জাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
মৌসুমি ফল গুলোর মধ্যে জাম অন্যতম। এটি গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে এটি পাওয়া যায়। জামের বিচি, গাছের ছাল, পাতা অনেক উপকারী এর ঔষুধি মূল্য আছে। জামে ক্যালোরির পরিমান খুব কম থাকায় জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আছে। বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাগুলোতে জাম ব্যবহার করা হয়। জামের রং বেগুমি কালো।
চলুন আর দেরি না করে জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, জাম খাওয়ার উপকারিতা, জাম খাওয়ার অপকারিতা, জামের বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম, জাম খাওয়ার নিয়ম, জাম খাওয়ার উপযুক্ত সময় ও জাম গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
পেজ সূচীপত্রঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- জামের বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম
- জাম খাওয়ার নিয়ম | জাম খাওয়ার উপযুক্ত সময়
- জাম গাছের ছালের উপকারিতা
- শেষ কথাঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বাংলাদেশে সকল ধরনের ফলের মধ্যে জাম অন্যতম। জামের বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini.; জাম Myrtaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল ও ইংরেজী নাম Jambul, Malabar Plum, Jamun। জাম বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, ও ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপকভাবে চাষ হয়। বাংলাদেশের কুমিল্লা, গাজীপর, নোয়াখালী, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, দিনাজপুরে বেশী পরিমানে জাম উৎপন্ন হয়। চলুন জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নেই।
জাম খাওয়ার উপকারিতা
- জাম ফল ডায়বেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। জামে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রোপার্টিজ-এর কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। জাম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা স্টার্চ ও চিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানব শরীরে শক্তির যোগান দেয়।
- জামে অধিক পরিমানে ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন-সি আছে যা মানব শরীরে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। জামে প্রচুর পরিমান পুষ্টি থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
- আয়রন অ্যানিমিয়া এবং জন্ডিসকে নিরাময় করে, আর জামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন।তাই যাদের শরীরে আয়রনের প্রয়োজন তারা জাম খেতে পারেন।
- জামে ম্যালিক এসিড (malic acid), গ্যালিক এসিড (galic acid), অক্সালিক এসিড (oxalic acid) এবং ট্যানিনস (tannins) এর মত যৌগ আছে যা অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়া, অ্যান্টি-ইনফেক্টিভ এবং গ্যাস্ট্রো থেকে রক্ষা করে। তাই জাম খেলে শরীরের বিষাক্ত ইনফেকশন দূর করে।
- জামে থাকা প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি হাই লেভেল ও সাধারণ সিজিনাল সমস্যার সাথে যুদ্ধ করে দেহে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। স্কিনের জন্য ভিটামিন সি খুবই উপকারী।
- গবেষণায় জানা গেছে, জামে আছে কেমো প্রটেক্টিভ (camo protective) বৈশিষ্ট্য। জামের এই নির্যাস বৈশিষ্ট্য শরীরকে নির্যাস ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করে।
- জামে থাকা অ্যালজিনিক এসিড (alginic acid) বা অ্যালজিট্রিন (algitrin), অ্যান্থোসিয়ানিন (anthocyanin) এবং অ্যান্থোসায়ানাডিনস (anthocyanidin) পুষ্টি যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ও শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস-সমৃদ্ধ যা অক্সিডেশন (oxidation) প্রতিরোধ করে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও জামে পটাশিয়াম আছে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে।
জাম খাওয়ার অপকারিতা
জামের বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম | জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- প্রথমে জাম সুন্দর করে পরিষ্কার করে একটি পাত্রে রাখুন এবং বীজ ছাড়িয়ে নিন।
- বীজ গুলোকে এমন ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন যাতে বীজের গায়ে আঁশ লেগে না থাকে।
- তারপর বীজগুলোকে একটি পরিষ্কার কাপড়ে ৩ থেকে ৪ দিন রোদে শুকিয়ে নিন।
- এবার বিজের বাইরের অংশটিকে ভেঙ্গে ভেতরের সবুজ অংশটিকে রোদে আরও কয়েকদিন ধরে শুকিয়ে নিন।
- শুকনো বীজগুলোকে এবার মিক্সিতে ভালো করে গুড়ো করুন।
- এবার বীজ গুড়োগুলো ভালো করে চালুনি দিয়ে চেলে নিন।
- তারপর বীজের গুড়ো একটি পরিষ্কার বায়ুরোধক বয়ামে রেখে দিন।
- তৈরী হয়ে গেল জামের বীজের গুড়া। এটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে ১চা চামচ পরিমান বীজের গুড়া নিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন।
জাম খাওয়ার নিয়ম | জাম খাওয়ার উপযুক্ত সময় | জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- জাম বা যেকোন ফল রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২-৩ ঘন্টা পূর্বে খাওয়া উচিত।
- পেট ভরে ভাত বা অন্য কিছু খাওয়ার পরে ফল খাওয়া উচিত না। খাওয়ার অন্তত ১ ঘন্টা পর ফল খাওয়া উচিত।
- জামে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ফাইবারসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে তাই সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত ফল খেতে হবে।
- ডায়বেটিস রোগীদের জন্য জাম একটি খুবই উপকারী ফল। তাই ডায়বেটিস রোগীদের বেশী করে জাম খেতে হবে।
- জাম বা যেকোন ফল দুপুরে না খেয়ে সকালে বা বিকালে খাওয়া ভালো।
জাম গাছের ছালের উপকারিতা | জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- শরীরের কোথাও ক্ষত হয়েছে কিন্তু সেই ক্ষত তাড়াতাড়ি পুরে উঠছে না, তাহলে সেখানে জামের ছাল মিহি গুড়া করে ক্ষত স্থানে দিন। দেখবেন তাড়াতাড়ি ক্ষত পুরে গিয়ে ঘা সেরে উঠেছে।
- যদি কারও রক্ত পায়খানা হয় তাহলে জাম গাছের ছাল রস করে ১-২ চামচ ছাগলের দুধে মিশিয়ে খেতে দিন, তাহলেই দেখবেন রক্ত পায়খানা বন্ধ হয়ে গেছে।
- যেসকল বাচ্চাদের পেটের সমস্যা আছে। পেটের সমস্যার জন্য শরীর ভালো থাকে না তাদের জন্য ৫ থেকে ৬ গ্রেণ মাত্রায় জাম গাছের ছাল গুড়া করে ৫ থেকে ১০ ফোঁটা গাওয়া ঘি ও অল্প পরিমান চিনি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়ান দেখবেন বাচ্চার শরীর স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে।
- যাদের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে, তারা জাম গাছের ছাল গুড়া করে সেটা দিয়ে দাঁত মাজলে উপকার পাবেন। কিন্তু এতে দাঁতে ছোপ পড়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ২-১ দিন পর পর মাজলে এই দাগ হবে না। অনেকে বৃদ্ধ বৈদ্য এর সঙ্গে পাতার গুড়াও সমান ভাবে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url