OrdinaryITPostAd

স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২২ - স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা

আপনি কি স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা করতে চান? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। আজ আমরা আলোচনা করব স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা নিয়ে।

চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা।

আরও পড়ুনঃ ২৬শে মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয় কবে

পেজ সূচিপত্রঃ স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ - স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা

স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ (১৬৩০ শব্দ)

স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ (১৬৩০ শব্দে) একটি রচনা লিখা হলঃ

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত

ঘোষণার ধ্বনি–প্রতিধ্বনি তুলে,

নতুন নিশানা উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক

এই বাংলায়

তোমাকেই আসতে হবে।

— শামসুর রাহমান

স্বাধীনতার মূলমন্ত্র কবিতার এ অংশেই লুকিয়ে আছে। এমন একটি কবিতাই স্বাধীনতার বীজপত্র হিসেবে যথেষ্ঠ। মানুষের জন্মগত অধিকার তার স্বাধীনতা। ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা কামনা করে অনাহারী একজন গৃহহীন পথের লোকও। দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রা হল স্বাধীনতার অর্থ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে সার্বভৌম আত্মমর্যাদা। প্রত্যেক জাতির অমূল্য সম্পদ স্বাধীনতা। জাতীয় জীবনে এক গৌরবান্বিত, আনন্দঘন ও তাৎপর্যময় দিন হল সেদিন যে জাতি যেদিন স্বাধীনতা লাভ করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসঃ যে কোনো জাতির জন্যে স্বাধীনতা একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। আমাদের সামনে স্বর্ণ দুয়ার খুলে দেয় স্বাধীনতা। জাতীয় জীবনের স্বাধীনতা দিবস একটি স্মরণীয় দিন ও লাল তারিখ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ এ মার্চ আমাদের মুক্তিসংগ্রামের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ পৃথিবীর মানচিত্রে ২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ একটি দেশের নামের অন্তর্ভুক্তি ঘটে, এ দিনটিকে ঘিরে রচিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনের নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। জাতি হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদার বর্ণিল স্মারক স্বাধীনতা দিবস। আমরা বিশ্বের বুকে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ যে স্বাধীন সত্তার জানান দিয়েছিলাম, আজো তা মাথা উঁচু করে রেখেছে আমাদের। আমাদের জাতীয় জীবনে সে এক আশ্চর্য সময় এসেছিল। নক্ষত্রপুঞ্জের মতো অসংখ্য অবিস্মরণীয় ঘটনা কাহিনীর সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাধীনতার জন্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নতুন করে এ জাতির আবির্ভাব ঘটেছিল রক্তস্নাত দোঁআশ মাটি ভিত্তি করে। এই মহান মুক্তিযুদ্ধে যে যেভাবে পারে অংশগ্রহণ করেছিল। এ জাতি মিলিত হয়েছিল এক অবিস্মরণীয় সম্মিলনের ঐকতানে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐকতানে সিম্ফনিতে মিলিত হয়েছিল সবাই। এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল লাখো প্রাণের বিনিময়ে। আমরা ভুলি নি — ভুলিনি শহিদদের মহান আত্মত্যাগ, ভুলি নি সেই বীরত্ব গাঁথা।

অন্যান্য ঘটনাঃ বিশ্বের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে একটি আদর্শ–উজ্জ্বল দিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। জন্মভূমির জন্য এমনভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় নি কোনো জাতিকেই। স্বাধীনতার মহান পতাকা এদেশের সুজলা – সুফলা – শস্য – শ্যামল ভূমিতে উঠাতে সক্ষম হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন দিয়ে, অর্থ দিয়ে, সম্পদ দিয়ে, সম্ভ্রম বিলিয়ে দিয়ে। এজন্যে অস্ত্র সজ্জিত এক শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষকে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তারা সেই অকুতোভয় সংগ্রামে জয়ী হয়েছে অবশেষে। ফলে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ— ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ আমরা লাভ করেছি।

