কোরবানি কি ও কেন - কোরবানি কেন দেওয়া হয় - কুরবানি কেন করা হয়
কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় এই প্রশ্নের উত্তর যারা খুঁজছেন বা জানতে চান তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি। তাই, কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় ,কোরবানির ইতিহাস, কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত প্রভৃতি প্রশ্নগুলো একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের সবার মনে ঘুরপাক খায়। তাই, কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় ও উপরে উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমরা হাজির হয়েছি। চলুন তাহলে শুরু করা যাকঃ
পেজ সূচিপত্রঃ
কোরবানি কি
কুরবানী আরবি শব্দ قربانى কুরবান অথবা আদ্বহা বা আযহা أضحية থেকে এসেছে। কুরবান শব্দটি আরবি উর্দু ও ফারসিতে কুরবানী নামে রূপান্তরিত। এর অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কুরবানীর প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির কুরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামি মতে কুরবানী হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। হিজরী ক্যালেন্ডারের ১২ তম চন্দ্র মাসের জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১৩ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানী করার সময় হিসেবে নির্ধারিত। এই দিনে বিশ্ব জুড়ে মুসলমানরা কুরবানী দেয়। পবিত্র আল কোরআনের তিনটি স্থানে কুরবানির উল্লেখ আছে। যথাঃ
কুরআনে বর্ণিত - অতএব হে মানুষ! আল্লাহ-সচেতন হও। আল্লাহর ধর্মবিধান লঙ্ঘন হতে দূরে থাকো। জেনে রাখো, আল্লাহ মন্দ কাজের শাস্তিদানে কঠোর। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৬)
হে নবী! কিতাবিগণকে আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা ভালো করে বর্ণনা করো। তারা যখন কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো। কিন্তু অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বলল, আমি তোমাকে খুন করবো। অপরজন বলল, প্রভু তো শুধু আল্লাহ-সচেতনদের কোরবানিই কবুল করেন। (সূরা মায়েদা, আয়াত-২৭)
অতএব উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, কোরবানি কি তা জানতে সক্ষম হয়েছেন বা হবেন।
কোরবানি কেন দেওয়া হয়
মুসলমান হিসেবে আমাদের উপর যে সকল বিধি-বিধান রয়েছে তার মধ্যে একটি কুরবানী ঈদে কুরবানি করা। মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনে কোরবানির আত্মিক, পারিবারিক, এবং সামাজিক আর্থিক প্রভাব সীমাহীন। কোরবানির মাধ্যমে বান্দা ত্যাগের মাধ্যমে তার রবের প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্যের নজির স্থাপন করে।
কুরআনে বর্ণিত- আল্লাহ বলেন, "বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য।" (সুরা আনআম : ১৬২) ইবরাহীম (আ.)-এর সেই কোরবানির ঘটনা আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগের; আরবের মরুভূমিতে। হজরত ইবরাহীম (আ.) কে আল্লাহ স্বপ্নযোগে বললেন, ‘তোমার প্রিয়বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো।’ পরপর তিন দিন ইবরাহীম (আ.) এই স্বপ্ন দেখলেন এবং প্রতিদিন ১০০ করে মোট ৩০০ উট কোরবানি করলেন। পুনরায় স্বপ্নাদেশ হলো, ‘তোমার প্রিয়বস্তু কোরবানি করো।’ আল্লাহর খলিল বুঝতে পারলেন তাকে কোন বিষয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। কালবিলম্ব না করে তিনি ইসমাইলকে তার স্বপ্নের বিবরণ জানালেন। কোরআনে এসেছে, ‘সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছল তখন ইবরাহীম তাকে বললেন, ‘হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন তুমি বলো তুমি কী মনে করো?’ সে বলল, ‘হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেওয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাল্লাহ সবরকারীই পাবেন।’ (সুরা সফফাত : ১০২)
ইবরাহীম (আ.) বলতে পারতেন যে, হে আল্লাহ! তোমার জন্য আগুনে গিয়েছি, ঘরবাড়ি ছেড়েছি, আত্মীয়-স্বজন সব কিছু হারিয়েছি। এসব কিছুর বিনিময়ে আমার স্নেহের সন্তানকে কোরবানি করা থেকে রেহাই দাও। কিন্তু তিনি তা করেননি বরং আল্লাহ যা হুকুম করেছেন তা শর্তহীনভাবে মেনে নিয়েছেন। এবং তিনি আল্লাহর আনুগত্য পালনের ব্যাপারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। একজন মুসলিমের অন্যতম চাওয়া হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানিদাতা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে।
আরো পড়ুনঃ কুরবানীর পশুর সাথে আকিকা - আকিকা ও কুরবানি
আত্মত্যাগের এত উঁচু পর্যায়ের উপমা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি ঘটেনি। এই মহান ত্যাগের নজির আল্লাহকে এত খুশি করে যে, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য কোরবানির বিধান প্রতিষ্ঠা করে দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই। তাই, আত্মত্যাগ ও মনের সব কুপ্রবৃত্তির ওপর ছুরি চালানোই হোক কোরবানির প্রধান উদ্দেশ্য।
অতএব উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় তা জানতে সক্ষম হয়েছেন বা হবেন।
কোরবানির ইতিহাস
প্রথম মানব হজরত আদম থেকে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর উম্মতের জন্যই কোরবানির বিধান বলবৎ ছিল কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ইতিহাসের প্রথম কোরবানি ছিল পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের। তাদের দেওয়া কোরবানির বর্ণনা সুরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে বর্ণিত আছে। ইরশাদ হয়েছে, "আর তাদের আদম (আ.)-এর দুই ছেলের কাহিনী সঠিকভাবে শুনিয়ে দাও। তারা দুজন কোরবানি করলে একজনের কোরবানি কবুল করা হলো, আরেকজনের হলো না।"
