১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল? যারা মারা গিয়েছিল তাদের তালিকা
১৫ ই আগস্ট বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস। ১৫ ই আগস্টে নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। ১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পেজ সূচিপত্রঃ ১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল?
১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল?: ভূমিকা
১৫ ই আগস্টে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরো অনেকেই নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৫ ই আগস্ট এ যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল?
১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল?
১৫ ই আগস্ট এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যসহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করা হয়। নিচে ১৫ ই আগস্ট এ যারা নিহত হয়েছিল তাদের নামের তালিকা এবং বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হবে।
১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল যারা মারা গিয়েছিল তাদের তালিকা নিম্নরূপঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাড়াও অন্যান্য যাদেরকে সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাদের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।
শেখ কামাল।
শেখ কামাল ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে। করেছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র ক্রীড়া প্রেমিক। পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকা ইউনিভার্সিটি'তে লেখাপড়া করা কালীন তিনি নাট্য মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করতেন।
খেলাধুলায় ছিলেন খুবই পারদর্শী এবং খেলাধুলায় তার প্রচুর আগ্রহ ছিল আর এ কারণেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আবাহনী ক্রীড়াচক্র। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ফুটবল ক্রিকেটের মানোন্নয়ন করে বাংলাদেশের প্রতিভাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়।
শেখ জামাল।
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় ছেলে শেখ জামাল। তিনি ছিলেন অকুতোভয় একজন ব্যক্তিত্ব। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মায়ের সাথে তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল তখন তিনি সেখান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
তিনি শৈশবে শাহীন স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন এবং এর উপরে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ রিপোর্ট বিশেষ আমন্ত্রণে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য সেই দেশে গমন করেন।
এর পরে লন্ডনের আর্মি একাডেমি থেকে সেনা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ফিরে এসে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই তার আপন ফুফাতো বোন রোজীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ১৫ ই আগস্ট এ দুইজন একসাথে ঘাতকের গুলিতে নিহত হন।
শেখ রাসেল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরী হাই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলেন। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হওয়ার কারণে সকলের আদরের পাত্র ছিল শেখ রাসেল। কিন্তু ঘাতকরা ১১ বছর বয়সের এই শিশুটি কেউ হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। ঘাতকের বুলেটের আঘাতে ১৫ ই আগস্টে ছোট শেখ রাসেলও জীবন হারান।
শেখ আবু নাসের।
আবু নাছের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই তিনি গোপালগঞ্জে লেখাপড়া করেন। তিনি কখনোই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না বরং পারিবারিক কাজকর্মে ও ব্যবসা-বাণিজ্য পিতার সাথে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ঘটনার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায় ছিলেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চার ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে যান। ১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল? সে সম্পর্কে নিচে আরো বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
সুলতানা কামাল খুকু।
শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের স্ত্রী ছিলেন সুলতানা কামাল খুকু। খুকু ছোট থেকেই বিভিন্ন ধরনের খেলায় পারদর্শী ছিলেন। বিশেষ করে লংজাম্পে তারে জুরি ছিল না। তিনি লং জাম্প খেলায় গোল্ডেন মেডেল সহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকার মাঠে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমে লংজাম্পে তিনি ১৬ ফুট দূরত্ব অতিক্রম করে রেকর্ড স্বর্ণপদক লাভ করেন।
পারভীন জামাল রোজী।
বাংলাদেশের মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ জামালের স্ত্রী পারভীন রোজী। পারভিন জামান রোজি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট বোন খাদিজা হোসেনের মেয়ে। মাত্র এক মাসের সংসার জীবন অতিবাহিত করে বিয়ের মেহেদির রং হাত থেকে উঠার পূর্বেই ঘাতকের গুলিতে স্বামী শেখ জামালের সাথে মৃত্যুবরণ করেন পারভিন জামাল রোজী।
আবদুর রব সেরনিয়াবাত।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেজ বোনের স্বামী। তিনি প্রথমে বরিশাল থেকে মেট্রিক পাশ করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে লেখাপড়া করেন সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর সভাপতি ছিলেন তিনি, এমন এমনকি তারা দুজনে একসাথে হোস্টেলে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এর সেজ বোন আমেনা বেগমের সাথে তার বিয়ে হয়।
শেখ ফজলুল হক মনি।
শেখ ফজলুল হক মনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মেজো বোনের বড় ছেলে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি ছিলেন অন্যতম একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল? সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এই আর্টিকেলটিতে।
তাঁর সম্পাদনায় বের হতো দৈনিক বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমস। এবং উভয়টিরই প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। সাউথের সিনেমা ও মধুমতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। ট্রেনে ঢাকা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও ১৯৬০ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ পাস করেন ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা ও সাহিত্যে এমএ সমাপ্ত করেন।
বেগম আরজু মনি।
শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী আরজু মনি। বেগম আরজু মনি ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কন্যা। ১৯৭০ সালের খালাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ঘাতকরা যখন তাকে হত্যা করে তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এবং তার দুই সন্তান ছিল।
কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।
কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা অফিসার। তিনি ছিলেন একজন সেনা অফিসার ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘাতকরা তার বাড়ি ঘেরাও করে তখন তিনি ফোনে এই বিষয়টি কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদকে জানিয়েছিলেন তৎক্ষণাৎ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির দিকে রওয়ানা করেন পথিমধ্যে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বেবী সেরনিয়াবাত।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরী হাই স্কুলের নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলেন। ১৫ই আগস্ট সেই কাল রাতে তিনি তার বাবার সঙ্গে বাসায় ছিলেন আর সে কারণে ঘাতকরা তাকে হত্যা করে। ১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল? সে সম্পর্কে ইতোমধ্যেই বেশ তথ্য দেয়া হয়েছে। আরো কিছু তথ্য নিচে তুলে ধরা হবে।
আরিফ সেরনিয়াবাত।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠপুত্র হারিস সেনিয়াবাদ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলেন ১৫ ই আগস্ট এর সেই ভয়াবহ রাতে তিনি ঢাকায় বাবার সাথে ছিলেন। তাই বাবার সাথে তাকেও জীবন দিতে হলো।
সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু।
সুকান্ত আব্দুর রহমান আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের নাতি। তিনি সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পুত্র ছিলেন ১৫ আগস্টের ঘটনার সময় তিনি দাদার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল তখন মাত্র ৪ বছর।
শহীদ সেরনিয়াবাত।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ভাতিজা ছিলেন শহীদ সেরনিয়াবাত তিনি ১৫ আগস্টে চাচার বাসায় বেড়াতে এসে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
আবদুল নঈম খান রিন্টু।
আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই হলেন আব্দুল্লাহ খান রিংটোন তিনি তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অবস্থান করছিলেন বলে ঘাতকরা তাকে হত্যা করে।
১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল?: উপসংহার
১৫ আগস্ট কতজন মারা গিয়েছিল? আশা করি সেই প্রশ্নের উত্তর আপনি ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছেন। ১৫ ই আগস্ট এ যারা নিহত হয়েছিলেন নেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো যদি আপনি পড়তে থাকেন তাহলে ইতিহাসের তথ্য জানতে পেরেছেন বলে আশা করি। ১৬৪১৩
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url