নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ - যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়
নামাজ না হওয়ার কারণ আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই নামাজ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে নামাজ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি নামাজ না হওয়ার কারণ জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে নামাজ না হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ নামাজ না হওয়ার কারণ
যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়
আমরা জানি যে ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো নামাজ। প্রথমে আমাদেরকে ঈমান আনতে হবে এরপরে নামাজ আদায় করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রত্যেক মুসলমানের উপর নামাজ ফরজ। আমরা অনেকেই নামাজ পড়ি কিন্তু অনেক সময় আমাদের নামাজ হয় না নামাজ না হওয়ার কারণ না জানার ফলে নামাজ কবুল হয় না।
আরো পড়ুনঃ রমজানের প্রথম ১০ দিনের আমল - রমজানের প্রথম দশ দিনের দোয়া
১। নামাজের কথা বললে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। নামাজের মধ্যে আপনি অল্প কথা বলুন অথবা বেশি কথা বলুন কথা বললেই নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
২। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাজের কোন একটি ফরজ ছুটে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়।
৩। নামাজের মধ্যে যদি কেউ সালাম আদান প্রদান করেন অথবা হাঁচি আসলে এর উত্তরে দোয়া করেন তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৪। বিনা প্রয়োজনে গলা খাগড়ানো বা গলা পরিষ্কার করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৫। কোনরকম দুঃখ কষ্ট অথবা বেদনার কারণে নামাজের মধ্যে উহ আহ করলে এমনকি আল্লাহর ভয়ে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করলেও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৬। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাজের মধ্যে পানাহার করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। অবশ্য দাঁতের ফাঁকে আটকানো ছোলা থেকে কম বের হলে তা খেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না।
৭। নামাজে কোরআন তেলাওয়াতে এমন ভুল পড়া যাতে অর্থ পাল্টে যায় এমনটা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৮। নামাজ পড়াকালীন অবস্থায় এমন কাজ করা যা বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় লোকটির নামাজ পড়ছে কিনা? এমন কাজ করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৯। কেবলামুখী হয়ে যদি নামাজ না পড়া যায় তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১০। নামাজের মধ্যে যদি অট্টহাসি হাসা যায় তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১১। নামাজের মধ্যে কোরআন মাজীদ দেখে দেখে পড়া বা অন্য কোন লেখা পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১২। নামাজের সময় যদি অপবিত্র জায়গায় সেজদা দেওয়া হয় তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১৩। ইমামের আগে আগে যদি মুক্তাদি নামাজের কার্যক্রম গুলো সম্পন্ন করে তাহলে সেই নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১৪। মুক্তাদি ব্যতীত অপর ব্যক্তির ইমামের লোকমা দেওয়া।
১৫। নামাজে এমন কিছু প্রার্থনা করা যা মানুষের কাছে চাওয়া যায়। এরকম প্রার্থনা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ
