জমির দলিল বের করার নিয়ম - জমির মালিকানা বের করার উপায়
পোস্টের ভেতরে যা যা থাকছেঃ
ভূমি জরিপ/রেকর্ড কি | জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন
মৌজা কি | জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি ও জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য
মৌজা হল, জমি জরিপের একক। একটি মৌজায় কি পরিমাণ ভূমি অন্তর্ভূক্ত থাকবে তার কোন নিয়ম বিধিবদ্ধ করা নেই। নূন্যতম ২০০ একরের ঊর্ধের ভূমি নিয়ে একটি মৌজা গঠিত হয়।
জেএল নাম্বার কি | খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানুন
জমির দাগ নাম্বার কি | জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম শিখুন
জমির খতিয়ান/পর্চা কি | জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন
বাংলাদেশী আইনে খতিয়ান কি | জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি ও জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য
মাঠ পর্চা কি | খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানুন
খতিয়ানে কি কি তথ্যের উল্লেখ থাকে | জমির দলিল বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম শিখুন
এতে মালিকানা তথ্য সহ বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ থাকে।
- প্রজা বা জমি দখলদারের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম ও প্রজা বা দখলদার কোন শ্রেণীভুক্ত।
- প্রজা বা দখলদার কতৃক জমির অবস্থান, পরিমান ও সীমানা।
- জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
- এস্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা।
- খতিয়ান তৈরি করার সময় খাজনার পরিমান ও ২৮,২৯,৩০ বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত খাজনা। গরু চরণভূমি, বনভূমি ও মৎস খামারের জন্য ধারণকৃত অর্থ।
- খাজনা যে পদ্ধতিতে নির্ধারিত করা হয়েছে তার বিবরণ।
- ২৬ ধারা মোতাবেক নির্ধারিত এবং ন্যায়সঙ্গত খাজনা।
- খাজনা বৃদ্ধিক্রম থাকলে তার বিবরণ।
- ইজারাকৃত জমির ক্ষেত্রে জমির মালিকের অধিকার ও কর্তব্য।
- প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত বিশেষ শর্ত ও তার পরিনতি।
- পথ চলার অধিকার ও জমি সংলগ্ন অন্যান্য অধিকার।
- নিজস্ব জমি হলে তার বিবরণ।
- খতিয়ান নং, মৌজা নং, জেএল নং (মৌজার ক্রমিক নম্বর), দাগ নং, বাট্রা নং, এরিয়া নং ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।
পর্চা/খতিয়ান কয় প্রকারের | জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন
আমাদের দেশে প্রধানত ৪ টি ভূমি জরিপ হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী জমির খতিয়ান বিভিন্ন হয়ে থাকে। এগুলো হলঃ
- সিএস খতিয়ান (CS)
- এসএ খতিয়ান (SA)
- আরএস খতিয়ান (RS)
- বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ (BS)
- পেটি খতিয়ান
বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপকে কিন্তু আর এস খতিয়ানের অন্তভুক্ত হিসেবেই ধরা হয়।
(Cadastral Survey) সিএস খতিয়ান | জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি ও জমির কাগজপত্র যাচাই করুন
(State Acquisition Survey) এসএ খতিয়ান | খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানুন
(Revisional Survey) আরএস খতিয়ান | জমির দলিল বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম শিখুন
এতে পূর্বের খতিয়ানের ভুল সংশোধন করে এতটাই সঠিক করা হয় যে, মালিকানা, দখলদার বিরোধ কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে এই খতিয়ানের উপর নির্ভর করতে হয়। এই খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানুন এবং অন্যকে জানান। আরএস খতিয়ানে, সিএস খতিয়ানের মতই লম্বালম্বি দাগ টানা থাকে তবে এটি ১ পৃষ্ঠায় হয়। ফরমের উপরে ডান পার্শে ‘রেসার্তে নং’(রেঃ সাঃ) কথাটি লেখা থাকে।
(City Survey) বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ | জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন
পেটি খতিয়ান | জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি ও জমির কাগজপত্র যাচাই করুন
খতিয়ানের তোলার পদ্ধতিসমূহ | খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানুন
আপনি কয়েকভাবে জমির খতিয়ান (সার্টিফাইড ও অনলাইন কপি) দেখতে/পেতে পারেন।
- ভূমি মন্ত্রণালয়ের 'ই-পর্চা' ওয়েব সাইটের মাধ্যমে নিজে আবেদন করে খতিয়ানের অনলাইন কপি পাওয়া যায়। এখানে ডাক যোগে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য আবেদনও করা যায়।
- ই-খতিয়ান (eKhatian) অ্যাপের মাধ্যমে সহযে টাকা পরিশোধ করে ডাকযোগে সার্টিফাইড খতিয়ান পাওয়ার জন্য আবেদন করা যায়।
- ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র বা জেলা ই সেবা কেন্দ্র থেকে আবেদন করার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
- জেলা প্রশাসকের 'ডিজিটাল রেকর্ড রুম' এ অনলাইনে আবেদন করে বাসায় বসে আপনার জমির সার্টিফাইড খতিয়ান কপি পেতে পারেন।
- খতিয়ান নাম্বার বা জমির দাগ নাম্বার নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে খতিয়ান তুলতে পারেন।
জমির পর্চা/খতিয়ান অনলাইনে দেখার পদ্ধতি | জমির দলিল বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম শিখুন
১. মোবাইল স্মার্টফোন বা পিসিতে ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রনালয়ের (www.eporcha.gov.bd) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
২. 'খতিয়ান অনুসন্ধান' বাটনটিতে চাপ দিন। 'নাগরিক কর্নার' মেনুতে চাপ দিলেও এটি পাবেন।
৩. এখানে বিভাগ, জেলা, খতিয়ানের ধরন (সি এস, এস এ, আর এস ইত্যাদি), উপজেলা, মৌজা সিলেক্ট করুন। 'খতিয়ান নং' ঘরে আপনার খতিয়ান নাম্বার এবং 'ক্যাপচা কোড লিখুন' ঘরে, পাশের ক্যাপচা নাম্বারটি লিখে 'অনুসন্ধান করুন' বাটনটিতে চাপ দিন।
খতিয়ান নাম্বার জানা না থাকলে, আপনাকে 'দাগ নং', 'মালিকানা নাম' বা 'পিতা/স্বামীর নাম'; এই ৩ টির যেকোন একটি অবশ্যই জানতে হবে। নাম দিয়ে সার্চ দেয়ার সময় বাংলায় সঠিক বানানে সার্চ দেবেন।
৪. আপনার দেওয়া তথ্য সঠিক থাকলে নিচে জমির মালিকের নাম দেখাবে এবং তার নিচে 'আবেদন করুন' বাটন দেখাবে।
৫. 'আবেদন করুন' বাটনে চাপ দিলে আবেদন ফর্ম পাতাটি আসবে।
এখানে দেখতে পাবেন 'খতিয়ান নকল টাইপ' এ 'অনলাইন কপি' লেখাটি চিহ্নিত করা আছে। 'জাতীয় পরিচয়পত্র নং' ও 'জন্ম তারিখ' বাক্সদুটি পুরণ করে 'যাচাই করুন' এ চাপ দিন। ঠিকঠাকমত পূরণ করলে, নিচে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাম, ঠিকানা চলে আসবে। এবার, 'মোবাইল নম্বর' আর 'যোগফল প্রদান করুন' বাক্সদুটি পূরণ করে 'পরবর্তী ধাপ (পেমেন্ট)' এ চাপ দিন। খতিয়ানটির অনলাইন কপি পিডিএফ ফরমেটে ডাউললোড শুরু হবে।
