কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা - কোরবানীর প্রকারভেদ
কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা জেনে নেওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কুরবানী হচ্ছে ইসলাম ধর্মে অন্যতম একটি ইবাদত। কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা রয়েছে যেগুলো মেনে আমাদের কুরবানী পালন করতে হয়। আজকের এই আর্টিকেলে কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্রঃ কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা
- কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক কিছু মাসয়ালা
- কুরবানীর প্রকারভেদ
- যাদের কুরবানী ওয়াজিব
- মুসাফির ব্যক্তির কুরবানী
- যাকাতের হিসাব থেকে কুরবানীর হিসাবের ভিন্নতা
- আমাদের শেষ কথা
কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা
আমরা যারা মুসলিম ধর্মাবলম্বের মানুষ রয়েছে তারা জানি যে কুরবানী আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরবানীর মূল বক্তব্য হলো আল্লাহতালার আনুগত্য এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী মাসায়েলের অনুযায়ী সম্পন্ন করা। কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ কোরবানি ওয়াজিব না ফরজ - কোরবানি ওয়াজিব নাকি সুন্নত
এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে কুরবানীর প্রকারভেদ, কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা, যাদের কুরবানী ওয়াজিব, মুসাফির ব্যক্তির কুরবানী, যাকাতের হিসাব থেকে কুরবানীর হিসাবের ভিন্নতা সম্পর্কে যে সকল মাসয়ালা রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করা হবে। আশা করি আপনি এ গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা সম্পর্কে জেনে নিবেন।
কুরবানীর প্রকারভেদ
কুরবানীর প্রকারভেদ রয়েছে আমরা তা অনেকেই জানিনা। আল্লাহতালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানী করা হয়। কোরবানির গোস্ত অথবা রক্ত কোন কিছুই আল্লাহতালার কাছে চাই না কিন্তু আমাদের তাকওয়া আল্লাহতালার কাছে পৌঁছে যায়। কুরবানীর প্রকারভেদ জেনে নেওয়া যাক। এছাড়া কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা সম্পর্কে জানানো হবে।
- ওয়াজিব কুরবানী
- নফল কুরবানী
১। ওয়াজিব কুরবানী
- সাহিবে নিসাবের কুরবানী
- মান্নতের কুরবানী
- দরিদ্র ব্যক্তি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে নিলে
২। নফল কুরবানী
- মুসাফির ব্যক্তির কুরবানী
যাদের কুরবানী ওয়াজিব
কাজের ওপর কুরবানী ফরজ হয়েছে এ বিষয় নিয়ে আমরা অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকি। যেহেতু কুরবানী খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত সেই ক্ষেত্রে যাদের কুরবানী ওয়াজিব তাদের সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
মাসয়ালা - ১ঃ প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুকীম কিন্তু মুসাফির নয় প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী যে ১০ই যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন এর চাইতে বেশি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা পয়সা, সোনা রুপা, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, ও অপ্রোজনীয় সকল আসবাবপত্র কোরবানির নিসাব এর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। (বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৩)
আমরা অনেকেই নেসাব কি সে সম্পর্কে বুঝি না। নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি এবং রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। টাকা বা অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্য সমপরিমাণ হাওয়া। স্বর্ণ বা রুপা বা টাকা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথক ভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্নতোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
মুসাফির ব্যক্তির কুরবানী
আমরা অনেক সময় আমাদের কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে বহু দূরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে মুসাফির বলা হয়ে থাকে। মুসাফির ব্যক্তির কুরবানী কেমন হবে? এ বিষয় সম্পর্কে একজন মুসাফির ব্যক্তির প্রথমে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
আরো পড়ুনঃ কোরবানি কার উপর ফরজ - কোরবানি কাদের উপর ফরজ
