বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় তার ১১ নিয়ম জেনে নিন
বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় জানুন। কোন কোন কাজে বিসমিল্লাহ বলতে হয় তার একটি তালিকা জেনে নিন। বিসমিল্লাহ অর্থ কি এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ব্যাখা কি তা জানুন।
বিসমিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যে সুক্ষ্ম একটি পার্থক্য রয়েছে যা আপনারা এই পোশটের মাধ্যমে জানতে পারবেন। এই পোস্টে আরো থাকবে বিসমিল্লাহ এর তাফসীর। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় এবং কোন কোন কাজের বিসমিল্লাহ পড়তে হয় তার একটি তালিকা।
পেজ সূচিপত্রঃ বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয়ঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ - বিসমিল্লাহ অর্থ কি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ কি যারা জানেন না তাঁদের জন্য উত্তর হলো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ হলো পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে। যখন এ কোনো ভালো কাজ অথবা শুভ কাজ শুরু করবেন তখনই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়বেন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ কি তা এতক্ষণে নিশ্চয় জেনে বুঝে গিয়েছেন আল্লাহ এর নাম নিয়ে যেকোনো কাজ করলে কাজটিতে বরকত আসবে।
বিসমিল্লাহ অর্থ কি সেটিও নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। বিসমিল্লাহ অর্থ কি তা জানার আগে জেনে নিন বিসমিল্লাহ এর গুরুত্ব। যেকোন কাজ এর শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে আল্লাহ আপনার কাজে মঙ্গল এবং বরকত এনে দিবে । এত বেশি তাৎপর্যপূর্নময়ী এই ছোট শব্দটি।
আরো পড়ুনঃ নাউযুবিল্লাহ শব্দের অর্থ কি
বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয়?
যেকোনো ভালো কাজের শুরতে বিসমিল্লাহ পড়তে হয়। বিসমিল্লাহ আবার যেকোন কাজের শুরতে পড়লে চলবেনা। কাজটি যেনো হালাল হয়ে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যদি হারাম কাজের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়েন তাহলে কোনো লাভ তো হবেনা বরং আল্লাহ নারাজ হবেন। তাহলে বিসমিল্লহা পড়ার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি কখন বিসমিল্লাহ পড়বেন।
বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় তা নিয়ে অনেক মতের বিরোধ দেখা যায়। অনেকে মনে করে বিসমিল্লাহ এবং বিসমিল্লহাইর রাহমানির রাহিম একই অর্থ ধারন করেন। আবার অনেকে ভেবে থাকেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো বিসমিল্লাহ। কিন্তু আসলে এই কথাটি শতভাগ যৌক্তিক না। কারণ হাদীসে অনেক জায়গায় উল্লেখ আছে কখন বিসমিল্লাহ পড়তে হয় আর কখন বিসমিল্লহাইর রাহমানির রাহিম পড়তে হয়।
আরো পড়ুনঃ তাবারাকাল্লাহু অর্থ কি
রাসূল (সঃ) যখন খাওয়া শুরু করতে তখন বিসমিল্লাহ পড়তেন। তিনি তার উম্মতগ্ণকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কখন বলতে হয়। তারপরে কেউ যদি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে ফেলেন তাতে খুব বেশি নাজায়েজ হবেনা কিন্তু তার প্রেও রাসূল ৯সঃ) এর নির্দেশ পালন করা যৌক্তিত বলে মনে করা হয়। এটা তো গেল বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় তার উত্তর। এখন প্রশ্ন হলো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কখন পড়তে হবে। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়তে হবে দুইটি ক্ষেত্রেঃ
- কোরয়ান শরীফ তিলওয়াত করার শুরতে
