আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার
আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার প্রতিটি মুসলিমের জেনে রাখা উচিত। আমরা অনেকেই জানি যে মহররম মাস ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। মহরম মাসের ১০ তারিখ বলা হয় আশুরা। আমরা অনেকেই আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে অবগত নয়। আজকের এই আর্টিকেলে আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার
- আশুরার দিনে ফজিলতপূর্ণ ৩ আমল
- আশুরার আমল-ফজিলত
- মহররমের কুসংস্কার
- রোজা ছাড়াও যে দুটি আমল আশুরায় গুরুত্বপূর্ণ
- শেষ কথা
আশুরার দিনে ফজিলতপূর্ণ ৩ আমল
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত আশুরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হিজরী বর্ষের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস হল মহররম। এই মহররম মাসের ১০ তারিখ বলা হয় আশুরা। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এই আশুরার দিনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই দিনটিতে ইসলামের ইতিহাসে বড় বড় কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা সাক্ষী। সাধারণত তাই আশুরার দিনে ফজিলতপূর্ণ ৩ আমল সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।
আরো পড়ুনঃ মহররম মাসের ১০ তারিখের ফজিলত - মহরম মাসের ফজিলত ও আমল
আশুরার দিনে ফজিলতপূর্ণ ৩ আমলঃ
রোজা রাখাঃ আশুরার দিনে রোজা রাখার আমল সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আশুরা উপলক্ষে দুই দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। মুহররমের ১০ তারিখের আগে বা পরে এক দিন বাড়িয়ে রোজা রাখার কথা হাদিস শরিফে এসেছে। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল।
জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত, "রাসূল সাঃ আমাদের রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। আর এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না, নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না।" {মুসলিমঃ ১১২৮}
রোজার জন্য রমজানের পর যে মাসকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস বলা হয়েছে তা হচ্ছে মহররম। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে, আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। {সহিহ মুসলিমঃ ২৬৪৫}
নবী পরিবার জন্য দোয়াঃ আশুরার দিন আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল আহলে বাইত তথা নবীর পরিবারের সদস্যরা শাহাদাতের কারণে তাদের জন্য দোয়া করা, দরুদ পড়া এবং তাদের কাছ থেকে সত্যের ওপর অটল থাকার শিক্ষা গ্রহণ করা। এই তিনটি কাজ ছাড়া আশুরায় অন্য কোনো বিশেষ আমল নেই।
নিজের পরিবারের জন্য ভালো খাবার আয়োজনঃ আশুরার দিনের আমল গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই দিনে যথাসাধ্য ভালো খাবার খাওয়া উচিৎ। হজরত আবদুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, "যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।" {তাবরানি, বায়হাকিঃ ৩৭৯৫} মহররম মাসে এই তিনটি আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আশুরার দিন অর্থাৎ মহররম মাসের ১০ তারিখ যত বেশি বেশি সম্ভব এই আমলগুলো করতে হবে।
আশুরার আমল-ফজিলত
আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। মুহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস। এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরাকে কেন্দ্র করে বছরের প্রথম মাসটি অত্যন্ত সম্মানিত। এর রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। অসংখ্য কালজয়ী ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা। তো চলুন আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মহান আল্লাহ তাআলার কাছে বছরের বেশ কিছু দিন মাস ও মুহূর্ত বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন। এসবের মধ্যে হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ ইয়াওমে আশুরাও একটি। এই আশুরা শব্দটি আরবি। এটি অর্থ দশম। শব্দটি হিজরি বর্ষের ১০ তারিখকে বুঝায়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাঃ মদিনাতে এলেন তখন ইয়াহুদিগণ আশুরার দিন রোজা রাখতেন।