মাসয়ালা - ১ঃ যে ব্যাক্তি কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে অর্থাৎ ৪৮ মাইল অথবা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজের ঘর থেকে বের হবে তার ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। তাহলে আপনি যদি একজন মুসাফির ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব হবে না। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আপনার জন্য মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া কাযিখান ৩-৩৪৪)
যাকাতের হিসাব থেকে কুরবানীর হিসাবের ভিন্নতা
যাকাতের নিসাব এর ক্ষেত্রে স্বর্ণ রুপা টাকা ও ব্যবসায়িক পণ্যের হিসাব করা হয়। শুধুমাত্র বর্ধনশীল সম্পদের হিসাব করা হয় আর যেগুলো বর্ধনশীল নয় যেমন- জমি, ফসল, গাড়ী ইত্যাদি এগুলোর হিসাব করা হয় না। পক্ষান্তরে কুরবানির হিসাবের ক্ষেত্রে সম্পদ বর্ধনশীল হোক বা বর্ধনশীল সকল প্রকার সম্পদের হিসাব করা হয়। কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা অর্থাৎ যাকাতের হিসাব থেকে কুরবানীর হিসাবের ভিন্নতা নিয়ে মাসয়ালা জেনে নেওয়া যাক।
মাসয়ালা - ১ঃ যাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পর এক বছর অতিক্রম করতে হয়। পক্ষান্তরে কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে বছর অতিক্রম করা শর্ত নয়। বরং ১০ই জিলহজের তারিখ ফজর থেকে ১২ ই জিলহজ সূর্যাস্ত সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় নিসাবের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। বছর অতিক্রম হয়েছে কি হয়নি তা দেখা হবে না। {আহসানুল ফাতাওয়া ৭-৫০৬}
মাসয়ালা - ২ঃ যে সমস্ত ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায় আবার সুস্থ হয়ে যায় এ সকল ব্যক্তিরা যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় এবং উক্ত তিন দিন সুস্থ থাকে তাহলে তাদের উপরে কোরবানি করা ওয়াজিব। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৪}
মাসয়ালা - ৩ঃ কোন নাবালেগ সন্তান যদি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় এবং এই তিন দিনের মধ্যে সে প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৪}
মাসয়ালা - ৪ঃ কোন ধনী ব্যক্তি কোরবানির পশু হারিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় কোরবানি উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর পূর্বের হারিয়ে যাওয়া পশু ও পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য উত্তম হলো উভয়টি কোরবানি করে দেওয়া। সে চাইলে যে কোন একটি কোরবানি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে উভয় পশুর দামের মাঝে যদি তারতম্য থাকে তাহলে অতিরিক্ত অংশ সদকা করে দিবে। {বাদায়েউস সানায়ে৫-৬৭ ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭-৩১৭}
মাসয়ালা - ৫ঃ নাবালক শিশু তদ্রূপ সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয় নিসাবের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা দের পক্ষে নফল কুরবানী করতে পারবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৪-১৯৬ রদ্দুল মুহতার ৬-৩১২}
মাসয়ালা - ৬ঃ একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী ওয়াজিব।
পরিবারের যত সদস্যের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের প্রত্যেকেই একটি করে পশু কোরবানি করতে হবে কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে। একটি কুরবানির সকলের জন্য যথেষ্ট হবে না। {আদ্দুররুল মুহতার ৬-৩১৩, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭-৩১২}
মাসয়ালা - ৭ঃ যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তি যদি কুরবানীর তিনদিনে কুরবানী না করে পশু বা তার মূল্য সদকা করে দেয় তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৬ ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭-৩০৯}
মাসয়ালা - ৮ঃ কোন ধনী ব্যক্তি যদি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর তা কুরবানী করার পূর্বেই তা হারিয়ে যায়, বা মারা যায়, বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো অন্য একটি কুরবানী করা। {বাদায়েউস সানায়ে ৫-৬৬, কাযীখান ৩-৩৪৪}
আমাদের শেষ কথাঃ কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা, কুরবানীর প্রকারভেদ, যাদের কুরবানী ওয়াজিব, মুসাফির ব্যক্তির কুরবানী, যাকাতের হিসাব থেকে কুরবানীর হিসাবের ভিন্নতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আরো পড়ুনঃ কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত
আপনি যদি কুরবানী করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য কুরবানী ওয়াজিব বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা গুলো জানার জরুরী। যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। ২০৭৯১
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url