OrdinaryITPostAd

৬৭টি শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম - বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়ম

শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম জানুন। বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়ম জানতে পোস্টটি পড়ুন। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম নিয়ে বিভ্রান্ত? তাহলে বাংলা বানানের সঠিক নিয়ম জানতে এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

বাংলা একাডেমির বাংলা বানানের নিয়ম বা প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মের প্রথম তিন সংস্করণের সঙ্গে সর্বশেষ অর্থাৎ শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম বা বাংলা বানানের নতুন নিয়ম এর সাথে  মিল কম, অমিল বেশি। 

চলুন তাহলে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম এর পাশাপাশি বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়ম জেনে নিই। 

বিস্তারিত শুরু করার আগে চোখ বুলিয়ে নিন কি কি থাকছে তার উপরঃ

পেজ সূচিপত্রঃ শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

তৎসম শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ bangla spelling rules

নিম্নে যেসব নিয়ম দেয়া হয়েছে সেগুলো ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে। তৎসম শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম জানতে পুরো পোস্টটি পড়ুন। তৎসম শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম অএঙ্ক জায়গায় পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলা বানানের নতুন নিয়ম সহ তৎসম শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ 

ই ঈ বা উ ঊ সংশ্লিষ্ট শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

ই ঈ বা উ ঊ সংশ্লিষ্ট শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম সম্পর্কে অনেকে জানতে চান । ই ঈ বা উ ঊ সংশ্লিষ্ট বাংলা বানানের নতুন নিয়ম এসেছি কিনা। চলুন তাহলে ই ঈ বা উ ঊ  সংশ্লিষ্ট শব্দের বাংলা বানানের নিয়ম গুলো দেখে নেয়া যাকঃ

  • ই - কার যুক্ত শব্দঃ যেসব শব্দ ভাষা এবং জাতিকে বুঝায় সেসব শব্দের শেষে ই কার হবে। যেমনঃইহুদি, ফরাসি, সিন্ধি, জাপানি, পাকিস্তানি, আরবি, ইরাকি, ইংরেজি ইত্যাদি। আরো কিছু ই-কার যুক্ত শব্দঃ যেমনঃ আবির, অটবি, চিৎকার, দেশি, শ্রেণি, কুটির
  • ঈ- কার যুক্ত শব্দঃ দেবী, নারী, রজনী, পেত্নী, সতী, সরস্বতী, জননী, পত্নী, লক্ষ্মী, মেধাবী, জয়ী, সুখী, ছাত্রী
  • যেসব শব্দের শেষে অথবা যেসব "আলি" বিশেষনবাচক শব্দকে নির্দেশ করবে সেগুলোতে ই- কার হবে। যেমনঃ মেয়েলি, বর্ণালি, রুপালি, পুবালি

ইন্‌-যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ 

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম এ উল্লেখিত করা হয়েছে ইন্‌-যুক্ত শব্দ যদি দীর্ঘ ঈ-কার যুক্ত হয় তাহলে  হলে সেসব শব্দে হ্রস্ব ই-কার হবে। যেমনঃ

  •  গুণিজন, প্রাণিবিদ্যা,  মন্ত্রিপরিষদ , মন্ত্রিসভা, 

যেসব শব্দ ইন্‌-যুক্ত সেগুলোতে যদি -ত্ব এবং -তা যুক্ত হয় তাহুলে ই-কার হবে। কিছু উদাহারণ দেখে নেয়া যাকঃ 

  •  কৃতিত্ব,  দায়িত্ব,  প্রতিযোগিতা, মন্ত্রিত্ব, সহযোগিতা, সামিত্ব, স্থায়িত্ব, বিলাসিতা, প্রতিযোগিতা
  • ব্যতিক্রমঃ নারিত্ব এবং সতীত্ব

বিসর্গ (ঃ) যুক্ত শব্দের বাংলা একাডেমি বানানের নিয়মঃ bangla spelling rules

কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো শেষে বিসর্গ(ঃ) ব্যবহৃত হবেনা। যেমনঃ