স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিঃ মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ব্রিটিশ — পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয় ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে। তখন পূর্ব পাকিস্তান নাম ছিল এই স্বাধীন বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল এটি। তাদের সব ধরনের দমন – নিপীড়ন, অন্যায় – অত্যাচার শাষন – শোষনের অবসান ঘটবে যা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু অবসান হয়নি শোষণ ও বঞ্চণার। পাকিস্তানি শাসকচক্র এ অঞ্চলে তাদের তাবেদারদের মাধ্যমে অত্যাচারের স্টিমরোলার পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরুতে চালিয়েছিল।এদেশের মানুষ শোষণ – নিপীড়ন – নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। তখন পাকিস্তানি শাসকচক্রের মুখোশ এদেশের মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়েছিল। বাঙালির মনে তখন থেকেই স্বাধীনতার চেতনা সঞ্চায়িত হতে থাকে।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠন প্রক্রিয়ার বিপক্ষে আমাদের ভাষা – সাংস্কৃতিক – ভৌগলিক অবস্থান সবকিছু। আমাদের ভাষার ওপর পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুতেই আঘাত আসে। পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে তৎকালীন শাসকচক্র উর্দুকে জোর করে ঘোষণা করলে এদেশের ছাত্র সমাজ এবং সাধারন মানুষ প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । একটু একটু করে ভাষার জন্যে সঞ্চারিত হওয়া আন্দোলন ১৯৪৭ সাল থেকে আস্তে আস্তে বেগবান হয়ে ১৯৫২ সালে চূড়ান্ত রূপ নেয়। এদেশের মানুষ রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে বীজ প্রোথিত করেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহিদেরা তারই স্মারক। বাঙালির সর্বোত্তম প্রাপ্তি মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে — বাংলা ভাষাভাষী মানুষের স্বাধীন আবাসভূমি বাংলাদেশ।

আরও পড়ুনঃ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবেদন আমন্ত্রণ পত্র

স্বাধীনতা দিবস ও বিভিন্ন আন্দোলনঃ স্বাধীনতা একটি শব্দ হলেও তা কখনোই একক কোনো দিবস বা কার্যের মাধ্যমে অর্জিত হয় না। স্বাধীনতা পেতে হলে বা অর্জন করতে অনেক ত্যাগ অনেক আত্মহুতি অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। একদিনে আসে নি বাংলাদেশের স্বাধীনতা। অথবা কোনো একক প্রচেষ্টার বিনিময়ে অর্জিত হয়নি। আজকের স্বাধীনতা বিভিন্ন সময়ে ঘটা বিভিন্ন দমন নিপীড়ন ও শোষণ বঞ্চনার প্রস্ফুট বিস্ফোরণের ফল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনেরই অংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের পশ্চাতে রয়েছে। বারবার চেষ্টা করেও এদেশের মানুষকে দমন করতে পারে নি স্বৈরাচারী পাকিস্তান শাসক। এদেশের মানুষ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কে ভোট দিয়েছিল, সরকার গঠন করতে পারে নি এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পরেও। পাকিস্তানি শাসকচক্র নির্বাচনে জয়ের পরেও সংসদে বসতে দেয়নি। তারা গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাশীল হয়নি। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করেছিল স্বৈরাচারী পাকিস্তান শাসকচক্র। ফলে এদেশের মানুষ ক্ষমতায় যেতে পারে নি। তারা প্রতিবাদে গর্জে উঠলো। এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাল, নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকিস্তানি হায়েনারা। একের পর এক বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞ রচনা করতে থাকলো। নিজেদের মুক্তির আন্দোলনে বাংলাদেশের মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়ল, মহান মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল।

স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসঃ পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ অন্ধকার রাত্রিতে নিরস্ত্র অবস্থায় অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচারে চালায় হত্যাযজ্ঞ। ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে ২৫ এ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। যার যা আছে তাই নিয়ে ২৬ এ মার্চ সর্বত্র শত্রুর মোকাবিলা শুরু হয়। আত্মগোপন করে যে যেভাবে পারেন সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে একত্র হন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও নেতৃবৃন্দ। যার যার অঞ্চলে আঞ্চলিক কমান্ড তৈরি করে গ্রামে – গঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, কৃষক, সৈনিক, পুলিশ, আনসার সবাই মিলে বিক্ষিপ্তভাবে শত্রুর ওপর আক্রমন চালাতে থাকে। গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে কতিপয় বিবেকহীন বিশ্বাসঘাতক আলবদর, রাজাকার, আল — শামস ছাড়া। চট্টগ্রামের স্থানীয় জননেতা আবদুল হান্নান ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হতে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। সম্পূর্ণ বিক্ষিপ্ত ও অসংগঠিত অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ ২—৩ মাস পর্যন্ত চলতে থাকে।

মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ সাল রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার নেতৃত্ব দেয় এ সরকার।

দেশের সমগ্র সীমান্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প এবং শরণার্থী ক্যাম্প গড়ে উঠতে থাকে আশ্রয় গ্রহণকারী রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীদের উদ্যোগে। ভারত সরকার প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা প্রদান করা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের গতিবিধি ও পরিস্থিতি চার পাঁচ মাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের পর। প্রবাসী সরকারের কার্যক্রম সঙ্গে সঙ্গে বৈপ্লবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ দিকে পাক হানাদার বাহিনীর ওপর চলে প্রচণ্ড গেরিলা আক্রমণ।

