২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে - বাংলাদেশে এই দুর্ভিক্ষের কি হবে
প্রিয় পাঠক গণ আপনারা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে জেনে গেছেন ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হতে চলেছে। কিন্তু ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে তা কি জানেন? তাই আজকে আমি আলোচনা করবো ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এই সম্পর্কে।
চলুন তাহলে জেনে নি ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এই নিয়ে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে
২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে সেই সম্পর্কে শেখ হাসিনা কি বলেছেন? ২০২৩ সালের কি দুর্ভিক্ষ হবে তা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তার বিভিন্ন বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। বৈশ্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ টেনেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে এ ধরনের যাতে পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গটি আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের শিকার যাতে না হয় সেজন্য খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। এখন শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এই সম্পর্কে কি বলেছেন? ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এই পোস্টের মাধ্যমে তা তুলে ধরবো।
দুর্ভিক্ষ কি
মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য পাঁচটি মৌলিক অধিকার হলো খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো প্রাপ্যতার ভিত্তিতে খাদ্যে নিশ্চয়তা বিধান। খাদ্যের অভাবে যখন অনাহার জড়িত পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং যা অন্যান্য মৌলিক অধিকার প্রাপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে সেই চরম অবস্থাকে দুর্ভিক্ষ বলে। সাধারণত জনগণের জন্য প্রয়োজন মেটানোর মত খাদ্য সরবরাহ না থাকলে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়।
ফসল হানি, যুদ্ধবিগ্রহ, মূল্য স্ফীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা, ব্যাপক দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে স্বাভাবিক খাদ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং দুর্ভিক্ষের আবির্ভাব ঘটে থাকে। ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এবং এ কথা কেন উঠে আসছে তার বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে করা হলো।
কেন দুর্ভিক্ষের কথা হচ্ছে
২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে কেনোই বা এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার কথা বলছেন? প্রধানমন্ত্রী দুর্ভিক্ষ নিয়ে কি রকমের সম্ভাবনার কথা বলেছেন? বিশ্ব জুড়ে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্ব গতিতে মানুষ যখন দিশেহারা তখন আরো খারাপ খবরের আভাস মিলছে। ২০২৩ সালে সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতির আশংকায় এখনি নানা ধরনের সতর্ক বাণী উচ্চারণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদন গুলোতেও খাদ্য সংকট জোরালো হবার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছে যে ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে। ২০২৩ সালে বিশ্বের ৪৫ টি দেশে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এবং ২০ কোটি মানুষের জন্য জরুরী সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। এফএও এবং ডাব্লিউএফপি এর যৌথ রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষের আশংকা প্রবল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এবং সাউথ সুদান।
এছাড়াও ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানেরও একই দশা। এর পাশাপাশি এশিয়া ও আফ্রিকার আরো কিছু দেশ আছে যেখানে তীব্র খাদ্য ঘাটতি হতে পারে বলেও রিপোর্ট উঠে এসেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহীর পরিচালক ডেবিড বেসলে সম্প্রতি এক বক্তব্যে বিশ্ব জুড়ে ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এবং খাদ্য ঘাটতির আশংকা প্রকাশ করেছেন। এজন্য তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অস্থিরতা এবং যুদ্ধ বিগ্রহকে দায়ী করছেন।
তিনি বলছেন, পৃথিবীর ৪৫ টি দেশ এখন ' দুর্ভিক্ষের দরজায় কড়া' নাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটির সামনে এক বক্তব্যে ডাব্লিউএফপি নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে এবং এর একটি বড় কারণ হবে যুদ্ধ এবং সারের সংকট। "এটি এমন এক ধরনের সংকট হতে যাচ্ছে যা আমরা জীবদ্দশায় দেখিনি।" বলেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তাদের রিপোর্ট বলেছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সারের ব্যাপক সংকট তৈরি হচ্ছে।
এই অবস্থা অভ্যাহত থাকলে আফ্রিকা মহাদেশে খাদ্য উৎপাদন ২০ শতাংশ কমে যাবে। চলতি বছরের জুন মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ২০২২ সালে কয়েকটি দুর্ভিক্ষ ঘোষণার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং ২০২৩ সালে সেটি আরো খারাপ হতে পারে। বিশ্ব জুড়ে খাদ্য মূল্য কিছুটা কমেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সংকট শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেসব কারণে খাদ্য দ্রব্যের উর্ধ্ব গতি হয়েছে সেগুলো এখনো বিদ্যমান আছে।
কেন এই দুর্ভিক্ষের অবস্থা
২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এবং এই দুর্ভিক্ষের কি রকমের পরিণতি হবে তাই নিয়ে বিস্তারিত থাকছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা যে যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ নগদ একাউন্ট লক হয়ে গেলে কি করবেন।
- যুদ্ধ এবং নানাবিধ সংঘাত খাদ্য ঘাটতির জন্য একটি বড় কারণ হয়ে দাড়াবে। পৃথিবীতে যত মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ বসবাস করে যুদ্ধ কবলিত এলাকায়। ইউক্রেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে যুদ্ধের কারনে খাদ্য ঘাটতি কতটা খারাপ হতে পারে। এই যুদ্ধ চলতে থাকলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
- দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, জলবায়ু জনিত। পৃথিবীর অনেক দেশ হয়তো বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে, নয়তো খরায় ভুগছে। এর ফলেও খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
- করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সেটি এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি।
- জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি ও খাদ্য ঘাটতির কারণ হতে পারে। খাদ্য দ্রব্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে অনেকের জন্য খাদ্য কেনা কঠিন হয়ে যাবে। যেমন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে ২০১৯ সলের তুলনায় এখন তাদের পরিচালনা ব্যয় যতটা বাড়ছে সেটি দিয়ে তারা প্রতি মাসে ৪০ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারতো।
বাংলাদেশে এই দুর্ভিক্ষে কি হবে
বাংলাদেশে ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে তা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থ নীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আশংকা প্রকাশ করেছেন তা একেবারে অমূলক নয়। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে কিংবা রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার জন্য শুল্ক আরোপ করেছে। বিশ্ব জুড়ে খাদ্য সংকট দেখা দিলে বিভিন্ন দেশ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরো জোরালো করতে পারে।
সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী আগে থেকেই উৎপাদন বাড়ানোর যে কথা বলছেন সেটি বাস্তব সম্মত। কারণ, খাদ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করা ঠিক হবে না, বলেন মি. হোসেন। তিনি বলেন খাদ্য সংকট দেখা দিলেই দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি হবার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়। খাদ্য মূল্য যদি অনেক বেড়ে যায় তখন দরিদ্র মানুষ খাবার কিনতে পারে না। লাগাম ছাড়া মূল্য স্ফীতি দরিদ্র মানুষের জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে বাংলাদেশে।
ড.জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আমন ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিশ্ব বাজারেও খাদ্যের সংকট আছে। এ দুটো পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। মি. হোসেন বলেন, বাংলাদেশ যদি উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং দারিদ্র্য মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারে তাহলে দেশটি পরিস্থিতি সমাল দিতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ জাতীয় সমবায় দিবস কবে।
তবে ২০২৩ সালে যদি প্রতিকূল আবহাওয়া থাকে এবং বিশ্ব বাজারের সংকট অভ্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের জন্যও কঠিন সময় আসছে বলে মনে করেন। অনেকেরই জানার ইচ্ছে ছিলো ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এই নিয়ে৷ আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে ২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে এই বিষয়টা পরিষ্কার করলাম।
[21115]
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url