  • , কার্যত, ক্রমশ, পুনঃপুন, প্রথমত, প্রধানত, প্রয়াত, প্রায়শ, ফলত, বস্তুত, মূলত,ইতস্ত্‌ দ্বিতীয়ত, দুঃখ, নিঃশব্দ, দুঃস্বপ্ন, মনোঃকষ্ট, প্রাতঃকাল
যেসব শব্দে মাঝেখানে বিসর্গ থাকবে তার কয়েকটি উদাহারণঃ
  • পুনঃপুন, নিঃশব্দ, দুঃখ, স্বতঃস্ফূর্ত

আবার এমন কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলোতে আপনি বিসর্গ না দিলেও সঠিক হবে। যেমনঃ

  • দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস, মনস্থ, বহিস্থ

রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

বাংলা ব্যাকরণে এমন অনেকগুলো শব্দ রয়েছে যেগুলোতে আপনাকে রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব ব্যবহার করতে হবে না। যেমনঃ

  • অর্জ্জন=অর্জন, ঊর্দ্ধ্ব=ঊর্ধ্ব, কর্ম্ম=কর্ম, কার্ত্তিক =কার্তিক, কার্য্য=কার্য, বার্দ্ধক্য =বার্ধক্য, মূর্চ্ছা=মূর্ছা, সূর্য্য = সূর্য 
  • ব্যতিক্রমঃ দৈর্ঘ্য এবং বর্জ্য

ঙ , ং  যুক্ত শব্দের বাংলা একাডেমি বানানের নিয়মঃ

ং যুক্ত শব্দের বাংলা বানানের নতুন নিয়ম যুক্ত হয়েছে কি কি। চলুন দেখে নিই কি কি বাংলা একাডেমি বানানের নিয়ম যুক্ত হয়েছে । যেমনঃ

সন্ধির ক্ষেত্রে ক-বর্গের বর্ণমালার পুর্বে যদি ম থাকে তাহলে বানানে তার পরিবর্তে ং হবে। যেমনঃ

  • অহম্‌ + কার = অহংকার
  •  কিংকর, সঙ্ঘ, সংঘাত, সংকীর্ণ, হুঙ্কার, ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন

আর যদি শব্দটি সন্ধিজাত না হয় তাহলে  ক-বর্গের অক্ষর থাকলে তার পুর্বে ম এর স্থলে  ঙ  হবে। যেমনঃ

  • পঙ্গু, কাঙ্খিত অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, লঙ্গন , ভঙ্গি আতঙ্ক, কঙ্কাল, গঙ্গা, বঙ্কিম, বঙ্গ
  • লঙ্ঘন, শঙ্কা, দাঙ্গা, উচ্ছৃংখল , জঙ্গি শৃঙ্খলা, সঙ্গে, সঙ্গী,

অতৎসম শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

নিম্নের অতৎসম শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম উল্লেখ করা হলোঃ

ই, ঈ, উ, ঊ যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

আপনি একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন যে বাংলা বানানের সঠিক নিয়ম যেগুলো রয়েছে সেগুলোতে সব  অতৎসম শব্দে শুধুমাত্র ই এবং উ কার ব্যবহৃত হবে । যেমনঃ

  • ইমান, ইরানি, উনিশ, ওকালতি, কাহিনি, কুমির, কেরামতি,আরবি, উকিল, পড়শি, ভুতুড়ে, জানুয়ারি , আসামি, ইংরেজি,  খুশি, খেয়ালি, গাড়ি, গোয়ালিনি, চাচি, জমিদারি, আদমি , 
  • জাপানি, জার্মানি, টুপি, ভুতুড়ে, ক্রিস্ট, মেয়েলি, সুন্নি,  তরকারি, লটারি, বে-আইনি, লাইব্রেরি, মিস্ত্রি, হিজরি,দাড়ি, দাদি, দাবি, দিঘি, নানি, নিচু, পশমি, পাখি, পাগলামি, পাগলি, পিসি, ফরাসি, ফরিয়াদি, ফারসি, হাজি
  • ধুলো, মুলো, বুনো

