পালন করার দুর্বলতম কোন দলিল হাদীস শরীফে উল্লেখ নেই। তাই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোন উপায়ে আমরা আখেরি চাহার সোম্বার দিনটি পালন করব না। নফল ইবাদত আদায়ের মাধ্যমে দিনটি পালন করলে শরীয়তে কোন বিধিনিষেধ নেই। তাই আমরা চাইলে দিনটিতে বেশি বেশি নফল ইবাদত আদায় করতে পারি। তবে মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি খুশি হয়ে আমাদের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। আর যদি এখনও আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা এই তথ্যটি না জেনে থাকেন তবে পোস্টের পূর্বের অংশ পুনরায় পড়ুন।

আখেরি চাহার সোম্বা যেভাবে পালিত হয়

নবীজির আরোগ্য লাভ করার এই ঐতিহাসিক দিনটিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আখেরি চাহার সোম্বা হিসেবে পালন করে থাকেন। এই দিনে মুসলিম সম্প্রদায় মহান আল্লাহর দরবারে যাবতীয় রোগ-শোক, বালা মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য দোয়া-দরখাস্তের পাশাপাশি মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন ইসলামিক আচার অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যদিও এই দিনটি পালন সম্পর্কে হাদিসে স্পষ্ট কোন উল্লেখ নেই। আহলে সুন্নতের ইমাম গাজী আজিজুল হক এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। 
তিনি তার জাওয়াহেরুল কুনুজ গ্রন্থের পঞ্চম খন্ডের ফতোয়ারে আজিজীতে উল্লেখ করেন, সফর মাসের শেষ বুধবার সূর্যোদয়ের পূর্বে গোসল করা উত্তম। আর সূর্যোদয়ের পরপরই দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। উক্ত কিতাবে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সফরের শেষ বুধবারে যদি কোন ব্যক্তি সমস্ত ওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে আয়াতে কারীমা পাঠ করে পানিতে ফুঁ দেয়, তবে সেই পানি পান করলে মহান আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে সমস্ত বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করেন।

সেই আয়াতে কারিমা সাত সালাম বিশিষ্ট হয়ে থাকে। আখেরি চাহার সোম্বার দিনে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। সেখানে হামদ-নাত, গজল, নবীজির জীবনী অধিক প্রাধান্য পায়। এই দিনে সরকারিভাবে ছুটি থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা যথেষ্ট আমল করার সুযোগ পায়। আখেরি চাহার সোম্বার দিনে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে, দোয়া করতে শরীয়তে কোন বিধি নিষেধ নেই। অতএব, আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা আপনারা সেই তথ্যটি জেনে নিলেন। 

উপসংহার 

প্রিয় দ্বীনি বন্ধুরা, আপনারা যদি এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে থাকেন তবে অবশ্যই কিভাবে আখেরি চাহার সোম্বার সূচনা হয়েছিল এবং এই দিনটির গুরুত্ব কতটুকু ইত্যাদি বিষয়াবলী সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমরা এই ঐতিহাসিক দিনে নবীজির স্মরণে বেশি বেশি আমল করার চেষ্টা করব। এই পোস্ট থেকে আপনারা আজ কি পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা কিনা সেই বিষয়টিও বুঝতে পেরেছেন। তাই পোস্টটি ভালো লাগলে সকলের সাথে শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url