OrdinaryITPostAd

রমজানে ওমরাহ করার ফজিলত - রোজার মাসে ওমরার ফজিলত কি

রমজান মাস আরবি বছরের নবম মাস। এই মাসে অনেক ফজিলত রয়েছে। এই মাসে যেমন রোজা করা ফরজ এবং রোজা করলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়, তেমনি এই মাসে ওমরাহ্‌ করলে হজ্জের সওয়াব পাওয়া যায়। রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত ও রমজান মাসে ওমরার ফজিলত কি সেই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

চলুন আর দেরি না করে রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত - রমজান মাসে ওমরার ফজিলত কি সেই সম্পর্কে জেনে নেই।

পেজ সূচিপত্রঃ রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত - রমজান মাসে ওমরার ফজিলত কি

রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত

পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ্‌ এর ফজিলত অপরিসীম। ওমরাহ্‌ বছরের যেকোন সময় পালন করা যায় কিন্তু হজ্জ করার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। শুধুমাত্র হজ্জ এর সময় অর্থাৎ, জিলহজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ওমরাহ্‌ পালন করা ঠিক নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন-
"রমজান মাসের একটি ওমরাহ্‌ একটি হজ্জের সমান"।
আল্লাহর রাসূল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও বলেছেন যে- "এক ওমরার পর আরেক ওমরাহ্‌র মধ্যবর্তী সময় গুনাহের জন্য কাফফারাস্বরূপ।" আর জান্নাতই হল একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন- মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র হজ্জ থেকে এসে উম্মে সিনান আনসারিকে জিজ্ঞাসা করলেন যে- কেন তুমি হজ্জে যাওনি? তখন উম্মে সিনান আনসারি বলেছেন- তার স্বামীর কারণে তার চাষাবাদের জন্য ২টি উট ছিল একটি দিয়ে সে হজ্জ আদায় করেছেন এবং অপরটি দিয়ে জমি চাষ করছেন। তখন মহানবী সয্রত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় রমজান মাসের ওমরাহ্‌ আমার সাথে বড় হজ্জ করার সমান (বোখারী শরিফ-১৭৬৪, মুসলিম শরিফ-১২৫৬)।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন- রমজান আসলে তোমরা ওমরাহ্‌ হজ্জ পালন কর। কারণ রমজান মাসের ওমরাহ্‌ হজ্জ ফরজ হজ্জ পালনের সমান সওয়াব।

রমজান মাসের রোজা হল হজ্জের পূর্বাভাস। যদি আমরা ফরজ হজ্জকে ওমরাহ্‌ এর সাথে তুলনা করি তাহলে, ফরজ হজ্জকে হজে আকবর অর্থাৎ বড় হজ্জ ও ওমরাহ্‌কে হজে আসগর অর্থাৎ ছোট হজ্জ বলে।

ফরজ হজের আগে কি ওমরাহ্‌ করা যাবে? | রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত

একটি ভূল প্রথা আমাদের সমাজে এখনও প্রচলিত আছে তা হল ফরজ হজ্জের আগে ওমরাহ্‌ পালন করা যায় না। কিন্তু আমাদের এই ধারনাটি সম্পূর্ন ভূল। আমাদের এই ধারনাটি দূর করতে ইমাম বোখারি (রাঃ) সহিহ বোখারির একটি অধ্যায়ে হাদিস এর মাধ্যমে প্রমান করেছেন- "হজ্জের আগেও ওমরাহ্‌ করা যায়।" কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ফরজ হজ্জের আগে ওমরাহ্‌ হজ্জ পালন করেছেন, এতে কোন সমস্যা নাই। (সহিহ বোখারি-১৭৭৪)

ওমরাহ্‌ হজ্জের ফরজ ও ওয়াজিব সমূহ কি? | রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত

ওমরাহ্‌ হজ্জের ২টি ফরজ ও ২টি ওয়াজিব রয়েছে। ওমরার ফরজ ২টি হলঃ (১) ইহরাম বাঁধা ও (২) তাওয়াফ করা। ওয়াজিব ২টি হলঃ (১) সাফা ও মারওয়া পাহারের মাঝে সাঈ করা (২) মাথা মুণ্ডন করা।

ওমরাহ্‌ যাওয়ার সঠিক সময় কোনটি? | রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত

ওমরাহ্‌ হজ্জে যাওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনি বছরের যেকোন সময় ওমরাহ্‌ পালন করতে যেতে পারেন। কিন্তু জিলহজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই ৫ দিন ওমরাহ্‌ পালন করা ঠিক নয়।
আরবি বছরের রমজান ও শাওয়াল মাসের ওমরাহ্‌ পালন করার জন্য একদম সঠিক সময় হিসেবে ধরা হয়। কারণ এই সময় ওমরাহ্‌ পালন করলে ফরজ হজ্জের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) কতবার ওমরাহ্‌ হজ্জ পালন করেছিলেন?

রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) কতবার ওমরাহ্‌ হজ্জ পালন করেছিলেন সেই সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস ও সীরাতের গ্রন্থসমূহে বিভিন্নভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সহিহ বোখারিতে এই সম্পর্কে ইমাম বোখারি (রাঃ) একটি অধ্যায়ে রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) কতবার ওমরাহ্‌ হজ্জ পালন করেছিলেন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

হাদিস ও সীরাত কিতাবে দেওয়া আছে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মোট ৪ বার ওমরাহ্‌ হজ্জ আদায় করেছিলেন। ৪বার হলঃ
    ১মঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রথমবার ওমরাহ্‌ করেছিলেন হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়। এটি মহানবী (সাঃ) এর মদিনা আসার পর ৬ষ্ঠ হিজরির ঘটনা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একদিন স্বপ্নে দেখেন তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বায়তুল্লাহে হজ্জ পালন করছেন। স্বপ্নটি দেখার পর তিনি হজ্জ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন। মহানবী (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের এক বিশাল জামায়াত নিয়ে হুদায়বিয়ার নামক স্থানে ওমরাহ্‌ আদায়ের উদ্দেশ্যে পৌছালে সেখানে মক্কার মুশরিক দ্বারা বাঁধা প্রাপ্ত হন। এবং সেখানেই ঐতিহাসিক হুদায়বিয়া সন্ধি করা হয়। এবং সেই সন্ধির শর্ত মোতাবেক সেইবার মহানবী (সাঃ) এর ওমরাহ্‌ আসম্পন্ন হয়। তিনি ওমরাহ্‌ না করেই মদিনা ফিরে আসেন।

    ২য়ঃ পবিত্র আল কোরআনে বর্ণিত আছে- ‘আর তোমরা আল্লাহ তায়ালার জন্য হজ ও ওমরা পরিপূর্ণ কর।’ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার আমলের মাধ্যমে প্রমান করেছেন। অর্থাৎ ওমরাহ হজ্জ শুরু করার পর যদি কোনো কারণে তা সম্পন্ন না হয় তাহলে পরবর্তীতে তা সম্পূর্ন করতে হবে, যাকে শরয়ি পরিভাষায় ‘কাযা করা’ বলা হয়। যখন হুদায়বিয়ার সন্ধির কারণে মহানবী (সাঃ) এর প্রথম হজ্জ বাঁধা প্রাপ্ত হন। এবং সপ্তম হিজরিতে দ্বিতীয়বার ওমরাহ্‌ কাযা আদায় করেন।

    ৩য়ঃ অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর হুনাইনের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং রাসূন মোহাম্মদ (সাঃ) সেই যুদ্ধের উপস্থিত ছিলেন। রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) সেখান থেকে মদিনায় ফিরে আসার সময় ‘জির্আরানা’ নামক স্থানে ইহরাম বাঁধেন ও ওমরাহ্‌ আদায় করেন।

    ৪র্থঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দশম হিজরিতে বিদায় হজ্জ করেন। এবং একই সাথে নবী করিম (সাঃ) কিরান হজ্জ ও পালন করেন। হজ্জ ও ওমরাহ্‌ একসাথে পালন করাকে কিরান হজ্জ বলে।

ওমরাহ্‌ পালন করতে ভিসার জন্য কি লাগবে? | রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত

আপনি যদি ওমরাহ্‌ হজ্জ পালন করতে চান, তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন যা ছাড়া আপনি ওমরাহ্‌ পালন করতে যেতে পারবেন না তা হল ভিসা ও পাসপোর্ট। আর তার জন্য আপনাকে অবশ্যই ভিসা তৈরী করতে হবে। ওমরাহ্‌ এর জন্য ভিসা তৈরী করতে যা যা লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ
  • ৬ মাসের মেয়াদ সহ অরজিনাল পাসপোর্ট থাকতে হবে,
  • অরজিনাল জাতীয় পরিচয়পত্র,
  • বাচ্চাদের জন্য জন্মনিবন্ধন,
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড সহ),
  • ডাবল ডোজ করনার টিকার সনদপত্র,
  • একা ভ্রমণকারী মহিলাদের জন্য মারহাম বা পুরুষের অনুমতিপত্র,
  • বিবাহিত কাপলদের জন্য বিবাহের সনদপত্র।

শেষ কথাঃ রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত - রমজান মাসে ওমরার ফজিলত কি

বন্ধুরা, আজ আমরা রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত - রমজান মাসে ওমরার ফজিলত কি তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের এই রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত - রমজান মাসে ওমরার ফজিলত কি পোস্টটিতে ওমরাহ্‌ হজ্জ সম্পর্কিত সকল তথ্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, আমাদের এই রমজানে ওমরাহ্‌ করার ফজিলত - রমজান মাসে ওমরার ফজিলত কি পোস্টটি দ্বারা আপনারা উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url