কোন সর্বনাম পদ নির্দেশ করলে শব্দ টি-তে ই-কার হবে। যেমন:

  • বালকটি, মেয়েটি, বইটি, মানুষটি, বাড়িটি

বাক্যে যখন সর্বনাম , বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বাচক শব্দকে "কী" শব্দ দ্বারা নির্দেশ করা হবে তখন ঈ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমনঃ 

  • এটা কী তোমার বই? তোমার কী  অনেক আনন্দ! কী আর বলব তোমাকে? কী করছ তুমি এসব? 

যদি কোনো বাক্যে কীভাবে, কীরকম, কীরূপে এসব শব্দের উল্লেখ থাকে তাহলে ঈ-কার হবে।

যেম্নঃ তুমি কীভাবে করলে এটা? কীভাবে একেছ?

যদি কোনো বাক্য প্রশ্নবাচক হয়েথাকে অর্থ্যাত কাউকে কোনো কিছু কিছু জিজ্ঞাসা অর্থে ব্যবহৃত হয় তাহলে বাক্যে যে "কি" ব্যবহৃত হবে সেটিতে ই-কার হবে। যেমনঃ 

  • তুমি কি কাল যাবে? সে কি গতকাল এসেছিল? কেউ কি কিছু বলবেনা?

এ, অ্যা যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

বাক্যে যদি এ অথবা এ-কার ব্যবহৃত হয় তাহলে সেটি এ এবং অ্যা উভয়কেই নির্দেশ করে, যেমনঃ 

  • কেনো (কেনা অর্থে) খেলা, খেলো ইত্যাদি

এরমধ্যে কিছু তদ্ভব এবং দেশী শব্দ রয়েছে যেগুলো য-ফলা + আ- কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ 

  • ব্যাঙ, ল্যাঠা, ল্যাটিন, কল্যাণ

কিছু বিদেশি শব্দ রয়েছে যেগুলোতে মাঝে মাঝে  অ্যা বা ্যা-কার (য-ফলা + আ-কার) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • ক্যাসেট, অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক, ভ্যাট, 

ও যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

১। ক্রিয়াপদ বাচক শব্দের শেষে ও কার না ব্যবহার করলেও চলবে। যেমনঃ দেখত, নাচব, লড়ব, লিখব

২। বর্তমান বুঝাচ্ছে এমন শব্দের শেষে ও কার ব্যবহার করা যাবে। যেমনঃ চলো, দেখো, করো, কেনো

৩। "আনো" যুক্ত শব্দের শেষে ও কার হবে। যেমনঃ দেখানো, হাসানো, লেখানো, পড়ানো

৪। ভবিষ্যৎ বুঝায় এমন শব্দের শেষে ও-কার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনঃ হাসো, পড়ো, নামো

ক্ষ, খ যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

অতৎসম শব্দ যেগুলো রয়েছে যেমনঃ খিদে, খুদ, খুর , খেত, খ্যাপা ইত্যাদি তাঁদের শেষে ব্যবহৃত হবে। 

জ, য যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

বাংলা ভাষায় কিছু কিছু বিদেশি শব্দ  রয়েছে যেগুলোকে সাধারণভাবে বাংলা ভাষার নিয়ম অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমনঃ

  • কাগজ, জাদু, জাহাজ, জুলুম, জিরাফ, জানোয়ার, জানুয়ারি, বাজার, হাজার

কিছু ইসলামিক শব্দ রয়েছে সেগুলোতে  বিকল্পে  হিসেবে ‘য’ ব্যেযবহার করা যেতে পারে। যেমন:

  • আযান, ওযু, কাযা, নামায, মুয়ায্‌যিন, যোহর, রমযান, হযরত

মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

তৎসম শব্দে ণ এর সঠিক ব্যবহারকে বলা হয়ে থাকে ণ-ত্ব বিধান। বাংলা ভাষায় এর ব্যবহার কম। কিন্তু অনেক সংস্কৃত শব্দ রয়েছে যেগুলোতে ণ এবং ন এর ব্যবহার রয়েছে প্রচুর। 

