কোরবানির জন্য পশুর বৈশিষ্ট্য ও যেসব দোষ ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না
কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা জানেন কি? কোরবানি অনেক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত, তাই কোরবানি দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই জেনে নিন কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। আজ এই পোস্টে আপনাদের উদ্দেশ্যে কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে এ বিষয়টি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব।
ইসলামে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও ত্যাগের মহিমার কারণে কোরবানি খুবই ফজিলতপূর্ণ ইবাদাত। নিসাবসম্পন্ন হলে সেই ব্যক্তির উপর কোরবানি আদায় করা ওয়াজিব। নচেৎ সে গোনাহগার হতে পারে। আজ এই পোস্ট থেকে আপনারা কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, পশুর যেসব দোষ-ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না, যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে, কোরবানির দোয়া ও নিয়ত ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে পারবেন। তাই পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেলুন।
পোস্ট সূচিপত্র - কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে জেনে নিন
কোরবানির দোয়া ও নিয়ত
অনেকেই কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম পুরোপুরি ভাবে অবগত নন। কিন্তু সহীহ্ শুদ্ধভাবে কোরবানি আদায় করতে হলে কোরবানির দোয়া ও নিয়ত যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। কোরবানির পশু জবেহ করার ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখলেই শুদ্ধভাবে কোরবানির আদায় করা যাবে ইনশাআল্লাহ। হাদিস গ্রন্থ বুখারী ও মুসলিম এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করেছেন। তাই, নিজ হাতে কোরবানি করা উত্তম।
কোরবানির পশু জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও যেন পশু জবাই না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি পশুটিকে কোরবানির উদ্দেশ্যেই জবাই করতে হবে। পশু জবাই করার পূর্বে ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। অতঃপর, 'বিসমিল্লাহ' বলে শ্বাসনালী, খাদ্যনালী ও দুই পাশের দুই নালী ভালোভাবে জবাই করলে কুরবানী পরিশুদ্ধ হবে। পশু জবাই করার সময় বাম কাতে শুইয়ে পা গুলো পশ্চিম দিকে রাখতে হবে। তবে কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা আমরা পরবর্তীতে জানবো।
অন্যদিকে কোরবানির দোয়া নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে তবে এই দোয়াটি পাঠ করে কোরবানি দেওয়া উত্তম। দোয়াটি হলো, "ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।"
কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে
একটি পশু কোরবানির জন্য উপযুক্ত কিনা তা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। তাই কি সকল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কুরবানির পশু নির্বাচন করতে হবে তা সচেতন মুসলিম হিসেবে তার জেনে রাখা দরকার। এবার আপনারা কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা জেনে নিন।
- সর্বপ্রথম কোরবানির পশুর বয়স নির্দিষ্ট থাকতে হবে। উটের ক্ষেত্রে ৫ বছর, গরু-মহিষের ক্ষেত্রে ২ বছর, ভেড়া-খাসি-দুম্বার ক্ষেত্রে বয়স অন্তত ১ বছর হতে হবে। অর্থাৎ, যে সকল পশুর বয়স এমন থাকবে তাদের কোরবানির জন্য উপযোগী বিবেচনা করা হবে।
- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ব্যতীত অন্য কোন পশু কোরবানির জন্য শরীয়ত সম্মত নয়। তাই এসব পশু দ্বারাই কোরবানি আদায় করার সুন্নত।
- কোরবানির পশুর সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া চাই। অন্ধ, রোগা, আহত, পঙ্গু ইত্যাদি জাতীয় কোনো পশু কোরবানির জন্য জায়েজ নেই।
- কোরবানির পশু অবশ্যই সুঠাম দেহের অধিকারী ও সুন্দর হতে হবে। যেন দেখলেই বোঝা যায় তা থেকে বেশি মাংস পাওয়া যাবে।
- উট, গরু, মহিষ সর্বোচ্চ সাত ভাগে কোরবানি দিতে হবে। তবে ছাগল, ভেড়া, দুম্বার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ব্যক্তির একটি পশু কোরবানি দিতে হবে।
- রোগ-শোক মুক্ত, ত্রুটিমুক্ত, সুস্থ-সবল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী পশুই কেবল কোরবানির জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। আশা করি কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা এক নজরে জেনে নিয়েছেন।
পশুর যেসব দোষ ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না
প্রিয় দ্বীনি বন্ধুরা, পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ থেকে আপনারা কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে সে সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। এবার চলুন কোরবানির পশুর যে সব দোষ ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না তা জেনে নেওয়া যাক।
- পশুর দৃষ্টি শক্তি ও শ্রবণ শক্তি না থাকলে কোরবানি হবে না।
- অত্যন্ত দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ ও রোগাক্রান্ত পশু কোরবানির জন্য উপযুক্ত হবে না।
- লেজের বেশিরভাগ অংশ কাটা থাকলে তা কোরবানি দেওয়া যাবে না এবং জন্মগতভাবে কান না থাকলে সে পশু কোরবানির উপযুক্ত নয়।
- গোড়াসহ সিং উপড়ে যাওয়া, পাগল বা অস্বাভাবিক আচরণকারী পশু কোরবানির জন্য জায়েজ নেই।
- গরু, মহিষ, ছাগলের স্তনের দুধের যদি কোনটি কাটা থাকে তবে সে পশুটি কোরবানি না দেওয়াই ভালো।
- পশুর সাইজ ভালো না হলে এবং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করলে তা কোরবানির উপযুক্ত নয়। মোট কথা কোরবানি পশু বড় ধরনের দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে।
যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে
প্রিয় জ্ঞানপিপাসু বন্ধুরা! নিশ্চয়ই কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা এখন আপনাদের অজানা নয়। তবে এমন কিছু দোষ ত্রুটি রয়েছে যা থাকলেও সে পশু কোরবানির জন্য উপযুক্ত হবে। চলুন এবার সে বিষয়গুলো কি কি তা জেনে নিই।
- পশু পাগল তবে ঘাস পানি নিয়মিত খায় এমন পশু কোরবানি দেওয়া যাবে।
- লেজ বা কানের কিছু অংশ কাঁটা থাকলেও বেশিরভাগ অংশ আছে এমন।
- পশুর একটি পা ভাঙা তবে তিন পা দিয়ে সে অনায়াসে চলতে পারে।
- দাঁত নেই তবে বেশিরভাগ আছে অথবা ভেতরের কোন দাঁত ভাঙ্গা থাকলে।
- পশু বয়ঃবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা দানে অক্ষম হলে।
- পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়া তবে সঙ্গমে সক্ষম। মোটকথা হালকা দোষত্রুটি যুক্ত পশু কোরবানির জন্য জায়েজ রয়েছে। এই প্যারাটি পরে আপনারা কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা পরিপূর্ণভাবে জেনে ফেললেন।
ইতি কথা - কোরবানির পশু যেমন হলে ভালো হয়
প্রিয় ভাই ও বোনেরা সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমরা কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা এখন কোরবানির জন্য পশুর কি কি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা অনায়াসে বলতে পারবেন। পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে পোস্টটির গুরুত্ব সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এখনই শেয়ার করে ফেলুন। মহান আল্লাহ আমাদের উত্তম প্রাণী দ্বারা কোরবানি প্রদান করার তৌফিক দান করুন। আমিন। @23891
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url