অনলাইন কপি দেখতে কোন খরচ নেই।
জমির পর্চা/খতিয়ান (Certified Copy) উত্তোলনের পদ্ধতি | জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন
অ্যাপ ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করে ডাকযোগে পর্চা/খতিয়ান (Certified Copy) পেতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
১. গুগল প্লেস্টোর থেকে SoftBd Ltd এর eKhatian অ্যাপটি ইন্সটল করে ওপেন করুন।
২. 'খতিয়ান' বাটনে ক্লিক করুন।
অনলাইনে অবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। পূর্বের ন্যায় এখানে বিভাগ, জেলা, খতিয়ানের ধরন (সি এস, এস এ, আর এস ইত্যাদি), উপজেলা, মৌজা সিলেক্ট করুন। 'খতিয়ান নং' ঘরে আপনার খতিয়ান নাম্বার এবং 'ক্যাপচা কোড লিখুন' ঘরে, পাশের ক্যাপচা নাম্বারটি লিখে 'অনুসন্ধান করুন' বাটনটিতে চাপ দিন।
খতিয়ান নাম্বার জানা না থাকলে, আপনাকে 'দাগ নং', 'মালিকানা নাম' বা 'পিতা/স্বামীর নাম'; এই ৩ টির যেকোন একটি অবশ্যই জানতে হবে। নাম দিয়ে সার্চ দেয়ার সময় বাংলায় সঠিক বানানে সার্চ দেবেন।
৩. আপনার দেওয়া তথ্য সঠিক থাকলে নিচে জমির মালিকের নাম দেখাবে। নিচে 'আবেদন করুন' বাটন দেখাবে।
৪. 'আবেদন করুন' বাটনে চাপ দিলে আবেদন ফর্ম পাতাটি আসবে। এখানে দেখতে পাবেন 'খতিয়ান নকল টাইপ' এ 'সার্টিফাইড কপি' লেখাটি চিহ্নিত করা আছে। ডাকযোগে আপনার ঠিকানায় খতিয়ানটি পেতে চাইলে 'ডাকযোগে অপশনটিকে সিলেক্ট করে দিন। এটি পেতে সাধারণত ৭ দিন সময় লেগে যায়। আপনি যদি জরুরী ভিত্তিতে দ্রুত পেতে চান, তাহলে 'জরুরী' অপশনটি সিলেক্ট করে দিন। এরপর, 'পরবর্তী ধাপ' বাটনে চাপ দিন।
৫. এরপর, 'জাতীয় পরিচয়পত্র নং' ও 'জন্ম তারিখ' বাক্সদুটি পুরণ করে 'যাচাই করুন' এ চাপ দিন।
৬. ঠিকঠাকমত পূরণ করলে, পরের ধাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাম, ঠিকানা চলে আসবে। এটিই হচ্ছে সেই ঠিকানা, যেখানে ডাকযোগে খতিয়ানটি যাবে। আপনি অন্য ঠিকানায় চাইলে সেটি 'ঠিকানা' বাক্সে লিখে দিন। এবার, 'মোবাইল নম্বর' আর 'যোগফল প্রদান করুন' বাক্সদুটি পূরণ করে 'পরবর্তী ধাপ' এ চাপ দিন।
৭. এইধাপে আপনার খরচের পরিমাণ দেখাবে। 'পরবর্তী ধাপ (পেমেন্ট)' বাটনটিতে চাপ দিন।
৮. ekpay এর পেমেন্ট গেটওয়ে চলে আসবে। ছবিতে দেখানো অংশে (Mobile Banking) এ চাপ দিন।
বিকাশ, রকেট, নগদ যে কোন একটি অপশন চুজ করে 'Pay Now' বাটনটিতে চাপ দিন।
সেই মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের পেমেন্ট গেটওয়ে চলে আসবে।
৯. ঠিকঠাকমত পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারলে, 'আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে' লিখাটি মোটা শিরোনামে আপনাকে দেখাবে। নিচে 'ডেলিভারির তারিখ' এবং সবুজ রংয়ে 'পরিশোধিত' কথাটি দেখাবে। ১২ ডিজিটের 'আবেদন আইডিটি' কোথাও কপি করে/লিখে রাখুন। 'বন্ধ' বাটনে চাপ দিন।
১০. eKhatian অ্যাপের 'আবেদন ট্রাকিং' বাটনে চাপ দিন। 'আবেদনের রেফারেন্স নং লিখুন' বাক্সে ঐ ১২ ডিজিটের সংখ্যাটি (আবেদন আইডি) প্রবেশ করিয়ে 'অনুসন্ধান' এ চাপ দিন। আপনার আবেদনটির বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন। ডাকযোগে না নিয়ে 'অফিস কাউন্টারে' গিয়ে নিতে হলেও, ঐ 'আবেদন আইডিটি' লাগবে।
