চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে যে ৮টি ভুল ভুলেও করবেন না
পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে আপনি কি এখন চাকরির বাজারে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? অথবা ভালো পারফর্মেন্স সত্ত্বেও চাকরী হচ্ছে না? ভুল ভাল জব ইন্টারভিউয়ের জন্য সমস্যা হচ্ছে? তাহলে আজকের এই লিখাটি আমি আপনাদের মতো চাকরীপ্রার্থীদের জন্য উৎসর্গ করছি। আজকে আমি আপনাদের সে সকল কমন ভুলগুলো সম্বন্ধে বলবো যেগুলো আপনাকে পিছিয়ে রাখছে বা রাখতে পারে আপনার নিশ্চিত চাকরি পাওয়া থেকে। তাহলে কথা না বাড়িয়ে, চলুন শুরু করি।
১) ভুলেও দেরী করা যাবে না
এটি খুব-ই মারাত্মক একটি ভুল যার জন্য ইন্টারভিউ চেয়ারে বসার পূর্বেই আপনি বাতিল হয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ট্রাফিক জ্যামের ওজুহাত বা রাস্তা চিনেন না এইরূপ কোন কথা দিয়েই চাকরীদাতার মন জয় করতে পারবেন না। কোন কোম্পানিই চাইবে না তাদের কোম্পানিতে এমন একজন থাকুক যে কিনা গুরুত্বপূর্ণ কাজেও দেরী করে বসে! ইন্টারভিউয়ের দিনে আপনার দেরী এই ইংগিত বহন করে- আপনি দক্ষ পরিকল্পনাকারী নন এবং কোন কাজ আপনার দায়িত্বে দিয়ে তা সঠিক সময়ে পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই! তাই সাবধান হোন। প্রয়োজন অনুসারে যথেষ্ট সময় নিয়ে ইন্টারভিউতে উপস্থিত হবেন। ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি অবশ্যই আপনার পড়া উচিত।
২) মোবাইল ভুলেও চালু রাখবেন না
কল্পনা করুন, প্রশ্নকর্তা আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছে আর এমন সময় আপনার মোবাইল ফোন বেজে উঠলো বা মেসেঞ্জারে টুং শব্দে নোটিফিকেশন আসলো। তাহলে পরিস্থিতি নিশ্চয় খুব বেমানান দেখাবে। এমনকি এর জন্য ইন্টারভিউয়ার প্রচন্ড বিরক্তও হতে পারে। তাই ইন্টারভিউ কক্ষ প্রবেশের পূর্বেই নিশ্চিত হোন আপনার মোবাইল ফোন অফ করা আছে।
৩) ইতস্তত ভাবে হাত মেলাবেন না
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়। ইন্টারভিউ শেষ ইন্টারভিউয়ারের সাথে হাত মেলাতে ইতস্ততা বোধ করেন। অনেকে কেবল আংগুল ছুয়েই হ্যান্ডশেক সাড়ে। কিন্তু এটি মোটেও উচিত নয়! হাত মেলানোর প্রয়োজনীয়তা ও সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন।
৪) অযথা বকর বকর ( বাচালতা) করবেন না
অনেকেই আছে ইন্টারভিউ চেয়ারে বসেই নিজেকে নিয়ে অনর্গল আত্মচরিত গাওয়া শুরু করে দেয়! এটি কিন্তু আপনার ইন্টারভিউয়ারকে মারাত্মক ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে। অযথা বকর বকর কেউই পছন্দ করে না, বিশেষ করে চাকরীদাতারা তো নয়-ই। তাই অযথা প্যাচাল না মেরে মনোযোগ দিয়ে শুনুন চাকরীদাতা কি জিজ্ঞাসা করেছেন এবং ভেবেচিন্তে তার উত্তর দিন। আগ বাড়িয়ে আত্মচরিত গাইতে যাবেন না। নচেৎ হিতে বিপরীতও হতে পারে!
৫) ইন্টারভিউয়ারকে ভুলেও নিজের বন্ধুতুল্য ভাববেন না
ইন্টারভিউয়ারের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করা মারাত্মক ভুল। সর্বদা স্মরণে রাখবেন আপনার সামনে যিনি বসে আছেন তিনি আপনাকে চাকরী দিতে নয়, বরং কতভাবে আপনাকে ছাটাই করা যায় তার ১০১টি পদ্ধতিই প্রয়োগ করে চলেছে! তাই তার সাথে অফিসিয়াল দূরত্ব বজায় রেখে যোগ্য সম্মান দিয়ে কথা বলুন। ভুলেও চাকরীদাতার ব্যক্তি-জীবন নিয়ে প্রশ্ন করবেন না।
৬) ভুলেও নিজের দেহভঙ্গি সম্পর্কে অসতর্ক হবেন না
চাকরীর ইন্টারভিউতে আপনার দেহভংগিই চাকরীদাতাকে ৫৫% পর্যন্ত প্রভাবিত করে। কিভাবে সাইকোলজিক্যালি ইন্টারভিউ হ্যান্ডেল করবেন তা নিয়ে ইতোমধ্যেই একটি পোস্ট লিখা হয়েছে, এই লিংক থেকে তা পড়ে নিন।
৭) অসংলগ্ন পোশাক পরিচ্ছদ
ধরুন, আপনাকে আমেরিকা থেকে আপনার আত্মীয় একটি ঝকমকে রঙিন জমিদার কোট পাঠিয়েছে এবং দামি বলেই আপনি এটা পড়ে ইন্টারভিউ দিতে গেছেন! ভুলেও এ কাজ করবেন না। কারণ, ইন্টারভিউ বোর্ডে চাকরীদাতা আপনাকে চানাচুর ব্যাপারী বলে উপহাস করতে পারে!
ইন্টারভিউতে অবশ্যই অবশ্যই প্রত্যাশিত অফিসিয়াল ড্রেস-আপ করে যেতে হবে। আবার, এও খেয়ালে রাখবেন গরমের দিনে নিজেকে অধিক ভদ্র দেখাতে যেন শার্টের উপরের বোতাম মেরে বসবেন না! এতে বেমানান দেখাবে! পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানানসই ভাবে পোশাক নির্বাচন করবেন! প্রয়োজনের অধিক বস্ত্র বা একেবারে কম বস্ত্রও পরিধান করবেন না।
৮) কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না
এটি একটি ভদ্রতা। আপনার চাকরীদাতা আপনার পিছনে নিজের মূল্যবান সময় নস্ট করেছেন, তাই ইন্টারভিউ শেষে বের হওয়ার পূর্বে অবশ্যই তার দিকে ভদ্রভাবে হেসে তাকে ধন্যবাদ দিন এবং কৃতজ্ঞতা জানান। এর ফলে তার মনে আপনার জন্য পজিটিভ ভাবনার উদয় হবে।
শেষ কথা
আমাদের জীবনে ছোট ছোট অনেক ভুল আমাদের সামনে এগোনোর পথটাকে অনেক সময় বন্ধ করে দেয়। তাই চাকরী ক্ষেত্রেই হোক বা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বদা নিজের ভুল থেকে শিখার চেষ্টা করুন। ভুল থেকে শিখতে না পারার মতো ব্যর্থটা আর কিছুই হতে পারে না। সর্বদা মনে রাখবেন, মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু হলো তার ভুল যা তাকে সামনে আগানোর পথ দেখায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url