  • ত-বর্গের আগে ন হয়। যেমনঃ ক্লান্ত, প্যান্ট, শান্ত, রান্না, অনন্ত, একান্ত
  • যেসব শব্দ সন্ধি এবং সমাসবদ্ধ হয় সেগুলোতে ন ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ দুর্নাম, ত্রিনয়ন, দুর্নীতি। অগ্রনায়ক, দুর্নিবার
  • তদ্ভব, দেশি,বিদেশি শব্দে সবসময় ন হবে। যেমনঃ আয়রন, ঝরনা, ফার্নিচার, ড্রেন, ধরন, আপন 
  • ট-বর্গের আগে ন হয়। যেমনঃ মন্ত্রী, জলন্ত, বন্দুক, ইন্টার, উইন্টার, প্যান্টস, টেন্ডার
  • ক্রিয়াপদ বাচক শব্দে ন হয়। যেমনঃ  ধরেন, পারেন, করেন, হাসেন, লিখেন 

শ, ষ, স যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

  • ঋ -কার পরে ষ হয় । যেমনঃ সৃষ্টী, বৃষ্টি, তৃষ্ণা, ঋষি, তৃষা
  • রেফ এর পরে ষ হয়। যেমনঃ ঘর্ষণ, বর্ষণ, আকর্ষণ, বিমর্ষ
  • ট-বর্গের আগে ষ হয়। যেমনঃ বলিষ্ঠ, কনিষ্ঠ, সুষ্ঠূ, অনিষ্ট
  • কিছু দেশি শব্দ রয়েছে যেগুলোতে সবসময় ষ হয় । যেমনঃ কোষ, আনুষ, অভিলাষ, পাষাণ, দূষণ, বিষাণ, আভাষ
  • সবসময় মাথায় রাখবেন বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না। যেমনঃ কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহেশ্‌ত, শখ, শয়তান, শরবত, শরম, শহর, শামিয়ানা, শার্ট, শৌখিন
  • আপস, জিনিস, মসলা, সন, সাদা, সাল (বৎসর), স্মার্ট, হিসাব
  • ত-বর্গের আগে স হয় । যেমনঃ কস্তুরি, কাস্তে,স্থান
  • চ-বর্গের আগে শ হয়। যেমনঃ নিশ্চয়, বৃশ্চিক, আশ্চর্য

বিদেশি শব্দ ও যুক্তবর্ণ যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

বাংলায ভাষায় বিদেশি শব্দের শুরুতে যুক্তবর্ণ দিয়ে লিখতে হবে। যেমনঃ

  • স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং, ড্রিংকস

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুক্তবর্ণ ছাড়া লেখা যায় । যেমনঃ 

  • মার্কস, শেকসপিয়র, ইসরাফিল, চেয়ার, আলমারি
বিদেশি শব্দের মত বাংলা বানানের নিয়ম হচ্ছে কোন ঈ কার ব্যবহার করা যাবে না, ই কার ব্যবহার করতে হবে যেমনঃ
  • ইউনিভার্সিটি, অর্ডিনারি আইটি ইত্যাদি, পার্টি।

হস-চিহ্ন যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

আপনার চেষ্টা ক্রবেন যথাসম্ভব হস-চিহ্ন যুক্ত শব্দ ব্যবহার না করতে। যেমন:

  •  করলেন, জজ, ঝরঝর, টক, টন, টাক, ডিশ,কলকল, চট, চেক, , ফটফট, বললেন, শখ, হুক

তবে যদি আপনার মনে হয়  ভুল উচ্চারণ হতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে  হস-চিহ্ন ব্যবহার করতে পারবেন। যেমনঃ

  • উহ্‌, বাহ্‌, যাহ্‌, হেহ্‌ 

ঊর্ধ্ব-কমা যুক্ত শব্দের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

চেষ্টা করবেন উর্ধ্ব -কমা কম ব্যবহার করতে। তবে সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যদি সেটিকে বর্জন করেন। যেমনঃ 
বলে =বলিয়া, হয়ে = হইয়া, দুজন = দুইজন, চাল = চাউল, আল = আইল , খেলে = খেলিয়া, লেখে = লিখিয়া

