৩০টি কুরবানির মাসআলা - কুরবানীর শিক্ষা - কোরবানির ইতিহাস
কুরবানির ইতিহাস এবং কুরবানির মাসআলা নিয়ে অনেকে জানতে চান। আপনি যদি সেরকম একজন হয়ে থাকেন তাহলে কুরবানির ইতিহাস ও কুরবানির মাসআলা জানতে পোস্টটি পড়ুন। কুরবানির শিক্ষা সম্পর্কে জেনে নিন।
কুরবানির ইতিহাস এবং কুরবানির মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে জেনে নিন কি কি থাকছে পোস্টটিতে।
পেজ সূচিপত্রঃ কুরবানির শিক্ষা - কুরবানির মাসআলা
কুরবানির ইতিহাস
পৃথিবীতে প্রত্যেকটি দুঃখ , আনন্দের পেছনে থাকে ইতিহাস। এই ইতিহাসগুলো অনেকের অজানা থাকে। সেরকম কুরবানি ঈদের ও রয়েছে কুরবানির ইতিহাস। কুরবানির ইতিহাস অনেক পুরাতন।
এমন বাবা খুজে পাওয়া দুষ্কর যে কিনা তার সন্তানকে ভালোবাসা না। মহান আল্লাহর অন্যতম প্রিয় একজন বান্দা ছিলেন হযরত ইব্রাহিম (রাঃ) । আল্লাহ তাআলা প্রায়ই তার পরীক্ষা নিতেন। ইব্রাহীম (আঃ) সবগুলোই পরীক্ষাতে সফলভাবে উর্ত্তীণ হয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) খুব করে ছেলে চেয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা তার ইচ্ছা পূরন করলেন। ৬৪ বছর বয়সে তিনি একজন ছেলে সন্তানের বাবা হলেন। একারণে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন এর কাছে শোকর আদায় করলেন। ইব্রাহিম (আঃ) তার পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কোলে পিঠে মানুষ করতে লাগলেন। তার একমাত্র আদরের পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর বয়স যখন ১৪ এর কাছাকাছি তখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) একদিন রাতে স্বপ্ন দেখলেন , মহান আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করলেন ইব্রাহিম তুমি আমার জন্য কি ত্যাগ স্বীকার করতে পার? আমার জন্য তোমার নিজের সবচেয়ে পছন্দের জিনিস ত্যাগ করতে পার? ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্ন দেখে পরেরদিন অনেক দান খয়রাত করলেন। কয়েকটি পশুও দান করলেন। এরপর তিনি মনে করলেন আল্লাহ তার উপর খুশি হয়েছেন। কিন্তু রাতে ঘুমানোর পর তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন। তিনি দেখলেন, আল্লাহ তাকে আবার বলছেন "হে ইব্রাহিম তুমি তো তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগ করনি। ভেবে দেখ তোমার প্রিয় বস্তু কি এই পৃথিবীতে।" এ স্বপ্ন দেখে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ঘুম থেকে উঠে পড়লেন। তিনি অনেক ভেবে এরপর উত্তর খুজে পেলেন।
তিনি বুঝতে পারলেন তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি। তিনি বুঝতে পারলেন তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না তিনি কিভাবে তার একমাত্র আদরের সন্তানকে উতসর্গ করবেন। তিই চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার পুত্র তাকে প্রশ্ন করলেন কি হয়েছে তাঁর। তিনি তখন তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে সব খুলে বলেন। ইসমাইল (আঃ) তখন বললেন আল্লাহ আপনার কাছে আপয়ার প্রিয় জিনিস চেয়ছেন কারণ আল্লাহ তাআলা আপনাকে ভালোবাসেন। সেকারনে তিনি আপনাকে নবী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। অবশ্যই আপনি আল্লাহ আদেশ অমান্য করবেন না। ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পুত্রের কথা শুনে চুপ করে রইলেন।
