ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত - কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য
ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। সহীহ পদ্ধতিতে কুরবানী আদায় করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তা আগে জানতে হবে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত সেটি জানাতে আজকের এই পোস্টটি সাজিয়েছি।
কোরবানি মুসলিমদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। সামর্থ্যবান নারী পুরুষদের উপর কুরবানী আদায় করা ওয়াজিব। আজ এই পোস্টটি পড়লে আপনারা ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত, কোরবানির আয়াত ও হাদিস, কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য, কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র - ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত জেনে নিন
কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য ত্যাগের মহিমায় আমরা যে হালাল পশু কুরবানী করে থাকি তা ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। কোরবানির পশুর আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে আপনি সেই পশুটি কোরবানির জন্য নির্ধারণ করতে পারেন। চলুন সেই বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে ফেলি।
- কোরবানির পশু অবশ্যই তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। কেননা স্বাস্থ্যবান পশু কোরবানি দেওয়া সুন্নত।
- কোনো ধরনের রোগাক্রান্ত পশু কুরবানী করা যাবে না। বরং সুস্থ সবল ও স্বাভাবিক পশুই কুরবানির জন্য আদর্শ।
- অন্ধ, পঙ্গু, কান কাটা, লেজ কাটা মুক্ত প্রাণী কোরবানি করার জন্য উপযুক্ত।
- যে সকল প্রাণী পাগলামি আচরণ করে কিন্তু ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে সে সকল পশু কোরবানির জন্য বেশ উপযোগী। সেসকল গরু সব সময় নড়াচড়া করবে, কান খাড়া থাকবে এবং চঞ্চল প্রকৃতির হবে।
- যেসব গরু ধরতে গেলে নড়াচড়া করবে, সব সময় জাবর কাটবে, স্বাভাবিক আচরণ করবে এমনটা জরুরি। ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত আমরা সে সম্পর্কে পোস্টের পরবর্তী অংশে আরো জেনে নেব।
কোরবানির আয়াত ও হাদিস
কোরবানির সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে এরশাদ করেন, "কিন্তু মনে রেখো! কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ ভীতি। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেওয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো।" (সুরা হজ : আয়াত নং ৩৭-৩৮)
মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, "অতএব আপনার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।" (সুরা কাউছার : আয়াত নং ২)। কোরবানি সংক্রান্ত একটি হাদিসে আছে যেখানে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) দুইটি সাদা-কালো বর্ণের বড় শিং বিশিষ্ট নর দুম্বা কোরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে, বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বললেন। অতঃপর নিজ হাতে জবেহ করলেন" (বুখারি, হাদিস : ২/৮৩৪)।
ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত
যেহেতু আমরা মহান আল্লাহর নিকট্য লাভের আশায় কুরবানী করে থাকি, সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত সেটি মাথায় রেখেই আমাদের পশু কুরবানি করতে হবে। কুরবানির পশু ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তার জন্য নির্ধারিত কিছু শর্তাবলী রয়েছে। সেগুলো হলো-
- স্বাস্থ্যবান হওয়া: কুরবানির পশুটি অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। পশুটি শারীরিকভাবে সবল এবং কোনো প্রকার রোগ থাকা যাবে না। পশুটির আকার, মাংসের পরিমান ও সুস্থতা বজায় রাখতে হবে। যেন এটি দেখে সহজেই কুরবানীর পশু হিসেবে পছন্দ করা যায়।
- বয়স: কুরবানির পশু ইসলামী শরিয়তের নির্ধারিত বয়সের হতে হবে। সেক্ষেত্রে উটের বয়স ৫ বছর, গরু-মহিষ ২ বছর, ছাগল-দুম্বা-ভেড়া ১ বছর হতে হবে। এই বয়সের প্রাণীগুলোই কেবল কোরবানী দেওয়ার উপযুক্ত হবে।
- সুন্দর হওয়া: কুরবানির পশু সুন্দর, সুঠাম, দীর্ঘদেহী এবং আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। হাদিসে এমন পশুই কুরবানি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- নির্দিষ্ট পশু: ইসলামী শরীয়তে কেবলমাত্র গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বাই কোরবানি পশু হিসাবে জায়েজ রয়েছে। এসকল প্রাণী ব্যতীত অন্য কোন প্রাণী কোরবানি দেওয়া যাবে না।
- ত্রুটিমুক্ত হালাল প্রাণী: সর্বপরি ত্রুটিমুক্ত হালাল প্রাণী ইসলামের দৃষ্টিতে কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য। সুতরাং, আপনারা এখন ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন।
কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম
পোস্টে পূর্ববর্তী অংশে আপনারা ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তা জেনে ফেলেছেন। এবার শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে কোরবানির পশুর জবাই করার নিয়ম জেনে নিন। জবাই করার পূর্বে অবশ্যই কোরবানির জন্য নিয়ত করতে হবে। সবচেয়ে উত্তম হয় যে ব্যক্তি কুরবানী দিবে সে নিজে হাতে কোরবানি করবে। ডান হাত দিয়ে অথবা উভয় হাত দিয়ে শক্ত করে ছুরি ধরতে হবে। ছুরি চালানোর সময় 'বিসমিল্লাহ' বলে পশুর গলার তিনটি অংশ ভালোভাবে কর্তন করতে হবে।
খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং শ্বাসনালীর পাশের দুটি রগ ভালভাবে কেটে দিলেই কোরবানির সম্পন্ন হবে। কোরবানির পশুটি শোয়ানোর সময় বাম কাত হয়ে পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে শোয়ানো সুন্নত। কোরবানির পশুকে কোনো প্রকার কষ্ট দেওয়া যাবে না এবং অবশ্যই ধারালো ছুরি দিয়ে কোরবানি সম্পন্ন করতে হবে। আশাকরি কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম আপনারা বুঝতে পেরেছেন। মহান আল্লাহ আমাদের পরিশুদ্ধভাবে কোরবানি সম্পন্ন করার তৌফিক দান করুন।
সবশেষে ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তাহলে
প্রিয় পাঠকগণ! আশা করি পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আপনারা ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করেছেন। পোস্টটি আপনার কোরবানি পরিশুদ্ধ করার জন্য কেবল একটি সতর্কবার্তা মাত্র। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হালাল পশু দ্বারা সহীহ্ শুদ্ধভাবে কোরবানি আদায় করার জন্য কবুল করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা এবং ভালো লাগলে এখনি পোস্টটি শেয়ার করে ফেলুন। @23891
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url