আমরা অনেকের নামাজ পড়ি কিন্তু আমাদের নামাজ কবুল হচ্ছে কিনা অথবা নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ আমাদের জানা থাকে না। আমরা যদি নামাজ কবুল না হওয়ার কারণগুলো জেনে নিতে পারি তাহলে খুব সহজেই সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে আল্লাহতালার কাছে আমাদের নামাজগুলো কবুল করাতে পারবো। সেইজন্য আমাদের নামাজ না হওয়ার কারণ এবং নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ জানতে হবে।
নামাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হওয়াঃ নামাজ পড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করা। অর্থাৎ নামাজ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে আদায় করা। কারণ সবকিছু ইবাদতের একমাত্র মালিক হলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। আমরা যদি অন্য কিছুর জন্য এবাদত পালন করি তাহলে এটি আল্লাহতালার সাথে শরিক করা হলো।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে। মানুষ যেন তাদেরকে ভালো বলে। যেন সমাজের মানুষের কাছে তারা সম্মান অর্জন করতে পারে সে উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে থাকে। যদি নামাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হয় তাহলে সেই নামাজ কখনো আল্লাহতালার কাছে কবুল হবে না।
সুন্নত তরিকায় নামাজ আদায় না করাঃ যেকোনো এবাদত করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সুন্নত তরিকায় অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রদর্শিত সম্মত তরিকা অনুসরণ করে নামাজ আদায় করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী সাঃ বলেছেন, "যেভাবে তোমরা আমাকে দেখেছ নামাজ আদায় করতে সেভাবে নামাজ আদায় করো।" সুন্নতি তরিকায় যদি নামাজ আদায় না হয় তাহলে সেই নামাজ আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হবে না।
হারাম রুজি খেয়ে নামাজ আদায় করাঃ যে কোন ইবাদত কবুলের অন্যতম একটি শর্ত হলো হালাল উপার্জনে নিজের জীবিকা নির্বাহ করা। হাদিসে বলা হয়েছে, "হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ফরজের পর আরেকটি ফরজ।" হালার রুজি ভক্ষণ না করার কারণে বান্দাদের নামাজ আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয় না।
বিনয়ী নম্রতা না থাকাঃ নামাজে বিনয়ী নম্রতা প্রদর্শন আল্লাহ তাআলার প্রতি ভয় জাগ্রত করে দেয়। আমাদেরকে নামাজ আদায় করতে হবে যথাযথ মনোযোগ দিয়ে এবং আল্লাহ তালাকে ভয় করে। যে নামাযে পূর্ণ মনোযোগ থাকে না সে নামাজ আল্লাহ তাআলার কাছে কখনোই কবুল হয় না। আপনার নামাজে যদি বিনয়ী নম্রতা না থাকেন তাহলে আল্লাহতালার কাছে সেই নামাজ কবুল হবে না।
লোক দেখানো ইবাদত করাঃ আমাদের সমাজে এরকম অনেক মানুষ রয়েছে যারা লোক দেখানো ইবাদত করে। যারা লোক দেখানো ইবাদত করে তাদের জন্য ধ্বংস। তারা ইহকালে ব্যর্থ পরকালেও ব্যর্থ হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, "সুতরাং দুর্ভোগে সেই সালাত আদায়কারীদের, যারা তাহাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে।"{ সূরা মাউনঃ ৪-৬}
নামাজ না হওয়ার কারণ
আমরা অনেকেই নামাজ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চায়। নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। হাশরের ময়দানে প্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব সঠিকভাবে দিতে পারবে সেই ব্যক্তি তার সকল কার্যক্রমের হিসাব দিতে পারবে। তাই আমাদেরকে নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার জন্য নামাজ না হওয়ার কারণগুলো জানতে হবে।
আরো পড়ুনঃ নামাজের সময়সূচী ২০২৩ - ইসলামিক ফাউন্ডেশন নামাজের সময়সূচী ২০২৩
১। নামাজে অশুদ্ব পড়া। নামাজের মধ্যে যদি অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত করা যায় তাহলে সে নামাজ হবে না।
২। নামাজের ভিতর কথা বলা। নামাজের মধ্যে কোন রকমের কথা না বলা। যদি নামাজ চলাকালীন অবস্থায় কোন রকমের কথা বলা তাহলে সে নামাজ হবে না।
