মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির মাংশ বন্টণ করতেন
মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন আমাদের সেভাবেই করতে হবে। কুরবানী দেওয়া হয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে। এই কুরবানীর গোস্ত বন্টণ করার কিছু নিয়ম রয়েছে। মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন সেভাবেই করা উচিত। এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে এই জগতের মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন তা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন তা জেনে নেওয়া যাক।
কনটেন্ট সূচিপত্রঃ মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন
- মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন
- কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম
- কুরবানির গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি কি
- কোরবানির মাংস বন্টন নিয়ে ইসলাম যা বলে
- কোরবানির মাংস বণ্টন ও সতর্কতা
- উপসংহার
মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন
কুরবানী মুসলিমদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। সামর্থ্যবান পুরুষ এবং নারীর উপর কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তির কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে অথবা নিশাব পরিমাণ সম্পদ বা তার থেকেও বেশি সম্পদ রয়েছে তার ওপর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব। কুরবানী করা হলে কোরবানি গোশত সমানভাবে বন্টন করতে হয়।
যেহেতু আমাদের শিক্ষক হলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার যে কোন কাজ করার আগে আমাদেরকে জেনে নিতে হবে আমাদের প্রিয় নবী সেই কাজটি কেমন ভাবে করে গিয়েছেন। মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন আমাদেরকে সেভাবেই বন্টন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কোরবানি কার উপর ফরজ - কোরবানি কাদের উপর ফরজ
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শর্তহীন আনুগত্য ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষা কুরবানির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন। {সূরা কাওসারঃ ০২} আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, "হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন আমার মরণ রাব্বুল আলামিনের জন্য উৎসর্গিত।"{সূরা আনআমঃ ১৬২}
আমরা আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে কোরবানি করে থাকি এবং এ কুরবানীর গোশতর একটি সুনির্দিষ্ট ভাগ রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির পশুর গোশত ভাগ করার নিয়ম আমাদেরকে বলে গিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কুরবানীর গোস্ত একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন। প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ গরিব মিসকিনদের দিতেন। তাহলে আমরা এ হাদিস থেকে বুঝতে পারলাম যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করতেন।
এছাড়া ইবনে মাসউদ রাঃ কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে খেতেন। এক ভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির মিসকিনদের দিতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরবানির গোশত যদি আত্মীয় এবং গরিবদের মাঝে না বিতরণ করা হয় তাহলে এটি খুবই ঘৃণিত একটি কাজ। এতে কৃপণতা প্রকাশ পায়। আল্লাহ তায়ালা কৃপণ ব্যক্তিকে কখনোই পছন্দ করেন না।
কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম
ইসলামের ইতিহাসে কুরবানী অনেক প্রাচীন এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। বর্তমানে মুসলিমদের সর্ববৃহৎ এবং দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব হল ঈদুল আযহা অথবা কুরবানীর ঈদ। কোরবানির ঈদে আমরা আল্লাহ তালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য পশু কোরবানি দিয়ে থাকি। দুনিয়ার মানুষকে খুশি করার জন্য নয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার জন্য কোরবানি দেওয়া হয়।
কুরবানী দেওয়ার পরে আমাদের নির্দিষ্ট ভাগে যেই গোস্ত পাওয়া যায় সাধারণত এটিকে নির্দিষ্ট নিয়মে বন্টন করতে হয়। আমরা অনেকেই কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম জানিনা কিন্তু মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন আমাদের সেই অনুযায়ী বন্টন করতে হবে। ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা এই ব্যাপারে বলেন, "অতঃপর তোমরা ইহা হতে আহার করো এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।"{সুরা হজঃ ২৮} আমাদের প্রিয় নবী কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন, " তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ করো"{ বোখারীঃ ৫৫৬৯} এখানে আমাদের প্রিয় নবী আহার করাও এ বাক্যটি তারা অভাবগ্রস্তদের দান করার কথা বুঝিয়েছেন।
কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম হচ্ছে কোরবানির গোশত পাওয়ার পরে এটিকে সমানভাবে তিন ভাগে বিভক্ত করা। এরপরে এখান থেকে একভাগ নিজের এবং পরিবারের জন্য রাখা। একভাগ প্রতিবেশী অথবা গরিব আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করা এবং আরেকভাগ গরীব দুঃখী অর্থাৎ ফকির মিসকিনদের ভাগ করে দেওয়া।
এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত, আর রাসূলুল্লাহ সাঃ কোরবানির মাংস একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ গরিব মিসকিনদের মাঝে সমানভাগে ভাগ করে দিতেন। কোরআনের আয়াত ও হাদিস অনুযায়ী আমরা জানতে পারি যে কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়ার নির্দেশ করা হয়েছে।
কুরবানির গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি কি?
