ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম? ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি
আপনি কি, ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম কিনা? ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি কি দেয়া উচিত তা জানতে চান? তাহলে এই পোস্ট টি পড়ুন। এই পোস্ট টি পড়লে আপনি জানতে পারবেন ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া ও লটারি কে কিভাবে দেখা হয় । ইসলামে জুয়া কাকে বলে তা জানতে পারবেন। জুয়া খেলা সম্পর্কে হাদিস এখানে জানতে পারবেন। এবং অনলাইনে জুয়া খেলার শাস্তি কি কি তা আপনি জানতে পারবেন
ইসলামে সব ধরনের জুয়া খেলা অবৈধ ,তাহলে ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি সে প্রশ্ন থাকতে পারে ।জুয়া খেলার সময় আপনি আগে থেকে ফলাফল জানতে পারবেন না। তাই বাজি ধরাও জুয়া খেলা এবং ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি এর উত্তর হচ্ছে "হ্যা"। আসুন , জুয়া ও বাজি সম্পর্কে একটু বিষদ জেনে নেই।
সুচীপত্রঃ-
- ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া ও লটারি
- ইসলাম এ জুয়া কাকে বলে
- ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি
- জুয়া খেলা সম্পর্কে হাদিস
- অনলাইনে জুয়া খেলার শাস্তি
ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া ও লটারিঃ-
ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া ও লটারি খুবই গর্হিত কাজ । আল কুরআনে জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু এবং শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। এগুলো থেকে দূরে থাকার আদেশ করা হয়েছে। মদ-জুয়ার মাধ্যমে পরস্পর শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়।এজন্য ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি রয়েছে।এর পাশাপাশি ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি তা জানানো হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে শয়তান মানুষকে নামাজ ও আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে।
ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি এ বিষয়ে তো স্পস্ট হলাম । বাজি ও জুয়া থেকে পাওয়া টাকা হারাম। হারাম ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে তা কবুল হয় না।
ইসলাম এ জুয়া কাকে বলেঃ-
জুয়া হলো এমন কাজ কর্ম যার লাভ বা ক্ষতি সম্পর্কে আপনি আগে থেকে জানেন না। আপনি সম্পূর্ণ নিঃস্ব হতে পারেন জুয়া থেকে, অথবা অনেক লাভ করতে পারেন, কিন্তু কোনটা যে হবে এটা আপনি আগে থেকে জানেন না।ইসলাম মানুষের ভালো চায়।কেউ যেনো একেবারে নিস্ব হয়ে গিয়ে তার পরিবারের ক্ষতি না করে তাই ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি বিধান রয়েছে। বাজি ,লটারি সবই জুয়ার মধ্যে পরে।
প্রচলিত অর্থে আমরা বিভিন্ন খেলায় টাকা দিয়ে বাজি ধরি এই কাজটাই হলো জুয়া। আর এ পর্যন্ত কোনো আলেম বা ফকিহ জুয়া খেলাকে হালাল লিখে নাই এ ক্ষেত্রতে কোনো সন্দেহ না থাকায় ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি তাতে মতভেদ নেই।
আরো পড়ুনঃ ইসলামের দৃষ্টিতে হ্যালোইন কি
ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তিঃ-
ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি তা আমরা এতক্ষণ জানলাম,এর পশাপাশি জুয়া খেলা হারাম। যে কোন হারাম কাজ করা বস্ত বড় গুনাহ এর কাজ। এতে মৃত্যুর পর জাহান্নাম এ পুড়তে হবে।
ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস গুলো পড়লে বুঝা যাবে। একটা দারেমির হাদিস মুটামুটি এ রকম , আবদুুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’ (দারেমি, হাদিস নং ৩৬৫৬)
জুয়া খেলা সম্পর্কে হাদিসঃ-