৩। নামাজের মধ্যে যদি কারো সালাম দেওয়া হয় তাহলে সে নামাজ হয় না।
৪। নামাজের মধ্যে সালামের উত্তর দেওয়া।
৫। বিনা কারণে কাশিঁ দেওয়া।
৬। সুসংবাদ ও দুঃখ সংবাদের উত্তর দেওয়া।
৭। নাপাক জায়গায় সিজদা দেওয়া।
৮। কেবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় না করা।
৯। নামাজে কোরআন দেখিয়া পড়া।
১০। বিপদে বা বেথায় শব্দ করে কাদাঁ। এমনকি আল্লাহতালার ভয়ে জোরে জোরে কান্নাকাটি করা।
১১। মুকতাদি ব্যথিত অপর লোকের লোকমা লোয়া।
১২। নামাজে কোনো কিছু খাওয়া ও পান করা।
১৩। নামাজে শব্দ করে হাসা।
১৪। নামাজে হাচির উত্তর দেওয়া।
১৫। নামাজে দুনিয়াবি কোনো কিছু প্রার্থনা করা।
১৬। ইমামের আগে মুকতাদি দাড়ানো। অর্থাৎ ইমামের আগেই নামাজের কার্যক্রম গুলো করা।
নামাজ না পড়ার শাস্তি
কোন ব্যক্তি যদি নামাজ আদায় না করে তাহলে তাকে ১৫ টি শাস্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে দুনিয়াতে পাঁচ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে। তিন ধরনের শাস্তি মৃত্যুর সময়। তিন ধরনের শাস্তি কবরে এবং চার ধরনের শাস্তি কবর থেকে উঠানোর পরে দেওয়া হবে। এভাবে মোট ১৫ টি শান্তি দেওয়া হবে।
দুনিয়াতে যে শাস্তি দেওয়া হবেঃ
১। নামাজ না পড়লে জীবনের বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হবে।
২। বেনামাজির চেহারা থেকে নেককারের নূর দূর করে দেওয়া হবে।
৩। নামাজ না পড়লে নেক কাজের কোন বদলা দেওয়া হবে না।
৪। নামাজ না পড়লে কোন দোয়া কবুল হবে না।
৫। নেক বান্দাদের দোয়ার মধ্যে বেনামাজির কোন হক থাকবে না।
মৃত্যুর সময় যে শাস্তি দেওয়া হবেঃ
১। নামাজ না পড়লে মৃত্যু জিল্লতি ও অপমানের সঙ্গে হবে।
২। নামাজ না পড়লে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।
৩। অনেক পিপাসার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। ঠিক যেন সমুদ্রের সমপরিমাণ পানি পান করলেও তার পিপাসা মিটবে না।
কবরের মধ্যে যে শাস্তি হবেঃ
বেনামাজির জন্য কবর খুব সংকীর্ণ হয়ে যাবে। এমন সংকীর্ণ হবে যে এক পাশের বুকের হাড় অন্য পাশে ঢুকে যাবে। বেনামাজির খবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। বেনামাজির কবরে এমন একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে, সেই সাপের চোখ হবে আগুনের নখগুলো হবে লোহার। তার প্রতিটি নখ লম্বা হবে একদিনের দূরত্বের পথ।
ওই সাপের আওয়াজ হবে বজ্রের আওয়াজের মতো বিকট। সাপ ওই বেনামাজিকে বলতে থাকবে আমাকে আমার রব তোমার জন্য নিযুক্ত করেছে, যাতে ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত দংশন করতে থাকি।
আরো পড়ুনঃ রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ৮ টি ইবাদাত - রোজার ইবাদতের ফজিলত
কবর থেকে উঠিয়ে যে শাস্তি দেওয়া হবেঃ
১। যে ব্যক্তির নামাজ পড়বে না তার হিসাব খুব কঠিন ভাবে নেওয়া হবে।
২। যে ব্যাক্তি নামাজ পড়বে না আল্লাহ তা'আলা উপর অসন্তুষ্ট হয়ে থাকবেন।
৩। নামাজ না পড়লে বেনামাজি ব্যক্তিকে জাহান্নামে দেওয়া হবে।
৪। নামাজ না পড়লে চেহারা তিনটি লাইন লেখা থাকবে। ১। হে আল্লাহর হক নষ্টকারী, ২। হে আল্লাহর গোস্তায় পতিত ব্যক্তি, ৩। তুমি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক নষ্ট করেছিল তেমনি আজ আল্লাহর রহমত থেকে তুমি নিরাশ।
নামাজ না হওয়ার কারণঃ শেষ কথা
নামাজ না হওয়ার কারণ, নামাজ না পড়ার শাস্তি, নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ, যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় সেগুলো বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা রক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই বিষয়গুলো জানা উচিত।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।১৬৮৩০
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url