দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চাই। বেশ কিছু পুরুষ রয়েছে যারা দ্বিতীয় বিয়ে করতে ইচ্ছুক সাধারণত তাই ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? এ বিষয় সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে। আজকের এই আর্টিকেলে দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনি যদি দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? বিস্তারিতভাবে বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
- দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে জেনে নিন
- ইসলামে ৪ টি বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে কেন
- একের অধিক বিয়ে করতে কি আগের স্ত্রীদের অনুমতির প্রয়োজন
- নারীদের কি দেখে বিয়ে করতে হয়
- শেষ কথা
দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে জেনে নিন
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রয়োজনে দ্বিতীয় বিয়েকে জায়েজ করা হয়েছে। কিন্তু একাধিক বিয়েকে কখনোই উৎসাহিত করেনি। কিন্তু বর্তমান সময়ের নেট দুনিয়ায় কিছু অতি উৎসাহ মানুষ রয়েছে যারা একাধিক বিয়েকে উৎসাহিত করে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বা শাহাবাদের একাধিক বিয়েকে উৎসাহিত করার ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা যা করেছিল সেটি ছিল প্রয়োজনের তাগিদে।
আরো পড়ুনঃ দুইটি উপায়ে বিকাশ পিন রিসেট করার নিয়ম
তাই দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? প্রথমে আমাদেরকে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা দ্বিতীয় বিয়ে কে অযথাই উৎসাহিত করেননি। কারণ একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের সবার মধ্যে সমতা বিধান করার স্বামীর কর্তব্য। কোন স্ত্রীর ক্ষেত্রে যদি কম বেশি হয় তাহলে শেষ বিচারের দিন স্বামীকে জবাবদিহি করতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, "যদি তোমরা আশঙ্কা কর, এতিমের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে তাহলে যেসব মহিলা তোমাদের পছন্দ হয় তাদের মধ্যে থেকে এক, দুই, তিন অথবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে তোমরা তাদের মধ্যে ইনসাফ করতে পারবেনা তাহলে একজনকেই বিয়ে কর। অথবা এসব মহিলাকে বিবি বানাও যারা তোমাদের মালিকানায় এসেছে। অবিচার থেকে বাঁচার জন্য এটাই বেশি সহজ।"{সুরা নিসাঃ ৩}
এই আয়াতটি নাযিল হয় ওহুদ যুদ্ধের সময়। কারণ ওহুদ যুদ্ধে অনেক মুসলিম শহীদ হন তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। তাদের খাদ্য আশায় ও পারিবারিক পরিবেশের প্রয়োজন ছিল এ কারণে তাদেরকে বিভিন্ন জনের তত্ত্বাবধানে রাখা হলো।
হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে যে, "এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একটি এতিম মেয়ে ছিল। সে ব্যক্তির একটি বাগান ছিল যার মধ্যে উক্ত এতিম বালিকা টির অংশ ছিল। সে ব্যক্তি ওই মেয়েটিকে বিয়ে করে নিল এবং নিজের পক্ষ থেকে দেনমোহর আদায় তো করলই না বরং বাগানে মেয়েটির যে অংশ ছিল তাও সে আত্মসাৎ করে নিল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপরের আয়াত নাজিল হয়।"{বুখারী}
একাধিক বিয়ে করা মুসলমানদের জন্য ফরজ অথবা পছন্দনীয় কাজ নয়। বিশেষ কিছু অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে এটি আল্লাহতালা জায়েজ করেছেন এবং এটি একটি সুযোগ মাত্র। একাধিক বিয়ে করা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে শর্ত যুক্ত। কারণ প্রতিটি স্ত্রীকে সমান অধিকার দিতে হবে। যদি কেউ শর্ত পূরণ করতে পারে তাহলে তার জন্য হালাল।
যদি কোন পুরুষ স্ত্রীদের মাঝে সমতা বিধান না করতে পারে তাহলে সেই পুরুষকে একটি বিবাহ সন্তুষ্ট থাকার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সমতা বিধান না করতে পারলে একাধিক বিয়ে করা হারাম। একাধিক বিয়ে করলে প্রতিটি স্ত্রীর সমতা বিধান করা ফরজ। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একাধিক বিয়ে করাকে নিষিদ্ধ করে নি কিন্তু অনুৎসাহিত করেছে।
ইসলামে ৪ টি বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে কেন
ইসলামে ৪ টি বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে কেন? এ বিষয়ে অনেক মহিলা এবং বিধর্মীরা জানতে চাই। তাহলে চলুন ইসলামের বিধান অর্থাৎ ইসলামে ৪ টি বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে কেন? তা জেনে নেওয়া যাক। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই ,তিন আথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা কর যে স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে মাত্র একটি বিবাহ কর।'{সুরা নিসাঃ ০৩}
এই আয়াতে বোঝা যাচ্ছে যে কোনো মুসলমান ইচ্ছা করলে একের অধিক বিয়ে করতে পারে। কিন্তু তাতে শর্ত হলো তাকে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার অর্থাৎ একাই রকম ভালবাসা, খাদ্য, বস্ত্র দিতে হবে এবং তাদের একের উপর অপরকে প্রাধান্য দেওয়া চলবে না।
যে ব্যাক্তি একাধিক বিয়ে করতে ইচ্ছুক কিন্তু তার মনে হচ্ছে তার স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার বা সমতা রাখতে পারবে না তাহলে তাকে একটি বিয়েতেই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হচ্ছে। স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করা নিশ্চয় কঠিন কাজ। আল্লাহ মানুষকে সাবধান করে বলেছেন, 'তোমরা যতই আগ্রহ রাখো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনো সক্ষম হবে না।'{সুরা নিসাঃ ৪}