জমির দলিলের নকল (Certified Copy) উত্তোলনের পদ্ধতি | জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি ও জমির কাগজপত্র যাচাই করুন
সূচিবহি তল্লাশ (Index Searching) এবং রেজিস্টার বহি পরিদর্শনের নিয়ম | খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানুন
দলিলের সার্টিফাইড কপি/নকল উত্তোলনের জন্য বেশীরভাগ সময় রেজিস্ট্রি অফিসের সূচিবহি তল্লাশ করতে হয়। জমির দলিল বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম শিখুন এই পোস্টে। তল্লাশে পাওয়া গেলে সেটিই আপনার প্রত্যাশিতটি কি না তা যাচাইয়ের জন্য নিজেই গিয়ে (পরিদর্শন) দেখতে হয়। আর, আপনাকে ২ বিষয়ের সরকার নির্ধারিত ফি'ই পরিশোধ করতে হবে। ফি হিসাব করার জন্য 'দলিলের নকল তল্লাশ ফি ক্যালকুলেটর' অ্যাপটি ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।
জমির কাগজপত্র যাচাই করার পদ্ধতিসমূহ | জমির দলিল বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম শিখুন
কোন জমি কেনার আগে আপনাকে সেই জমির বিভিন্ন দলিল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন এই পোস্টে। জমির মালিকের মালিকানা বৈধতা ভাল করে যাচাই করে নিতে হবে। নয়তো প্রতারণার শিকার হতে পারেন। এমনকি ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমায়ও জড়িয়ে পড়তে পারেন বা জমির মূল অংশ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
একজনের নামে করা জমি, অন্য একজন ভূয়া দলিল দেখিয়ে বিক্রি করেছেন, মাঝেমধ্যে এমনটা দেখা যায়। এমনকি পরবর্তীতে আসল মালিক, সেই ক্রেতাকে জড়িয়েও মামলা ঠুকে দেন। এ ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং যাচাই করে নিতে হবে।
একটি জমির বিভিন্ন ধরনের দলিল থাকতে পারে। বিক্রয় দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান সবই হচ্ছে 'দলিল'। জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন এবং অন্যদের জানান। আপনাকে প্রথমেই দেখতে হবে, সর্বশেষ যে দলিলটি করা হয়েছে তার সাথে পূর্বের দলিলগুলোর মিল আছে কি না? ভায়া (VIA) দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, দেখে নেবেন। ভায়া দলিল হল মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়।
ধরে নিন, আপনি কিছু জমি ১৯৯০ সালে ৪৭০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে কিনেছেন। সেই জমি ২০০৮ সালে অন্য একজনের কাছে ৫২০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করলেন। এক্ষেত্রে আগের ৪৭০ নম্বর দলিলটি হচ্ছে ভায়া (VIA) দলিল।
দলিলে দাতা, গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর, জোত নম্বর, জেএল নম্বর, দাগ নম্বর, মোট জমির পরিমাণ ভালো করে দেখে নেবেন। এজন্য নিজেই জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি ও জমির কাগজপত্র যাচাই করুন এবং অন্যদের শেখান। যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা, সেটা ভালভাবে দেখে নেবেন। অনেক সময় আগের দলিলের চেয়ে পরের দলিলে বেশি পরিমাণ জমি দেখানো হয়।