- যেকোনো কিছু যখন লিখতে শুরু করবেন সেটা চিঠি হোক অথবা পরীক্ষা খাতা হোক। শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পোরে লেখা শুরু করবেন।
বিসমিল্লাহ নিয়ে ইতিহাসঃ
প্রথম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোথায় ব্যবহৃত হয় তা জানার আগ্রহ থাকে অনেকের। আজকে আপনারা জানতে পারবেন প্রথম কোথায় কিভাবে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আয়াতটি ব্যবহৃত হয়। প্রথম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আয়াওতটি ব্যবহার করে হযরত সুলায়মান (আ.) । তিনি সাবা নগরীর রানি বিলকিসের নিকট চিঠি লেখার সময় এ আয়াতটি ব্যবহার করেছিলেন। পবিত্র কোরআন শরীফের সুরা নামল এ চিঠিটির কথা উল্লেখ রয়েছে। সূরা নামলের আয়াত ২৯-৩০ এ গেলে আপনারা দেখতে পারবেন।
শুরতে রাসুল (সা.) 'বিসমিকাল্লাহুম্মা' লিখতেন। অতঃপর সুরা হুদ এর ৪১তম আয়াতে 'বিসমিল্লাহি মাজরেহা' নাজিল হয়। এরপর থেকে তিনি শুধু 'বিসমিল্লাহ' লিখতে শুরু করেন। তারপর সুরা বনি ইসরাইলের ১০ নম্বর আয়াত এ 'কুলিদ্য়ুল্লাহা আওয়িদ্উর রাহমান' অবতীর্ণ হয়। তখন থেকে তিনি 'বিসমিল্লাহির রহমান' লিখতে শুরু করেন। এরপর আবার সুরা নামলের ৩০তম আয়াতে পুরো বিসমিল্লাহ নাজিল হয়। এরপর থেকে রাসূল (সঃ) পুরো 'বিসমিল্লাহ' লেখার নিয়ম চালু করেন। (রুহুল মাআনি ও আহকামুল কোরআন লিল জাস্সাস) ।আশা করি সবাই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর ইতিহাস বুঝতে পেরেছেন।
আরো পড়ুনঃ ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি
বিসমিল্লাহ এর বিকল্প ব্যবহার করা কি উচিত?
বর্তমানে এমন অনেকে রয়েছেন যারা বিসমিল্লাহ এর পরিবর্তে ৭৮৬ ব্যবহার করেন যা উচিত নয়। সাংখ্যিকভাবে মিল হলেও বিসমিল্লাহ পড়াতে যে নেকি পাওয়া যাবে তা ৭৮৬ পড়লে পাওয়া যাবেনা। আবার অনেকে বিসমি তাআলা ব্যবহার করেন যা ও একইভাবে উচিত নয়।
এছাড়া আরো নানাভাবে বিসমিল্লাহ এর নানা রকমের ব্যবহার দেখা যায় তা যা অনুচিত। যেমনঃ বিভিন্ন বক্তা যখন বক্তৃতা দিতে যায় তখন দেখবেন বক্তা বিসমিল্লহা বলে তার বক্তৃতা শুরু করছেন। কিন্তু ইসলামে কোথাও বলা নেই যে এরকম বক্তৃতার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা যাবে।
আবার অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক সঙ্গঠনের বিভিন্ন পোস্টারে দেখা যায় বিসমিল্লাহ লেখা থাকে। এগুলো পুরোপুরো ভাবে হাআম। কেননা সান্সগস্কৃতিক সব কিছুই ইসলামে হারাম। আর হারাম কোন কিছুর শুরুতে আল্লাহ এর নাম নেয়া উচিত নয়। এতে করে আল্লাহ নারাজ হন।
কোন কোন কাজে বিসমিল্লাহ বলতে হয় তার একটি তালিকা – বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয়?
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ কি এবং বিসমিল্লাহ অর্থ কি এতক্ষণে জেনে যাওয়ার পর এটা নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন বিসমিল্লাহ বললে এর ফলাফল কি হয়। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলার অর্থ হলো আমরা আল্লাহ এর কাছে সাহায্য কামনা করছি।
তো আল্লাহর সাহায্য কখন কামনা করব? যখন আমরা কোনো একটি ভালো কাজ করব তখন আমরা আল্লাহ এর মঙ্গল আশা করব। আর ভালো কাজে বান্দা যখন আল্লাহ এর নাম স্মরণ করবে আল্লাহ তখন বান্দার কাজে বরকত এনে দিবেন। কিন্তু আপনার কাজটিই যদি হয় ভালো কাজ না হয় তাহলে আল্লাহকে আপনাকে সাহায্য করবে? খারাপ কাজ করার আগে বিসমিল্লাহ বললেন আল্লাহ পছন্দই করেন না।
আপনি নিশ্চয় এতক্ষনে বুঝে গিয়েছেন কোন কাজ গুলো আল্লাহ এর অপছন্দের কাজ। যেকোণ ধরণের হারাম কাজের পূর্বে আপনি যদি বিসমিল্লাহ বলেন তখন কোনো লাভ হবেনা। কারণ কাজটি হারাম। আর সব ধরণের ভালো কাজে আপনি যখন বিসমিল্লাহ বলবেন তখন আল্লাহ আপনাকে সহায়তা করবে। এখন চলুন দেখে নিই কোন কোন কাজে বিসমিল্লাহ পড়বেনঃ
