আশুরার বিশেষ কয়েকটি আমল - আশুরার ফজিলত ও আমল
আশুরার বিশেষ আমল জানা থাকলে আমরা খুব সহজে সেই আমলগুলো করতে পারি। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে আশুরা একটি বিশেষ দিন। যার কারণে অনেকে আশুরার বিশেষ আমল সম্পর্কে জানতে চাই। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আশুরার বিশেষ আমল সহ আশুরা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনি যদি আশুরার বিশেষ আমল সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আশুরার বিশেষ আমল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ আশুরার বিশেষ আমল - আশুরার ফজিলত ও আমল
- আশুরার বিশেষ আমল
- আশুরার ফজিলত ও আমল
- আশুরার দিন মহানবী (সা.) যেসব আমল করতেন
- আশুরার দিন ও রাতের আমল সমূহ
- আশুরার দিনের দোয়া
- শেষ কথা
আশুরার বিশেষ আমল
আমরা জানি যে মহররম মাস হল হিজরি বর্ষের অন্যতম একটি ফজিলত পূর্ণ মাস। এই মহররম মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। নিঃসন্দেহে আশুরার দিন হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন। দিন প্রতিষ্ঠায় হিজরত এবং উত্তম প্রতিষ্ঠার জন্য এক সুমহান দিন হলো আশুরা। আমরা অনেকেই আশুরার বিশেষ আমল সম্পর্কে জানতে চাই। যেহেতু এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ তাই আমাদের সকলের আশুরার বিশেষ আমল সম্পর্কে জানা উচিত।
আরো পড়ুনঃ মহররম মাসের ১১ টি ফজিলত - মহরম মাসের ইতিহাস
ত্যাগ ও আদর্শের বার্তায় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাস মহররম। যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমান হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বকরতপূর্ণ সিয়াম সাধনায় মাসটি আলোকিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "রমজানের পর সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হল আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।।"
হাদিসে বর্ণিত মহররমের রোজাটি মূলত ১০ মহররম তথা আশুরার রোজা। এদিন রোজা রাখা মহররমের মর্যাদা ও বরকতের উৎসও বটে। হজরত আবু কাতাদাহ রাঃ বর্ণনায় আশুরার রোজা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, "আশুরার রোজা বিগত বছরের পাপসমূহ মোচন করে দেয়।"
হিজরতের পর মদিনায় এসেও নবি সাঃ দেখতে পেলেন। ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখছে। তিনি রোজা রাখার কারণ জানলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, "মুসা আঃ এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ইহুদিদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। সুতরাং তোমরাও আশুরায় রোজা রাখো। তবে তাদের অনুকরণ বা সাদৃশ্য যেন না হয় সে জন্য তিনি আগের কিংবা পরের ১ দিন রোজা পালনের কথাও বলেছেন।"
আশুরার ফজিলত ও আমল
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে আশুরা হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। তাই মুসলিম জনগোষ্ঠী এই দিনে আল্লাহতালাকে খুশি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আমল করে থাকেন। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ মুসলিমরা আশুরার ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানিনা। যেহেতু উপরের আলোচনায় আমরা আশুরার বিশেষ আমল সম্পর্কে জেনেছি তাই এখন আশুরার ফজিলত ও আমল জেনে নেওয়া যাক।
আশুরা উপলক্ষ্যে দুটি রোজা রাখা সুন্নত। রোজা রাখার পদ্ধতি হল মহররমের ৯, ১০ কিংবা ১০, ১১ তারিখ রোজা রাখা। এ রোজা রাখলে পুরো এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন বলে আশাবাদী ছিলেন নবিজি। হাদিসে এসেছে, হজরত কাতাদা রাঃ বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, "আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় বিগত জীবনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন।" {তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ}
মহানবী সাঃ বললেন, মুসা আঃ এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। অতঃপর তিনি মহররমের ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন। যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। {মুসলিম ও আবুদাউদ}
হজরত কাতাদা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাঃ বলেন, "আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।" {তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ} উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে আশুরার দিন বিশেষ আমল হলো রোজা রাখা।
আশুরার দিন মহানবী (সা.) যেসব আমল করতেন
আশুরার দিন মহানবী (সা.) যেসব আমল করতেন? সে আমলগুলো সম্পর্কে জেনে আমাদের সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আশুরার দিন রোজা রাখা সুন্নাত। আশুরার রোজা সব নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম সাঃ মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে রাসুলুল্লাহ সাঃ দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছে।
