শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত - শবে বরাতের সহিহ হাদিস
শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত রয়েছে কিনা, তা জানতে চাইলে শেষ পর্যন্ত পুরো আর্টিকেলটি পড়তে হবে। কেননা, শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এ কি বলা হয়েছে, সেই বিষয়ে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক, শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত রয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
পেজ সূচিপত্র: শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত - শবে বরাতের সহিহ হাদিস
উপস্থাপনা
শবে বরাত পালন করা যাবে কিনা? সে ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক রয়েছে। মূলধারার অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, শবে বরাত পালন করার কোন বিধান নেই। আবার কোন কোন ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে শবে বরাত পালন করা যাবে। যে সকল ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে শবে বরাত পালন করা যাবে না, তাদের দলিল প্রমাণ নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে।
সেই সাথে যারা মনে করেন যে, শবে বরাত পালন করা যাবে, তারা কোন দলিলের ভিত্তিতে এমনটি বলে থাকেন, সেই বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে। পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়লে, আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন যে শবে বরাত পালন করা যাবে কিনা। তো আসুন দেখে নেয়া যাক, শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এবং শবে বরাতের সহিহ হাদিস সমূহ।
শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
সব মানে: রাত্রি, আর বরাত মানে: ভাগ্য। সুতরাং "শবে বরাত" শব্দের অর্থ হলো: ভাগ্য রজনী। অর্থাৎ যেই রাত্রিতে ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় সেই রাত্রিকে বলা হয় শবে বরাত। এখন প্রশ্ন হলো: শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত রয়েছে কিনা?। এই প্রশ্নের উত্তর হলো: পবিত্র কুরআনে বরকতময় রজনী সম্পর্কিত একটি আয়াত রয়েছে।
শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াতটি নিম্নরূপ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী" (সূরা: আদ দুখান - ৩ ) এই আয়াতে "বরকতময় রজনী"র কথা বলা হয়েছে। অত্র আয়াতে বর্ণিত, "বরকতময় রজনী" বলতে কোন রজনীকে বোঝানো হয়েছে সেই ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামদের মতে, অত্র আয়াতে "বরকতময় রজনী" বলতে শবে কদরকে বোঝানো হয়েছে। তবে কোন কোন ইসলামী চিন্তাবিদ, এই আয়াতটিকে শবে বরাতের সাথে সম্পৃক্ত মনে করেন। শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত রয়েছে কিনা? আশাকরি সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানতে পেরেছেন। নিচে শবে বরাতের সহিহ হাদিস তুলে ধরা হবে।
শবে বরাতের সহিহ হাদিস
শবে বরাতের সহিহ হাদিস সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো। মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। - (ইবনু মাজাহ)
উপর উল্লেখিত হাদিস সমূহ ব্যতীত, শবে বরাতের আরো অনেক দুর্বল ও বানোয়াট হাদিস রয়েছে। যেমন কোন কোন বানোয়াট হাদিসে বলা হয়েছে যে, শবে বরাতের রাতে, ১০০ রাকাত নামাজ পড়তে হয়। আবার প্রত্যেক রাকাতে দশবার করে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয়। ইত্যাদি।
শবে বরাত সম্পর্কে প্রচলিত বানোয়াট হাদিসগুলোর মধ্যে এমন কিছু হাদিস রয়েছে, যেগুলোতে বলা হয়েছে যে, শবে বরাতের রাতে ৩০০ রাকাত নামাজ পড়তে হবে প্রত্যেক রাকাতে ৩০ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে ইত্যাদি। আসলে এগুলো বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এগুলো হলো হাদিসের নামে, নিজের মনগড়া বানোয়াট কথা। তাই অবশ্যই কোন আমল করার পূর্বে সচেতন থাকতে হবে এবং ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে।
যাচাই-বাছাই ছাড়া আমল করলে আপনি পাপের সম্মুখীন হতে পারবেন। তাই আমল করার পূর্বে নিজ দায়িত্বে যাচাই বাছাই করবেন। এই হাদিসগুলো ব্যতীত আরো অনেক জাল ও জয়ীফ হাদিস রয়েছে। শবে বরাতের সহিহ হাদিসটি প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি আপনি জানতে পারলেন যে শবে বরাত সম্পর্কিত কোন হাদিসগুলো মিথ্যা এবং কোনটি সহি হাদিস।