এছাড়াও বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়ম রয়েছে কিছুঃ

সমাসবদ্ধ শব্দ যুক্ত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মঃ 

যেসব শব্দ সমাসবদ্ধ সেগুলোকে চেষ্টা করবেন একসাথে লেখার। যেমনঃ

  • অদৃষ্টপূর্ব, অনাস্বাদিতপূর্ব,সংবাদপত্র, সংযতবাক, সমস্যাপূর্ণ, স্বভাবগতভাবে নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র, পূর্বপরিচিত

যদি আপনার প্রয়োজন হয় যে শব্দটিকে আপনি হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করবেন তাহলে আপনি তা করতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা হবেনা।যেমনঃ 

  • বাপ-বেটা, বেটা-বেটি,জল-স্থল-আকাশ, মা-ছেলে, মা-মেয়ে

বিশেষণ শব্দ পদ বাংলা বানানের নতুন নিয়মঃ

যেসব শব্দ বিশেষণ পদকে নির্দেশ করে সেগুলো সাঢারণত পরের শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়না। যেমনঃ

  • ভালো দিন, সুন্দর মেয়ে, মজার বই, চঞ্চল ছেলে, লাল গোলাপ, সুগন্ধ ফুল, সুনীল আকাশ, সুন্দরী মেয়ে, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন

সর্বনাম পদ বাংলা বানানের সঠিক নিয়মঃ

বাংলা ভাষায় ব্যক্তি, পদবী ও মর্যাদা অনুযায়ী সবাইকে তিনি, তার ও তাকে ব্যবহার করে সম্বোধন করতে হয়। যেমআলাপ পাতায় বয়স, পদবী নির্বিশেষে 'আপনি' সম্বোধন ব্যবহার করতে হবে।

না-বাচক শব্দ প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মঃ 

যেসব শব্দ না-বাচক সেগুলোতে নি স্বাধীন এবং পরের নি টি সমসাবদ্ধ হিসেবে লিখতে হবে। যেমনঃ 

লিখি না , কিন্তু লিখিনি। 

এছাড়া শব্দের আগে না-বাচক উপসর্গ হিসেবে ‘না’ যুক্ত ধাকবে। যেমন:

  • নাবালাক, নারাজ, নাহক, নাজেহাল, নাছোড়বান্দা

যদি কখনো শব্দের অর্থকে সুস্পষ্ট বুঝানোর প্রয়োজন হাইফেন ব্যবহার করতে হয় তাহলে কোন  সমস্যা হবেনা। যেমনঃ 

  • না-গোনা পাখি, না-বলা বাণী, না-শোনা কথা, না - বলা কথা, না - মানা বালক

চন্দ্রবিন্দু যুক্ত শদসমূহের শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ

চন্দ্রবিন্দু যুক্ত কিছু শব্দ রয়েছে বাংলা ভাষায় যেগুলো আপনাকে মুখস্থ করে নিতে হবে। যেমনঃ

আঁধার, কাঁপ, দাঁত, আঁক, কাঁটা ইত্যাদি

সাধু থেকে চলিত শব্দসমূহের বাংলা বানানের নিয়মঃ 

 কিছু সাধু থেকে চলিত রূপের শব্দ রয়েছে যেগুলোর বাংলা বানানের নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকে জানেন না। এর মধ্যে কিছু শব্দ আপনাদের সুবিধার্থে তুলে ধরা হলোঃ  
  • পূজা>পুজো,হউক>হোক,দিয়া>দিয়ে, হইল>হলো যাউক>যাক, থাউক>থাক, লিখ>লেখ, গুলি>গুলো, শুন>শোন, শুকনা>শুকনো ,ভিজা>ভেজা, বলেক>বলুক, নাচুক>নাচো,পড়ুক>পড়ো

