নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না জেনে নিন
আপনারা অনেকেই নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না এ বিষয়ে জানতে চান। যারা এ বিষয়ে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্টটি। আজকে আমরা আলোচনা করব নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না এসব বিষয়ে।
তাহলে চলুন জেনে নেই, নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না এ সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
- নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
- ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
- যেসব কারণে গোসল ফরয হয়
- গোসলের ফরজ তিনটি
- ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
- ফরজ গোসল ছাড়া রোজা রাখা যাবে কি
- নাপাক অবস্থায় সেহরি খেলে রোজা হবে কি
- নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না
- শেষ কথাঃ নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
রমজান মাসে স্বামী স্ত্রী সহবাস বা স্বপ্নদোষের কারনে গোসল করা ফরজ হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় গোসল করার জন্য সময় পাইনা। যার কারণে সেহরির সময় হয়ে যায়। এমন অবস্থায় গোসল না করে সেহরি খেয়ে রোজা রাখলে কি ওই দিনের রোজা শুদ্ধ হবে না? এখন আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা করব। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অপবিত্র অবস্থায় সুবহে সাদিক পার করেছিলেন। তারপরে গোসল করে তিনি রোজা রাখতেন।(বুখারীঃ ১৮২৯, মুসলিমঃ ১১০৯)
আরো পড়ুনঃ রমজানে কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত জেনে নিন
ফিক্বহ গণের মতে, গোসল ফরজ হবার পরেও গোসল না করে সেহরি খেলে রোজা রাখলে রোজা সহিহ হবে। তবে ফজরের ওয়াক্ত থাকা অবস্থায় গোসল করে নামাজ আদায় করতে হবে। সবসময়ই এটা জেনে রাখতে হবে যে, গোসল ফরজ হওয়ার পর ও বিনা কারণে গোসল না করে অপবিত্র অবস্থায় একটা ভক্ত নামাজের সময় পার হয়ে যাওয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ।(মুসলিম হাদীস নং ২৫৯২, বাদায়ে ১/১৫১) অর্থাৎ নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি বুঝতে পেরেছেন।
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
আল্লাহ তাআলার বিধান বা হুকুমের মধ্যে অন্যতম বিধান বা হুকুম হচ্ছে গোসল। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসল কারো উপর ফরজ হলে, সঠিকভাবে সে যদি গোসল করতে না পারে তাহলে তার নামাজ কখনোই হবে না। ফরজ গোসলের ঠিক নিয়ম না জানোয়ার জন্য হাজারো মুসলিম ভাই বোনের নামাজ রোজা সাথে অন্যান্য আমল গুলো ও কবুল হয়না।
যা ঈমানের জন্য ধ্বংসাত্মক(নাউজুবিল্লাহ)। আপনি যদি এক সাগর পানি দিয়ে নিয়ম না জেনে গোসল করেন, তারপরেও আপনার ফরজ গোসল আদায় করা হবে না। অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী সুন্নাহ (তরিকা) মেনে ফরজ গোসল করতে হবে। নিচে ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি গোসলের সুন্নত ও ফরজ সমূহ তথ্যসূত্র আলোচনা করা হলো।
যেসব কারণে গোসল ফরয হয়
- স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনা বীর্যপাত হলে। তবে মজি বা কাম রস বের হলে গোসল ফরজ হয় না।
- ইসলাম গ্রহণ করলে (নব মুসলিম)
- স্ত্রী সহবাস করলে(সহবাসে বীর্যপাত হোক বা নাই হোক)
- মেয়েদের হায়েজ (মাসিক) বা নিফাঁস (প্রসব পরবর্তী স্রাব) শেষ হলে
গোসলের ফরজ তিনটি
- ভালো ভাবে কুলি করা। রোজা অবস্থায় শুধু কুলি করলেই হবে, গরগরা সহ কুলি করা যাবে না
- নাকের নরম স্থান পর্যন্ত একবার ফানি পৌঁছানো, তবে রোজা রাখা অবস্থায় শুধু নাকে পানি দিলেই হবে, নরম হাড় পর্যন্ত পানি দেয়া যাবে না
- সমস্ত শরীরে অন্তত একবার পানি পৌঁছে দেয়া, যেন কোন অংশ এক চুল পরিমাণ ও শুকনো না থাকে
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
- গোসল এর শুরুতে নিয়ত করতে হবে এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলতে হবে
- আলাদা আলাদা ভাবে দুই হাত ধুয়ে নিতে হবে
- শরীরের বা কাপড়ের যদি কোন স্থানে নাপাকি লেগে থাকে তাহলে তা প্রথমেই তিনবার ধুয়ে পবিত্র করে নিতে হবে
- নাপাকি লেগে থাক বা না থাক সর্ব অবস্থায় গুপ্তাঙ্গ ধুয়ে নিতে হবে, এরপর দুই হাতই ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে
- নামাজের মধ্যে ওযুর মতই ভালো ভাবে পূর্ণ রূপে ওযু করতে হবে, সে ক্ষেত্রে শুধু দুটো পা রাখলেও চলবে, যেটা গোসল করার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে গোসল করার জায়গায় পানি জমে থাকলে গোসল শেষ করে পা ধুতে হবে।
- তারপর মাথায় পানি ঢালতে হবে
- এরপর ডান কাঁধে পানি ঢালতে হবে
- তারপর বাম কাঁধে পানি ঢালতে হবে
