অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম - ভাগে কোরবানির নিয়ম
অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে নিচে উল্লেখিত তথ্যগুলো পড়তে থাকুন। অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম।
পেজ সূচিপত্র: অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম
ভূমিকা
ইসলামের দৃষ্টিতে কোরবানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। জিলহজ মাসে মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয়। আর ঈদুল আযহাকে বলা হয় কোরবানির ঈদ। কেননা ঈদুল আযহাতে সমগ্র বিশ্বের সমর্থ্যবান মুসলিমগণ কুরবানী করে থাকেন। কোরবানি করার অনেক ফজিলত ও মাহাত্ম্য রয়েছে।
কুরবানী করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন এ মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, "হে নবী! ওদের বলুন, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ-আমার সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তিনি একক ও অদ্বিতীয়। এ আদেশই আমি পেয়েছি। আমি আত্মসমর্পণ কারীদের মধ্যে প্রথম।" (সূরা আনআম, আয়াত ১৬২-১৬৩)
এছাড়াও কোরবানির নিয়ত ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "কিন্তু মনে রেখো! কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ সচেতনতা। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেওয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। হে নবি! আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।" (সুরা হজ: ৩৭-৩৮)
যাই হোক কুরবানী করার নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। তাই আপনি যদি পশু কোরবানি করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কোরবানির নিয়ম কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এই আর্টিকেলটিতে অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম
ভাগে কোরবানি করার ক্ষেত্রে দুইটি নিয়ম রয়েছে। প্রথমত সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব, আর দ্বিতীয়টি হলো সরাসরি কোরবানিতে অংশীদারিত্ব। আপনি যদি সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার হতে চান সেক্ষেত্রে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে একটি বকরি কিনে একজনকে মালিক বানিয়ে সেটা কোরবানি করা যেতে পারে। এভাবে কোরবানি করলে যারা যারা পশু ক্রয়ের করার জন্য টাকা দিয়েছে তারা সকলেই সওয়াবের অধিকারী হবে।
পক্ষান্তরে আপনি যদি সরাসরি কুরবানীতে অংশীদার হতে চান সে ক্ষেত্রে তিনজন পাঁচজন বা সাত জন মিলে গরু মহিষ কিংবা উট ক্রয় করে তা কোরবানি করতে হবে। কেননা বকরির ক্ষেত্রে সরাসরি কোরবানিতে অংশীদারিত্বের সুযোগ নেই। তাই আপনি যদি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কোরবানি করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে গরু মহিষ কিংবা উট কোরবানি করতে হবে।
অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কোরবানি করতে চাইলে যারা অংশগ্রহণ করবে তাদের সকলের নিয়ত সঠিক হতে হবে। কোরবানির ভাগীদারদের মধ্যে কোন একজন ব্যক্তির নিয়ত যদি সঠিক না থাকে সেক্ষেত্রে কিন্তু সকলের কুরবানী বাতিল বলে গণ্য হবে। আর এ কারণেই, জেনে বুঝে তারপরে কোরবানির ভাগীদার পছন্দ করতে হবে।
অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করা যাবে কি
অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম সমূহ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। অনেকের মনে এই ধরনের সংশয় থাকে যে, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করা যাবে কি না? নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি নিজেই জানতে পারবেন যে, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করা যাবে কি না?
সামর্থ্য কম থাকলে একাধিক ব্যক্তি ভাগে কোরবানি করতে পারবে মর্মে ওলামায়ে কেরামদের মতামত রয়েছে। তবে কোন কোন ওলামায়ে কেরাম মনে করেন ভাগে কোরবানি দেওয়া বৈধ হবে না। যাই হোক, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ উলামায়ে এর মতামত হলো অংশীদারির ভিত্তিতে বা ভাগে কোরবানি দেওয়া যাবে।
ভাগে কোরবানি দেওয়ার পক্ষে যারা মতামত ব্যক্ত করেন তাদের দলিল হলো: হজরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একটি গরু সাতজনের পক্ষ কোরবানী করা যাবে। (তিরমিযী শরিফ)। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা:) বলেছেন, "গরু সাত জনের পক্ষ হতে এবং উট সাত জনের পক্ষ হতে কোরবানী করা যাবে।" (মুসলিম, আবূ দাউদ)।
কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য সমূহ
অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম-কানুন সমূহ সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য সমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
তাই আপনি যদি কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়তে হবে। নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়লে আশা করি আপনি কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
আপনি যেই পশু দিয়ে কোরবানি করবেন, সেই পশুর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। কেননা সব ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি হয় না। আল্লাহ তায়ালা উৎকৃষ্ট জিনিস পছন্দ করেন আর এ কারণেই কোরবানির পশু উৎকৃষ্ট হওয়া উচিত। কোরবানির পশুর যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা বাঞ্ছনীয় সেই বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে নীচে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো। আসুন জেনে নেয়া যাক, কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
- পশুর শিং ভাঙ্গা না থাকা: আপনি যেই পশু দ্বারা কোরবানি করতে চান সেই পশুর শিংভাঙ্গা থাকা যাবে না। কেননা ভাঙা-শিঙ্গের (যদি সিং গোড়া থেকে উপরে যায়) পশু দ্বারা কোরবানি করা বৈধ হবে না। তাই আপনি যদি কোরবানি দিতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সুস্থ সবল এবং নিখুত একটি পশু কোরবানি দিতে হবে। শিং ভাঙ্গা বা অন্যান্য কোন ধরনের খুঁত থাকা যাবে না।
- কানকাটা না থাকা: কোরবানির পশুর কানের যদি বেশিরভাগ অংশ কাটা থাকে সেক্ষেত্রে সেই পশু দ্বারা কোরবানি করা বৈধ হবে না। তাই অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে কোরবানির পশুর কান যেন কাটা না থাকে।
- স্তন ছিন্ন না থাকা: অনেক সময় দেখা যায় অনেক পশুর স্থান ছিন্ন থাকে। পশুর উভয় স্তন কিংবা একটি স্তন যদি না থাকে সেক্ষেত্রে সেই পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া বৈধ হবে না। কেননা এক বা একাধিক স্তন বিহীন খুঁত সম্পন্ন পশু কোরবানির যোগ্য নয়।
- দৃষ্টিশক্তি না থাকা: হালাল কোন পশু যদি দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে থাকে তাহলে সেই পশুর দ্বারা কোরবানি করা বৈধ হবে না। তাই কোরবানি দিতে চাইলে অবশ্যই দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন পশু কোরবানি দিতে হবে। অন্যথায় আপনার কোরবানি আদায় হবে না।
- অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া: পশু যদি অত্যন্ত পরিমাণে দুর্বল থাকে তাহলে সেই পশুর দ্বারা কোরবানি করা বৈধ হয় না। অর্থাৎ খুশি যদি এতটাই দুর্বল থাকে যে সে বাড়ি থেকে কোরবানির জায়গা পর্যন্ত যেতে অক্ষম হয় তাহলে অবশ্যই সেই পশু কোরবানির যোগ্য নয়।
- অধিকাংশ দাঁত ভাঙ্গা না থাকা: কোন পশুর যদি অধিকাংশ দাঁত না থাকে তাহলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই। তাই অবশ্যই আপনার কোরবানির পশু দাঁত ভাঙ্গা হওয়া যাবেনা।
শেষ কথা
অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম সমূহ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাই আপনি যদি প্রথম থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি যদি আপনারা নিকটে ভালো লেগে থাকে তাহলে সকলের সাথে শেয়ার করবেন। ১৬৪১৩
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url