OrdinaryITPostAd

রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল - রমজানের শেষ দশকের ফজিলত

আপনি কি রমজানের শেষ দশকের আমল সম্পর্কে জানেন? একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে এবং সঠিকভাবে ইবাদত করার জন্য রমজানের শেষ দশকের আমল সম্পর্কে জানা উচিত। আপনাদের আমলের সুবিধার্থে রমজানের শেষ দশকের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট রমজানের শেষ দশকের আমল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ রমজানের শেষ দশকের আমল - রমজানের শেষ দশকের ফজিলত

রমজানের শেষ দশ দিনকে কি বলা হয়?

এতে কোন সন্দেহ নাই যে রমজান মাস হল সর্বোত্তম মাস। প্রতিটি মুসলমানের কাছে রমজান মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। রমজান মাসকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। রমজান মাসের প্রথম দশ দিন হলো রহমত, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় দশ দিন কে নাজাত বলা হয়। প্রথমের দুই অংশ চাইতে রমজান এর তৃতীয় ভাগ অর্থাৎ শেষ ভাগের তাৎপর্য অপরিসীম।

আরো পড়ুনঃ রমজানে ওমরা করার ফজিলত - রোজার মাসে উমরার ফজিলত কি

হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, রমজানের শেষ দশকের নবীজি সাঃ ইবাদতের জন্য লুঙ্গির শক্ত করে বেঁধে ফেলতেন অর্থাৎ ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারারাত জাগ্রত থেকেই ইবাদত করতে এবং নিজের পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।{ বুখারী ও মুসলিম} রমজানের শেষ ১০ দিনে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে তার বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করায় তাই শেষ ১০ দিনকে নাজাত বলা হয়।

রমজানের শেষ দশকের আমল

রমজান মাস হলো পাপ মোচনের মাস। আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভের মাস। আল্লাহতালা রোজার বিনিময় বান্দার গুনাহগুলোকে মাফ করে দেন। আমরা যদি আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা পেতে চাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই রমজানের শেষ দশকের আমল সম্পর্কে জানতে হবে। রমজানের শেষ দশকের আমল কি করবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

ইবাদতের জন্য জোর প্রস্তুতি নিতে হবে - বিশেষত শেষ দশক হলো নাজাত যা রমজান মাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সময় রাসুল সাঃ এর ইবাদত বন্দেগি হতো বছরের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এমনকি রমজানের প্রথম বিশদিন থেকেও আলাদা বোঝা যেত শেষ দশদিনের ইবাদত-নিমগ্নতা।

আম্মাজান আয়েশা রাঃ বলেন, "রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন, যা বছরের অন্য সময়ে করতেন না।" {মুসলিমঃ ১১৭৫} নবী করীম সাঃ আরো বলেন, 'যখন রমজানের শেষ দশক আসত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদতের জোর প্রস্তুতি নিতেন। নিজে রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে তুলতেন।' {বোখারিঃ ২০২৪}

তাওবা করা - আমরা আমাদের জীবন দশায় অনেক রকমের গুনহা করে থাকি। কিন্তু আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় ওই বান্দা, যে গোনাহ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে এবং আর কখনও গোনাহ না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করে। এটাই প্রকৃত তওবা। তাই তওবার নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম।

আল্লাহর কাছে দোয়া করা চাই। জায়েদ রাঃ রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছেন, "যে ব্যক্তি এ দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদি সে রণক্ষেত্রও থেকে পলায়ন করে থাকে।"

দোয়াটি হচ্ছেঃ আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি। 

অর্থঃ মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করি। {তিরমিজিঃ ৩৫৭৭}

ইতেকাফ করা - রাসুল সাঃ শেষ দশকে ইতেকাফের আমল দিয়েছেন। গুরুত্বের সঙ্গে অন্যকেও আমল করে শিখিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন, "রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।" {বোখারিঃ ২০২৫} আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, "রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাতের বছরে বিশদিন ইতেকাফ করেন।" {বোখারিঃ ২০৪৪}