- খাওয়া শুরু করার পূর্বে
- স্বামী স্ত্রী সহবাসের পূর্বে
- টয়লেটে ডুকার আগ মূহুর্তে
- প্রানী জবাই করার পূর্বে
- শোওয়ার পূর্বে
- কোথায় যাত্রা করার পূর্বে
- চিঠি লেখার পূর্ব
- ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বে
- মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়
- যেকোনো সূরা পড়ার শুরুতে
- নৌ যানে যাত্রা শুরু করার পূর্বে
এসব বাদেও যেকোন হালাল কাজের পূর্বে সবসময় বিসমিল্লাহ পড়তে হয়। সব কাজের পূর্বে আল্লাহ এর নাম স্মরণ করে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর ফজিলতঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর ফজিলত রয়েছে অনেক। আপনারা যদি একটু খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন কোরআন শরীফের সূরা তাওবা ছাড়া বাকি সব গুলো সূরাতে ব্যবহার করা হয়েছে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম আয়াতটি। মূলত এই আয়াতটি ব্যবহার করা হয় একটি সূরা শেষ এবং নতুন একটি সূরা শুরু বোঝাতে।
এছাড়াও এটি একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আয়াত যা যেকোনো হালাল কাজের শুরুতে পড়তে নির্দেশ করা হয়েছে। এছাড়া হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে দরজা জানালা বন্ধ করার সময়, পানি পান করার সমত ,কোনো পাত্র ঢাকার সময় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তে হয়। মহানবী (সঃ) বলেছে, যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে দশ হাজার নেকি এবং দশ হাজার বদী মার্জনা করেন এবং দশ হাজার উচ্চ মর্যাদা দান করেন।
আবার আরেকটি হাদীসে উল্লেখ আছে যে ব্যক্তি দিনে একবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পরে যে ব্যক্তি যে পরিমাণ গুনাহ করেছে তার এক বিন্দু ও বাকি থাকবেনা। এছাড়াও আপনাদের জন্য একটি গল্প উল্লেখ করছি যেখানে আপনারা জানতে পারবেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর ফজিলত কতটুকু। ঘটনাটি হলো ঃ
মহানবী (সঃ) যখন মিরাজে তাশরীফ করেন তখন চারটি প্রবাহমান নদী পরিদর্শন করেছিলেন। চারটি নদী হলোঃ
- পানির প্রস্রবণ
- মধুর প্রস্রবণ
- দুঢের প্রস্রবণ
- পানীয় এর প্রস্রবণ
রাসূল (সঃ) জিব্রাঈল আমীনকে জিজ্ঞেস করলেইন এ নদীগুলো কোথ থেকে এসেছে? তখন হযরত জিব্রাইল (আঃ) উত্তর দিলেন , রাসূল আমি এ সম্পর্কে কিছু জানিনা। তখন আরেকজন ফেরেশতা এসে বললেন আমি দেখাচ্ছি এই চারটি নদী কোথ থেকে এসেছে। তিনি তখন রাসূল (সঃ) কে একটি জায়গায় নিয়ে গেলেন যেখানে একটি গাছ ছিল যার নিচে একটি বিল্ডিং তৈরি হচ্ছিল । রাসূল (সঃ) দেখলে ওই বিল্ডিং এর দরজাএ তালা ঝুলছিল।
তখন রাসূল(সঃ) দরজা খুলতে বললেন। ফেরেশতা তখন বললেন তার কাছে এই দরজার চাবি নেই। কিন্তু তিনি এটাও বললেন রাসূল আপনার কাছে এই দরজার চাবি রয়েছে। দরজার চাবি হলোঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। তখন রাসূল (সঃ) তালাতে হাত দিয়ে বিসমিল্লহাইর রাহমানির রাহীম পড়লেন আর দরজাটি খুলে গেল।
তিনি ভিতরে গিয়ে দেখলেন সেখানে চারটি খুটি রয়েছে যাদের প্রত্যেকের গায়ে লেখা আছে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এবং চারটি খুটি থেকে যথক্রমে চার রকমের পানীয় বের হচ্ছিল যা পূর্বে বলা হয়েছে। আর ভেতর থেকে শব আসছিল আল্লাহ আপনার যে বান্দা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়বে সে এই চারটি নিয়ামতে হকদার হবে।
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয় এবং কিভাবে বলতে হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url