উপরের আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ইসলামে চারটি বিবাহ করা বৈধ কিন্তু একটি বিবাহ করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বহু বিবাহে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, 'তোমরা এক জনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পর না ও অপরকে (অপর স্ত্রীকে) ঝুলন্ত অবস্তায় রেখে দিও না'{সুরা নিসাঃ ০৩/১২৭} আশা করি দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? বিষয়টি সম্পর্কে বুঝতে পারছেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলা আর্টিকেল লিখে আয় পেমেন্ট বিকাশে মাসে ১৫০০০
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তির দুই জন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে এক জনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।" {আহমেদ ২/৩৪৭, আসবে সুনান, হাকিম ২/১৮৬) ইবনে হিব্বান ৪১৯} ইসলামে একজন পুরুষ কর্তৃক একসাথে চার স্ত্রী রাখার যে বিধান রয়েছে (সূরা ৪ঃ আয়াত ৩)
সে বিষয়ে শুধু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝেই নয় বরং অনেক মুসলমানদের মধ্যেও বিশেষ উদ্বেগ, বিস্ময় ও বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। পুরুষদের চার বিয়ের স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা যে এক বিয়ের প্রতি কিভাবে জোর দিয়েছেন তা অধিকাংশ আলোচনাতেই থেকে যাচ্ছে উহ্য।
আল্লাহ পাক খুব পরিষ্কার করেই বলেছেন, "অবস্থার প্রেক্ষিতে চারটা পর্যন্ত বিয়ে করা যেতে পারে তবে তা স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বজায়ে রাখার শর্তে, যা কিনা মানুষের জন্য দুরূহ, তাই এক বিয়েই উত্তম ও যথেষ্ট।" এটা সহজেই বোধগম্য যে সমাজে যোগ্য কোন নারী যাতে বিবাহহীন না থাকে এটাই এক জন পুরুষকে চারটি পর্যন্ত স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়ার মূল লক্ষ্য।
একের অধিক বিয়ে করতে কি আগের স্ত্রীদের অনুমতির প্রয়োজন
অনেক পুরুষ মনে করে একের অধিক বিয়ে করতে হলে প্রথম স্ত্রীর কোন ধরনের অনুমতির প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে ভুল একের অধিক বিয়ে করতে আগে স্ত্রীদের অনুমতির প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে যদি কেউ একের অধিক বিয়ে করতে চায় তাহলে অবশ্যই একের অধিক বিয়ে করতে কি আগের স্ত্রীদের অনুমতির প্রয়োজন কিনা এ বিষয়ে সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একের অধিক বিয়ে করাকে জায়েজ করা হয়েছে। বাংলাদেশী আইনে অনুমতি নিতে হবে একের অধিক বিয়ে করতে হলে। যদি কোন পুরুষ একটি স্ত্রী থাকা শর্তে আবার বিয়ে করে প্রথম স্ত্রীর অনুভূতি ছাড়া তাহলে প্রথম স্ত্রী যদি মামলা করে তাহলে জেল হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলামী আইনে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বিয়ের সময় এমন শর্ত থাকলে অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।
দ্বিতীয় বিয়ে করার ইসলামিক শর্ত বেশ কঠিন। দেশীয় আইনের চেয়ে এসব শর্ত অনেক ক্ষেত্রে বেশি করা। আগে স্ত্রীর সব ধরনের হক আদায়ের পর নতুন বিয়ে করে সমান তালে এবং সমান অধিকার দিয়ে দুজন স্ত্রীকে বসবাস করাতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'একাধিক বিয়ের সুবিধা যাদের আছে, তারা যদি সময় অধিকার বোঝাই রাখার ক্ষেত্রে ভীত হও তাহলে এক বিয়ে পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকো।'
নারীদের কি দেখে বিয়ে করতে হয়
উপরের আলোচনায় আমরা দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? এ বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। একজন পুরুষের বিয়ে করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নারীদের মধ্যে বেশকিছু গুণ দেখতে হবে। নারীদের মধ্যে যেসব গুণ দেখে বিয়ে করতে হবে সেগুলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইতিমধ্যেই বলে দিয়ে গিয়েছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, 'হে যুবক সকল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে করলে দৃষ্টিকে নিচু রাখা যায় এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করা যায়। আর যে ব্যক্তি বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না সে যেন রোজা রাখতে থাকে। কারণ রোজাদার খায়েশকে কমিয়ে দেবে।'{বুখারী ও মুসলিম}
আরো পড়ুনঃ জিলহজ্জ মাসের ১২ টি ফজিলত - জিলহজ্জ মাসের গুরুত্ব
বিয়ের জন্য পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবী সাঃ বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে চারিত্রিক এবং ঈমানের সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দিতে বলেছেন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, 'নারীদের চারটি গুণ দেখে বিয়ে কর, তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ সৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারী। তবে তুমি দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দেবে। না হলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'{বুখারী হাদিসঃ ৫০৯০}
দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলেঃ শেষ কথা
দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? ইসলামে ৪ টি বিয়ে করার কথা বলা হয়েছে কেন? একের অধিক বিয়ে করতে কি আগের স্ত্রীদের অনুমতির প্রয়োজন? নারীদের কি দেখে বিয়ে করতে হয়? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অবশ্যই একজন মুসলিমের বিয়ে করার আগে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। ১৬৮৩০
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url