বড়দের খিঁচুনি হওয়ার ০৫টি কারণ - খিঁচুনি হওয়ার ০৯টি লক্ষণ
বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো মস্তিষ্ক আঘাত প্রাপ্ত হওয়া।এছাড়াও বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ আরো অনেক রয়েছে। বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ ও খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ সমূহ বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলো।
পেজ সূচিপত্র: বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ - খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ
বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ
খিচুনি হওয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিকটে স্পষ্ট কোন তথ্য নেই। তবে সাধারণত যে সকল কারণে খিচুনি রোগ হয়ে থাকে সেই কারণগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ সমূহ।
বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপ:
মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে। মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে খিঁচুনি রোগ হতে পারে আপনি যদি কখনো মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হন তাহলে তৎক্ষণাৎ তার প্রতিক্রিয়া না হলেও মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে পরবর্তীতে খিচুনি রোগের আবির্ভাব হতে পারে। সুতরাং মস্তিষ্কে আঘাত খিচুনি রোগের অন্যতম একটি কারণ।
স্ট্রোকের পরে। আপনার যদি কখনো স্ট্রোক বা স্ট্রোক জনিত কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তার ফলশ্রুতিতে খিঁচুনি রোগ হতে পারে। খিচুনি রোগ হওয়ার পিছনে স্টক অনুঘটক হিসেবে কাজ করে থাকে। সুতরাং খিচুনি রোগের কারণ হতে পারে স্ট্রোক।
মস্তিষ্কে টিউমারের কারনে। আপনার মস্তিষ্কে যদি টিউমার হয়ে থাকে তাহলে তার ফলশ্রুতিতে খিচুনি রোগ হতে পারে কেননা খিচুনি রোগের মূল কারণ হলো মস্তিষ্কের জড়তা। কোন কারনে যদি মস্তিষ্কে সিগনাল আদান-প্রদান করতে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে খিচুনি রোগ রোগ হতে পারে।
জন্মগত ত্রুটি। জন্মগত ত্রুটির হলেও হতে পারে খিচুনি রোগ। যদি জন্মগতভাবে মস্তিষ্কে কোন ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে তার ফলশ্রুতিতে খিচুনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চিকিৎসকগণ জন্মগত ত্রুটিকেও খিচুনি রোগের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। খিচুনি এ রোগীদের মধ্যে অনেকেই জন্মগত ত্রুটির কারণে এই রোগের সম্মুখীন হয়েছেন।
জিনগত মিউটেশন। কখনো কখনো জিনগত মিউটেশনের কারণে ও খিচুনি রোগ হতে পারে। জিনগত পরিবর্তনের ফলে যদি মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুকোষসমূহ অস্বাভাবিক ও অতিরিক্ত প্রিয়া আরম্ভ করে তাহলে সেক্ষেত্রে খিচুনি রোগ হতে পারে। বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ, খিঁচুনি হলে করণীয় কি? খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ সেই বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ
খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ সমূহ জানা থাকলে খুব সহজে ভুনি খিচুড়ি রোগীদের চিহ্নিত করতে পারবেন। খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ সমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। খিচুনি রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যদি এই লক্ষণগুলো কারো মাঝে প্রকাশ পায় তাহলে ধরে নিতে হবে তার খিঁচু নিয়ে রয়েছে। খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ সমূহ নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
- হঠাৎ করে শরীরের যেকোনো অংশে খিচুনি আরম্ভ হয়ে যাওয়া এবং সেই স্থান থেকে খিচুনি সর্ব শরীরে ছড়িয়ে পড়া।
- হঠাৎ করে জ্ঞান হারানো এবং অনুভূতি শূন্য হওয়া।
- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করার শক্তি হারিয়ে নমনীয়ভাবে মাটিতে ঢলে পড়া।
- হঠাৎ করে শরীর এর বিভিন্ন অংশ যেমন হাত-পা অথবা হাত এবং পায়ের আঙ্গুলগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া এবং কাঁপতে থাকা।
- অনেক সময় শরীর ঝাকি দিতে পারে। যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে শরীর ঝাকি দেয় তাহলে সেটাও হতে পারে খেজুরি রোগের লক্ষণ।
- শরীরের বিভিন্ন যেমন মাথা মুখ ইত্যাদি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া।
- হাতে থাকা কোন কিছু হঠাৎ করে ছিটকে পড়া। এবং হাতের অনুভূতি শূন্য হয়ে যাওয়া।
- হঠাৎ করে মুখের আকৃতি পরিবর্তন হওয়া বা ঠোঁট কেঁপে ওঠা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণ শুরু করা।
- হঠাৎ করে সর্ব শরীর অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়া বা অবশ হয়ে যাওয়া।
খিচুনি হলে করণীয় কাজ সমূহ
খিচুনি হলে করণীয় কাজ সমূহ ও খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। হঠাৎ যদি কারো খিচুনি রোগ দেখা দেয় তাহলে তাকে নিম্ন বর্ণিত কাজগুলো করতে হবে। কেননা সাবধানতা অবলম্বন না করলে যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। খিচুনি হলে করণীয় কাজ সমূহ এবং খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো।
- শুইয়ে দেয়া। হঠাৎ করে যদি কোন ব্যক্তির খোঁজ নিয়ে ওঠে বা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বুঝতে পারেন যে তার খিঁচুনি উঠতে যাচ্ছে তাহলে সাথে সাথেই তাকে দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে শুয়ে দিতে হবে। তা না হলে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খিঁচুনি হলে করণীয় কাজ করার মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হলো জেজুনি শুরু হওয়ার সাথে সাথে শুইয়ে দেয়া।