বিভিন্ন হাদিসে ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি সরুপ বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ লাত-উজ্জার( জাহেলী যুগের কিছু মূর্তির নাম) শপথ ইত্যাদি বললে, তবে সে যেন সঙ্গে সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। আর কেউ যদি অন্যকে প্রস্তাব দেয়, এসো আমরা জুয়া খেলি; সে যেন দান-সদকা করে। (বুখারি, হাদিস: ৪৮৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৪৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৫৪৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২০৯৬)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন। ’ (বায়হাকি, হাদিস: ৪৫০৩; মিশকাত, হাদিস: ৪৩০৪)। এই হাদিস গুলো মূলত ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি বর্ণনা করে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না। ’ (দারেমি, হাদিস: ৩৬৫৩; মিশকাত, হাদিস: ৩৪৮৬)।এটি থেকেও বোঝা যায় ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি।এটি হলো পরকালে ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি।
ইসলাম এ জুয়া খেলা কি হারাম তা জানতে কিছু হাদিস জেনে নেওয়া যাক। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) যখন (মক্কা) এলেন, তখন কাবাঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানান। কেননা কাবা ঘরের ভেতরে মূর্তি ছিল। তিনি নির্দেশ দিলে মূর্তিগুলো বের করে ফেলা হয়। (এক পর্যায়ে) ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর প্রতিকৃতি বের করে আনা হয়। উভয় প্রতিকৃতির হাতে জুয়া খেলার তীর ছিল। তখন নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ! ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তারা জানে যে, [ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)] তীর দিয়ে অংশ নির্ধারণের ভাগ্য পরীক্ষা কখনো করেননি। এরপর নবী (সা.) কাবাঘরে প্রবেশ করেন এবং ঘরের চারদিকে তাকবির বলেন। তবে ঘরের ভেতরে সালাত আদায় করেননি। (বুখারি, হাদিস: ১৫০৩)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘তীর নিক্ষেপে বাজিধরা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। ’ (ফাতহুল কাদির, হাদিস: ১২৭২)। সুতরাং বাজি ধরাও জুয়া খেলা আর ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি এ বিষয়ে সুনিশ্চিত।
ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি তা সম্পর্কে ফুদাইল ইবনে মুসলিম (রহ.) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘আলী (রা.) বাবুল কাসর থেকে বের হলে তিনি দাবা-পাশা খেলোয়াড়দের দেখতে পান। তিনি তাদের কাছে গিয়ে তাদের ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আটক রাখেন। তাদের মধ্যে কতককে তিনি দুপুর পর্যন্ত আটক রাখেন। (বর্ণনাকারী বলেন, যারা অর্থের আদান-প্রদানের ভিত্তিতে খেলেছিল, তিনি তাদের রাত পর্যন্ত আটক রাখেন, আর যারা এমনি খেলেছিল তাদেরকে দুপুর পর্যন্ত আটক রাখেন। ) তিনি নির্দেশ দিতেন, লোকজন যেন তাদের সালাম না দেয়। ’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ১২৮০)।এরুপ বহু জুয়া খেলা সম্পর্কে হাদিস বর্ণীত হয়েছে। এগুলো ছিল ঐ সময়ে ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি।
অনলাইনে জুয়া খেলার শাস্তিঃ-
বাংলাদেশে এখনো অনলাইনে জুয়া খেলার শাস্তি নেই ।এক্ষেত্রে নতুন আইন করার প্রস্তুতি চলছে। তবে শারীরিকভাবে নিজে উপস্থিত থেকে জুয়া খেলার শাস্তি রয়েছে। আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা চাইলে বর্তমান আইন ই বিভিন্নভাবে অনলাইন এ আইন জুয়া খেলা লোকদের কে প্রয়োগ করতে পারে। এক্ষত্রে হয়রানির পরিমাণ শাস্তির পরিমাণ থেকে অনেক বেশি হতে পারে। পাশাপাশি ধর্মীয় বোধ থেকে ইসলামে বাজি ধরা কি হারাম নাকি এ ব্যাপারে সন্দেহ না থাকায়, এ থেকে বিরত থাকা উচিত।
বাংলাদেশে জুয়া খেলার শাস্তি যোগ্য অপরাধ ও অবৈধ। ১৮৬৭ সালে প্রণীত বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন দেশে এখনো প্রযোজ্য। আইন অনুযায়ী, কোনো ঘর-বাড়ি, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।এই আইন অনুযায়ী অফলাইনে বা অনলাইনে জুয়া খেলার শাস্তি দেয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ- "ন" দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম সমূহ
নিজে উপস্থিত থেকে বা অনলাইনে জুয়া খেলার শাস্তি হিসেবে বলা যায় যে, তাস-পাশা, কাউন্টার বা যেকোনো জুয়াড়ি মেশিনসহ কোনো ব্যক্তিকে জুয়া খেলতে বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে, তাকে একমাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url