- অতঃপর অবশিষ্ট শরীর ভিজিয়ে গোসল করতে হবে
- পুরো শরীরে এমনভাবে তিনবার পানি পৌঁছাতে হবে, যেন একটি পশমের গোড়া ও শুষ্ক না থাকে। তবে পুকুর বা নদী ইত্যাদিতে গোসলের ক্ষেত্রে পানিতে কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকলেই, তিনবার পানি ঢালার সুন্নাত আদায় হবে।
- সমস্ত শরীর হাত দিয়ে ঘষে মেজে ধুয়ে নিতে হবে
- মহিলাদের ক্ষেত্রে কোন অলংকার থাকলে যেমন(কানের দুল, নাকফুল, আংটি, চুরি) ইত্যাদির নাড়াচাড়া করে পানি সেখানে পৌঁছে দিতে হবে
- শরীরের যেসব অঙ্গগুলোতে সাধারণত পানি পৌঁছাতে চাই না, যেমন - কান, কনুই, আঙ্গুলের ফাঁক, বগলের নিচ, চোখের কিনারে, চুলের গোড়া ইত্যাদি অঙ্গ গুলো খেয়াল করে পানি পৌঁছে দিতে হবে। নখ পালিশ থাকলে সম্পূর্ণ না উঠানো পর্যন্ত অজু-গোসল হবে না।
- গোসলের ভেজা কাপড় গুলো তিনবার ধুয়ে তিনবার নিংড়াতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শবে কদরের রাতে স্ত্রী সহবাস করা যাবে কিনা জেনে নিন
এটাই হচ্ছে নাপাক অবস্থায় ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম। এইভাবে গোসল করলে এরপর যদি নামাজ পড়তে চাই তাহলে আলাদা করে আর ওযু করতে হবে না। যদি গোসল করার সময় অজু ভাঙ্গার কোন কারণ না হয়ে থাকে। গোসলের পর কাপড় বদলায় বা হাঁটুর ওপর উঠে যায়, তারপরেও ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা, এগুলো ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিকভাবে ফরজ গোসল করার এবং এসব বিষয়ে সকলের কাছে জ্ঞান পৌঁছে দেয়ার তৌফিক দান করুন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না।
ফরজ গোসল ছাড়া রোজা রাখা যাবে কি
আপনারা যারা নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না এসব নিয়ে চিন্তিত তাদের কোন চিন্তার কারণ নেই। কারণ আপনি নাপাক অবস্থায় রোজা রাখতে পারেন। প্রতিটা মানুষের জীবনে বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত গোসল ফরজ হয়ে যায়, হোক সেটা অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃতভাবে। এই ফরজ গোসল মাঝে মধ্যেই অনিচ্ছাকৃত ভাবে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি হয়ে যায়। তাই বলে এর সাথে রোজা রাখার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনি রোজা রাখতে পারবেন নাপাক অবস্থায় তেই।
আরো পড়ুনঃ রমজানে ওমরাহ করার ফজিলত
ফরজ গোসলের কোন সম্পর্ক রোজা বা সেহেরি সাথে নেই। কিন্তু আপনি সারাদিন ফরজ গোসল না করে নাপাক অবস্থায় থাকলেন, এটাতে আপনার সারাদিনের নামাজ কাযা হয়ে গেল। তখন আপনার রোজা মাক্রহ করা হবে এবং ফরজ গোসলের কারণে নামায কাযা করার জন্য আপনার কবিরা গুনাহ হবে। আশা করি তাহলে বুঝতে পেরেছেন যে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না।
নাপাক অবস্থায় সেহরি খেলে রোজা হবে কি
তাহলে বলি, নাপাক অবস্থায় যদি আপনি সেহরি খান তাহলে আপনার রোজা হবে, তবে নামাজের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই গোসল করে নিতে হবে। কেননা, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে ফরজ গোসল না করে একটা সালাত পার করে, তাহলে তার জন্য সাগিরা গুনহা লেখা হবে।
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না
ফরজ গোসল না করে আপনি রোজা রাখতে পারবেন, এটা সহীহ হবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ফরজ গোসল না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি নাপাক অবস্থায় থাকবেন। নাপাক অবস্থায় এমন অনেক কিছু কাজ আছে যেগুলো করা একদমই হারাম। চলুন তাহলে দেখে নেই কোন কাজগুলো নাপাক অবস্থায় করা যাবেনাঃ
- কোরআন শরীফ মোটেও স্পর্শ করা যাবে না
- কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে না
- মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না
- কাবা ঘর স্পর্শ করা যাবে না
শেষ কথাঃ নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না এ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোস্টটি পড়ুন। নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি এ বিষয়ে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না এ বিষয়ে জানতে হলে আমাদের পুরো আর্টিকেলটি ভালভাবে পড়ুন, আশা করি সব কিছু ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।
আজ আর নয়, নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না এ সম্পর্কে আপনার কোন কিছু যদি জানার থাকে, তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করছি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দিব। তাহলে আমাদের আজকের এই নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল আমাদের পোস্ট টি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url