ভেক্টর গ্রাফিক্স কিভাবে কাজ করে? Vector Graphics এর A টু Z
ইন্টারনেট দুনিয়ার অন্যতম একটি সংস্করণ হচ্ছে ভেক্টর গ্রাফিক্স। এটা কোন সহজ বিষয় নয়, কারণ ভেক্টর গ্রাফিক্স সম্পর্কে অনেক সাধারণ মানুষ তেমন কিছুই জানেন না, আবার অনেক কম্পিউটার ব্যবহারকারীও ভেক্টর গ্রাফিক্স এর সঠিক অর্থ বা এর কাজ জানেন না। তাই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ভেক্টর গ্রাফিক্স। চলুন শুরু করা যাক।
ভেক্টর গ্রাফিক্স কাকে বলে?
ভেক্টর গ্রাফিক্স (Vector Graphics) হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিক্স এর এক ধরনের ডিজিটাল ছবি বা ইমেজ বা আর্ট বা পেইন্টিং যেটা গাণিতিক যুক্তি ফর্মুলা ব্যবহার করে কিছু বিন্দু ,লাইন এবং কার্ভের সমন্বয়ে তৈরী করা একটি আকৃতি বা নকশা বা শেপ। উল্লেখযোগ্য কিছু ভেক্টর গ্রাফিক্স ফরমেট এর উদাহরণ হলো, এসভিজি (SVG)কে স্ট্যান্ডার্ড ফরমেট ধরা হয় ভেক্টর গ্রাফিক্স এর জন্য, যেটা W3Consortium নির্ধারিত, পিআইসিটি (PICT), ইপিএস (EPS), পিডিএফ (PDF), ডাব্লিউএমএফ (WMF) এবং পোস্টস্ক্রিপ্ট (Post script) ও ট্রু টাইপ ফন্টস (True type fonts)। এগুলো তৈরী করা হয় জিআইএস (GIS) এবং সিএডি (CAD) এ্যাপস এর মাধ্যমে। কিছু প্রসিদ্ধ অ্যাপ্লিকেশন যেমন, এ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর (Adobe Illustrator), ম্যাক্রোমিডিয়া (Macromedia), ফ্রি হ্যান্ড(Free hand), কোরেল ড্র (Corel draw) এসব সফটওয়্যার ভেক্টর গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করে।
ভেক্টর গ্রাফিক্স কিভাবে কাজ করে?
ভেক্টর গ্রাফিক্স কাজ করে মূলত কিছু বিন্দু, সরলরেখা, রেখাচিত্র এগুলোর সমন্বয়ে। এগুলোকে নির্ণায়ক বিন্দু ও বলা যায়। যেহেতু এটা একটি গাণিতিক যুক্তি ফর্মুলা, এটা যেখানে তৈরী হয় তার X এবং Y অক্ষের নির্দিষ্ট অবস্হান দ্বারা নির্ণায়ক বিন্দু গুলোকে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিটা নির্ণায়ক বিন্দুর সাথে কিছু তথ্য জুড়ে দেওয়া থাকে, যা বিন্দুর অবস্থান ও দিক সম্পর্কে ধারণা দেয়। ভেক্টরের দিক দ্বারা পথ বা ট্রাকের দিক নির্ণয় করা হয়। এদের আবার নির্দিষ্ট রং, আকৃতি, ঘনত্ব, উপাদান ইত্যাদি নির্ধারণ করা যায়। এক্ষেত্রে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড শেপের সাথে ফাইলের শেপের তারতম্য হয় না, কারণ নির্দিষ্ট ছবির জন্য নির্দিষ্ট তথ্য স্ক্রিনে দেওয়া থাকে। ভেক্টর গ্রাফিক্স এ ব্যবহৃত পিক্সেল বা ছোট চারকোণা শেপগুলো একটি অন্যটির সাথে যুক্ত থাকে, ফলে ছবি অনেক জুম করে দেখলেও ফেটে বা ব্লার বা আবছা হয়ে যায় না। ভেক্টর গ্রাফিক্স মূলত প্রিন্টিং (CMYK) কালার নিয়ে কাজ করে।
ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ব্যবহার