খতিয়ানের ক্ষেত্রে আগের খতিয়ানগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ খতিয়ানের মিল আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখবেন। নিজেই জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি ও জমির কাগজপত্র যাচাই করুন বা পরামর্শ নিন। মিউটেশনের (নামজারি/খারিজ) মাধ্যমে যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে, সেই মতো খতিয়ানে দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ যোগ করবেন। এই যোগফল কোনো দাগে মোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার চেয়ে কম না বেশি, তা দেখে নেবেন। কারণ, যদি দেখেন বেশি হয়, তাহলে অতিরিক্ত জমির মালিকানা কোনোভাবেই দাবি করতে পারবেন না।
খতিয়ানে উল্লেখিত জমির সঙ্গে ম্যাপে আঁকা দাগের মিল আছে কিনা তা মিলিয়ে দেখবেন। খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানতে হবে আপনাকে। প্রকৃত প্লট না দেখিয়ে অন্য প্লট দেখিয়ে জমি বিক্রি করার চেষ্টাও অনেকে করে থাকে। ম্যাপ মিলিয়ে দেখলে তার অসাধুতা ধরতে পারবেন। আর, খতিয়ানটি যে জাল নয় তাও যাচাই করে নেবেন। এজন্য আপনাকে সেই খতিয়ানের 'সার্টিফাইড কপি' দেখতে হবে। খতিয়ানের 'সার্টিফাইড কপি' কিভাবে তুলবেন তা উপরে বলা হয়েছে।
সার্টিফাইড কপি শুধুমাত্র জেলা প্রশাসকের অফিস (রেকর্ড রুম) থেকে সরবরাহ করা হয়। নিজেই খতিয়ান ও দাগের তথ্য খতিয়ান প্লট ইনফরমেশন জানুন এবং অন্যদের জানান। এটিতে দেখে নেবেন যে, রেকর্ড রুম ডেপুটি কালেক্টর কতৃক সত্যায়িত হয়েছে কি না? এছাড়াও দেখে নেবেন জমিটি ঠিকমত মিউটেশন করা হয়েছে কি না? যদি না হয়, তাহলে কী কারণে হয়নি তাও জেনে নেবেন। মিউটেশন না করা থাকলে জমি কিনতে সমস্যায় পড়বেন। দাগ নম্বরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না, তা খেয়াল করে দেখে নেবেন।
যার থেকে জমি কিনছেন, তিনি কীভাবে জমির মালিক হয়েছেন, তা দেখে নেবেন। ক্রয়সূত্রে, ওয়ারিশমূলে, দান অথবা হেবামূলে যে উপায়েই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপযুক্ত দলিল যাচাই-বাছাই করে নেবেন। এজন্যই জমির দলিল বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম আপনার শেখা দরকার। অনেক সময় ভূয়া 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি' দলিল তৈরি করে জমি বিক্রির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে আপনার উচিৎ, একইসাথে মূল মালিকের সাথেও যোগাযোগ করা। জমিটি সরকারি মালিকানা বা অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত কি না, তাও যাচাই করে নেবেন।
জমিজমা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলাকালীন প্রকৃত তথ্য গোপন করেও অনেকে জমি বিক্রি করার চেষ্টা করেন। তাই মালিকানা-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি অবশ্যই জেনে নেবেন। জমির দলিল বের করার নিয়ম ও অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম জানা খুবই জরুরী। স্থানীয় ও আশেপাশের লোকজনদের থেকে সেই জমিসংক্রান্ত তথ্য নেবেন। জমি নিয়ে অগ্রক্রয়ের মামলাও, মাঝে মাঝে ঘটে। তাই পার্শ্ববর্তী জমির মালিক অগ্রক্রয়ের দাবিদার কি না, তা খুঁজে বের করবেন।
জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ (Third Pirty) বা মধ্যস্থতাকারীকে শতভাগ বিশ্বাস করাটা ঠিক নয়। নিজে/ নিজের লোককে দিয়ে মালিকানা-সংক্রান্ত বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর, যাচাই-বাছাই করিয়ে নিয়ে তারপর কিনবেন।
