সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? - সূরা মূলক কত পারায় আছে?
সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? দিন অথবা রাতে যে কোন সময় সুরা মুলক তেলাওয়াত করা যায়। তবে রাতে শোবার পূর্বে সুরা মুলক তেলাওয়াত করা সুন্নত। সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? সে সম্পর্কে নিচে আরও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক, সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? এবং সূরা মূলক কত পারায় আছে?
পেজ সূচিপত্র: সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? - সূরা মূলক কত পারায় আছে?
সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? - সূরা মূলক কত পারায় আছে?: ভূমিকা
সুরা মুলক নিয়মিত তেলাওয়াত করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা মুলক তেলাওয়াত না করে কখনোই ঘুমাতেন না। অর্থাৎ প্রত্যেক রাতেই তিনি সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন।শ্রাবনকে তিলাওয়াত করার অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে তাই আপনি যদি নিয়মিত সুরা মুলক সুরা মুলক করতে পারেন। তাহলে বিশেষ সওয়াবের অধিকারী হবেন।
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করলে মন ভালো হয়ে যায় এটি প্রমাণিত সত্য। আপনি যদি ডিপ্রেশনে থাকেন অথবা অন্য কোনো টেনশন আপনার মাথার উপরে দুশ্চিন্তা ভর করে, তাহলে রিলাক্স হওয়ার জন্য কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। আর কুরআন তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রে আপনি সুরা মুলক বেছে নিতে পারেন। কেননা সুরা মুলক তিলাওয়াত করার ব্যাপারে বিশেষ মর্যাদার কথা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনেকেই মনে করেন যে সূরা মূল শুধুমাত্র ঘুমানোর পূর্বে তেলাওয়াত করতে হয় আসলে বিষয়টি এরকম নয়। সূরা মূলক ঘুমানোর পূর্বের তিলাওয়াত করা সুন্নত। তবে দিনের যেকোনো সময় সুরা মুলক তেলাওয়াত করলে অধিক সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? এবং সূরা মূলক কত পারায় আছে? তা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
সূরা মুলক তেলাওয়াতের গুরুত্ব
সূরা মূল তিলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। সূরা মূলক এর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এক ব্যক্তিকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদিস শুনাব, যাহা শুনে তুমি খুশি হবে? উত্তরে সে বলল, হ্যাঁ অবশ্যই। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি নিজে সুরা মুলক তেলাওয়াত করো এবং পরিবারের সবাইকে ও প্রতিবেশীকে উহা শিক্ষা দাও। কারণ উহা মুক্তিদানকারী ও ঝগড়াকারী। কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে ঝগড়া করে উহার পাঠকারীকে সে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবে এবং কবরের আজাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আমার একান্ত কামনা যে, এই সুরাটি আমার প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে গেঁথে থাকুক।" (ইবনে কাসির)।
আপনার একটি হাদিসে বর্ণনা করা হয়, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআন মাজিদে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা রয়েছে, যা তার তেলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার আগ পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। আর সুরাটি হলো "তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক" অর্থাৎ সুরা মুলক।’ (মুসনাদে আহমদ)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, "আমার মন চায় প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে যেন সুরা মুলক লিপিবদ্ধ থাকে।" (বাইহাকি) সুতরাং উপরোল্লেখিত হাদীসগুলো থেকে প্রতীয়মান হলো যে সুরা মুলক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা মুসলমান হিসেবে আমাদের নিয়মিত তেলাওয়াত করা উচিত।
সূরা মূলক এর ফজিলত সম্পর্কে আরো বর্ণনা করা হয়, "কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। আরএ সূরাটি হলো তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক।" (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযী)
সূরা মূলক এর গুরুত্ব বর্ণনা করে আরেকটি হাদীসে বলা হয়, ‘"যে ব্যক্তি প্রতি রাতে 'তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক' পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে এই সূরার মাধ্যমে কবরের আযাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।" (নাসাঈ)
সুরা মুলক কখন পড়তে হয়?