পরের দিন বন্ধুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পুত্র ইসমাইল (রাঃ) কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন । একটি খোলা মাঠে এসে পৌছালে ইব্রাহীম (আঃ) ইস্মাইল (আঃ) কে তাঁর ছেলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেন। তখন ইসমাইল (আঃ) তাঁর বাবাকে চোখে কাপড় বেধে নিতে বললেন কেওনা তিনি তাঁর সন্তানকে নিজ হাতে জবাই করতে দেখলে কষ্ট পাবেন।
এরপর পুত্রের গলায় যখন ছুরি বসালেন তখন আল্লাহ তাআলা জিব্রাঈল (আঃ) কে আদেশ করলেন বেহেশত থেকে একটি ঊট নিয়ে ইসমাইল (আঃ) এর জায়গায় বসাতে। জিব্রাইল (আঃ) তাই করলেন।ইব্রাহীম (আঃ) যখন চোখ থেকে কাপড় সরালেন তখন দেখতে পেলেন সেখানে তাঁর পুত্র নেই। পুত্রের জায়গায় রয়েছে একটি উট। তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। এমন সময় আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) কে জানালেন , আমি তোমার ত্যাগ কবুল করে নিয়েছি। তুমি আমার বান্দাদের বলে দাও তারা যেন তাদের সাধ্যমত কুরবানি দেয়। এবাভেই তৈরি হয় কুরবানির ইতিহাস। এই কুরবানির ইতিহাস অনুসরণ করে যুগে যুগে প্রতি বছর ইদুল আযহা উদযাপিত হয়।
কুরবানির মাসআলা
কুরবানির মাসআলা রয়েছে অনেকগুলো। কুরবানির মাসআলা জানা গুরুত্বপূর্ন। কুরবানির মাসআলা দেখে নিন। আপনাদের সুবিধার্থে এই পোস্টে ৩০টির বেশি কুরবানির মাসআলা উল্লেখ করা হলো। চলুন তাহলে কুরবানির মাসআলাগুলো দেখে নিইঃ
- যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখের ভিতের যদি কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ধন সম্পদ থেকে থাকে তাহলে তাঁর উপর কুরবানি ফরজ।অতিরিক্ত সম্পদ বলতে যদি ৭.৫ ভরির বেশি স্বর্ণ থাকে অথবা ৫২.৫ ভরি রুপা অথবা ৫২.৫ ভরি রুপার সমমূল্য টাকা থাকলে তাঁর জন্য কুরবানি ওয়াজিব। এ সম্পত্তি কুরবানি দেয়ার তিন দিনের মধ্যে থাকলে আপনার ওপর কুরবানি ওয়াজিব।
- কুরবানির শরীক কুরবানির শরীককে দুইভাগে ভাগ করা যায়ঃ ১। যেসব পশু এক শরীকে দিতে হয় ২। যেসব পশু সাত শরীকে দিতে হয় এক শরীকে দেয়া যায় যেসব পশুঃ ছাগল, ভেড়া এবং দুম্বা ২। সাত শরীকে দিতে হয় যেসব পশুঃ গরু, মহিশ এবং উট
- কুরবানির সময়কালযিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ এবং ১২ তারিখের যেকোন একদিন কুরবানি দেয়া যায়। তবে ১০ তারিখ কুরবানি দেয়াই সবচেয়ে ভালো।
- কুরবানি সময়মত না করতে পারলে কুরবানি যদি সময়মতো দিতে না পারে এবং পশু ক্রয় থাকে সেক্ষেত্রে পশুটি সদকা দিয়ে দিতে হবে। আর পশু ক্রয় করা না থাকলে সে পশুর দাম সমান টাকা সদকা দিয়ে দিতে হবে।
- কুরবানির সময়সূচি ঈদের নামাজ শেষ করে এসে কুরবানি করা জায়েজ। যদি কোনো কারণে নামাজ আদায় না করা যায় এবং স্ময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে কুরবানি করা জায়েজ আছে।