ব্যব্যাব্যবহার করে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ 

ব্য অথবা ব্যা ব্যবহার করে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মগুলো আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হলোঃ

গ, জ/ঞ্জ, ত, থ, ব, ভ, ষ্ট, স্ত-এগুলোর আগে ব্য হবে।

  •  ব্যক্তি, ব্যঞ্জন, , ব্যবস্থা, ব্যভিচার, ব্যষ্টি,ব্যথা, ব্যর্থ,  ব্যস্ত , ব্যতিক্রম, ব্যক্ত
ক, খ, ঘ, দ, ধ, প, প্ত, স, হ-এর আগে ব্যা হবে। যেমনঃ 
  • আখ্যা, ব্যাপ্তি, ব্যাধিত, ব্যাকরণ, ব্যাকুল, ব্যাখ্যা, ব্যাঘাত, ব্যাধি, ব্যাপক, ব্যাপার, ব্যাপ্তি, ব্যাস, ব্যাসার্ধ ব্যাহত ইত্যাদি

বিসর্গসন্ধি ব্যবহার করে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ Bangla Academy spelling rules

বিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দুই প্রকার। যথাঃ 
  1.  র্ -জাত বিসর্গঃ  শব্দের শেষে যদি র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ উহ্য থাকবে এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ)  লিখতে হবে। কিন্তু উচ্চারণের সময় র্ উচ্চারিত হবে। যেমন— অন্তর>অন্তঃ+গত=অন্তর্গত ( অন্‌তোর্‌গতো)।
  2.  স্-জাত বিসর্গঃ শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ উহ্য থাকে এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) লিখতে হয়। উচ্চারণের সময় স্ উচ্চারিত হয়। যেমন : নমস্ > নমঃ + কার = নমস্কার ( নমোশ্‌কার্‌)। 
বিসর্গসন্ধি দুইভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ 
  •  বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে
  • বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে

১. বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি

 অ-ধ্বনির সাথে বিসর্গ এবং পরে আবার যদি অ-ধ্বনি থাকে তাহলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি ীর জায়গায় ও-কার হবে। যেমনঃ
  • ততঃ + অধিক = ততোধিক 
অ-ধ্বনির সাথে বিসর্গ এবং পরে যদি অ, আ, উ-ধ্বনি থাকে তাহলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি একসঙ্গে  র হবে। যেমনঃ
  • পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার 

২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি

ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে যদি য, র, ল, হ থাকে তাহলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি এর স্থানে র-যুক্ত বিসর্গে র/ রেফ এবং স-যুক্ত বিসর্গে ও-কার হয়। যেমনঃ
  • অন্তঃ + গত = অন্তর্গত 
  • পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম
খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের পরিবর্তে  শ, ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়। যেমনঃ
  • ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
  • দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র 
গ. অ/আ ছাড়া অন্য স্বরবর্নের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়। যেমনঃ
  • দুঃ + আচার = দুরাচার
  • দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা 
  • নিঃ + ভয় = নির্ভয়
  • আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ
ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ উঠে যায় এবং প্রথমে ই-কার থাকলে তা ঈ-কার হয়। যেমনঃ
  • নিঃ + রব = নীরব 
ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে  যদি বিসর্গ থাকে এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকে তাহলে  বিসর্গ এর পরিবর্তে স হয়। যেমনঃ
  • পুরঃ + কার = পুরস্কার 
  • ভাঃ + কর = ভাস্কর
চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে যদি বিসর্গ থাকে এবং পরে যদি ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ এর পরিবর্তে ষ হয়। যেমনঃ
  • বহিঃ + কার = বহিষ্কার
  • নিঃ + ফল = নিষ্ফল 
  • চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ 
ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির সঙ্গে যুক্ত বিসর্গ যুক্ত থাকে। যেমনঃ
  • শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া 
  • অন্তঃ + করণ = অন্তঃকরণ

বিরাম বা যতিচিহ্ন যুক্ত শব্দের বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়মঃ Bangla Academy spelling rules 2022

ডট ( . ) ব্যবহার করে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম - প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মঃ