সমগ্র বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার জন্য জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এগারটি সেক্টরে বিভক্ত করে নিয়োগ দেওয়া হয় সেক্টর কমান্ডারদের। এতে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত ও তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। এই যুদ্ধে উৎসাহিত করতে থাকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিপ্লবী অনুষ্ঠান ও রণসংগীত মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশবাসীকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রবাসী সরকার বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানায় এবং যোগাযোগ স্থাপন করে চলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে। এমনিভাবে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর নয় মাস যুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড স্বাধীনতা লাভ করে।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনঃ প্রতিবছর ২৬ মার্চ ভোরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি। এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত ও উজ্জীবিত করে এ দিনের অনুষ্ঠানমালা।

স্বাধীনতার চেতনা ও তাৎপর্যঃ এ দিনটির প্রধান তাৎপর্য হচ্ছে আমাদের জাতীয় জীবনে—  সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল লালিত মুক্তি ও সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্বর এ দিনটি। দারিদ্র্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে এই স্বাধীনতা যা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। এখনো অসংখ্য লোক অশিক্ষিা ও দারিদ্র্য কবলিত অবস্থায় রয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর পরও। বিঘ্নিত হচ্ছে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা। নৈতিক অবক্ষয় ও সমাজবিরোধী পথ বেছে নিচ্ছে বেকারত্বের জালে আবদ্ধ যুবক। আমরা এখনো সঠিকভাবে অর্থবহ করে তুলতে পারি নি আমাদের স্বাধীনতাকে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে  প্রতিষ্ঠিত করা।

পরিস্থিতি উত্তরণের উপায়ঃ যাতে কারো ব্যক্তিগত বা দলগত চোরাবালিতে পথ না হারায় অজস্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের সেই প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন এ কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। বিশ্বের দিকে দিকে আজ উৎকর্ষ সাধনের প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে আমাদেরও উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি করতে হবে। দেশ গড়ার কাজে আজ সমগ্র জাতির নতুন করে শপথ গ্রহণ প্রয়োজন। আত্মশক্তিকে বলীয়ান হয়ে উঠতে হবে সর্বপ্রকার স্বৈরতন্ত্র থেকে দেশকে মুক্ত করে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তবেই গড়ে উঠবে।

স্বাধীনতা বনাম অপশক্তিঃ স্বাধীনতা সংগ্রাম যে স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে শুরু হয়েছিল নানা কারণেই গত চার দশকেও সেই স্বপ্ন সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারে নি। স্বাধীনতার পর বার বার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী দেশি ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুব সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্বের হার, জনস্ফীতি, আইনশৃংখলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল্য লক্ষ্য বা চেতনাকে বিপন্ন করে চলছে। প্রশাসনের ভেতরে এবং বাহিরে স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী কার্যকলাপ বার বার সংঘটিত হয়েছে। প্রকৃত স্বাধীনপ্রিয় ও স্বাধীনতাকামী মানুষ তাদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ ও দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সংঘবদ্ধ প্রয়াস। এজন্য স্বাধীনতার প্রকৃত গৌরবগাথা আর আত্মত্যাগের সত্যিকার ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ও দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীর করণীয়ঃ বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতাকে জাতীয় জীবনে স্থিতিশীল করে রাখার শথপ নিয়ে দেশ ও জাতির জন্যে আমরা আমাদের কাজ করে যাব স্বাধীনতা দিবসে শপথ নিতে হবে। আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের চেতনাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। স্বাধীনতা দিবসের সত্যিকারের তাৎপর্য দেশে একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হব। দেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই আমাদের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, সংকট, অভাব, অনটন, অশিক্ষা, দারিদ্র্য দূর করে স্বাধীনতাপ্রাপ্তি সকল দিক থেকে অর্থবহ হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ভৌগোলিক স্বাধীনতা এলেও আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসে নি। স্বাধীনতা দিবসের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে অর্থনৈতিক মুক্তি আসলেই, তাই আমাদের সকলকে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে, জাতির কল্যাণের জন্যে একত্রে কাজ করে যেতে হবে।