বর্তমানে ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ব্যবহার প্রায় সর্বত্রই বলা যায়। কাজের সুবিধার জন্য ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। চলুন জেনে নিই কি কি কাজে ভেক্টর গ্রাফিক্স ব্যবহার করা যায়-
১) যেহেতু ভেক্টর গ্রাফিক্স গাণিতিক ফর্মুলা অনুসরণ করে কাজ করে তাই ভেক্টর গ্রাফিক্স প্রধানত টু ডায়মেনশনাল ছবি তৈরীতে ব্যবহার হয়।
২) ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ফাইল সাইজ ছোট, তাই ভেক্টর গ্রাফিক্স স্টোরেজ এর জন্য কম্পিউটার এর মেমোরিতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। তাই আপনি যখন অনেক বেশি ডিজাইন স্টোর করতে চান, তখন ভেক্টর গ্রাফিক্স ব্যবহার করতে পারেন।
৩) বিজনেস লোগো তৈরী করতে ভেক্টর গ্রাফিক্স খুব জনপ্রিয়। কারণ খুব ছোট বা অনেক বড় বিজনেস কার্ড বা বিলবোর্ড এ বিজনেস লোগো সেট করার সময় এটা ফেটে যায়না বা এর কালার, কোয়ালিটি নষ্ট হয় না। আপনি যদি এমন কোন ডিজাইন করতে চান যেটা ছোট বা অনেক বড় করে প্রিন্ট দিয়ে রাস্তার পাশে বিলবোর্ড বা ব্যানার হিসেবে ব্যহবার করতে চান তাহলে ভেক্টর গ্রাফিক্স খুব জনপ্রিয়। কারণ ভেক্টর গ্রাফিক্স ব্যবহার করে কোন কিছু জুম-ইন বা বড় করে দেখলে ফেটে যায় না।
৪) পেপার এবং কাপড়ে প্রিন্টিং এর কাজ, এমব্রয়ডারির কাজও করা যায় গ্রাফিক্স ব্যবহার করে।
৫) এছাড়াও ইমেজ কে জুম করে দেখা বা টেনে বড় করা, ইলাস্ট্রেশন, প্রিন্টিং, ইনফোগ্রাফ, গেমস তৈরী, এনিমেশন, ওয়েব এবং সব ধরনের এডিটিং ইচ্ছামত করা যায় বলে ভেক্টর গ্রাফিক্স বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ভেক্টর গ্রাফিক্স এর সীমাবদ্ধতা
ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ব্যবহার জনপ্রিয় হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে -
১) সামান্য একটু ভুল হলে যখন ভেক্টর ইমেজ কে বড় বা জুম করে দেখা হয় তখন ভুলটাও বড় করে দেখা যায় ভেক্টর গ্রাফিক্স এ। আপাতদৃষ্টি তে এটা খুব সামান্য ব্যাপার মনে হলেও ডিজিটাল জগতে এটা একটা ভেক্টর গ্রাফিক্স এর সীমাবদ্ধতা।
২) বাস্তব জগত থেকে ভিডিও বা ছবি এনকোডিং করার জন্য ভেক্টর গ্রাফিক্স উপযুক্ত না। কারণ বাস্তব জগতে আমরা দেখি ও ক্যামেরাবন্দী করি তার সবই রাস্টার গ্রাফিক্স।
৩) ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ইমেজ এর ডাটা প্রসেসিং এর জন্য বেশি সক্ষমতাযুক্ত ডিভাইস এর প্রয়োজন হয়।
ভেক্টর গ্রাফিক্স এর সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আর্কিটেকচার, কম্পিউটার গ্রাফিক্স, ইন্জিনিয়ারিং সহ বিভিন্ন এপ্লিকেশন এ ভেক্টর গ্রাফিক্স এর ব্যবহার অতুলনীয়। তাই এখন পর্যন্ত ভেক্টর গ্রাফিক্স একটি জনপ্রিয় ইমেজ প্রেসেসিং টেকনিক হিসেবে সারাবিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url