বাংলায় যেসকল সংক্ষিপ্ত শব্দ রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে ডট ব্যবহার হবে। যেমনঃ 
  • ড. (ডক্টর),  মি. (মিস্টার) 
  • Govt. (Government), Ltd. (Limited), Mr. (Mister), Dr. (Doctor)
ইংরেজিতে যেসব শব্দ Abbreviation হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলোতে ডট না ব্যবহার করা বেশি মার্জনীয়। যেমনঃ
  •  SMS, MMS, BSS, BA, JSC, MPO, UN,SSC, HSC,PSC,BSC,JSC,JDC,BCS,MBA,BBA BGB, BSF

কোলন ( : ) ব্যবহার করে বাংলা বানানের সঠিক নিয়ম - বাংলা বানানের নতুন নিয়ম ঃ


উদাহরণ বোঝাতে কোলন ব্যবহার হয়। 
  • বাংলা বর্ণ দুই প্রকার।  যেমন: স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ
তথ্যাবলী বর্ণনা করতে কোলা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনঃ 
  • পিতার নাম:
  • মাতার নাম:
  • গ্রামের বাড়ি:
গণিতে অধ্যায় বোঝাতে কোলা ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ 
  • ৫:২ (সমানুপাত)
সময় ও তারিখে ব্যবহার বোঝাতে কোলন ব্যবহার হয়। 
  • ৫:১০ মিনিট
  • তারিখ: ২২ নভেম্বর ২০২১ 

হাইফেন/যুক্তচিহ্ন ( - ) ব্যবহার করে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম - বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়ম ঃ Bangla Academy spelling rules 2021

সমাসবন্ধ শব্দে হাইফেন ব্যবহৃত হবে। যেমনঃ
  •  উপ-প্রকৌশলী, আল-আমীন, 
এ ছাড়া শব্দকে ভেঙে ভেঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমনঃআন্ত-মন্ত্রনালয় ইত্যাদি।

ড্যাশ (—) ব্যবহার করে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম - বাংলা বানানের নতুন নিয়ম ঃ

 এম ড্যাশ (—) সাধারণত হাইফেনের তিনগুণ বড় হয়ে থাকে। যেমনঃ
  • তোমরা ভালোভাবে পড়াশুনা কর—এতে তোমাদের ফলাফল ভালো হবে— খারাপ না।
 অসম্পূর্ণ বাক্যে যেগুলো রয়েছে তাঁদের শেষে এম ড্যাশ ব্যবহার হয়। যেমন— 
  • কোথায় বেশি আম উৎপাদন হয় — ক. চট্টগ্রাম খ. খুলনা গ. ঢাকা ঘ. রাজশাহী।

কোটেশন মার্ক/ইনভার্টেড কমা/উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘ ’ “ ” ) ব্যবহার করে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম - বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়ম ঃ

শব্দকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করার জন্য একটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন— ‘হৈমন্তি’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। উক্তিবাচক শব্দে দুইটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হবে। যেমন— তৌফিক বলল, “আমি অফিস যাচ্ছি।”

যতিচিহ্নের কিছু অশুদ্ধ ও শুদ্ধ ব্যবহার করে শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মঃ bangla spelling rules

অশুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা/২০১৭, ২০১৭/১৮ শিক্ষাবর্ষ, ২০১৭/১৮ অর্থবছর, ১ জানুয়ারি/২০১৭ ইত্যাদি। 
শুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা ২০১৭ অথবা, পরীক্ষা–২০১৭, ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষ, ২০১৭–১৮ অর্থবছর, ১ জানুয়ারি ২০১৭

আশা করি শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম এবং বাংলা একাডেমি বাংলা বানানের নিয়ম নিয়ে সকল বিভ্রান্তি দূর হয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • The DU Speech ✅
    The DU Speech ✅ ২২ নভেম্বর

    অনেক সাজানো গোছানো নিয়ম ছিল

  • 17563 akter
    17563 akter ১০ জুন

    সুন্দর নীতিমালা

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url