ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা জেনে নিন
এখন চলছে পবিত্র রমজান মাস। এই সময় অনেকেরই মনে একটি প্রশ্ন জাগে আর সেটি হল ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি? আজ আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি এই প্রশ্নেরই উত্তর জানব।
চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি?
পেজ সূচিপত্রঃ ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি
ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি?
হাদিসে উল্লেখিত আছে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ যেহেতু স্বপ্ন আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে তাই ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
কিন্তু অবশ্যই ফরজ গোসল করতে হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত নং-২৮৬, ফতোয়ায়ে শামি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৬৬)
কোন কোন কারণে রোজা ভাঙ্গে না?
অনেক কারন আছে যেগুলো করলে আমারা রোজা ভেঙ্গে গেছে বলে মনে করি এবং পানাহার করে ফেলি, অথচ সেসব কারণ রোজা ভঙ্গের কারণ না। এই কারণ গুলো কি কি চলুন দেখে নেওয়া যাক।
- ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভাঙ্গে না,
- অনিচ্ছাকৃতভাবে কানে পানি প্রবেশ করলে,
- বমি আসার পর আবার নিজে নিজেই ফিরে গেলে,
- অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর ধুলা-বালি, ধোঁয়া অথবা মশা-মাছি প্রবেশ করলে,
- চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করলে,
- নিজ মুখের থুথু, কফ ইত্যাদি গলাধঃকরণ করলে,
- ঠাণ্ডার জন্য গোসল করলে,
- ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে,
- ভুলক্রমে পানাহার করলে,
- সুগন্ধি ব্যবহার করলে,
- শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করলে,
- মেয়েদের দিকে তাকানোর কারণে কোনো কসরত ছাড়া বীর্যপাত হলে,
- স্ত্রীকে চুম্বন করলে, যদি বীর্যপাত না হয় (রোজা না ভাঙলেও এটা রোজার উদ্দেশ্যের পরিপন্থী)।
পবিত্রতা কি? | ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি
পবিত্রতা হল খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন- "যদি তোমরা অপবিত্র থাক তাহলে গোসলের মাধ্যমে নিজেদের শরীর পবিত্র করে নাও। (সূরা মায়েদা আয়াতঃ ৬)
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ কি?
নিচে গোসল ফরজ হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলঃ
- সহবাসের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই গোসল করা ফরজ।
- ঋতুস্রাব বন্ধের পর মেয়েদের গোসল করা ফরজ।
- ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত হলে গোসল করা ফরজ।
- স্বপ্নদোষ হলে গোসল করা ফরজ।
(হেদায়া : ১/৪৫; রদ্দুল মুহতার : ১/১৬৫)
অপবিত্র অবস্থায় কি কি করা যাবে? | ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে- মদিনার কোন এক পথে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে তার দেখা হয়েছিল। কিন্তু তখন তিনি জুনুবী অবস্থায় ছিলেন তাই তিনি নিজেকে নাপাক মনে করে সেখান থেকে সরে যান।
আরও পড়ুনঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম এর অর্থ কি
পরে তিনি গোসল করে পুনরায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে দেখা করেন, তখন মহানবী (সাঃ) জিজ্ঞাসা করেন- আবু হুরায়রা আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? তখন আমি বললাম আমি অপবিত্র অবস্থায় ছিলাম তাই আপনার সাথে বসা সমীচীন মনে করিনি। তখন নবীজী (সাঃ) বললেন, সুবাহানাল্লাহ! মুমিন নাপাক থকতে পারে না (বুখারি : ২৭৯)।
তাই গোসল ফরজ হলেও ব্যক্তি বিশেষে সে নাপাক না। কিন্তু বিধানে কিছু নিষেধ আছে। চলুন দেখে নেই অপবিত্র অবস্থায় কি কি করা যাবে?
- ঘরের কাজ করা যাবে,
- দোয়া-দূরূদ-অজিফা পাঠ করা যাবে,
- মনে মনে জিকির-আজকার করা যাবে,
- পানাহার করা যাবে।
অপবিত্র অবস্থায় কি কি করা যাবে না? |ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি
অপবিত্র অবস্থায় যা যা করা যাবে না তা হলঃ
- নামাজ পড়া যাবে না,
- কোরআন তেলাওয়াত করা ও স্পর্শ করা যাবে না,
- তাওয়াফ করা যাবে না,
- মসজিদে যাওয়া বা প্রবেশ করা যাবে না।
স্বপ্নদোষ হলে ফরজ গোসল করার নিয়ম
আমরা জানি ফরজ গোসলের ৩ টি ফরজ নিয়ম রয়েছে। যার একটিও বাদ দিলে ফরজ গোসল আদায় করা হবে না। নিয়ম ৩টি হলঃ
১। গড়গড়াসহ কুলি করা,
২। নাকে পানি দেওয়া (নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌছানো),
৩। সমস্ত শরীরে পানি ঢালা।
ফরজ গোসলের নিয়ম | ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি
ফরজ গোসলের জন্য মনে মনে নিয়্যাত করে নিতে হবে (মুখে কোন আরবি শব্দ উচ্চারণ করে নিয়্যাত করা বিদ’আত)। দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতে হবে। তারপর ডানহাতে পানি নিয়ে বামহাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধৌত করতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধুয়ে নিতে হবে।
এবার বামহাতকে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এবার সঠিকভাবে ওজু করে নিতে হবে, তবে দুই পা ধৌত করা যাবে না। ওজু শেষ হলে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হবে।
এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ডানে ৩ বার তারপরে বামে ৩ বার পানি ঢেলে ভালোভাবে শরীর ধুতে হবে, যেন শরীরের কোন অংশ বা লোম পর্যন্ত শুকনো না থাকে। (নাভি, বগল ও লজ্জাস্থান পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে)। সবার শেষে একটু সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ওজুর মতো করে ধুতে হবে।
বিঃ দ্রঃ পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজাতে হবে। এবং এই নিয়মে গোসল করলে যদি ওজু না ভাঙ্গে তাহলে আর নতুন করে আর ওজু করার দরকার নাই।
শেষ কথাঃ ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি
বন্ধুরা, আজ আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের এই পোস্টে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি,আমাদের এই পোস্টটি আপানাদের ভালো লাগবে। এবং আপনারা এই ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কি পোস্টটি দ্বারা উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url