তারা জানাল এ দিন মুসা আঃ ফেরাউনের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবি সাঃ তাঁর সাহাবীদের বললেন, মুসা আঃ এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার দিক থেকে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হাকদার। কাজেই তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ। {বুখারি} হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে আশুরার দিন সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বলেন, এই দিন জাহেলি যুগের লোকেরা রোজা রাখত। {মুসলিম}
মহানবী সাঃ বললেন, মুসা আঃ এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। অতঃপর তিনি মহররমের ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা উত্তম। {মুসলিম ও আবুদাউদ}
মহররমের কুসংস্কার
আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে জানব। সাধারণ মানুষের মধ্যে মহররম মাস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন এ মাসে নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ না করা, কোনো শুভ কাজ বা ভালো কাজের সূচনা না করা, গোশত না খাওয়া ও নিরামিষ আহার করা, পান না খাওয়া, নতুন কাপড় ও সুন্দর পোশাক পরিধান না করা, সাদা কাপড় বা কালো কাপড় তথা শোকের পোশাক পরা, সব ধরনের আনন্দ-উৎসব পরিহার করা। এগুলো বিশ্বাস করা হলো কুসংস্কার।
আরো পড়ুনঃ জিলহজ মাসের রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জানুন
মহররম মাসে আরো একটি বানোয়াট কথা প্রচারিত হয় যে, এই মাসে নাকি বিয়ে করা যাবে না। করলে সেই বিয়ে শুদ্ধ হবে না, তাই ইমাম হোসেনকে অপমান করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ আপনি যদি নবী সাঃ এর হাদিস, শরিয়তের দিকে তাকান তাহলে দেখা যাবে আমার নবী বলছেন "যারা বিয়ে করলো তারা অর্ধেক দ্বীন পূরন করলো" বিয়ে হলো আমার নবীর প্রিয় সুন্নত।
এই মাসে বিয়ে বিয়ে করা হারাম বলছে, আছে কি এমন কোন বিধান, কোন মসজিদের ইমাম বলেছেন যে এই মাসে বিয়ে করা যাবে না? না কোন মসজিদের ইমাম থেকে এমন কথা শুনা যায় নি তাহলে এরা কারা যারা দ্বীনের বিধানে হস্তক্ষেপ করছে? বলতে শুনা যায় যে এই মাসে শোকের মাস তাই এই মাসে শাদী করে কোন সূত্রে আনন্দ উদযাপন করবো।
কুসংস্কারকে পুজি করে উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা আরো বেশি বাড়াবাড়ী করতে গিয়ে হালাল খাবারকে এই মাসে হারাম বলে ফেলেন নিজের ইলম এর ঘাটতির কারনে যেমন মলিদা, শরবত, খিচুরি ইত্যাদি আগে বলে রাখি এইসব বস্তুকে কেউ বাপজনমেও হারাম প্রমান করতে পারবে না, এটা আমার চ্যালেঞ্জ রইলো তারাও নির্বোধের চেয়ে কম না।
রোজা ছাড়াও যে দুটি আমল আশুরায় গুরুত্বপূর্ণ
উপরের আলোচনায় আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনেছি। আমরা সকলেই আশুরার দিন সাধারণত রোজা করে থাকি। কিন্তু রোজা করা ছাড়াও আরো বেশ কিছু আমল রয়েছে যেগুলো আমরা জানিনা। রোজা ছাড়াও যে দুটি আমল আশুরায় গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। রোজা ছাড়াও যে দুটি আমল আশুরায় গুরুত্বপূর্ণ চলুন জেনে নেই।
ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ আশুরার দিন ও মহররম মাসজুড়ে বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা। কেননা এ দিন ও মাসের বিশেষ মুহূর্তে তাওবাহ-ইসতেগফারে আল্লাহ তাআলা পুরো জাতিকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, মহররম হলো আল্লাহ তাআলার কাছে একটি মর্যাদার মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতিতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন। {তিরমিজি}
আশুরায় রোজাদারকে ইফতার করানোঃ এমনিতে ইফতার করানো অনেক ফজিলতপূর্ণ কাজ। সম্ভব হলে আশুরার দিনে নিজে রোজা রাখার পাশাপাশি রোজা পালনকারীদের ইফতার করানো উত্তম। সাধ্যমত দান সাদাকাহ করা। গরিবদেরকে পানাহার করানো। ইয়াতিমের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সহযোগিতা করা।
আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কারঃ শেষ কথা
আশুরার দিনে ফজিলতপূর্ণ ৩ আমল, আশুরার আমল-ফজিলত মহররমের কুসংস্কার, রোজা ছাড়াও যে দুটি আমল আশুরায় গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আপনি যদি আশুরার আমল সম্পর্কে কোন ধারণা না রাখেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এখান থেকে আপনি আশুরার আমল-ফজিলত ও মহররমের কুসংস্কার সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ মহররম মাসের ১১ টি ফজিলত - মহরম মাসের ইতিহাস
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। ১৬৮৩০
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url