OrdinaryITPostAd

আর্টিকেল ১৩ ( Article 13) কী? ইউটিউবারদের নতুন আশংকা

ধরুন আপনি ইউটিউবে আপনার পছন্দের একটি ভিডিও দেখতে চাচ্ছেন  কিন্তু আপনি সেটা দেখতে পাচ্ছেন না। অথবা আপনার ভিউয়ারদের সাথে আপনি একটি ভিডিও শেয়ার করতে চান কিন্তু আপনি শেয়ার করতে পারছেন না।
আপনি কি ভাবতে পারেন সত্যিই যদি এমন হয় তাহলে কেমন লাগবে আপনার? হ্যাঁ,  এমনি একটি প্রস্তাবনা হচ্ছে আর্টিকেল ১৩ (Article 13)। চলুন জেনে নিই আর্টিকেল থার্টিন  সম্পর্কে বিস্তারিত,
বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত কয়েকটি বিষয় যেগুলো সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে আর্টিকেল থার্টিন (Article 13)।

আর্টিকেল থার্টিন (Article 13)  কি ? 

আর্টিকেল থার্টিন হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রস্তাবিত আইন যেখানে Fair Use বা ন্যায্য ব্যবহার সম্পর্কে একটি আইন উত্থাপন করা হয়েছে। এই আইনটি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে Fair Use বা ন্যায্য ব্যবহার সম্পর্কে।
Fair Use বলতে বোঝায় কোন একটি লিখা, পোস্ট বা ভিডিও বা  এরকম কোন ডকুমেন্ট যেটার স্বত্বাধিকারী রয়েছে। শিক্ষনীয়  বা ভালো কাজের উদ্দেশ্যে অন্যের কোন স্বত্বাধিকারী বিষয়ের কোন একটি অংশ আমরা ব্যবহার করতে পারবো। এক্ষেত্রে  স্বত্বাধিকারী ব্যক্তির কোন অনুমতির প্রয়োজন হবে না। কোন ব্যক্তি উপরিউক্ত কারণে স্বত্বাধিকারী ব্যক্তির উপাদানটির কোন একটি অংশ ব্যবহার করলে এক্ষেত্রে তাকে স্বত্বাধিকারী আইন (Copyright Law) এর আওতাধীনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রয়োজন হবে না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই Fair use বা ন্যায্য ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন আইন রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বিষয়টি নিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বেশ কিছু দেশ চাচ্ছে ন্যায্য ব্যবহার নীতি তাদের দেশে চলবেনা। তারা চাচ্ছে এই নীতি বাতিল হোক। কারণ হিসেবে তারা দেখাচ্ছে যে, ফেয়ার  ইউজ নীতির জন্য  অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং মূল কারণ যেটা তারা দেখাচ্ছেন যে এই নীতির কারণে কোন মেধাগত উৎকর্ষ সাধন হচ্ছেনা। মানুষের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই তারা এই নীতি বাতিলের পক্ষে প্রস্তাব দিয়ে ভোট দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯টি দেশ এই নীতি বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই প্রস্তাবটি যদি মন্জুর হয়ে যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ তাহলে আর কেউ স্বত্বাধিকারী ব্যক্তির কোন ভিডিও, ছবি বা ডকুমেন্ট ব্যবহার করতে পারবেনা।

আর্টিকেল থার্টিন এবং বাংলাদেশ

যদি  আমরা বাংলাদেশ এর সাপেক্ষে আইনটির প্রভাব দেখাতে চাই, তাহলে বলা যায় আইনটির প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশ এর উপর কোন প্রভাব না থাকলেও পরোক্ষভাবে এর প্রভাব আছে। কারণ এই ফেয়ার ইউজ পলিসির উপর নির্ভর করে অনেকে আছেন যারা অনলাইনে বিভিন্নরকম বিষয়বস্তু তৈরী করে থাকেন এবং সেখান থেকে দর্শক সংখ্যা এবং বিভিন্ন উপায়ে তারা অর্থ উপার্জন করেন। এখন যদি এই ফেয়ার ইউজ পলিসি বাতিল হয়ে যায় তবে তারা আর এই কাজ গুলো করতে পারবেন না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে এই আইনটি প্রয়োগ হলে ইন্টারনেট থেকে অনেক ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। অন্য দেশের নাগরিকরা এই পলিসি ব্যবহার করতে পারলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত দেশের নাগরিকরা এই সুবিধা পাবেন না। একদিক থেকে আইনটি যেমন তাদের মেধাগত উৎকর্ষ সাধনে কাজে লাগবে অপরদিকে এটি অনলাইন বাজারে অর্থনৈতিক ধস নামাবে। এর কারনে Fair Use বা ন্যায্য  ব্যবহার পলিসি ব্যবহার করে যারা ভিডিও, ছবি বা কোন ডকুমেন্ট তৈরী করতো তারা আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর দর্শক পাবেনা ফলে ইন্টারনেট থেকে অনেক দর্শক হারিয়ে যাবে।

যদি বাংলাদেশ থেকে এমন কোন ভিডিও বা ডকুমেন্ট অনলাইনে ছাড়া হয় যেটি ফেয়ার ইউজ পলিসি মেনে তৈরী করা হয়েছে তবে সেটি অনলাইনে আসবে কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশের দর্শক পাওয়া যাবেনা। কারণ ওইসব দেশে এই পলিসি মেনে তৈরী করা কোন ডকুমেন্ট দেখা  যাবেনা ।  যারা ইতিমধ্যে অনলাইনে কোন অর্থ উপার্জনের বাজার সৃষ্টি করে ফেলেছে তাদের জন্য এই আইনটি শনির দশা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই দিকটির উপর বিবেচনা করে কিছু দেশ এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে অবস্হান নিয়েছে তবে তা সীমিত সংখ্যক।

আর্টিকেল থার্টিন এবং আর্টিকেল সেভেনটিন

আর্টিকেল থার্টিন ছিলো একটি ড্রাফট প্রস্তাবনা এবং এটার ফাইনাল প্রস্তাবনার নাম দেওয়া হয়েছে আর্টিকেল সেভেন্টিন  (Article 17)। প্রস্তাবনাটি  ২০১৯ সালের মার্চে অস্হায়ীভাবে গৃহীত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালা অনুযায়ী এটা বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে আরো দুই বছর। অর্থাৎ যদি এই প্রস্তাবনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় তাহলে আগামী ২০২১ সাল থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে, আর যেটা হবে ইন্টারনেট দুনিয়ার জন্য বিশাল একটি হুমকি!

সারাবিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা আর্টিকেল থার্টিন এর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে এর যেন বাস্তবায়ন না হয় সেজন্য #Save your Internet  এই স্লোগানে একটি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যদি আপনি আর্টিকেল থার্টিন এর সাথে একমত না হন তবে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে আপনিও এই প্রতিবাদের একজন অংশগ্রহণকারী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url