পবিত্র অবস্থায় যেকোনো সময় সুরা মুলক তেলাওয়াত করা যায়। সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? সে সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর পূর্বে সুরা মুলক তেলাওয়াত করতেন। অর্থাৎ আপনি যদি এশার নামাজের পরে সুরা মুলক তেলাওয়াত করেন তাহলেই তার ঘুমানোর পূর্বে তেলাওয়াত করা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক তেলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না" (তিরমিজি)
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলিফ লাম মীম তানযিল ও তাবারাকাল্লাজি না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না। - (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৮৯২)
উপরোল্লিখিত হাদিসদ্বয় থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ঘুমানোর পূর্বে সুরা মুলক তেলাওয়াত করা উত্তম একটি আমল। তাই প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে সুরা মুলক করুন। সামান্য এই আমাদের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি অধিক সওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন।
তবে আপনি যদি পবিত্র অবস্থায় থাকেন তাহলে যেকোনো সময় সুরা মুলক তেলাওয়াত করতে পারবেন এতে কোন সমস্যা। হয়তোবা কোন কারনে আপনি রাতের বেলা সুরা মুলক তেলাওয়াত করতে পারলেন না তাহলে দিনের যেকোনো অংশে সুরা মুলক তেলাওয়াত করে নিতে পারবেন।
আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তাহলে সূরা মূলক মুখস্ত করে রাখবে। কেননা সূরা মূলক মুখস্ত করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, " আমি চাই আমার প্রত্যেক উম্মতের অন্তরে সুরা মুলক মুখস্থ থাক" (ইবনে কাসির)। ছোট এই ছড়াটি মুখস্ত করতে আপনার তেমন কোনো পরিশ্রম করতে হবে না নিয়মিত কিছুদিন তেলাওয়াত করলে নিজে নিজেই এই সূরাটি মুখস্থ হয়ে যায়।
বর্তমানে আধুনিকায়নের এই যুগে অনেকেই দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন। অপ্রয়োজনে ফেসবুক ইউটিউবসহ বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট না করে। যদি ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যয় করতেন তাহলে অবশ্যই তা আপনার জন্য হত।
অনেকেই ঘুমানোর পূর্বে দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন, এমনটি না করে আমরা যদি এশার নামায শেষ করার পরে সুরা মুলক তেলাওয়াত ঘুমিয়ে যেতেন তাহলে তা আপনার জন্য কল্যাণকর হত। এবং এবং আপনি বিশেষ সাওয়াবের অধিকারী হতে পারতেন।
সূরা মূলক কত পারায় আছে?
পবিত্র কুরআন সর্বমোট ৩০টি পারা বা অধ্যায়ে বিভক্ত। পবিত্র কুরআনে মোট ১১৪ টি সূরা রয়েছে। তারমধ্যে সূরা আল-মূলক পবিত্র আল-কুরআনের ৬৭ তম সূরা। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৩০, রুকু আছে ২টি। সূরা আল-মূলক মক্কায় অবতীর্ণ হয়। সূরা আল মূলকের নামের অর্থ: সার্বভৌম কর্তৃত্ব। এই সূরা পবিত্র কোরআন এর ২৯ নম্বর পারার অন্তর্ভুক্ত।
সূরা মূলক কত পারায় আছে? আশা করি এই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। ইতোমধ্যেই উপরে সূরা মুলক তেলাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা করা হয়েছে। যাইহোক আপনি সূরা মূলক এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ এই সূরাটি কুরআনের কোথায় রয়েছে সেই সম্পর্কে অবগত হলেন আশা করি আপনি নিয়মিত এই সূরাটি তেলাওয়াত করবেন।
সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? - সূরা মূলক কত পারায় আছে?: শেষ কথা
সুরা মুলকের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। সূরা মূলক এর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলক তেলাওয়াতের আমল করবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।" (তিরমিজি )।
সুরা মুলক কখন পড়তে হয়? এবং সূরা মূলক কত পারায় আছে? আশা করি উপরোল্লেখিত আলোচনা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। সুরা মুলক সম্পর্কিত বক্ষ্যমাণ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন। যেন তারাও সূরা মূলক এর ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারে। ১৬৪১৩
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url