আম্মাজান আয়েশা রাঃ বলেন, "রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আর বলতেন, তোমরা এ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।" {বোখারিঃ ২০২০} তিনি আরো বর্ণনা করেন, 'রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, তারপর তার স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন।' {বোখারিঃ ২০২৬}

শবে কদর খুঁজতে হবে - রমজানের শেষদশকের ইবাদতের অন্যতম হলো শবে কদর তালাশ করা। রাসুল সাঃ বলেন, "যে ব্যক্তি কদর রাতের সন্ধান পেতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ দশকে খুঁজে নেয়।" {বোখারীঃ ১১৫৮} রাসুল সাঃ আরও বলেন, "তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।" {বোখারিঃ ২০১৭} আশা করি রমজানের শেষ দশকের আমল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত অনেক। আমরা জানি রমজানের তিনটি অংশ রয়েছে তার মধ্যে সর্বোত্তম অংশ হলো রমজানের শেষ দশক অর্থাৎ নাজাত। কারণ এই অংশে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ক্ষমা করে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করায়। যার ফলে রমজানের শেষ দশকের ফজিলত অপরিসীম।

আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের সেরা ২০ টি আমল - রমজানের রোজার ফজিলত

রমজানের শেষ ১০ দিনের মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামে একটি রাত। যে রাত হাজার মাসের থেকেও শ্রেষ্ঠ। সাধারণত তাই রমজান মাসের শেষ দশ দিনের ফজিলত আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। হযরত আয়েশা রাঃ বর্ণনা করেছেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাঃ) এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহেরি গ্রহণ করতেন।

রমজানের শেষ দশকের রাসূলুল্লাহ সাঃ পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকল সদস্যকে জাগিয়ে দিতেন। হযরত আয়েশা রাঃ বর্ণিত হাদিস, তিনি এই ১০ দিনের রাতে মোটেও নিদ্রা যেতেন না। পরিবারের সকলকে তিনি এই রাতে এবাদত বন্দেগী করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। তিনি এই দিনগুলোতে নিজের স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন আল্লাহতালার ইবাদত করার জন্য।

রমজানের শেষ দশ দিনের আরো একটি ফজিলত এবং বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাঃ এই দশ দিন মসজিদে ইতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহতালা ছাড়া আর কেউ জানেন না কারণ তিনি এই রাতকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছেন। তাই আমাদের নবী সাঃ ইতেকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর খুঁজতেন।

রমজানের শেষ ১০ দিনের দোয়া

রমজানের শেষ দশকের আমল জানার সাথে সাথে আমাদেরকে রমজানের শেষ ১০ দিনের দোয়া সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ রমজানের শেষ দশকে আল্লাহতালার কাছে বেশি বেশি দোয়া প্রার্থনা করতে হবে। সেই জন্য রমজানের শেষ ১০ দিনের দোয়া সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকা উচিত।

রমজানের শেষ দশকে দোয়া কবুলের জন্য যেকোনো সময় এ দোয়া পাঠ করতে হবেঃ

আরবিঃ اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللَّهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً

উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি কাসিরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও-ওয়া আসিলা।

অর্থঃ আল্লাহ মহান, অতি মহান, আল্লাহতায়ালার জন্য অনেক অনেক প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যা আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। {সহিহ মুসলিম}

রমজানের শেষ দশকে জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোয়া করাঃ

আরবিঃ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।

আমাদের শেষ কথাঃ রমজানের শেষ দশকের আমল - রমজানের শেষ দশকের ফজিলত

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে, রমজানের শেষ ১০ দিনের দোয়া, রমজানের শেষ দশকের ফজিলত, রমজানের শেষ দশকের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আরো পড়ুনঃ রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ৮টি ইবাদাত - রমজানের ইবাদতের ফজিলত

প্রকৃত মুসলিম হিসেবে এবং আল্লাহ তায়ালার ইবাদত পালন করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো জানতে হবে। যদি আপনার না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন ধন্যবাদ। ২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url