শাবান মাসের ১০টি ফজিলত, আমল, রোজা ও গুরুত্ব
শাবান মাসের ফজিলত ও আমল। আমাদের কাছে রমজান মাস যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমন শাবান মাসের ফজিলত ও আমল রয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই শাবান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।
তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট শাবান মাসের ফজিলত ও আমল ট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। শাবান মাসের ফজিলত ও আমল জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্রঃ শাবান মাসের ফজিলত ও আমল
- ভূমিকা
- শাবান মাসের ফজিলত
- শাবান মাসের আমল
- শাবান মাসের রোজা কয়টি
- শাবান মাসের গুরুত্ব
- আমাদের শেষ কথাঃ শাবান মাসের ফজিলত ও আমল
শাবান মাসের ফজিলত ও আমলঃ ভূমিকা
আমরা মুসলিম হিসেবে সকলেই শাবান মাস সম্পর্কে জানি। শাবান মাস হল হিজরি বছরের অষ্টম তম মাস। এ মাসের গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে অত্যাধিক বেশি কারণ এই মাসটিতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ অনেক ইবাদত বন্দেগী পালন করেছেন। যেহেতু আমাদের প্রিয় নবী সাঃ শাবান মাস কে গুরুত্ব দিয়েছেন তাই শাবান মাসের গুরুত্ব থাকা স্বাভাবিক।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
আপনাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে শাবান মাসের ফজিলত ও আমল এর অংশ থেকে শাবান মাসের ফজিলত, শাবান মাসের আমল কি করবেন? শাবান মাসের রোজা কয়টি? এবং শাবান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
শাবান মাসের ফজিলত
হিজরী বর্ষের অষ্টম মাস হল শাবান মাস। শাবান মাসের ফজিলত ও আমল রয়েছে। যদিও এই মাসের আমল গুলো নফল আমল নামে পরিচিত। নফল আমলের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ কিয়ামতের দিন যখন ফরজ আমলের ঘাটতি দেখা দেবে তখন নফল এর থেকে সেই ঘাটতি পূরণ করা হয়। তাই আপনাদের সুবিধার্থে নিচে শাবান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রী হযরত আয়েশা রাঃ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ সাবানের পূর্ণ মাসই রোজা রাখতেন। তিনি সামান্য রোজা রাখতেন তবে অল্প কিছুদিন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ শাবান মাসের সবথেকে বেশি নফল ইবাদত করতেন। ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী রজব মাস হলো আল্লাহতালার মাস, সাবান মাস হলো নবীজির সাঃ এর মাস এবং রমজান মাস হল উম্মতের মাস।
হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাকে বলেছেন, " হে বৎস! যদি পারো এভাবে সকাল সন্ধ্যা পার কর যেন তোমার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা না থাকে, তবে তাই করো" এরপর বলেন, " এটাই আমার সুন্নত আদর্শ, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অনুসরণ করল সে প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালোবাসলো, যে আমাকে ভালবাসল সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে"{ তিরমিজি শরীফঃ ৩৬}
রমজান মাসের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা বিশেষ জরুরি এটি একটি সুন্নত। নবীজি সাঃ বলেন, " তোমরা রমজানের জন্য সাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।"{ সিলসিলাতুস সহিহাহ} সম্ভব হলে নতুন চাঁদ দেখা সুন্নত, চাঁদ দেখে নতুন চাঁদের দোয়া পড়া সুন্নত, চন্দ্র মাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া। কারণ ইসলামের বিধিবিধান গুলো চাঁদের তারিখের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
শাবান মাসের আমল
শাবান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জেনে থাকলে আমরা খুব সহজেই আমলগুলো করতে পারব। যদিও শাবান মাসের আমল গুলো করলে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু এই মাসের রোজা বা আমল গুলো কিন্তু ফরজ নয়। রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোজা রাখা ফরজ না। তবে এই মাসের বিশেষ কিছু নেক আমল রয়েছে যেগুলো করলে অনেক বেশি নেকি পাওয়া যায়।
শাবান মাসে আমাদের প্রিয় নবী সাঃ নফল রোজা রাখতেন এবং সাহাবীদের নফল রোজা রাখার প্রতি তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন। অন্যান্য মাসের তুলনায় রাসুলুল্লাহ সাঃ শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। যেহেতু রমজানের রোজা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ সেক্ষেত্রে রমজানের রোজা করতেন কিন্তু অন্য যে সকল মাসে তিনি নফল আমল করতেন সেগুলোর চাইতে সাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখতেন।
আরো পড়ুনঃ ঈদুল ফিতর ২০২৩ কত তারিখ বাংলাদেশ - ২০২৩ সালে রোজার ঈদ