- বালিশ ব্যবহার না করা। খিচুনি আক্রান্ত ও রোগীকে শুইয়ে দেয়ার সময় বালিশ ব্যবহার করা যাবে না এবং কাত করে সোয়াতে হবে।
- চিত করে না শোয়ানো। চিত করে শোয়ালে মুখের লালা শ্বাসনালীতে যেতে পারে এবং শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছালে পরবর্তীতে বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। খিঁচুনি হলে করণীয় এ সকল কাজ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো একদিকে সময় কখনই চিৎ করে শোয়ানো যাবে না।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘিরে না রাখা। অনেক সময় দেখা যায় খিঁচুনি আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘিরে জটলার সৃষ্টি হয়। এমনটি করা উচিত নয়। যখন কোন ব্যক্তি খিচুনি রোগে আক্রান্ত হয় তখন অবশ্যই তার তাকে খোলামেলা জায়গায় রাখতে হবে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে।
- এয়ারওয়ে ব্যবহার করা। খিচুনি এ রোগীদের কাছে সর্বদাই এয়ারওয়ে রাখা উচিত কেননা যখন খিচুনি রোগ ওঠে তখন দাঁত এবং জিহবার মাঝামাঝিতে এয়ারওয়ে ব্যবহার করতে হয় তা না হলে যা বা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এয়ারওয়ে ব্যবহার করা খিচুনি হলে করণীয় কাজ সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি কাজ।
বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ? এবং খিচুনি হলে করণীয় কাজ সমূহ কি? কি? আশা করে তা জেনেছেন এবং খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেয়েছেন। উপরে ইতোমধ্যে বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ ও খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। নিচে ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ তা তুলে ধরা হবে।
খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানা থাকলে খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন। খিচুনি এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনাকে খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
আপনার বাড়িতে থাকা সহজলভ্য কিছু উপাদানের মাধ্যমে খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করে খুব সহজেই আপনি খিচুনি রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন দেখে নেয়া যাক খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
- পটাশিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। যে সকল খাবারে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে সেই খাবারগুলো যদি আপনি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে খিচুনি রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। মিষ্টি আলু, কলা ইত্যাদি ফলমূল গুলোর মতো পটাশিয়ামযুক্ত খাবার পেশির টান লাঘব করে থাকে।
- রসুন খাওয়া। আপনি যদি নিয়মিত কিছুদিন রসুন খেতে পারেন তাহলে খিচুনি রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। কেননা রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খিচুনি রোগ প্রতিহত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
- মধু ও দারুচিনি। মধুর সহিত দারুচিনি মিশ্রিত করে কিছুদিন নিয়মিত খেলে শিরার টান লাঘব হয় এবং খিচুনি রোগে আরাম পাওয়া যায়। তবে যদি আপনার ডায়াবেটিস থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে মধু ভক্ষণ না করাই উত্তম।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। খিচুনির সমস্যা সাধারণত মস্তিষ্কের ক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে। আর ডি হাইড্রেশনের কারণে অর্থাৎ পানিসূন্যতার কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ব্যবহার করতে পারে, তাই খিচুনি রোগীদের উচিত অধিক পরিমাণে পানি পান করা।
- বিশ্রামে থাকা। খিচুনি রোগীদের কে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে। খিচুনি রোগের পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামে থাকা অতীব জরুরী। কেননা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম করতে না পারলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যার ফলে খিচুনি উঠতে পারে তাই অবশ্যই খিচুনি রোগীদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে।
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ তা জানতে চাইলে আর্টিকেলের এই অংশটি অবশ্যই আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ হতে পারে সে সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ।
ঘুমের মধ্যে শরীরে যে খিঁচুনি হয়ে থাকে বা কম্পন হয়ে থাকে তাকে 'হিপনিক জার্কস' বলে। সাধারণত মানুষ যখন ঘুমাতে যায় ঠিক তখনই এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যখন এই সমস্যাটি দেখা দেয় তখন মানুষ পুরোপুরি ঘুমের মধ্যেও থাকে না আবার পুরোপুরি জাগ্রত অবস্থায় থাকে না।
ঘুম এবং জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় এই ধরনের 'হিপনিক জার্কস' হয়ে থাকে। যদি হালকা মাত্রায় এ ধরনের খিঁচুনি হয় থাকে তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু এ সমস্যা যদি কন্টিনিউ চলতে থাকে এবং অনেক সময় ধরে হতে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ? আশা করি প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
বড়দের খিঁচুনি হওয়ার কারণ - খিঁচুনি হওয়ার লক্ষণ: শেষ কথা
খিঁচুনি হলে করণীয় কি? এবং খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। উপরে বর্ণিত খিঁচুনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি খিচুনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি কিসের লক্ষণ সেই বিষয়েও উপরে আলোকপাত করা হয়েছে। ১৬৪১৩
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url