কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত - কুরবানির শর্ত ও নিয়ম কি
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এ প্রশ্নটি অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই করে থাকেন। কোরবানি একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত তাই কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এটি জেনে রাখা সকল মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য। আজ এই পোস্টটি পুরোটা পড়লে আপনারা কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এ বিষয় সম্পর্কে হাদিসের আলোকে জানতে পারবেন।
শরীয়তে যেমনটি অনুমোদন দেওয়া রয়েছে সে অনুযায়ী কোরবানির পশু নির্ধারণ করতে হবে। শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী কুরবানীর জন্য উপযুক্ত পশুকে 'বাহিয়াতুল আনআম' বা অহিংস চতুষ্পদ প্রাণী বলা হয়। এই পোস্টটি থেকে আপনারা কোরবানীর পশুর শর্তাবলী কি, কুরবানির শর্ত ও নিয়ম কি, কোরবানির পশুর বয়স, কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায়, কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র - কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত জেনে নিন
কুরবানির শর্ত ও নিয়ম কি
মহান আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য হালাল পশু জবেহ করে মাংস বন্টন করাই হলো কোরবানি। সাধারণত ঈদুল আযহার দিনে পশু কুরবানী করার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট্য অর্জন করে থাকেন মুসলমানরা। তাই ইসলামী শরিয়ায় কোরবানি অতি পবিত্র ও ত্যাগের ইবাদত হিসেবে স্বীকৃত। কুরবানির শর্ত ও নিয়ম কি কি এবার চলুন সেগুলো বিস্তারিত জেনে নিই।
- ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ই জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারীর কাছে যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে ৫২ তোলার রুপার সমমানের সম্পদ থাকে তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। এটি কুরবানী দেওয়ার সবচেয়ে প্রধান শর্ত।
- কুরবানী দেওয়ার আরেকটি পূর্বশর্ত হলো সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান পরিপূর্ণ বয়সের সুস্থ হালাল চতুষ্পদ প্রাণী কোরবানি করা। সে হিসাবে উট পাঁচ বছর, গরু-মহিষ দুই বছর ও ছাগল-দুম্বা-ভেড়া এক বছর বয়সের হতে হবে। পশুর ভেতরে যদি কোন ত্রুটি থাকে তবে কোরবানি দিবে তা মাকরুহ হবে।
- কোরবানির নিয়মাবলী ক্ষেত্রে কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা প্রাণীটিকে অবশ্যই কুরবানীর নিয়তে জবেহ করতে হবে। অন্য কোন নিয়ত করলে কুরবানী আদায় হবে না। এমনকি যে প্রাণীটি কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার বদলে উত্তম কোন প্রাণীও নির্বাচন করা যাবে না।
- কোরবানির পশুর মালিক যদি মারা যায় তবে তার ওয়ারিশের দায়িত্ব হবে কোরবানি আদায় করা।
- কোরবানির পশু থেকে কোন প্রকার লাভ আদায় করা যাবে না। যেমন: পশুর দুধ, পশম ও অন্যান্য কিছু নিজের লাভের জন্য বিক্রি করা।
- ব্যক্তির অযত্ন এবং অবহেলার কারণে যদি কোরবানি পশুটি চুরি হয়ে যায় অথবা কোন কারণে মারা যায় তবে উক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আরো একটি পশু কোরবানি করে যথাযথভাবে কোরবানি আদায় করতে হবে। কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এবার আমরা তা জানবো।
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত
কুরবানির শর্ত ও নিয়ম কি তা আপনার ইতোমধ্যে জেনে নিয়েছেন। প্রিয় দ্বীনই বন্ধুরা এবার চলুন কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে জেনে ফেলি।
- শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত ভাগে কোরবানি দেওয়া যায়। কিন্তু পশুটি ভেড়া, দুম্বা, ছাগল হলে একজন ব্যক্তিকে একটি পশুই কোরবানি দিতে হবে। এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "একটি উট, গরু-মহিষে সাত জন ব্যক্তি কোরবানিতে শরিক হতে পারে। (সহীহ মুসলিম : ১২১৮)"
- কুরবানীর জন্য নির্ধারিত পশুটি সুঠাম ও স্বাস্থ্যবান-সুন্দর হতে হবে। কেননা আমরা মহান আল্লাহর। সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্যই কুরবানী করব।
- পশু অবশ্যই হৃষ্টপুষ্ট হতে হবে যেন প্রথম দেখাতেই তা পছন্দ হয়ে যায়। কোরবানি করার পর তা থেকে যেন অধিক মাংস পাওয়া যায়।
