জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কী কারণে এবং কবে
জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে? ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা জাতিয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে এবং তাদের হত্যার কারণ সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হবে।জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে সে বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
পেজ সূচিপত্র: জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে?
জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রেক্ষাপট: উপস্থাপনা
বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় একটি অধ্যায় হলো জেল হত্যাকাণ্ড। ইতিহাসে এরূপ হত্যাকাণ্ডের নজির বিরল। সরকারি নিরাপত্তায় থাকার পরেও এরুপ হত্যাকান্ড কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কি কারণে জাতীয় এই চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল সেই বিষয়গুলো এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। আপনি যদি জানতে চান, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে তাহলে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন, জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে?: ৩রা নভেম্বরের নির্মম ইতিহাস
জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পরে দেশ মূলত অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। দেশের কথাও স্থিতিশীলতা ছিল না। একের পর এক অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থান সংঘটিত হতে থাকে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেই ১৯৭৫ সালে নভেম্বরের ৩ তারিখে কারাগারের সরকারের হেফাজতে থাকা জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর এ রাত আনুমানিক দেড়টা বা দুইটার সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে একটি পিকআপ ভ্যান এসে দাঁড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সেই পিকআপ ভ্যানটি তে কয়েকজন সেনা সদস্য ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন আমিনুর রহমান।
কারা মহাপরিদর্শক জেলার আমিনুর রহমান কে ফোন করে কারাফটকে বাহিরে আসতে বললেন। আমিনুর রহমান বাইরে এসে দেখতে পেলেন যে, কয়েকজন সেনাসদস্য সশস্ত্র অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা কারা মহাপরিদর্শককে একটি চিঠি দিলেন। এরপরে কারাগারে থাকা ফোনে একটি ফোন কল আসে।
এরপরে কারাগারে থাকা জাতীয় চার নেতাকে একটি কক্ষে নিয়ে আসা হলো। তারপর সেনা সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ব্রাশফায়ার চালালেন। মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল জাতীয় চার নেতা। তাদের মৃত্যুর খবর সেদিন কেউ জানতে পারেনি। তার পরের দিন তাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন জানাজানি হয়ে যায় কারা অভ্যন্তরে থাকা জাতীয় চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে আশা করি এই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কারণ
জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে সে সম্পর্ক উপরে আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় চার নেতা ছিল আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসী সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীসময়েও তাদের নেতৃত্ব বহাল ছিল। এককথায় আওয়ামী লীগের মধ্যে এই চার নেতা ছিল অবিসংবাদি নেতা এবং তার বহুদিন রাজনীতি করেছেন। তারা ছিলেন ঝানু রাজনীতিবিদ। রাজনীতি সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ছিল অনেক বেশি।
তৎকালীন সময়ে যারা আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তাদের ধারণার জন্ম ছিল যে, যদি জাতীয় চার নেতাকে জীবিত রাখা যায় তাহলে কোনো একসময় তারা আবার সরকার গঠন করতে পারে। এরূপ ধারণা থেকেই মূলত জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতাকে ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট এর গ্রেফতার করা হয়।
১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে আওয়ামীলীগ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছিলেন, আবার অনেকে রাজনীতিতে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। কেউ কেউ আবার প্রবাসে চলে গিয়েছিলেন। সেই সময় সক্রিয় এবং নীতিবান রাজনীতি হিসেবে এই জাতীয় চার নেতা বহাল তবিয়তে ছিলেন। আর সে কারণেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের কে হত্যা করা হয়।
তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ সরকার নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য এবং ভবিষ্যতেও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন কেউ না করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতেই তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পাঁয়তারা চালিয়েছিল। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে সে প্রশ্নের উত্তর ইতোমধ্যেই উপরে তুলে ধরা হয়েছে।
জাতীয় চার নেতার পরিচয়
জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে সে সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এখানে জাতীয় চার নেতার পরিচয় তুলে ধরা হবে। জাতীয় চার নেতা হলেন: (ক) তাজউদ্দীন আহমদ (খ) মোহাম্মদ মনসুর আলী (গ) সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও (ঘ) আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
(ক) তাজউদ্দীন আহমদ
- জন্ম: তাজউদ্দীন আহমদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালে।
- জন্মস্থান: গাজীপুর জেলারকাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রাম।
- পড়াশোনা: তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫৩ সালে। এবং পরবর্তীতে তিনি আইনের উপরে ডিগ্রী লাভ করেন।
- রাজনীতি: ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ববাংলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এবং রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ববান।
- মৃত্যু: ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
(খ) মোহাম্মদ মনসুর আলী
- জন্ম: মোহাম্মদ মনসুর আলী ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
- জন্মস্থান: সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের ‘কুড়িপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
- পড়াশোনা: তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে অর্থনীতিতে এমএ এবং ল’ পাস করেন।
- রাজনীতি: তিনি মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র এবং যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
- মৃত্যু: তিনি ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
(গ) সৈয়দ নজরুল ইসলাম
- জন্ম: সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
- জন্মস্থান: কিশোরগঞ্জ জেলার যমোদল দামপাড়া
- পড়াশোনা: তিনি ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
- রাজনীতি: অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
- মৃত্যু: ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
(ঘ) আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান
- জন্ম: আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯২৬ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন।
- জন্মস্থান: নাটোর মহকুমার বাগাতীপাড়া থানার নূরপুর গ্রাম।
- পড়াশোনা: কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে অর্থনীতিতে অনার্স পাশ করেন। এবং পরবর্তীতে রাজশাহী আইন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
- রাজনীতি: মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
- মৃত্যু: ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর আনুমানিক রাত তিনটার সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রেক্ষাপট: উপসংহার
জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে এই বিষয় সর্ম্পকে আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল কবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনেছেন। ১৬৪১৩
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url