হযরত আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন " নবী সাঃ শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা অন্য কোন মাসে রাখতেন না। তিনি সম্পূর্ণ সাবান মাস রোজা পালন করতেন। এবং প্রিয় নবী বলতেন, তোমাদের মধ্যে যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু নফল আমল করো কারণ তোমরা আমল করতে করতে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা সওয়াব দান বন্ধ করেন না"
তাহলে উপরের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ অন্যান্য সকল মাসের চেয়ে শাবান মাসে সবথেকে বেশি রোজা পালন করতেন। তাই আমাদের উচিত শাবান মাসে সবথেকে বেশি রোজা পালন করা। এছাড়া শাবান মাসের ১৫ তারিখ লাইলাতুল বরাত রাতে নফল ইবাদত পালন করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
শাবান মাসের রোজা কয়টি
শাবান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানা হয়ে গেলে শাবান মাসের রোজা কয়টি? এ বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি অসুবিধা শাবান মাসে রোজা রাখতে না পারে তাহলে সে রমজান মাসের পর রোজা রাখবে। তবে শাবান মাসে রোজা পরবর্তী মাসে পালন করার ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়।
এক সাহাবী হতে বর্ণিত, নবী সাঃ এক ব্যক্তি থেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এই মাসের মধ্যভাগে কিছু রোজা রেখেছিলে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, তুমি তারপরে রমজানের রোজা শেষ করে দুইটি রোজা রাখবে। {সহিহ মুসলিমঃ ২৬৪২} রমজান মাস শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই রোজা রাখার প্রয়োজন নেই।
এক হাদীসে মাসের অর্ধেক হলেই রোজা না রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। সেই দিনগুলোই রমজানের রোজার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে কোন ব্যক্তি যদি সপ্তাহের সুন্নাত রোজা পালন করতে অভ্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে সে ধারাবাহিক রক্ষা করার জন্য রোজা পালন করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, " শাবান মাসের অর্ধেক অবিবাহিত হলে তোমরা রোজা রাখবে না"{ সুনানে আবু দাউদঃ ২৩৩৭}
শাবান মাসের গুরুত্ব
শাবান মাস হলো বিশেষ ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। যাকে বলা যায় মাহে রমাদানের আগমনী বার্তার মাস। শাবান মাস মূলত পবিত্র রমাদানের প্রস্তুতির মাস। যদিও সাহাবীগণ রমাদানের ছয়মাস আগে থেকেই রমাদানের প্রস্তুতি নিতেন। নিচে শাবান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
শাবান মাস হলো বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপনের মাস। আর রমাদান হলো সর্বাধিক ইবাদতের মাধ্যমে সফলতার ফসল তোলার মাস। তাই শাবান মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। নফল সিয়াম, নফল সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, দরুদ বিভিন্ন সুন্নাহ পালন, যিকির, দান-সাদাকাহ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে স্বার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
এ মাসটিতে ও প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সুন্নত সিয়াম রয়েছে। আবার মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের নফল সিয়াম রয়েছে। তাছাড়া যেসব বোনদের রমাদানের ক্বাযা সিয়াম বাকী আছে তাদের জন্য শাবান মাস সিয়াম গুলি পূর্ণ করার জন্য উত্তম।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাবের প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। {আবু দাউদঃ ২৩২৫} উনার উম্মতদেরকেও তিনি শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
আরো পড়ুনঃ শাবান মাসের ফজিলত - শাবান মাসের দোয়া - শাবান মাসের রোজা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে সবচেয়ে বেশি নফল সিয়াম রাখতেন। উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে শাবান ও রমাদান মাস ছাড়া অন্য কোন দুই মাস একাধারে সিয়াম রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৩৬)
আয়েশা (রাঃ) সূত্রে আরও বর্ণিত, একটি বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে শাবান মাসের মতো এত অধিক নফল সিয়াম আর অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া বলতে গেলে সারা মাসই তিনি সিয়াম রাখতেন। {তিরমিযী, হাদিসঃ ৭৩৭}
আমাদের শেষ কথাঃ শাবান মাসের ফজিলত ও আমল
আল্লাহতালা সন্তুষ্ট অর্জন করার জন্য আমাদের শাবান মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা থেকেই বোঝা যায়। এছাড়া শাবান মাসে আল্লাহ তায়ালার নিকটে আমাদের আমলনামা পেশ করা হয় তাই এই মাসে ফজিলত আরো বেশি।
আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে উক্ত বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন ধন্যবাদ।২০৭৯১
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url