জমি আগে বিক্রি করা হয়েছে কিনা যাচাই করার পদ্ধতি | জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন
কখনো কখনো, ভূমি অফিসের অসাধু কর্মচারীদের সহায়তায় জাল মিউটিশন দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল এমন সংবাদ জানা যায়। নিজেই জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন এবং অন্যদের জানান। মিউটেশন করা হয় সংশ্লিষ্ট [এসিল্যান্ড] সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে। এখানে মিউটেশন কেসের দায়িত্বে একজন কর্মচারী থাকেন। মিউটেশনের যেসব কাগজপত্র দাখিল করা হয় তার একটিতে 'নামজারি কেস নম্বর' দেয়া থাকে। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে রেজিস্টার পরীক্ষা করে আপনাকে দেখতে হবে যে, উল্লেখিত নাম্বারের নামজারি কেসটি সত্যি সত্যি রুজু করা হয়েছিল কি না? সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুমোদন করেছেন কিনা এবং তার স্বাক্ষর, সিল আছে কিনা তা অবশ্যই দেখে নেবেন।
নামজারি কেস অনুমোদিত হওয়ার পর সরকারি নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে 'ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট' (D.C.R) অবশ্যই নেয়া উচিৎ। এরপর সমুদয় বকেয়া খাজনা পরিশোধ করতে হয় যা জমির পূর্বের মালিকেরই করা উচিৎ। জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন। জমির মালিকানা বের করার উপায় শেখাটা কেন দরকার আশা করি বুঝতে পারছেন। খাজনা অপরিশোধীত অবস্থায় কিনলে, আপনাকেই সমস্ত খাজনা পরিশোধ করতে হবে। বকেয়া খাজনার পরিমাণ কিন্তু অনেক বড় অঙ্কেরও হতে পারে! সেকারনে, খাজনা পরিশোধের দাখিলা অবশ্যই দেখে নেবেন।
খতিয়ান, মিউটেশন দেখার পর দেখবেন যে, প্রস্তাবিত বিক্রেতা কি প্রক্রিয়ায় এই জমির মালিক হয়েছেন? জমির মালিকানা বের করার উপায় জানুন, আর জমির মালিকানা বের করার উপায় এ জন্যই জেনে রাখা দরকার। যদি ওয়ারিশ সত্ত্বে মালিক হয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন যে, ধর্মীয় ফারায়েজ অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন হয়েছে কি না এবং প্রস্তাবিত বিক্রেতা ফারায়েজ অনুযায়ী বৈধ মালিক হয়েছেন কি না? মূল মালিকের মৃত্যুর পর অন্যান্য শরিকের (তার মেয়েদের) জমি অবশিষ্ট আছে কিনা? ওয়ারিশন সার্টিফিকেট দেখে নেবেন।
এরপর দেখবেন, ফারায়েজ অনুযায়ী যে মালিকানার পরির্বতন হয়েছে তা পরবর্তী সেটেলমেন্ট রেকর্ডে এসেছে কি না? অর্থাৎ সিএস > এসএ > আরএস রেকর্ডে মালিকানা পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না তা দেখে নেবেন। যদি বলা হয়, 'সেটেলমেন্ট জরিপে রেকর্ড ভুল হয়েছে' তাহলে তা বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। আর, চূড়ান্ত প্রকাশিত রেকর্ড একমাত্র আদালতের মাধ্যমেই পরিবর্তন করা সম্ভব যা নিশ্চিতভাবেই আপনার জন্য দীর্ঘসূত্রতা হয়ে দাঁড়াবে।
জরিপ/রেকর্ডে যদি ক্রয়সূত্রে মালিকানা হয়, তাহলে দেখবেন।
১. দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে কি না?
২. দলিল বৈধ কিনা? অর্থাৎ জাল দলিল কিনা? সন্দেহ হলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে যাচাই করবেন।
৩. দলিলের দাতা রেকর্ডীয় মালিক কি না? রেকর্ডীয় মালিক না হলে দাতা কোন রেকর্ডীয় মালিকের বৈধ ওয়ারিশ কিনা কিংবা ক্রয়সূত্রে মালিক হয়েছেন কি না?
