OrdinaryITPostAd

পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় ১২টি মাসায়ালা

পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা জেনে নেওয়া উচিত। কারণ ইসলামিক দিক থেকে পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা মেনে চলতে হবে। আমাদের ইসলাম ধর্মে প্রতিটি বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। নারী হোক অথবা পুরুষ সকলের এ বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত। এই আর্টিকেলে পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা আলোচনা করা হবে।

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কনটেন্ট সূচিপত্রঃ পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা

নারীর পবিত্রতা নিয়ে ইসলামে দিকনির্দেশনা

একজন নারীর ক্ষেত্রে পবিত্রতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নারীদের পবিত্র থাকতে হবে এমনটা নয়। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র নারী-পুরুষ উভয়কেই থাকতে হয়। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। আমরা জানি যে মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় নারীরা অপবিত্র থাকে তাই পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা সম্পর্কে জানানো হবে।

আরো পড়ুনঃ হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া - হায়েজ অবস্থায় আমল ও নিষিদ্ধ কাজ

দিকনির্দেশনা -- ১। নারীদের যেহেতু টাখনুর নিচে কাপড় পরার বিধান রয়েছে। সেহেতু বৃষ্টির দিনে অনেক সময় রাস্তায় বের হলে রাস্তার কাদা বোরকা, শাড়ি ও জামা, কাপড়ে লেগে যায়। তখন অনেকের ধারণা হয় যে কাপড় অপবিত্র হয়ে গেছে। আপনাদের জানিয়ে রাখি রাস্তার কাদা নাপাক নয়, কিন্তু কাদামাটির মধ্যে নাপাকি দৃশ্যমান হলে কাদার ওই অংশ অপবিত্র বলে গণ্য হবে।

কাপড়ে এ ধরনের কাদা বেশি পরিমাণে লেগে গেলে তা নিয়ে নামাজ শুদ্ধ হবে না। তা ধুয়ে নিতে হবে। তবে ধোয়ার সুযোগ থাকলে এমন ময়লা কাপড়ে নামাজসহ অন্য ইবাদত না করাই ভালো। {কিতাবুল আসলঃ ৫২, আলমাবসুত, সারাখসিঃ ২১১}

দিকনির্দেশনা -- ২। লিপস্টিক ও নেইল পলিশ এগুলো চামড়ায় পানি প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে থাকে। অথচ শরীরে পানি প্রবেশ না করলে অজু, গোসল বৈধ হয় না। তবে মেহেদির মতো যদি পলিশের কোনো প্রলেপ না থাকে তাহলে অজু শুদ্ধ হবে। {খোলাসাতুল ফাতওয়াঃ ৩৭৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ১-২}

দিকনির্দেশনা -- ৩। ফরজ গোসলে নারীদের চুল খোলা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ। আর বাঁধা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ নয়। শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। {শরহু মুশকিলিল আসারঃ ৩৮৫৪} ফরজ গোসলে নারীদের লজ্জাস্থানের বাহিরের অংশে পানি পৌঁছালে ফরজ আদায় হয়ে যায়।

অভ্যন্তরীণ অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। রোজা অবস্থায় নারীদের ভেতরাংশে যেন পানি না পৌঁছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা ভেতরে যাওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। {রদ্দুল মুহতারঃ ১৫২}

দিকনির্দেশনা -- ৪। টয়লেটে শেষে নারী-পুরুষ উভয় ঢিলা বা টিস্যু ও পানি ব্যবহার করবে। নারীদের মলমূত্র ত্যাগের পর পানি ও টিস্যু উভয়টি ব্যবহার করা উত্তম। আর পেশাবের পর শুধু পানি ব্যবহার করে নিলেই চলবে। এ ক্ষেত্রে ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে পুরুষের জন্য টয়লেট শেষে টিস্যু ও পানি উভয়টি নেওয়াই উত্তম। {রদ্দুল মুহতারঃ ৩৩৭, আলমুহিতুল বুরহানিঃ ৪৩}

পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা

আমরা জানি যে আল্লাহ তা'আলা আমাদের সৃষ্টি করেছে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু ইবাদত করার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে পাক পবিত্র হয়ে থাকতে হবে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা গুলো সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে।

মাসায়ালা - ১। ফরজ গোসলে নারীদের চুল খোলা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ। আর বাঁধা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ নয়। কেবল চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। {শরহু মুশকিলিল আসারঃ ৩৮৫৪}

মাসায়ালা - ২। ফরজ গোসলে নারীদের লজ্জাস্থানের বহিরাংশে পানি পৌঁছালে ফরজ আদায় হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। আর রোজা অবস্থায় ভেতরাংশে যেন পানি না পৌঁছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা ভেতরে পানি যাওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। {রদ্দুল মুহতারঃ ১৫২}

নারীরা শিশুকে দুধ পান করানোর দ্বারা তাদের অজু ভঙ্গ হবে না। তবে নামাজ অবস্থায় কোনো শিশু দুধ পান করে নিলে নামাজ ভেঙে যাবে। {আদ্দুররুল মুখতারঃ ৬২৫}

মাসায়ালা - ৩। গর্ভাবস্থায় সন্তান হওয়ার আগে শেষের দিনগুলোতে মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যে পানি বের হয়ে মহিলাদের শরীর ও কাপড় নষ্ট হয়ে যায়, এতে নারীর ওপর গোসল ফরজ হবে না, তবে অজু ভেঙে যাবে এবং নির্গত পানি থেকে শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নামাজ পড়তে হবে। কেননা সেগুলো নাপাক। {ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ১০৭}