উপসংহারঃ একজন মানুষের জন্মগত অধিকার স্বাধীনতা। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে অনেক রক্ত, ত্যাগ- তিতিক্ষার বিনিময়ে। এর জন্যে শহিদ হতে হয়েছে ৩০ লাখ মানুষকে,  ইজ্জত দিতে হয়েছে ২ লাখ মা-বোনকে। এখন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের যে কোনো মূল্যে এ স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তির পথে স্বাধীনতার চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্বপ্ন পূরণ হবে সুখী, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে পারলে।

স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ (৫০০ শব্দে)

স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ (৫০০ শব্দে) একটি রচনা লিখা হলঃ

ভূমিকাঃ বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। কিন্তু সুদীর্ঘ রক্তঝরা ইতিহাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রয়েছে । এ স্বাধীনতা এক সাগর রক্ত ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটঃ ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তান লাভ করে পাকিস্তানের একটি অংশ হিসেবে। কিন্তু দেশকে পাকিস্তানের একটি উপনিবেশে পরিণত করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাদের শাসন শোষণ ও বঞ্চনার মাধ্যমে। বিভিন্ন রকম ভাবে শোষণ করা শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের উপর। এবং আমাদের সংস্কৃতির উপর প্রথম আঘাত হানে। ভাষা আন্দোলন এর মধ্য দিয়ে ১৯৫২ সালে বাংলাদেশে মানুষ স্বাধিকার আন্দোলনে সোচ্চার হয়। ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সাল, তারপর অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষা আন্দোলন ৬২ সাল, ৬ দফা আন্দোলন ৬৬ সাল, গণঅভ্যুত্থান ৬৯ সাল, সর্বশেষ মহান মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণঃ পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে এদেশের নিরীহ মানুষের উপর গণহত্যা চালায় যার নাম ছিল "অপারেশন সার্চলাইট"। তারা তৎকালীন ঢাকার ইউপিআর সদরদপ্তরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন আবাসিক হলে ছাত্র দের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় ক্রসফায়ার করে আশেপাশে যাদের পায় তাদের ঘটনাস্থলে মেরে ফেলে। তারা পৃথিবীর নৃশংসতম গণহত্যা শুরু করে। এরপর বাড়ি থেকে বাঙালি বুদ্ধিজীবিদের ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। এদেশের নিরীহ মা বোনদের জোর করে ধর্ষণ করে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে। গেরিলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি তখন সেই আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে ভারতের মিত্রবাহিনী যোগ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে।

স্বাধীনতার ঘোষণাঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের আগে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। পরে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে  বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠনঃ মুজিবনগরে ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন, কারন বঙ্গবন্ধু সে সময় কারাগারে বন্দি ছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণেঃ মুক্তি বাহিনী ও ভারতের মিত্র বাহিনী যৌথভাবে ৪ ডিসেম্বর থেকে হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ৪ থেকে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে যৌথভাবে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিশ্চিত পরাজয় দেখে এদেশের জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় লাভ করে ।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও চূড়ান্ত বিজয়ঃ হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী ১৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢাকার সোহার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করে। ফলে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ।

উপসংহারঃ লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জন করেছে এই স্বাধীনতা। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে রক্ষা করব এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে। স্বাধীনতার বিপক্ষে সকল অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াবো । সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো সকলে মিলে একসাথে কাজ করে।

স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা

স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনার কথা বলতে গেলে ১৯৭১ সালের সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের কথায় সবার আগে মনে পড়ে। এতক্ষন আমরা স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা স্বাধীনতা দিবস নিয়ে আলোচনা করব। 

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাঙালি জাতির জন্য একটি গৌরবের দিন। জাতির জন্য স্বর্ণ দুয়ার খুলে যাওয়াই হল স্বাধীনতার মানে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জন্য শুভ বার্তা নিয়ে আসেন যখন দেখেন বাঙালি পাকিস্থানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তাঁতি, শ্রমিক, দিনমজুরসহ আরও অনেকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে তিনি তার মহামূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের মায়া না করে দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিবাহীনিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন আর বাঙ্গালিরা/মুক্তিবাহিনীরা সেই কাজ নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন।

১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র অবস্থায় অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচারে চালায় হত্যাযজ্ঞ। ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে ২৫ এ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। যার যা আছে তাই নিয়ে ২৬ এ মার্চ সর্বত্র শত্রুর মোকাবিলা শুরু করে। তারপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

আরও পড়ুনঃ স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন কে

শেষ কথাঃ স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ - স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা

বন্ধুরা আজ আমরা স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আমাদের এই পোস্টটে স্বাধীনতার রচনা ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আমাদের এই স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা ২০২৩ - স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।

আপনার জন্য এই ধরণের আরো কিছু পোস্ট

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url