৪. দলিলদাতা যে পরিমাণ জমি বিক্রি করতে চান রেকর্ডে উল্লেখিত হিস্যা অনুযায়ী তিনি সে পরিমাণ জমির মালিক কি না, তা পরীক্ষা করবেন।
প্রত্যেক খতিয়ানে প্রত্যেক রেকর্ডীয় মালিকের পাশে তার প্রাপ্য হিস্যা উল্লেখিত আছে। সিএস (CS) খতিয়ানে টাকা, আনা, কড়া, ক্রান্তি ইত্যাদি (হিসেব করার জন্য 'আনা-গন্ডা ক্যালকুলেটর' টি ব্যবহার করতে পারেন) এবং পরবর্তী খতিয়ানে দশমিকে অংশ দেখানো আছে। এসএ (SA) খতিয়ানে প্রায় ক্ষেত্রেই হিস্যা দেখানো হয়নি। সেকারনে, রেকর্ডীয় মালিকের পাশে উল্লেখিত হিস্যা অনুযায়ী দলিলদাতা মোট কতখানি জমির মালিক তা আপনাকেই হিসেব করে বের করতে হবে। বিক্রির জন্য প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ রেকর্ডে উল্লেখিত তার হিস্যা অনুযায়ী প্রাপ্য জমির পরিমাণের চেয়ে কখনই বেশী হতে পারে না! এ বিষয়ে অবশ্যই অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। এজন্যই জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য আপনার জানা দরকার। এমন সংবাদ শোনা যায় যে, রেকর্ডীয় মালিকের মৃত্যু হয়েছে এবং ওয়ারিশ হিসেবে ২-৩টি ছেলে, ২-৩টি মেয়ে আছে। এক ছেলে ভূয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দেখিয়ে সমস্ত সম্পত্তি একাই বিক্রি করেছে। এক্ষেত্রে কিন্তু আপনি/ জমির ক্রেতা বিপদে পড়বেন। এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকবেন।
৫. ভুয়া নামধারী ব্যক্তি (False personification) বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় বিক্রেতা অর্থাৎ দলিলদাতাকে ব্যক্তিগতভাবে সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে হাজির হয়ে দলিলে স্বাক্ষর/ টিপ সহি প্রদানের বাধ্যবাধকতা আছে; কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। দলিলের সঙ্গে এখন দাতার ছবি দেয়া সরকারীভাবে বাধ্যতামূলক। তবে এখনও এমন শোনা যায় যে, দলিল রেজিস্ট্রির সময় ভীড় সৃষ্টি করে একটা হট্টগোলের অবস্থা তৈরী করে ভূয়া লোক দাঁড় করিয়ে স্বাক্ষর গ্রহণের কাজ কৌশলে সম্পন্ন করা হয়েছে। আবার, অনেক সময় ভূয়া সার্টিফিকেট এবং অন্য লোকের ছবি জাল সত্যায়িত করে ভূয়া লোক দাঁড়ানোর ঘটনাও ঘটে। যেহেতু চেয়ারম্যানের পক্ষে তার এলাকার সব্বাইকে চেনা সম্ভব নয়।
৬. বিক্রির জন্য প্রস্তাবিত সম্পত্তিটি অর্পিত সম্পত্তি কিনা তা যাচাই করে নেবেন। জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য এসব বহুবিধ কারণে জানা দরকার। বিশেষ করে কোন খতিয়ানে যদি একজনও হিন্দু ব্যক্তির নাম থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই অবশ্যই যাচাই করে নেবেন। প্রত্যেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে একটা অর্পিত সম্পত্তি সেল আছে যেখানে 'সমুদয় অর্পিত সম্পত্তির তালিকা' নামে একটি তালিকা আছে। প্রস্তাবিত জমিটি যদি সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহলে সেই সম্পত্তির মালিকানা রেকর্ডীয় মালিকের নয়। এছাড়াও তহসিলদারের সব অর্পিত সম্পত্তির খবর জানা থাকে। তার সহযোগীতা নিতে পারেন।
৭. গাজীপুর, ময়মনসিংহ জেলায় বন বিভাগের সম্পত্তি আছে। প্রস্তাবিত সম্পত্তিটি বন বিভাগের সম্পত্তি কিনা তাও যাচাই করে নেবেন। ঐ এলাকার তহসিলদার ও বন বিভাগের অফিস থেকে যাচাই করতে পারবেন। নিজেই জমির দলিল বের করার নিয়ম ও জমির দাগ ও খতিয়ান তথ্য জানুন। মনে রাখবেন, ১৯০৮ সালের পর থেকে সাবেক 'ভাওয়াল রাজ এস্টেট' বা 'নওয়াব এস্টেটের' সম্পত্তি পত্তন দেয়ার অধিকার বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই, সিএস (CS) রেকর্ডে 'কোর্ট অব ওয়ার্ডসের' নামে রেকর্ডকৃত সম্পত্তি যদি পরবর্তীতে পত্তন দেখানো হয় তাহলে সেটি অবশ্যই ভূয়া পত্তন।
আশা করি এইসব পরামর্শ আপনার কাজে লাগবে। অনলাইনে আপনার খতিয়ান এখন নিজেই দেখে নিতে পারবেন। এধরনের পরামর্শ নিয়মিত পেতে অর্ডিনারি আইটি সাইটটিকে বুকমার্ক করে রাখুন এবং নিয়মিত ভিজিট করুন। আজ এ পর্যন্তই।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url