মাসায়ালা - ৪। দুগ্ধপায়ী ছোট বাচ্চা মুখ ভরে বমি করলে তা বড় মানুষের মতোই নাপাক এবং তা কাপড়ে পড়লে ধৌত করতে হবে। মুখ ভরে বমি না করলে তা নাপাক হবে না। {আদ্দুররুল মুখতারঃ ১৩৭}

আরো পড়ুনঃ নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা জেনে নিন

মাসায়ালা - ৫। নারীদের হায়েজ তথা মাসিক রক্তস্রাবের ওপর শরয়ি বিধানের ক্ষেত্রে সর্বনিম্নে তিন দিন আর ঊর্ধ্বে ১০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লিখিত দুই সংখ্যার প্রথমটির কম হলে কিংবা দ্বিতীয়টির বেশি হলে তখন তা ইস্তিহাজা বা রোগ হিসেবে ধর্তব্য হয়।

দুই স্রাবের মাঝখানে ১৫ দিন পবিত্র থাকা আবশ্যক। কারও যদি স্রাবের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, আর সে কোনো মাসে অভ্যাসের বিপরীত ১০ দিনের পরও রক্ত দেখতে পায়, তাহলে অভ্যাসের ভেতরে আসা রক্তগুলোকে হায়েজ ধরতে হবে এবং অতিরিক্ত গুলোকে ইস্তিহাজা।

কারও যদি এক হায়েজ শেষ হওয়ার পর ১৫ দিনের আগেই আবার রক্ত দেখা দেয়, আর এভাবে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে। তাহলে তার এই অনিয়ম চালু হওয়ার আগের হায়েজের অভ্যাস হিসাব করে ঠিক তার ১৫ দিন পরেই দ্বিতীয় হায়েজের সময় শুরু হবে, মাঝে আসা রক্তগুলোকে ইস্তিহাজা ধরতে হবে। {রদ্দুল মুহতারঃ ২৮৯}

মাসায়ালা - ৬। হায়েজ এর দিনগুলোতে কোরআন শরিফ পড়া এবং স্পর্শ করা জায়েজ নেই। ওই সময় শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা না দেওয়াই শরিয়তের প্রকৃত বিধান, তাই প্রয়োজন বশত একেক শব্দ ভিন্ন ভিন্ন করে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। তবে ওই অবস্থায় তাদের কোরআন পড়া শোনা যাবে। {ফাতহুল কাদিরঃ ১৬৮}

নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজ সহ বেশ কিছুইবাদত রয়েছে যেগুলোতে অবশ্যই পবিত্রতা অর্জন করে থাকতে হবে। যদি পবিত্রতা অর্জন সঠিকভাবে করা না হয় তাহলে এই ইবাদতগুলো আল্লাহতালার কাছে কবুল হবে না এমনকি আরো পাপের ভাগীদার হবে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা সম্পর্কে জানানো হচ্ছে।

যেসকল নারী ধাতুরোগে আক্রান্ত, তাদের অজুু নষ্ট হওয়ার ভয়ে যদি কেউ টিস্যু বা তুলা ধাতু আসার রাস্তায় এমনভাবে রাখে, যাতে ধাতু বাইরে আসতে না পারে, তাহলে এ অবস্থায় সব ইবাদত আদায় করতে কোনো অসুবিধা হবে না, বরং এটিই রোগীর জন্য উত্তম পন্থা। তুলা বা টিস্যু পেপারের বহিরাংশ যদি ভিজে যায়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। {ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ১০}

এছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে যে সকল প্রয়োজনীয় মাসায়ালা রয়েছে সবগুলোই ইতিমধ্যে উপরের আলোচনায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা গুলো জেনে তারপরে উক্ত কাজগুলো করতে হবে। কারণ যে কোন ইবাদত আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য পবিত্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্রতা ছাড়া কখনো আল্লাহতালার কাছে এবাদত গ্রহণযোগ্যতা পায় না।

পবিত্রতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস

ইসলামের শুরু হয় পবিত্রতা দিয়ে। ইসলামে ইমান বা বিশ্বাসের মূল কথা হলো কালিমা তাইয়েবা। কালিমা তাইয়েবা নামের মানে হলো পবিত্র বাক্য। এই ঘোষণা দ্বারা বিশ্বাস পবিত্র হয় মানুষ পাপপঙ্কিলতা, কুফর, শিরকসহ সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার বা পাপাচার থেকে মুক্ত হয়, তাই এর নাম কালিমা তাইয়েবা তথা পবিত্র কথা।

পবিত্রতা অর্জনের প্রধান দুটি পন্থা হলো অজু ও গোসল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, "এবং তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বারি বর্ষণ করেন তা দ্বারা তোমাদের পবিত্র করার জন্য।" {সুরা-৮ আনফালঃ ১১} "আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।" {সুরা ফুরকানঃ ৪৮}

অজুর চারটি ফরজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, "হে মুমিনেরা! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা টাকনু পর্যন্ত ধৌত করবে, যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে।" {সুরা মায়িদাহঃ ৬} 

পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালাঃ উপসংহার

নারীর পবিত্রতা নিয়ে ইসলামে দিকনির্দেশনা, পবিত্রতা বিষয়ে নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা, নারীদের প্রয়োজনীয় মাসায়ালা, পবিত্রতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।

আরো পড়ুনঃ রোজা রাখা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয় কি

আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।২০৮৭৬

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url