ইবরাহীম (আ.)-এর কোরবানির ঘটনা আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগের আরবের মরুভূমিতে। হজরত ইবরাহীম (আ.) কে আল্লাহ স্বপ্নযোগে বললেন, "তোমার প্রিয়বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো।’ পরপর তিন দিন ইবরাহীম (আ.) এই স্বপ্ন দেখলেন এবং প্রতিদিন ১০০ করে মোট ৩০০ উট কোরবানি করলেন। পুনরায় স্বপ্নাদেশ হলো, ‘তোমার প্রিয়বস্তু কোরবানি করো।’ আল্লাহর খলিল বুঝতে পারলেন তাকে কোন বিষয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। কালবিলম্ব না করে তিনি ইসমাইলকে তার স্বপ্নের বিবরণ জানালেন। কোরআনে এসেছে, ‘সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছল তখন ইবরাহীম তাকে বললেন, ‘হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন তুমি বলো তুমি কী মনে করো?’ সে বলল, ‘হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেওয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাল্লাহ সবরকারীই পাবেন।" (সুরা সফফাত : ১০২)
আরো পড়ুনঃ ঈদ মোবারক শুভেচ্ছা ২০২২
পিতা তার প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে নিয়ে কোরবানির স্থান মিনায় উপস্থিত হলেন। নিজের চোখ বেঁধে পুত্রকে উপুড় করে তার ঘাড়ে ছুরি চালালেন ইবরাহীম (আ.)। আল্লাহর হুকুমে ইসমাইলের পরিবর্তে বেহেশতি দুম্বা জবাই হয়ে গেল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, "শেষ পর্যন্ত যখন তারা দুজন আনুগত্যের শির নত করে দিলো এবং ইবরাহীম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলো এবং আমি আওয়াজ দিলাম, হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়ে দিয়েছ। আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি প্রকাশ্য পরীক্ষা। একটি বড় কোরবানির বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম এবং পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে চিরকালের জন্য তার প্রশংসা রেখে দিলাম। শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের প্রতি।" (সুরা সফফাত : ১০৪-১০৯)
আত্মত্যাগের এত উঁচু পর্যায়ের উপমা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি ঘটেনি। এই মহান ত্যাগের নজির আল্লাহকে এত খুশি করে যে, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য কোরবানির বিধান প্রতিষ্ঠা করে দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই।অতএব উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় এর আওতায় কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন বা হবেন।
কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত
ইসলামের অন্যতম বিধান হলো কোরবানি। কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান পুরুষ মহিলার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে কোরবানির গুরুত্ব, ফজিলত ও সাওয়াব অনেক বেশি। কোরবানির মাধ্যমে গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ ও তার রাসূলের শর্তহীন আনুগত্য, ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষাও আছে কোরবানিতে।
কুরআনে বর্ণিত- নবীজিকে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন- "আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন। " (সুরা কাওসার:২)
অন্য আয়াতে এসেছে- "(হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ রাব্বুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত।" (সুরা আনআম : ১৬২)
অন্যদিকে হাদীসে বর্ণিতঃ
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তান কোরবানির দিন যত নেক আমল করে তার মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে (পশু কোরবানির মাধ্যমে) রক্ত প্রবাহিত করা। কিয়ামতের দিন কোরবানির পশু (জীবিত হয়ে) তার শিং, খুর এবং পশম সহকারে উঠবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দারা! অন্তরের খুশির সঙ্গে তোমরা কোরবানি কর’ (তিরমিজি’ ইবনে মাজাহ)।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, একদিন সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই কোরবানি কি? হুজুর (সা.) উত্তর দিলেন, তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত (নিয়ম)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূল! এতে আমাদের জন্য কি রয়েছে?
হুজুর (সা.) বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূল! পশমওয়ালা পশুদের (অর্থাত্ যেসব পশুর পশম বেশি হয় যেমন ভেড়া ইত্যাদির) পরিবর্তে কি সওয়াব পাওয়া যাবে?হুজুর (সা.) বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে (চাই পশম যত বেশিই হোক না কেন)। মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ।
অতএব উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, মুসলমান হিসেবে আমাদের জীবনে কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত জানা অপরিহার্য। যা এই পোস্টটি পড়ে জানতে সক্ষম হয়েছেন বা হবেন এবং উপকৃত হবেন।
মূলকথাঃ কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় জেনে নিন
কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় ,কোরবানির ইতিহাস, কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত প্রভৃতি প্রশ্নগুলোর উত্তর উপরে অতি সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সুতরাং আশা করি, উপরোক্ত আলোচনা থেকে কোরবানি কি এবং কেন দেওয়া হয় তা জানতে সক্ষম হয়েছেন বা হবেন এবং উপকৃত হবেন। আর পোস্টটি আপনার বা আপনাদের ভালো লেগে থাকলে আপনি বা আপনারা শেয়ার করতে পারেন আপনার বা আপনাদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে ও ইনস্টাগ্রামে। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url