কুরবানির গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি কি? এই সম্পর্কে জেনে আমাদেরকে কুরবানীর গোশত বন্টন করতে হবে। কারণ আমরা যদি আল্লাহ তালাকে খুশি করতে চাই তাহলে অবশ্যই কোরবানি করার সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে। যদি সমানভাগে বন্টন না করা হয় তাহলে কোরবানি আদায় করা হবে না। কুরবানির গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি কি? তাহলে করা হলো।
কুরবানীর গোশত বন্টনের জন্য আমাদের প্রিয় রাসুল সাঃ কোরবানির গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগ গরিবদের দিতেন। আরেকভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে দিতেন ও হাদিয়া দিতেন। আর এক ভাগ নিজেদের জন্য রেখে দিতেন। এখান থেকে বলা যায় যে কোরবানির গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে তিনটি ভাগ করা উত্তম।
আরো পড়ুনঃ কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত
কিন্তু একেবারে তিন ভাগ সমান হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যদি ফকির-মিসকিন বেশি হয় তাহলে তাদের ভাগ বেশি হতে পারে। আত্মীয়-স্বজন বেশি হলে আত্মীয়স্বজনের ভাগ বেশি হতে পারে। আর যদি কম হয় তাহলে ওই ভাগ কমে যেতে পারে। যদি কারো পরিবারের সদস্য বেশি হয় তাহলে নিজের ভাগের অংশ একটু বড় হতে পারে আবার পরিবারের সদস্য কম হলে কমও হতে পারে।
কোরবানির মাংস বন্টন নিয়ে ইসলাম যা বলে
ইতিমধ্যে মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন সেই নিয়ম জেনে এসেছি। আমাদের সব থেকে বড় শিক্ষক হলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি তার জীবন দশায় প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। কিভাবে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে এবং কোন ধরনের এবাদত করতে হবে সকল বিষয়।
যেহেতু কোরবানি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য দেওয়া হয়। তাই কুরবানী আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। কোরবানির মাংস বন্টন নিয়ে ইসলাম যা বলে সে অনুযায়ী আমাদেরকে কোরবানির মাংস বন্টন করতে হবে। কোরবানির মাংস বন্টনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদিস এবং আল্লাহ তায়ালা নিজে এ ব্যাপারে বলেছেন।
কোরবানির মাংসের বিষয়ে একটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, সালমা বিন আকওয়া রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাঃ বলেন, "তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করে রাখো" এখানে হাদিসে বর্ণিত খাওয়াও কথাটি ধনীদেরকে হাদিয়া দেওয়া এবং দরিদ্রদেরকে দান করাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এই ব্যাপারে বলেন, "অতঃপর তোমরা ইহা হতে আহার করো এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।"{সুরা হজঃ ২৮}
কোরবানির মাংস বন্টন নিয়ে ইসলাম যা বলে তা হলো কোরবানির মাংস কে তিনটি ভাগে বিভক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সমানভাগে বিভক্ত করতে পারেন। আবার একটু কম বেশিও রাখতে পারেন। পরিমাপের ক্ষেত্রে আপনি দাড়িপাল্লা ব্যবহার করতে পারেন। তিন ভাগে বিভক্ত করে একভাগ নিজের এবং পরিবারের জন্য রাখতে হবে, আরেকভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে দিতে হবে এবং অন্য একটি ভাগ ফকির-মিসকিনদের মাঝে দিতে হবে।
কোরবানির মাংস বণ্টন ও সতর্কতা
কোরবানির মাংস বণ্টন ও সতর্কতা সম্পর্কে জানা একজন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা আল্লাহ তালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোরবানি দিয়ে থাকি। এ কোরবানি যদি আল্লাহতালার কাছে কবুল না হয় তাহলে আমরা সফল হতে পারব না। সে ক্ষেত্রে কোরবানির মাংস বণ্টন ও সতর্কতা সম্পর্কে জানা জরুরী।
যেহেতু ইতিমধ্যে কোরবানির মাংস কিভাবে বন্টন করতে হবে? মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা হয়েছে সেহেতু আপনি অবশ্যই ওপরের নিয়ম অনুযায়ী কোরবানির মাংস বন্টন করবেন। কোরবানির মাংস বন্টন করার জন্য আপনাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করতে হবে। পরে একটি ভাগ নিজের জন্য, অন্য আরেকটি ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য, একটি ভাগ গরিব মিসকিনদের জন্য।
কোরবানির পশুর মত তার মাংসের মালিকানা কোরবানি দাতার। সেক্ষেত্রে ওই মাংস নিজে খাওয়া কিংবা কাউকে দেওয়া একান্তই তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যে ব্যক্তি কোরবানি দিয়েছে তিনি যদি চান তাহলে পুরোটাই বিতরণ করে দিতে পারেন আবার চাইলে পুরোটাই খাওয়ার অধিকার রাখেন। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, "তোমরা কোরবানির মাংস যে পরিমাণ ইচ্ছা খাও এবং অন্যদেরকে খাওয়াও, যতটুকু ইচ্ছা জমা করে রাখো।"{ তিরমিজিঃ ১৫১০}
মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেনঃ উপসংহার
মহানবী (সাঃ) যেভাবে কোরবানির গোস্ত বন্টণ করতেন, কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম, কুরবানির গোশত বন্টন করার উত্তম পদ্ধতি কি? কোরবানির মাংস বন্টন নিয়ে ইসলাম যা বলে, কোরবানির মাংস বণ্টন ও সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।
আরো পড়ুনঃ কোরবানি ওয়াজিব না ফরজ - কোরবানি ওয়াজিব নাকি সুন্নত
আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে। অবশ্যই সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। ২০৮৭৬
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url