OrdinaryITPostAd

পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান - পশু জবাই করার সময় করণীয়

পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান জেনে এরপরে আমাদেরকে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে। যেহেতু কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত তাই পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান জেনে নেওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য দায়িত্ব। আজকের এই আর্টিকেলে পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কনটেন্ট সূচিপত্রঃ পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান

পশু জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলা

আমরা জানি যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রতিটি পশুর জীবন অনেক মূল্যবান। মহান আল্লাহ তায়ালা কিছু প্রাণীকে মানুষের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। এটা মানুষের ওপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ অনুগ্রহ। এর জন্য করণীয় হচ্ছে পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান অনুযায়ী পশু জবাই করা। জবাই করার সময় আল্লাহতালার শুকরিয়া আদায় করা।

আরো পড়ুনঃ কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত

আমরা পশু জবাই করার সময় কিভাবে আল্লাহতালার শুকরিয়া আদায় করব সেটি আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জব এর সময় আল্লাহতালার অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করার পদ্ধতি হচ্ছে জবাই করার সময় "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলে জবাই করতে হবে। কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিলে ওই পশুর গোশত খাওয়া হালাল হবে না।

আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, "আর তোমরা সে পশু থেকে খেওনা যার উপর আল্লাহ তায়ালার নাম নেওয়া হয়নি। তা খাওয়া গুনাহ। নিশ্চয় শয়তানরা নিজ বন্ধুদের প্ররোচনা দেয়, যাতে ওরা তোমাদের সঙ্গে বিতর্ক করে। তোমরা যদি ওদের কথা মেনে নাও, তবে নিশ্চয়ই তোমরা মুনাফিক হয়ে যাবে।"{সূরা আনআমঃ ১২১}

জবাই শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে হওয়া

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গ থেকে পশুর গোশত হালাল হওয়ার জন্য শরীয়ত পদ্ধতিতে আমাদেরকে পশু জবাই করতে হবে। শরীয়তের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পশু জবাই করা এবং পশুর রুহ বের করাকে শরীয়তের পরিভাষায় জবাই করা বলা হয়। পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে। জবাই করা ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে পশু মেরে ফেললে এটি খাওয়া যাবেনা।

গৃহপালিত প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রাণ বের করার শরীয়ত সম্মত দুটি নিয়ম এবং পদ্ধতি রয়েছে।

নহর করা -- সাধারণত আমরা জানি যে উটকে নহর করা হয়। যেহেতু উট অনেক বড় প্রাণী তাই উটকে মাটিতে শুয়ে কুরবানী দেওয়া খুবই কষ্টকর। তাই উট এর প্রাণ বের করার ক্ষেত্রে নহর করা হয়ে থাকে। নহরের পদ্ধতি হচ্ছে, উট দাঁড়ানো অবস্থায় গলার নিচে দাঁড়ালো কোন অস্ত্র দ্বারা খোঁচা দিয়ে ছিদ্র করে দেওয়া। যার মাধ্যমে উটের শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে মৃত্যু ঘটবে।

জবাই করা -- আমাদের বাংলাদেশ জবাই করা সব থেকে জনপ্রিয় একটি শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি। পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান মেনে এরপরে পশু জবাই করা হয়। উট ব্যতীত যে সকল প্রাণী রয়েছে সকলের ক্ষেত্রে জবাই করা হয়।

আরো পড়ুনঃ কোরবানি কার উপর ফরজ - কোরবানি কাদের উপর ফরজ

পশু জবাই করার সময় চারটি রোগ কাটতে হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্যনালী, শ্বাসনালী, শ্বাসনালীর দুই পাশের দুইটি মোটা রগ। কোন কারণে যদি চারটি রোগ না কেটে তিনটি কাটা হয় তাহলে গোস্ত খাওয়া বৈধ হবে। কিন্তু যদি তিনটির কম কাটা হয় তাহলে সেই গোশত খাওয়া বৈধ হবে না।

জবাইকারী মুসলিম হওয়া

আমরা জানি অমুসলিম কোন ব্যক্তি জবাই করা কোন প্রাণী খাওয়া উচিত নয়। কারণ যে প্রাণী আল্লাহ তায়ালার নামে জবাই করা হয় না সাধারণত সেটি খাওয়া একজন মুসলিমের জন্য হারাম। কারণ মুসলিমরা পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান মেনে এরপরে পশু কোরবানি অথবা জবাই দিয়ে থাকে। কোন খাবার তৈরি বা রান্না করার ক্ষেত্রে কোন ধর্মের অনুসারী সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কারণ সকল ধর্মের মানুষের তৈরি করা খাবার খাওয়া বৈধ। কিন্তু পশুর গোশত হালাল এর ক্ষেত্রে জবাই কারীকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। অমুসলিমদের মধ্যে থেকে যারা নিজের ধর্মের উপর যথাযথ বিশ্বাস রাখে এমন হওয়া শর্ত। এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, " অগ্নিপূজকদের মেয়েদেরকে বিবাহ করা এবং তাদের জবাই করা পশুর গোশত খাওয়া ছাড়া অন্য সকল বিষয় তাদের হুকুম আহলে কিতাব দেন ন্যায়।"

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে অমুসলিম কোন ব্যক্তি জবাই করা পশু অথবা প্রাণী একজন মুসলিম ব্যক্তি খেতে পারবে না। বর্তমান সময়ে অনেক নাস্তিক রয়েছে যারা মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছে কিন্তু তারা আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না তাদের জবাইকৃত প্রাণী খাওয়া হারাম হবে।

পশু জবাই করার সময় করণীয়

আমরা যেহেতু মুসলিম এবং সামনে আমাদের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব এর মধ্যে অন্যতম একটি কোরবানির ঈদ তাই পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান গুলো জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। পশু কোরবানি করার সময় আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। আপনি যদি নিজের পশু নিজেও কুরবানী করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার করণীয়গুলো মেনে কোরবানি করতে হবে।

১। কোরবানির পরশু জবাইয়ের সময় গলা কেটে আলাদা করা যাবে না। এত বেশি কাটা যাবে না যে, হারাম রগ পর্যন্ত ছুড়ি পৌঁছে যায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃ পশু জবাইয়ের সময় নাখায় করতে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ হল এত বেশি কাটা যে ছুরি হারাম হারাম রগ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

২। কুরবানী করার সময় যেন পশুর কষ্ট কম হয় সে সম্পর্কে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী সাঃ এ ব্যাপারে বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বস্তুর সঙ্গে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাউকে হত্যা করতে হলে, তাকে সুন্দরভাবে হত্যা করো। কোন পশুকে জবাই করতে হলে সুন্দরভাবে কর। যেমন জবাইয়ের আগে ছুরি ভালো ভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে।{সহি মুসলিম}

৩। পবিত্র অবস্থায় জবাই করতে হবে। যে ব্যাক্তি কোরবানি করবে তাকে অবশ্যই পাক পবিত্র থাকতে হবে। ভালো কাপড় পড়তে হবে এবং ওযু অবস্থায় থাকতে হবে। এতে করে কুরবানী আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হবে খুব সহজেই।

পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধানঃ উপসংহার

পশু জবাইয়ের শরয়ী বিধি-বিধান, পশু জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলা, জবাই শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে হওয়া, জবাই কারি মুসলিম হওয়া, পশু জবাই করার সময় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।

আরো পড়ুনঃ কোরবানি ওয়াজিব না ফরজ - কোরবানি ওয়াজিব নাকি সুন্নত

আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে অবশেষে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। ২০৮৭৬

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url