প্রিয় নবী সাঃ তাদের রোজার কারণ জানতে পারলেন, এদিনে মুসা আঃ সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কয়েদখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যায়। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে।
রোজার জন্য রমজানের পর যে মাসকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস বলা হয়েছে তা হচ্ছে মহররম। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে, আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।" {সহিহ মুসলিমঃ ২৬৪৫} ইবনে রজব রহঃ বলেন, আমাদের পূর্বসূরিরা তিন দশককে বেশি গুরুত্ব দিতেন রমজানের শেষ ১০ দিন, জিলহজের প্রথম ১০ দিন এবং মহররমের প্রথম ১০ দিন। {লাতাইফুল মাআরিফ}
আরো পড়ুনঃ মহররম মাসের ১০ তারিখের ফজিলত - মহরম মাসের ফজিলত ও আমল
মজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ওয়াজিব না মুস্তাহাব ছিল এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের দ্বিমত রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। হজরত আয়েশা রাঃ বলেন, জাহেলি সমাজে লোকেরা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা রাখত।
এ দিন কাবায় গিলাফ জড়ানো হতো। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, যে এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক। {সহিহ বুখারিঃ ১৫৯২} আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আশুরার দিন মহানবী (সা.) যেসব আমল করতেন? সেই আমলগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন।
আশুরার দিন ও রাতের আমল সমূহ
যেহেতু আশুরা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন তাই এই দিনটি সম্পর্কে আমাদের সকলের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। আশুরার বিশেষ আমল জেনে তারপরে আশুরার দিন ও রাতের আমল সমূহ করতে হবে।মহরম মাসের দশ তারিখকে বলা হয় আশুরা। যার অর্থ হচ্ছে দশ। তাই এ মাসের দশ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলে অবহিত করা হয়। তো চলুন আশুরার দিন ও রাতের আমল সমূহ জেনে নেওয়া যাক।
১০ই মহরমের রাত্রি পবিত্র আশুরার রাতে ১০০ রাকাত নামাজ পাঠ করা উত্তম। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে ৩ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। দ্বিতিয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পাঠ করতে হবে। সকল নামাজের শেষে ৭০ বার বলতে হবে।
আরবীঃ سُبْحانَ اللّهِ وَالْحَمْدُلِلّهِ وَلااِلهَ اِلا اللّهُ وَاللّهُ اَکبَرُ وَلا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ اِلاّ بِاللّهِ الْعَلِىِّ العَظیمِ
অতঃপর আস্তাগফার পাঠ করা উত্তম। উক্ত রাতের শেষভাগে ৪ রাকাত নামাজ পাঠ করা উত্তম। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস প্রত্যেকটি ১০ বার করে পাঠ করতে হবে। দ্বিতিয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পাঠ করতে হবে। নামাজান্তে ১০০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম।
আরবিঃ أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।
১০ই মহরম দিনের আমল হচ্ছে সকল পার্থিব কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। ইমাম হুসাইন আঃ এবং তাঁর আহলে বাইত আঃ এর কষ্টকে স্মরণ করে শোকানুষ্ঠানের আয়োজন, ক্রন্দন এবং মাতম করা। মুমিনদের সাথে সাক্ষাতকালে বলা উত্তম হচ্ছে। যদি কোন ব্যাক্তি আশুরার দিন কারবালায় ইমাম হুসাইন আঃ এর মাজারে উপস্থিত থাকে তাহলে কারবালার শহিদদের পিপাসাকে স্মরণ করে মুসলমানদেরকে পানি পান করানো হচ্ছে উত্তম।
আশুরার দিনের দোয়া
যেহেতু আশুরার দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন সেহেতু আল্লাহ তায়ালা এই দিনে তার বান্দাদের দোয়া কবুল করে থাকেন। তাই এই দিনটিতে রোজা করার পাশাপাশি বিশেষ দোয়া রয়েছে সেগুলো করতে হবে। আপনার যা মন চাই আল্লাহ তাআলার কাছে চাইতে পারেন। মাসজুড়ে তাওবাহ-ইসতেগফার করে বছরব্যাপী কল্যাণ পেতে এ দোয়া পড়া আবশ্যক।
আরবিঃ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ ، وَالإِيمَانِ ، وَالسَّلامَةِ ، وَالإِسْلامِ ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালঅমাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি। {আল-মুঝাম আল আওসাত}
আরবিঃ رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا، وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ
বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন। {সুরা আরাফঃ আয়াত ২৩}
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
আশুরার বিশেষ আমল - আশুরার ফজিলত ও আমলঃ শেষ কথা
আশুরার বিশেষ আমল, আশুরার ফজিলত ও আমল, আশুরার দিন মহানবী (সা.) যেসব আমল করতেন, আশুরার দিন ও রাতের আমল সমূহ, আশুরার দিনের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি এই দিনে আল্লাহতালার ইবাদত করতে চান এবং আমলগুলো সঠিকভাবে করতে চান তাহলে এই আর্টিকেল পড়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।
আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসের রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জানুন
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।১৬৮৩০
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url