শবে বরাত পালন করার বিধান
শবে বরাত পালন করার বিধান সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আর্টিকেলের এই অংশটি মনোযোগের সহিত পড়লে, শবে বরাত পালন করার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। শবে বরাত পালন করার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে আজকের এই অংশটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। শবে বরাত পালন করার বিধান, সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামদের মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান।
যারা মনে করেন যে শবে বরাত পালন করা যাবে না, তাদের মতামত হলো: যে পবিত্র কুরআনে সরাসরি কোথাও শবে বরাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এবং হাদিসেও শবে বরাতের কথা পাওয়া যায় না। যেহেতু পবিত্র কুরআনে শবে বরাত সম্পর্কে কোন আয়াত নেই এবং হাদিস সমূহের শবে বরাত সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায় না, তাই শবে বরাত পালন করা সমীচীন নয়।
পক্ষান্তরে যারা, শবেবরাত পালন করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন, তাদের বক্তব্য হলো, পবিত্র কুরআন এর সুরা আদ দুখানের ৩ তিন নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতের কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও অনেক হাদিসে শবে বরাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু পবিত্র কোরআনের শবে বরাতের ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে এবং অনেক হাদিসে শবে বরাতের কথা এসেছে তাই শবে বরাত পালন করা উচিত।
যারা শবে বরাত পালন করার বিপক্ষে, তারা শবে বরাত পালন করার স্বপক্ষে যারা রয়েছে তাদের দলিলের জবাবে বলেন যে, পবিত্র কুরআনের সূরা ৩ নাম্বার আয়াতে শবে বরাতের কথা বলা হয়নি বরং সেখানে শবে কদরের কথা বলা হয়েছে। আর যে সকল হাদিসের শবে বরাতের কথা উল্লেখ রয়েছে সেই হাদিসগুলো হয়তোবা দুর্বল অথবা বানোয়াট। সহিহ কোন হাদিসের শবে বরাতের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায় না।
শবে বরাত পালন করার পক্ষে এবং বিপক্ষে যে সকল মতামত তুলে ধরা হয় সেগুলো উপরে উল্লেখ করা হলো। এখন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন যে শবে বরাত পালন করা যাবে কিনা। শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এবং শবে বরাতের সহিহ হাদিস সমূহ সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত তথ্য জানতে পারলেন।
উপসংহারঃ শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এবং শবে বরাতের সহিহ হাদিস সমূহ সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে শবে বরাত পালন করার পক্ষে যে সকল ওলামায়ে কেরাম রয়েছেন তাদের দলিল ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে পক্ষান্তরে শবে বরাত পালন করার বিপক্ষে যারা রয়েছেন তাদের দলিল উপরে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু উপরে উভয় পক্ষের দলিল তুলে ধরা হয়েছে তাই খুব সহজেই আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন যে শবে বরাত পালন করা যাবে কিনা।
আরো পড়ুন: শব ই বরাত ২০২৩ - শবে বরাত ২০২৩ কত তারিখে
না জেনে না বুঝে বিশ্লেষণ না করে যে কোন একটি মতামত ব্যক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এছাড়া না জেনে না বুঝে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাও সমীচীন নয়। অনেকেই শবে বরাত নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়। শবে বরাত নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে শবেবরাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া উচিত। আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন।
আশা করি শবে বরাতের বিধান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল এই আলোচনাটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে সকলের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি সকলের সাথে শেয়ার করেন তাহলে তারাও শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে। ১৬৪১৩
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url