- পশুর কোনো দোষ ত্রুটি থাকা যাবে না। একদম নিখুত রোগমুক্ত প্রাণী নির্বাচন করতে হবে।
- কোরবানির পশুর বয়স বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। উটের ক্ষেত্রে ৫ বছর, ছাগল ভেড়ার ক্ষেত্রে ১ বছর এবং গরু মহিষের ক্ষেত্রে ২ বছর পূর্ণ হওয়া স্বাস্থ্যবান প্রাণীই নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় কোরবানী আদায় নাও হতে পারে।
- হযরত যাবের রাঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল (সাঃ) বলেন যে, "তোমরা অবশ্যই মুসিন্না বা নির্দিষ্ট বয়সের পশু কুরবানী করবে এবং তা যদি পাওয়া দুষ্কর হয় তবে ছয় মাসের মেষ শাবক কোরবানি করতে পারবে" (মুসলিম)। আশা করি কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তা হাদিসের আলোকে বুঝতে পেরেছেন।
কোরবানীর পশুর শর্তাবলী কি - কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায়
মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অন্যতম ইবাদত হলো কোরবানি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের স্বয়ং বান্দাদের কুরবানী আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এবার চলুন কোরবানীর পশুর শর্তাবলী কি সে সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নিই।
- কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে পশুটি অন্ধ হতে পারবেনা। যে সকল পশু দেখলে বোঝা যায় যে এটি রোগ-বালাই দ্বারা আক্রান্ত সে সকল পশু কুরবানী করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি আমাদের প্রিয় নবীর নির্দেশ।
- যে সকল পশুর সুস্থ সবল তা-ই কেবল কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। কোন পঙ্গু প্রাণী কোরবানির জন্য জায়েজ নেই।
- যে সকল পশুর হাত-পা ভেঙে গেছে অথবা গুরুতরভাবে আহত হয়েছে সে সকল পশু কুরবানী থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যে সকল পশুর লেজকাটা অথবা জন্মগত ভাবে কান কাটা, শিং উপরে যাওয়া, দাঁত ভাঙ্গা থাকা, কোনো কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো থাকলে সেই পশু কুরবানীর জন্য বিবেচিত হবে না।
- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ব্যতীত অন্য কোনো প্রাণীকে শরীয়তে কোরবানির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাই শরীয়ত নির্ধারিত পশুগুলো দিয়েই কুরবানী করা সুন্নত। অতএব, এখন আপানারা কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এ ব্যাপারে আরো অধিক জেনে ফেলেছেন।
ইসলামে কোরবানির ফজিলত ও শিক্ষা
ইসলামে কোরবানির ফজিলত এতই বেশি যে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, "অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি কর" (সূরা কাউসার: আয়াত ২)। এখানে মহান আল্লাহ নিজের কোরবানি আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে তার ফজিলত কতটা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ নৈকট্য অর্জন করার জন্য তাই সকল সামর্থ্যবান ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের ওপর কোরবানি আদায় করা ওয়াজিব।
কোরবানির মাধ্যমে যে ত্যাগ অর্জন করা যায় তা অন্য কোনো ইবাদতের মাধ্যমে হয় না। কোরবানির মাংস যখন গরীব দুঃখীদের মাঝে বন্টন করা হয় তখনই কেবল কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য আদায় হয়। ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধন সুদৃঢ় করার জন্য কোরবানির ভূমিকা অপরিসীম। আপনারা ইতোমধ্যে কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত তা জেনেছেন। আশা করি কোরবানীর পশুর শর্তাবলী কি তা মেনে আপনারা এখন কোরবানি আদায় করতে পারবেন।
উপসংহার - কোরবানির পশু যেমন হতে হবে
প্রিয় দ্বীনি বন্ধুরা, সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। আশা করি পোস্টে আপনাদের কুরবানী সংক্রান্ত আমল পরিপূর্ণ করতে কাজে দেবে। কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়টি অন্যদের জানাতে এখনই পোস্টটি শেয়ার করে ফেলুন। দয়াময় আল্লাহ আমাদের স্বাস্থ্যবান ও সুঠাম পশু কুরবানী দেওয়ার করার তৌফিক দান করুন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। @23891
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url