রবিউল আউয়াল মাসের রোজা রাখার সমস্ত বিধানের বিস্তারিত
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা বলতে বিশেষ কোনো রোজা নেই। তবে প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা সুন্নত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। তাই রবিউল আউয়াল মাসেও ১৩,১৪ ও ১৫ রোজা রাখতে পারেন। এতে কোন সমস্যা নেই। বরং এটি অনেক সওয়াব এর কাজ।
পেজ সূচিপত্র: রবিউল আউয়াল মাসের রোজা
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা: ভূমিকা
ইসলামে জন্মদিন, মৃত্যু দিবস, বিবাহ বার্ষিকী, ভালোবাসা দিবস সহ যে কোন ধরনের দিবস পালন করার কোনো বিধান নেই। দিবস ভিত্তিক অনুষ্ঠান কিংবা এ ধরনের কোনো আয়োজন ইসলামসম্মত নয়।অনেকেই রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে রাসুল (সাঃ) এর জন্মদিন পালন করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। শুধু জন্মদিন নয় এই দিবসটি কেন্দ্র করে আরও বিভিন্ন ধরনের আমল করার চেষ্টা করে। যেমন তারা রবিউল আউয়াল মাসে বিশেষ রোজা পালন করে থাকেন যার বিধান ইসলামে নেই।
১২ই রবিউল আউয়াল ও ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে আরও কিছু পোস্ট
- ঈদে মিলাদুন্নবী দলিল - ১২ ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী নামাজ
- রবিউল আউয়াল নিয়ে কবিতা - পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী গজল
- ঈদে মিলাদুন্নবী কেন পালন করা হয়? রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন
- রবিউল আউয়াল মাসের ক্যালেন্ডার - রবিউল আউয়াল মাসের ছুটির তালিকা
- মিলাদুন্নবী গজল - মিলাদুন্নবী জলসা - মিলাদুন্নবী নাত - ঈদে মিলাদুন্নবী উক্তি
- ঈদে মিলাদুন্নবী বিদআত? ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ?
- নবীর জন্মদিন নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস - ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে গজল
- রবিউল আউয়াল মাসে বিয়ে করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত
- সকল ঈদের সেরা ঈদ ঈদে মিলাদুন্নবী ১২ই রবিউল আউয়াল
- ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস - ১২ ই রবিউল আউয়ালের ইতিহাস
- রবিউল আউয়াল মাসের ১২টি ফজিলত ও আমলের বিস্তারিত
- রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ আজ 2022 - রবিউল আউয়াল মাস 2022
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২২ কত তারিখ? - মিলাদুন্নবী কত তারিখ ২০২২?
- রবিউল আউয়াল মাসের বয়ান - রবিউল আউয়াল মাসের খুতবা
- ১২ই রবিউল আওয়াল ২০২২ কত তারিখ - ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২২
- রবিউল আউয়াল মাসে কতটি রোজা রাখতে হবে ও তার নিয়ম
- রবিউল আউয়াল মাসের রোজা রাখার সমস্ত বিধানের বিস্তারিত
- মিলাদুন্নবী শব্দের অর্থ কি - মিলাদুন্নবী পালনের বিধান
- ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে রচনা - ঈদে মিলাদুন্নবী ছবি
- ঈদে মিলাদুন্নবী কত সাল থেকে পালন করা হয়
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা রাখার বিধান
সাওয়াবের উদ্দেশ্যে আপনি যে আমলই করেন না কেন তা অবশ্যই ইসলাম সম্মত হতে হবে। শুধু আমল করলেই যে সাওয়াব হবে তা কিন্তু নয়। যেমন ধরেন রোজা রাখা ভালো কাজ কিন্তু আপনি যদি হারাম দিনগুলোতে রোযা রাখেন তাহলে কিন্তু সাওয়াবের এর পরিবর্তে পাপ হবে। অর্থাৎ ঈদের দিনে যদি আপনি রোজা রাখেন তাহলে কিন্তু আপনার সওয়াব হবে না বরং পাপ হবে।
তেমনি ভাবে মাসিক ঋতুস্রাবের সময় যদি কোন নারী নামাজ পড়ে তাহলে কিন্তু তার সাওয়াবের পরিবর্তে পাপ হবে। অর্থাৎ আপনি যে আমলই করেন না কেন সেই আমল কোরআন এবং হাদিস সম্মত হতে হবে। কোরান এবং হাদিসে নেই বা কোরআন এবং হাদিসের বিরুদ্ধে যায় এমন আমল করা পাপের কাজ।
যাইহোক রবিউল আউয়াল মাস কে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো রোজা রাখার বিধান নেই। তাই এ ধরণের রোযা যদি কেউ পালন করে তাহলে তো কুরআন এবং হাদিস সম্মত হবে না। এবং এটা করা বেদায়াত তাই অবশ্যই বারই রবিউল আউয়াল মিলাদুন্নবী সম্পর্কে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা: আইয়ামে বিযের তারিখ
অন্যান্য মাসের ন্যায় আপনি রবিউল আউয়াল মাসের আইয়ামে বিজের রোজা রাখতে পারেন।আইয়ামে বীজের রোজার অনেক গুরুত্ব রয়েছে তাই আইয়ামে বিজের রোজা রাখলে আপনি অশেষ সওয়াব এর অধিকারী হতে পারবেন এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আইয়ামে বিজের রোজা সম্পর্কে হাদিসে যেসকল বর্ণনা রয়েছে তা নিম্নরূপ।
‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আমর ইব্নুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সওম পালন কর এবং সারা রাত সালাত আদায় করে থাকো। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বললেনঃ এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সওম পালন করো আবার ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হাক্ব রয়েছে, তোমার চোখের হাক্ব রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক্ব আছে, তোমার মেহমানের হাক্ব আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন কর। কেননা নেক ‘আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর ‘আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন ‘আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি আরো বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তবে আল্লাহ্র নবী দাউদ (আঃ)-এর সওম পালন করো, এর হতে বেশী করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্র নবী দাউদ (আঃ)-এর সওম কেমন? তিনি বললেনঃ অর্ধেক বছর। রাবী বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা! আমি যদি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবূল করে নিতাম !
– বুখারী ১৯৭৫
আর একটি হাদীসে রয়েছে, ইবনু মিলহান আল-ক্বায়সী (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আইয়ামে বীয অর্থৎ চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সওম পালনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এগুলো সারা বছর সওম রাখার সমতুল্য। – আবু দাউদ ২৪৪৯
এ সম্পর্কে আরেকটি হাদীস হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের নয় দিন, আশুরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিন দিন সাওম পালন করতেন-মাসের প্রথম সোমবার এবং দুই বৃহস্পতিবার। – সুনানে নাসায়ী ২৪১৯
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আরো উল্লেখ করেন, করেনজারীর ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ প্রত্যেক মাসের তিন দিন সাওম (রোযা) পালন করা সারা জীবন সাওম (রোযা) পালন করার সমতুল্য। আর আইয়ামে বীয -তের তারিখের সকাল থেকে চোদ্দ এবং পনের তারিখ পর্যন্ত। – নাসায়ী ২৪২০
আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি মাসের প্রথম দিকে তিনদিন সওম পালন করতেন। – আবু দাউদ ২৪৫০
এই মাসের রবিউল আউয়ালের আইয়ামে বিজের রোজা অক্টোবরের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে রাখতে হবে।তাই আপনি যদি এই মাসে আইয়ামে বিজের রোজা রাখতে চান তাহলে আপনাকে ৯ তারিখ রাত্রেই সেহরি খেতে হবে।
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা: সোম ও বৃহস্পতিবার
আরবি মাসের প্রত্যেকের সময় বৃহস্পতিবার রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক তাই আপনিও রবিউল আউয়াল মাসের প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই।আরবি মাসের প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোযা থাকা অবস্থায় যেন আমার আমলনামা (আল্লাহর) কাছে পেশ করা হয়। (তিরমিযী : ৭৪৭)।আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: "প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যারা আল্লাহর সাথে শিরক (অংশীদার স্থাপন) করে না। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই ও তার মধ্যে শত্রুতা বিদ্যমান। এরপর বলা হবে, এ দু’জনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য অবকাশ দাও, এ দু’জনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য সুযোগ দাও, এ দু’জনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য সুযোগ দাও।" -(মুসলিম ৬৪৩৮)
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা: উপসংহার
রবিউল আউয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে ইতোমধ্যেই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে রবিউল আউয়াল মাসের বিশেষ কোনো রোজা আছে কি না? সে ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তাই না জেনে না বুঝে কোন ধরনের আমল করবেন না আমার করার পূর্বে অবশ্যই তার সত্যতা যাচাই করে নেবেন।
সঠিকভাবে জেনে বুঝে আমল করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি না জেনে ভুল আমল করেন তাহলে সাওয়াবের পরিবর্তে পাপের অধিকারী হবেন, যা আপনার জন্য ক্ষতিকর।রবিউল আউয়াল মাসের রোজা সম্পর্কিত উপরোল্লেখিত এই আর্টিকেলটি আশাকরি আপনার ভালো লেগেছে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ১৬৪১৩
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url