- কুরবানির পশু যেসব পশু দ্বারা কুরবানি করা যাব ঃ গরু, ছাগল, মহিষ, উট, ভেড়া, দুম্বা ।
- কুরবানির পশুর বয়সসীমাঃ যেকোনো বয়সের পশু দ্বারা কুরবানি দেয়া যাবেনা। কুরবানি পশুর নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। যেমনঃ গরু এবং মহিষের বয়স - ২ বছর ছাগলের বয়স , ভেড়া, দুম্বার বয়স - ১ বছর
- কুরবানির পশু দিয়ে আকীকা কুরবানির পশু দিয়ে আকীকা দেয়া যাবে।
- হারাম উপায়ে অর্জিত টাকা দিয়ে দেয়া কুরবানি কবুল হবেনা
- কুরবানির পশু শারিরীকভাবে সক্ষম হওয়াটা শ্রেয়।
- দাত না থাকলে সে পশুর কুরবানি জায়েজ হবেনা
- ব্যাথা পেয়েছে এমন পশুর কুরবানি জায়েজ হবেনা
- গর্ভবতী পশু কুরবানি দেয়া যাবে
- কুরবানির পশু নিজে জবাই করাই শ্রেয়।
- কুরবানির পশু দিয়ে কোনো ধরণের সেবা গ্রহণ না করা।
- কুরবানির পশু নির্ধারিত হয়ে গেলে তার দুধ পান না করা
- কুরবানির পশু গর্ভবতী থাকলে এবং তা যদি বাচ্চা দেয় তাহলে বাচ্চাকে সদকা করে দিতে হবে
- কুরবানির গোশত তিন শরীকে ভাগ করতে হবে। এক ভাগ নিজের জন্য, আরেক ভাগ আত্মীয় স্বজন দের জন্য এবং অন্য ভাগ মিসকিনদেন জন্য।
- কুরবানির চর্বি, চামড়া বিক্রি করলে তাঁর টাকা সদকা করে দিতে হবে।
- কুরবানি করার সময় পশুর যাতে বেশি কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল করা
- যারা কুরবানির গোশত কাটার কাজে সহায়তা করেন তাদেরকে তাদের পারিশ্রামিক সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে
- কুরবানি ঈদের দিন সকালের খাবার কুরবানির গোশত দিয়ে শুরু করা সুন্নত।
- যেসকল ছাগল খাসী হয়েছে তাদেরকে কুরবানি করা উত্তম।
- কুরবানির পশু মারা গেলে আরেকটি পশু কুরবানি দিতে হবে যদি কুরবানি ফরজ হয়ে থাকে।
- কুরবানির পশু চুরি হয়ে গেলে কুরবানিদাতাকে নতুন পশু কিনে কুরবানি করতে হবে।
- যিই পশু জবাই করবেন তাকে পারিশ্রামিক হিসেবে কুরবানির গরুর কিছু দেয়া যাবেনা।
- কুরবানিতে যারা যারা শরীক থাকবেন তাদের গোশত মেপে বন্টণ করতে হ।
- শরীকে কুরবানি দিলে তখন ইমাম বা কসাই দিয়ে কুরবানির পশু জবাই করতে হবে।
- যে পশুর শারিরিকভাবে ক্ষত থাকে বা অসুস্থ থাকে তা কুরবানি করা জায়েজ নয়।
- কুরবানির পশু মোটা তাজা হলে উত্তম।
আরো পড়ুনঃ কোরবানির গরু জবাই করার দোয়া
কুরবানির শিক্ষা
কুরবানির শিক্ষা কি তা জেনে নিন। কুরবানির শিক্ষা মানব জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে তা জানুন। চলুন কুরবানির শিক্ষা নিয়ে ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করা যাকঃ
- কুরবানি আমাদেরকে ত্যাগ করার শিক্ষা দেয়। আল্লাহকে খুশি করতে আমরা যেন নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা না করি কুরবানি সেই শিক্ষা দেয়।
- কুরবানি ভালো মন্দের পার্থ্যক শেখায়। ভালো কাজের ফলাফল ভালো এবং মন্দ কাজের ফলাফল মন্দ তা বুঝতে শেখায়।
- কুরবানি ধৈর্য্যের শিক্ষা দেয়
আশা করি পোস্টটি পড়ে আপয়ার কুরবানির ইতিহাস, কুরবানির মাসআলা এবং কুরবানির শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url